২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

স্বাধীনতার সেনাবাহিনী

স্বাধীনতার সেনাবাহিনী - ফাইল ছবি

ষাটের দশকে রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও গ্রন্থনা চোখে পড়ে। সিলভারস্টেইন সে দিনের বার্মা আর আজকের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর রাজনীতি নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটির নাম ‘বার্মা : অ্যান আর্মি অব দ্য লিবারেশন’। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কেন বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তার একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে এই গ্রন্থে। সিলভারস্টেইন সামরিক হস্তক্ষেপের মূল কারণ হিসেবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সেনাবাহিনী’ তত্ত্বকথার আয়োজন করেছেন। তার প্রত্যয় অনুযায়ী, যেসব দেশ সামরিক শক্তি প্রয়োগ বা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে তারা সে দেশের শাসনব্যবস্থায় চির অংশীদারিত্ব দাবি করে। প্রথাগত রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পর্কে তারা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। তারা সাধারণত দেশের সার্বিক ক্ষমতাকে তাদের আওতার বাইরে যেতে দিতে চায় না। স্বাধীনতার সেনাবাহিনী দেশপ্রেমকে একান্তই তাদের বিষয় বলে মনে করে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে ইন্দোনেশিয়া। সে দেশের শাসনব্যবস্থায়ও সেনাবাহিনী জেঁকে বসেছিল। ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক তরঙ্গে সেখানে সুদীর্ঘকালব্যাপী সেনাশাসনের অবসান ঘটে। ভিয়েতনামও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেখানে সামরিক বাহিনীর পরিবর্তে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি প্রধান্য অর্জন করে। তুরস্ক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন না হলেও কামাল আতাতুর্কের নেতৃতে সে দেশের সেনাবাহিনী অবশেষে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সক্ষম হয়। সেখানেও দীর্ঘকাল ধরে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় ছিল। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ সম্পর্কে অনেক বড় বড় তত্ত্বকথা আছে। এখানে এই পরিসরে সেটির আলোচনা সম্ভব নয়-বাঞ্ছিতও নয়। ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কে সাংবিধানিকভাইে সেনাবাহিনী ক্ষমতায়িত ছিল। ইতিহাস বলে, মিয়ানমার বা বার্মার সেনাবাহিনীর উৎস সে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যেই নিহিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনী বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে তা ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীন। অপরপক্ষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গঠন, বিকাশ ও উন্নয়ন একান্তই যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত। আমরা সবাই জানি, বার্মাও উপমহাদেশের মতো ব্রিটিশের উপনিবেশ ছিল। সেখানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও ছিল। কিন্তু তারা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়কালে জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। জাপান গোটা বার্মা দখল করে নেয়। সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন উ নু। তিনি দখলদার জাপানি বাহিনীর সাথে এক হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বার্মা গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন। মহাযুদ্ধের অবসানে নিয়মতান্ত্রিকভাবে অন্যান্য উপনিবেশগুলো ক্রমেই স্বাধীনতা অর্জন করলেও সেকালের বার্মার পথটি যুদ্ধেই নির্মিত হয়। ক্ষয়িষ্ণু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ জাপানের সাথে পরাজিত হয়ে যেমন ‘সসম্মানে পশ্চাদপসরণ’ করেছে, ঠিক তেমনি উ নুর পরিচালিত সেনাবাহিনীর সাথে আপসরফার মাধ্যমেই বার্মা ত্যাগ করে। উ নু হয়ে দাঁড়ান বার্মার পিতৃপুরুষ। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করলেও শতধাবিভক্ত বার্মার এথনিক গোষ্ঠীগুলোর আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেন। সবার কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য হলেও বিভিন্ন গোষ্ঠী ও নেতৃত্বে বিভক্ত সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও পারস্পরিক কোন্দলে লিপ্ত সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ত্যাগ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুর বেশে ক্ষমতা ত্যাগ করেন। ক্ষমতা ত্যাগ করেও তিনি রক্ষা পাননি, একপর্যায়ে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। জীবন দিয়ে তিনি একরকম অমরত্ব লাভ করেন বার্মার জনগণের হৃদয়ে। সে কারণেই অনেক বছর অতিক্রান্ত হলেও তার উত্তরাধিকার নিয়ে অং সান সু চি মিয়ানমারের রাজনীতিতে প্রবল শক্তিধর হয়ে ওঠেন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বেসামরিক লেবাসে মূলত দেশটি শাসন করে উ নু পরিত্যক্ত সেনাবাহিনী। সে সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেভাবে বিকশিত হয়নি। অন্যভাবে বলা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে মিয়ানমার এক দিনের জন্যও নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র উপভোগ করেনি। ফলে রাজনীতি সচেতন নাগরিক শ্রেণী অথবা ছাত্র আন্দোলনের মতো বিষয় ছিল সেখানে প্রায় অনুপস্থিত। পরবর্তীকালে বিক্ষিপ্ত ছাত্র আন্দোলনের ঘটনা ঘটলেও তা সফল হয়নি কখনো। ১৯৬২ সালে নামকাওয়াস্তে গণতন্ত্রেরও অবসান ঘটে। জেনারল নে উইন এখনকার স্টাইলে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী সরাসরি দেশটি শাসন করে। নে উইন এবং পরবর্তী জান্তারা সে সময় দেশকে তথাকথিত উন্নয়নের মহাসড়কে স্থাপন করে। পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানের মতো নে উইন বার্মার ‘লৌহমানব’ হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৯০ সালে গোটা বিশ্বে যে গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান লক্ষ করা যায়, মিয়ানমারে তার ঢেউ লাগে বৈকি, কিন্তু সামরিক স্বৈরাচার তা প্রতিহত করে। তবে তারা কথিত বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। ক্রমেই বাহ্যিক গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিকতা ইত্যাদি সম্পন্ন করে। ১৯৯০ সালেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে অং সান সু চির দল-ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি-এনএলডি জয়লাভ করে। কিন্তু সেবারও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকার করে। তারা একেক সময় একেক ধরনের কমান্ড কাউন্সিলের নামে দেশ শাসন করে। এ সময় বহির্বিশ্বে গণতন্ত্রায়নের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো ক্রমশ চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সেনাবাহিনী কিছু শাসন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তারা পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর জন্য এক-চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষিত রাখে। পৃথিবীর কোথাও এর স্বীকৃতি না থাকলেও ইন্দোনেশিয়াসহ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জাতিগুলোয় এ ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ২০০৮ সালে সেনাবাহিনী প্রণীত শাসনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তের মতো বিষয়াবলির ওপর সেনাবাহিনীর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। অং সান সু চি যাতে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন সে জন্য শাসনতন্ত্রে বিশেষ বিধান রাখা হয়। এ বিধান অনুযায়ী, যারা বিদেশী নাগরিক বিয়ে করেছেন এমন ব্যক্তি বা তাদের সন্তানরা প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

২০১৫ সালে নির্বাচিত হয়েও সু চি সে কারণে প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। ২০১১ সালের শাসন সংস্কারের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে সু চির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে সীমিতভাবে সু চি দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেন। মূল ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতেই থেকে যায়। সেনাবাহিনীর সাথে একরকম আপস করেই দেশ চালাতে হয়। আরাকান থেকে যখন অন্যায়ভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি গণহত্যা পরিচালিত হয় তখন নোবেল শান্তি পদক বিজয়ী সু চি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হতে ব্যর্থ হন। বরং রোমের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের পক্ষে দাঁড়ান তিনি। আন্তর্জাতিকভাবে এতে তার সুনাম ও সুখ্যাতির ব্যাপক ঘাটতি ঘটে। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনী তথা বৃহত্তর বর্মি জনগোষ্ঠীকে তুষ্ট করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেন।

২০২০ সালের নির্বাচনে সু চি অনুসৃত জনতুষ্টি নীতির ফলে বিপুল বিজয় অর্জন করেন। তার দল এনএলডি পার্লামেন্টের ৪৭৬টি আসনের মধ্যে ৩৯৬টিতে জয়লাভ করে। সেনাবাহিনী সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- ইউএসডিপি মাত্র ৩৩টি আসন পায়। তখনই সেনাবাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করে। সামরিক বাহিনীর রাজনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ অনেকেই তখন মন্তব্য করছিলেন, সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে। সে দেশে এটি গুজব ছিল না। বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। জাতিসঙ্ঘ এবং কোনো কোনো বিশ্ব সংস্থা এ সম্পর্কে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দেয়। অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক দিন আগে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এ ধরনের অভ্যুত্থানের প্রয়াস অস্বীকার করা হয়। কিন্তু ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ নির্বাচিত পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। তারা অং সান সু চি’সহ এনএলডির প্রায় সব নেতাকে গ্রেফতার করে। দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। বিস্ময়ের ব্যাপার, তারা সামরিক আইন জারি করেনি। অভ্যুত্থান বা বিপ্লব ধরনের শব্দ ব্যবহার করেনি। তারা বলেছে, সংবিধান অনুসরণ করেই যাবতীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে সর্বাত্মক ক্ষমতা অর্পণ করেছে। রাজনৈতিক ভাষ্যে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধান দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরিকল্পনায় ছিলেন। নির্বাচনী ফলাফল ও সু চির আপসহীন মনোভাব সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের পথ প্রশস্ত করে দেয়। নির্বাচনে জয়ের পর সু চি এবং তার দল সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার চিন্তা করেছিল বলে জানা যায়। সামরিক বাহিনী সবসময়ই তার করপোরেট স্বার্থ নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। যখনই এতে ব্যাঘাত ঘটে তারা তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

১৯৪৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার গোটা পৃথিবী থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন থাকে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এ সময়কালকে বলে থাকেন ‘রেজিম অব আইসোলেশন’। সেনাবাহিনী এই সময়কালে সেখানে একধরনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের কথা বলে। এ ব্যবস্থাটি ছিল অনেকটা চীনা ধারায়। ভৌগোলিকভাবে মিয়ানমারের সাথে রয়েছে চীনের বিশাল সীমান্ত। বিচ্ছিন্নতার সময়কালে মূলত চীনই ছিল মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিভাবক।

২০১৫ সাল থেকে সেখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক তৎপরতা বেড়ে যায়। বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য নিজেদেরকে খানিকটা উন্মুক্ত করে মিয়ানমার। ইউরোপ ও আমেরিকা থেকেও বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসে। অং সান সু চি চীন এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে কষ্টকর ভারসাম্যের চেষ্টা করেন। ভাষ্যকাররা বলছেন, মিয়ানমারের উন্মুক্তকরণ নীতির ফলে অসন্তুষ্ট হয় চীন। তাই সামরিক বাহিনী যখন ক্ষমতা দখল করে তখন চীন প্রকারান্তরে এর প্রতি সমর্থন জানায়। চীনের ভাষায়, এটি হচ্ছে প্রশাসনিক রদবদল। নিরাপত্তা পরিষদে চীন সম্মত না হওয়ায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেয়া যায়নি। পরে নিরাপত্তা পরিষদকে ‘সেনাশাসন প্রত্যাহার করার’ আহ্বানের মধ্যেই সীমিত থাকতে হয়। অপর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হলে অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, সেনাশাসনের ফলে দীর্ঘকাল ধরে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপিত ছিল। আবার যদি এ ধরনের অবরোধ আরোপ করা হয় তা মিয়ানমারের জনসাধারণের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আমরা আগেই বলেছি, মিয়ানমারে দীর্ঘকাল ধরে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকার কারণে গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্ত হয়ে ওঠেনি। তবে বিগত বছরগুলোতে আধাগণতন্ত্রের অনুশীলন যুবসমাজ ও জনগণকে অনেকটাই সচেতন করেছে। এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণপ্রতিক্রিয়ায়। লক্ষ করা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে সেখানে জোরদার হচ্ছে বিক্ষোভ। ২ ফেব্রুয়ারি দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে জনগণ অভ্যুথানের প্রতিবাদ করে। সে দেশের কালচার অনুযায়ী, থালাবাটি ও ঢোল বাজানো বিদায়ের ঘণ্টা স্বরূপ। ইয়াঙ্গুন শহরবাসী দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির গ্রেফতারের প্রতিবাদ এভাবেই জানায়। এরপর দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যাপক প্রতিবাদের আয়োজন করে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ইয়াঙ্গুনের দাগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকরা ব্যাপক বিক্ষোভের আয়োজন করে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও বিক্ষোভে শামিল হচ্ছে। রাজধানী নেইপিডোতেও বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এবারে সামরিক বাহিনীর এই অভ্যুত্থান ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। যদিও এ ধরনের গণবিক্ষোভ দমনে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ করছে সামরিক সরকার, তবুও মিয়ানমারের জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে- এই প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক বিশ্বের।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জবি শিক্ষার্থীদের রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি চাঁদাবাজি মামলায় তারেক রহমানসহ ৮ জনের অব্যাহতি ভিজিডির চাউল নিতে এসে ট্রলির ধাক্কায় ২ নারী নিহত মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশে খালেদা জিয়া আইনজীবী সাইফুল হত্যা : আটক ৩০, দুই মামলার প্রস্তুতি সমস্ত সভ্যতার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাবেক কৃষিমন্ত্রী ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের রেকর্ড সংগ্রহ স্ত্রী হত্যা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন

সকল