রাষ্ট্রধর্মের ইতিহাস ও তাৎপর্য
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:৩১
রাষ্ট্রধর্মের তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। কেবল ব্যক্তির ধর্ম থাকে।’ আসল বিষয়টি না বোঝার কারণেই এ কথার অবতারণা করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রের চলার জন্য কোনো আদর্শ থাকবে কি না। তার কোনো মৌলিক নীতিমালার প্রয়োজন আছে কি না। আধুনিক ইতিহাসে দেখতে পাই, রাষ্ট্রের সংবিধানে নানা আদর্শের কথা বলা থাকে। অনেক সংবিধানে রয়েছে গণতন্ত্রের উল্লেখ। অনেক সংবিধানে কমিউনিজমকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ ঘোষণা করা হয়, অর্থাৎ রাষ্ট্র কমিউনিজমের নীতিমালা অনুসরণ করবে। অনেক সংবিধানে সোস্যালিজমের কথা বলা হয়েছে। কিছু সংবিধানে সেকুলারিজমকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ বা অন্যতম রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, যেসব রাষ্ট্রে কমিউনিজমকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব রাষ্ট্রে সবাই কমিউনিস্ট নয়। আবার যেসব রাষ্ট্রে সেকুলারিজমকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব রাষ্ট্রে সবাই সেকুলার নয়। তারা সেকুলারিজমের (রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ধর্ম বাদ দেয়া) নীতিতে বিশ্বাস করে না। রাষ্ট্রীয় আদর্শ হওয়ার জন্য এটা জরুরি নয় যে, এক শত ভাগ লোককে সে আদর্শে বিশ্বাসী হতে হবে। বিংশ শতাব্দীতে বেশির ভাগ মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্র তার আইন, প্রশাসন, অর্থনীতি- এসব ক্ষেত্রে ইসলামকে আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করবে। ইসলাম যেহেতু একটি জীবনব্যবস্থা এবং কেবল আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়, তাই ওই সব দেশ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা সঙ্গত মনে করেছে। তাদের কাছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অর্থ রাষ্ট্রের নামাজ পড়া নয়, রোজা পালন নয়, হজ করা নয়। তার অর্থ, রাষ্ট্রের ইসলামী আইন অনুসরণ করা। ইসলামী আইনের অন্যতম দিক হচ্ছে, অমুসলিমদের সব নাগরিক অধিকার প্রদান; যেমন রাসূল সা: মদিনা সনদের মাধ্যমে অমুসলিম নাগরিকদের প্রদান করেছিলেন।
সুতরাং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বিষয়টিকে না বুঝে যেভাবে তার বিরুদ্ধে ‘যুক্তি’ দাঁড় করানো হচ্ছে, তা সঙ্গত নয় মোটেও। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম না করে অন্যভাবে ইসলামকে রাষ্ট্রের ভিত্তি বানিয়েছে। যেমন ইরান নিজেকে ইসলামিক রিপাবলিক বা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছে এবং কুরআন ও সুন্নাহকে আইনের ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। একই ব্যাপার ঘটেছে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। তারাও দেশকে ইসলামী রিপাবলিক এবং কুরআন ও সুন্নাহকে আইনের উৎস ঘোষণা করেছে। মদিনাভিত্তিক ইসলামিক রাষ্ট্রে ইসলামিক রিপাবলিক বা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ছিল না। কিন্তু সেখানে সম্পূর্ণ আইন ছিল কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক। বিচারকরা ইসলামী শরিয়তের ভিত্তিতে বিচার করতেন। শাসকরা ইসলামী মূল্যবোধের এবং আইনের ভিত্তিতে দেশ চালাতেন। অবশ্য পরে ইসলামের খেলাফত ব্যবস্থা পরিবারভিত্তিক হয়ে যায় (যা যথার্থ ছিল না)। কিন্তু রাষ্ট্রের অন্য সব কিছু ইসলামী নীতিমালাভিত্তিক ছিল, আইন ও বিচার তো অবশ্যই। এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মুসলিম রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামকে পরিত্যাগ করতে চান না। কুরআনও তাদের পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করতে বলেছে।
আরো উল্লেখ করা যায়, পাশ্চাত্যের অন্তত চল্লিশটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্রে রাষ্ট্রধর্ম হয় ক্যাথলিক বা প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টবাদ। এর অর্থ হচ্ছে, দেশগুলো ওই ধর্মের নীতিবোধ ও মূল্যমান অনুসরণ করবে। সুতরাং মুসলিম বিশ্বে অনেক দেশে যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়েছে বা বাংলাদেশে করা হয়েছে, তা সঙ্গত।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা