২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মানবিকতা ও সময়ানুবর্তিতার অনন্য উদাহরণ

মানবিকতা ও সময়ানুবর্তিতার অনন্য উদাহরণ - ছবি : লেখক

কতটা যোগ্য, মেধাবী, নিষ্ঠাবান ও নির্ভরযোগ্য হলে কোনো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে টানা চারটি দশক কেউ ওই প্রতিষ্ঠানটিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন? হ্যাঁ, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মেদ আলী আল মাদানির কথা বলছি। ১৯৭৫ সালে তার নেতৃত্বে ৫৭ জাতির ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করেছিল। সেই ব্যাংক থেকে ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে যখন তিনি বিদায় নেন তখন এটি বিশ্বের সেরা রেটিং এজেন্সিগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থানীয় ‘ট্রিপল-এ’ রেটিংয়ের ব্যাংক। আইডিবিতে যোগদানের আগে ড. মাদানি ছিলেন সৌদি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি নাইজেরীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ, জন্ম মদিনায়। এতটা অমায়িক ও সময় সম্পর্কে সচেতন আর কাউকে দেখিনি। ছিলেন মানবিক গুণাবলিতে অনন্য, অতি নমনীয়; আবার শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে অতি কঠোর। তার গুণাবলি আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে, আমার পুরো পেশাগত জীবনকেই আমূল পাল্টে দিয়েছিল।

আমার আইডিবিতে যোগদানের বিবরণ এই নয়া দিগন্তের কলামেই লিখেছি। ড. মাদানি সবসময় বলতেন, ‘দেখো সময়কে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। আইডিবির অফিস টাইম ছিল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। প্রতিদিন অফিস টাইমের ঠিক পাঁচ মিনিট আগে তার গাড়ি এসে ব্যাংকের দরজায় থামত। কখনো হয়তো আরো আগে আসতেন। তিনি গাড়িতে বসে পত্রিকা পড়তেন। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৭টা ছোঁয়ামাত্র নিজের হাতে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এসে প্রথম কার্ড পাঞ্চ করতেন। নিজের হাতে দরজা খুলে অফিসে প্রবেশ করতেন। আইডিবি থেকে আগাম অবসর নিয়ে চলে আসি। আমার জানামতে, তখন পর্যন্ত মাত্র একটি দিন অফিসে আসতে দেরি করেছিলেন। সে দিন প্রবল বর্ষণে জেদ্দার পথ-ঘাট ডুবে গিয়েছিল। ওই অঞ্চলের বৃষ্টি যারা দেখেছেন, তারা জানেন যে, এ সময় সড়কের উপর দিয়ে নদীর স্রোতের মতো পানি বয়ে যায়। ড. মাদানির গাড়ি পানিতে ডুবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি সে দিন সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারেননি। আমি আইডিবি থেকে চলে আসার পরও এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে বলে মনে হয় না। তিনি নিরহঙ্কার ব্যক্তির এক অনন্য উদাহরণ। ৫৭টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধি ও মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনধারী ব্যক্তিদের একজন হয়েও গাড়িতে সবসময় ড্রাইভারের পাশের সিটে বসতেন। আশপাশে তাকে সাহায্য করার লোকের অভাব না থাকলেও গাড়ির দরজাটি নিজের হাতেই খুলতেন।

অফিসে নিজের রুমে প্রবেশের পর আধা ঘণ্টা সময় ছিল সবার জন্য অবারিত। তখন ব্যাংকের যে কেউ, পিয়ন থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই তার কাছে যেতে পারত। আমি তার সাথে কথা বলতে এই সুযোগটি নিতাম। অনেক দিন সাড়ে ৭টার আগেই সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম। তখন মন খুলে কথা বলা যেত। অন্য সময় আমাকে অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে এসে কথা বলতে হতো। যদিও আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইলে তৎক্ষণাৎ দিয়ে দিতেন।

আমি ছিলাম আইডিবি প্রেসিডেন্টের স্পিচ রাইটার। কাজটি আইডিবিতে যোগদানের আগে আমি কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে থাকা অবস্থাতেই শুরু হয়েছিল। আইডিবির যাত্রার সূচনালগ্নে সেখানে আমার চাকরি হয়। একই সাথে কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি থেকেও অফার পাই। আইডিবিতে চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে বলেছিলাম যে, নিরেট ব্যাংকিংয়ের বদলে আইডিবি যদি কোনো গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান চালু করে তাহলে আমি সেখানে যোগ দিতে চাই। আইডিবি আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল। ফলে তখনই ব্যাংকে যোগ না দিয়ে আরো কিছু কারণ মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যাই হোক, আইডিবি প্রেসিডেন্টকে ইংরেজিভাষী অঞ্চলের দেশগুলোর অনেক অনুষ্ঠানে যেতে হতো। তখন আমি তার সঙ্গী হতাম। প্রেসিডেন্ট কোথায় কী বলবেন, তার ড্রাফট আমাকে করে দিতে হতো। এখানে বলা ভালো, আইডিবির দেশগুলো তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলো ভাষাভিত্তিক- আরবি, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি। মধ্যপ্রাচ্য আরবিভাষী, উত্তর আফ্রিকার ১৮-২০টি দেশ ফরাসিভাষী এবং তুরস্ক, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো ইংরেজিভাষী অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। আমাকে বলা হতো, এই থিমের ওপর অমুক দেশে সেমিনার হবে। ড. মাদানি সেখানে বক্তব্য রাখবেন। ওই অনুষ্ঠানে হয়তো সংশ্লিষ্ট দেশের প্রেসিডেন্টও থাকবেন। এরই আলোকে আমাকে ‘স্পিচ ড্রাফট’ করতে হবে। আমি ড্রাফট করে পাঠিয়ে দিলে এরপর উনি আমার সাথে বসে প্রতিটি লাইন নিয়ে আলোচনা করতেন। এ সময় খুবই সিরিয়াস হয়ে আলোচনা করতেন। অনেক দেশে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের রুমে বসে তার বক্তব্যের ড্রাফট চূড়ান্ত করেছি। উনি ভালো ইংরেজি বলতে পারলেও তার মাতৃভাষা ছিল আরবি।

১৩ বছর আইডিবির একাডেমিক কমিটির মেম্বার-সেক্রেটারি ছিলাম। এটা ছিল ব্যাংকের অন্যতম শক্তিশালী কমিটি। এই কমিটি সব প্রকাশনার অনুমোদন দিত। আইডিবির প্রকাশনা হতো তিনটি ভাষায়- আরবি, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ। সব ইংরেজি প্রকাশনা আমাকে ছাড় করতে হতো। আমার ওপর ব্যাংকের এই আস্থাকে আন্তরিকতা দিয়ে উপভোগ করতাম। একবার আমি মিশনে থাকা অবস্থায় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আমি ফিরে এলে প্রেসিডেন্ট এর একটি কপি আমার কাছে পাঠান। এই প্রতিবেদন ছাপানোর অনুমতি দিয়েছিলেন ব্যাংকের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট। দেখি, প্রতিবেদনের প্রচ্ছদেই ভুল। ৫৭টি সদস্য দেশে পাঠানোর জন্য হাজার হাজার কপি ছাপা হয়ে গেছে। তৎক্ষণাৎ সব কপি বাতিল করা হয়। যিনি ছাপানোর অনুমতি দিয়েছিলেন তাকে বরখাস্ত করা হলো। এটা আমার খুব খারাপ লেগেছিল।

আমার ওপর ড. মাদানির আস্থার আরেকটি নমুনা বলছি। ব্যাংকের ‘ইসলামিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ (আইআরটিআই)-এর ডিরেক্টরের পদটি রাজনৈতিক। তখন ডিরেক্টর হয়ে আসেন কুরকুত ওজাল। তিনি ছিলেন তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট, তুরকুত ওজালের ভাই। কুরকুত ওজাল তুরস্কের কৃষিমন্ত্রীও ছিলেন। তাকে প্রেসিডেন্টের কাছে রিপোর্ট করতে হতো। আর আমি ছিলাম ওই ইনস্টিটিউটে তার সাব-অর্ডিনেট। একবার কুরকুত ওজাল তার বার্ষিক রিপোর্ট প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আবার সেটি আমার কাছে পাঠালেন দেখে দেয়ার জন্য। কুরকুত আমার রুমে এসে দেখেন তার রিপোর্ট আমার টেবিলে। জিজ্ঞেস করেন, এটি এখানে কেন? আমি জবাব দিলাম। কিন্তু বিষয়টি আমার জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৮৫ সালে পাকিস্তানে আইডিবির উদ্যোগে সে দেশে জাকাতের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। তখন জেনারেল জিয়াউল হক দেশটির ক্ষমতায়। সেমিনার শেষে জেদ্দায় ফিরে ড. মাদানি শীর্ষ কর্মকর্তাদের মিটিং ডেকেছেন সেমিনার কেমন হয়েছে তা জানার জন্য। মিটিংয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডাইরেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তারা রয়েছেন। আমি এনটাইটেল্ড না। ফলে আমাকে কেউ ডাকেওনি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মিটিংয়ে বললেন, ড. মান্নান কোথায়? তাকে ডাকুন। আমি গেলাম। শুনি, সবাই সেমিনারের বেশ প্রশংসা করছেন। মিটিং তখন শেষ হওয়ার পথে, এ সময় হাত তুলে বললাম, ইয়োর এক্সেলেন্সি, আমার কিছু কথা ছিল। উনি বললেন, ইয়েস, ইয়েস বলুন আমি বলি, সেমিনারটি তেমন ভালো হয়নি। কারণ ইংরেজিভাষী অঞ্চলের জন্য সেমিনারে ইংরেজিভাষী পণ্ডিতদের রাখলেই ভালো হতো। পাকিস্তানের সেমিনারে আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া থেকে ফ্রেঞ্চ স্পিকিং স্কলার এনে বক্তৃতা দেয়ানোর কারণে সেমিনারের মেজাজ পুরোপুরি রক্ষা পায়নি। ওই সব দেশের স্কলাররা ইংরেজিতে ততটা দক্ষ নন। এ কথা বলার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট বললেন, ইয়েস, ইয়েস, ড. মান্নান ইউ আর রাইট। তিনি নির্দেশ দিয়ে দিলেন। মিটিংয়ে এতক্ষণ যারা প্রশংসা করছিলেন, তাদের অবস্থা ছিল দেখার মতো। এর পর থেকে আমার ব্যাপারে সবাই খুব ভয়ে থাকতেন।

মুসলিম বিশ্বের বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের জন্য ড. মাদানির একটি দরদি মন ছিল। এ ক্ষেত্রে বিনয়ের সাথে বলছি, তাকে এই পথে উজ্জীবিত করার পেছনে আমারো ক্ষুদ্র ভূমিকা ছিল। তাকে বলেছিলাম, ‘আপনি সৌদি আরবের প্রতিনিধি হিসেবে বাদশাহর কথা শুনে সব কাজ করছেন; এটা ঠিক আছে। কিন্তু গোটা মুসলিম বিশ্ব আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। মুসলিম দেশগুলোর দুর্দশার প্রতি তাকানো উচিত হবে আপনার। প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রে একটি করে ইসলামিক ব্যাংক করুন।’ আমি তাকে ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ে স্বাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত মুসলমানদের সাহায্য করতে বলি।

ভারতসহ অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে থাকা মুসলিম কমিউনিটির জন্য কিছু করতে বলেছি। আমার কথা শুনে তিনি কাজও শুরু করে দেন। তখন থেকে অমুসলিম দেশগুলোর মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নে আইডিবি হাজার হাজার বৃত্তি দিচ্ছে। আমার পরামর্শ ছিল, অমুসলিম দেশগুলোর মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলোকে মঞ্জুরি দিন যেন তারা মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষাঋণ দেয়। এরই জের ধরে ভারতেও হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। টাকা পেলে সব সরকারই লুফে নেয়। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, পারমাণবিক প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং... এমন সব সেরা বিষয়ে আইডিবির বৃত্তি দেয়া হয়। মুসলিম বিশ্বে এসব বিষয়ের লোকজনের খুব অভাব। এখনো আইডিবি ওই কাজ জারি রেখেছে। এ কাজে কিছুটা অবদান রাখতে পেরেছি ভেবে এখনো তৃপ্তিবোধ করি। অমুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানদের জন্য স্কুল-কলেজ ইত্যাদিও স্থাপন করা হচ্ছে।

আইডিবিতে সৌদি আরবের শেয়ার ২৫ শতাংশ। তাই তাদের কথার দাম খুব বেশি। তবে, আমি বলেছি- মুসলিম বিশ্বে টাকাই সবকিছু হওয়া উচিত নয়। মূল্যবোধ দিয়ে মনোনয়ন নির্ধারণ করা উচিত। আমার দুঃখ হয় এই ভেবে যে, আজকের মুসলিম বিশ্বও পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না। তাই ড. মাদানি মুসলমানদের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করা সবার পছন্দ হয়নি। ফলে কিছু দেশ বাদশাহর কাছে অভিযোগ করে যে, আইডিবি তাদের দেশের কাজে হস্তক্ষেপ করছে। মিন্দানাওয়ের কারণে ফিলিপাইন সরকারের কাছ থেকে বড় অভিযোগটি আসে। ফলে ১৯৯৩ সালে ড. মাদানিকে সরিয়ে নিয়ে মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের (রাবেতার) মহাসচিব করা হয়। তার জায়গায় যিনি আসেন, তিনিও ছিলেন সৌদি আরবের ডেপুটি মিনিস্টার। তিনি আসার পর আইডিবিতে চরম অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট সবার সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। তার আচরণ ছিল মনিবের মতো। ভাইস প্রেসিডেন্টদের সাথেও তিনি দুর্ব্যবহার করেন। ব্যাংকের কেউ তার অ্যাপয়েনমেন্ট চাইলে তিনি দেন না। তখন তিন ভাষাভাষী অঞ্চলের কর্মকর্তারাই ঘোষণা দেন যে, তাকে সরানো না হলে তারা ইস্তফা দেবেন। সেখানে আরবিভাষী অঞ্চলের লোকও ছিলেন। তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করা হয়। আসলে যার ব্যবহার খারাপ তিনি সবার সাথেই খারাপ ব্যবহার করেন। আইডিবির প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি নিজেকে সাঙ্ঘাতিক কিছু ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন। আরবিভাষী এক পরিচালক ছিলেন কুয়েতের। ইংরেজিভাষীরা পয়সার জন্য চাকরি করেন কিন্তু কুয়েতিদের তো পয়সার অভাব নেই। তিনি প্রেসিডেন্টকে তোয়াক্কা করতেন না। তিনি ইস্তফার ঘোষণা দিলেন। ফরাসিভাষী অঞ্চলের পরিচালক ছিলেন একজন সাবেক অর্থমন্ত্রী। খুবই অমায়িক মানুষ ছিলেন। তিনিও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ইস্তফা দেন। আমিও ইস্তফা দেবো বলে জানাই। এই খবর বাদশাহর কানে পৌঁছে। ফলে দুই বছর না পেরুতেই আবার ড. মাদানিকে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রায় চার দশক দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালে ৮২ বছর বয়সে অবসর নেন তিনি।

আইডিবিতে থাকতে আমি দেখেছি, টাকা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই মূল্যবোধ আর কাজ করে না। টাকার শক্তি বড় হয়ে দেখা দেয়। তুমি যতই বুদ্ধিমান হও না কেন, টাকাওয়ালারা তোমার তোয়াক্কা করবে না। কিন্তু ইসলাম বলে যে, সবচেয়ে খোদাভীরু ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপ্রধান পদে বসাতে হবে। ইসলামের গণতন্ত্র এটাই। সমাজের সবাই যাকে ভালো মানুষ বলবে, তার হাতেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আইডিবিতে এমন প্রচুর চাপ নিয়ে আমাকে কাজ করতে হলেও আমি এই পরিশ্রমকে উপভোগও করেছি। যেখানেই কাজ করেছি নিজেকে উজাড় করে দিয়ে এবং একনিষ্ঠভাবে করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি আমাকে দিয়ে যদি উম্মাহর কিছুটা খেদমত হয়, যা আমার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে থাকবে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement