০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

সভ্যতা ধ্বংসের ইঙ্গিত

সভ্যতা ধ্বংসের ইঙ্গিত - প্রতীকী ছবি

বর্তমান সভ্যতা কয়েক দশকের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ধারণা পোষণ করছেন নাসা বিজ্ঞানীরা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অর্থায়নে পরিচালিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, অর্থনৈতিক-অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর সম্পদের ওপর ক্রমান্বয়ে চাপ বাড়তে থাকায়-সভ্যতাবিনাশী কর্মকাণ্ড জোরালোভাবে দৃশ্যমান হবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে।

আগামী শতকে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে কী ঘটতে চলেছে, তা বুঝে উঠতে তাত্ত্বিক মডেল ব্যবহার করে ওই গবেষণা চালানো হয়েছে। গণিতবিদরা দেখতে পেয়েছেন, বর্তমান সভ্যতা দ্রুত ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে। এর আগে ধ্বংস হওয়া রোমান সভ্যতা, হান সভ্যতা এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদাহরণ টেনে গবেষকরা বলেন, বিপর্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক করার পরও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখা যায়, সমাজের অভিজাত শ্রেণীর মানুষ আগের মতোই সবকিছু করে যাচ্ছেন। কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছেন না।

‘হিউম্যান অ্যান্ড ন্যাচার ডায়নামিক্যাল’ বা হ্যান্ডি মডেল ব্যবহার করে গণিতবিদ সাফা মোতেশাবি বলেন, সভ্যতা গড়ে ওঠা ও ভেঙে পড়ার প্রক্রিয়া ইতিহাসে পৌনঃপুনিক। একদল প্রকৃতি ও সমাজবিজ্ঞানী নিয়ে গবেষণাটি চালান মোতেশারি (দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট)। বিশ্বসভ্যতা ধ্বংসের জন্য পরিবেশবিজ্ঞানীরা আজ মানবজাতিকে দায়ী করেছেন। পরিবেশবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মানুষ চিত্তবিনোদনের জন্য যত টাকা ব্যয় করে- তার শতভাগের একভাগ পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ব্যয় করে না। বিশ্বব্যাপী দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় না থাকার কারণে গোটা বিশ্বে দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ মহামারী রূপ ধারণ করেছে। এ মহামারী বিশ্ব সভ্যতাকে ওলট-পালট করে দিয়েছে। রোগব্যাধি মহামারীর জন্য দায়ী প্রকৃতিবিনাশী কর্মকাণ্ড। রাষ্ট্র-নগর-মহানগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে রোগব্যাধি কখনোই মহামারী আকার ধারণ করে না।

পরিবেশ দূষণের প্রধান উৎস হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। জীবাশ্ম জ্বালানি নগর সভ্যতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। বন্যপ্রাণীরা আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিরই অংশ। পৃথিবীর সুস্থতা এবং সভ্যতা নিশ্চিত করতে হলে বন্যপ্রাণীদেরও রক্ষা করতে হবে। আমাদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার কাজ না করে আজ পুঁজিবাদীরা মুনাফার মালা গলায় ঝুলিয়ে মানবজাতি ধ্বংসের ব্যবস্থা করছে। বিশ্বনেতারা উন্নয়নের কল্পকাহিনী শোনান- কিন্তু মানুষের উন্নয়ন কি হয়েছে? দেশের উন্নয়ন আর মানুষের নৈতিক উন্নয়ন এক বিষয় নয়। এসব ব্যাপারে ভিন্নমত অবশ্যই আছে- তা নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবছি না। চিন্তিতও নই। শুধু একে অপরকে দোষ দিয়ে যাচ্ছি।

ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ৭৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত, আড়াই শ’ কোটি মানুষ যথোপযুক্ত স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত আর ১৩০ কোটিরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎসুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে- জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে (এএফপি)। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট রিপোটর্’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয় যা প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো।

করোনার প্রকোপ, নিত্যদিন ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, মহামারী ভবিষ্যতে আর কী কী অপেক্ষা করছে মানুষের জন্য। এসব প্রশ্নই এখন ঘুরছে মানুষের মনে। এরকম বিপর্যয়ের সাথে আগে কখনো মোকাবেলা করেনি মানুষ। এখনো মনে আছে, ২০১২ সালের শেষে মায়ান ক্যালেন্ডার কী বলেছিল? মায়ান ক্যালেন্ডার বলেছিল- ২০২০ সালেই হবে পৃথিবীর ধ্বংস। পৃথিবীর ধ্বংস না হলেও প্রায় ২১ লাখ লোক করোনায় মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০ কোটি মানুষ। এটা ছিল মানবজাতির জন্য একটি ভয়াবহ বিপর্যয়। যদিও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে পৃথিবীর ধ্বংসের জন্য ধার্য ছিল ২০২২ সাল। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ২১ জুনেই শেষ হয়ে যাবে পৃথিবী। পৃথিবী এত পাপের বোঝা এখন সহ্য করতে পারছে না। সে নিজের মৃত্যু কামনা করছে সৃষ্টিকর্তার কাছে।

পৃথিবীর ধ্বংসের দিন আসন্ন- এরকম কথা বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী পাওলো তাগালগুইন এ বিষয়ে একটি টুইটও করেছিলেন। কিন্তু পরে সেই টুইট মুছে ফেলা হয়। পাওলোর কথায়- ‘আমরা প্রযুক্তিগতভাবে এখন আগের চাইতেও অনেক উন্নত। আর এ কারণেই আমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে হঠাৎ করেই ২১ জুনের পর থেকে ১১ দিনের কোনো হিসাব নেই। ১৭৫২ সালে এই ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২০২০-এর ২১ জুনের পর সেই ক্যালেন্ডার শেষ। প্রতি আট বছর অন্তর পৃথিবী কঠিন যুদ্ধের সম্মুখীন হবে এমনই লিখেছিলেন পাওলো তার থিয়োরিতে কিন্তু সেই তত্ত্বে সিলমোহর দেয়নি নাসা। বলেছিল বিজ্ঞান এরকম কিছু বলে না। সবসময় গাঁজাখুরি গল্প বা সিনেমা বানিয়ে এরকম কোনো থিয়োরি জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না। ২০২০ সালে যেরকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছি আমরা, সে সবের কিছুই হয়নি ২০১২ সালে। ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে পৃথিবী এরকম কোনো প্রমাণ আসেনি তাদের হাতে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও নানা গুজব ছড়াচ্ছে। সেসব থেকে সবাইকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তারা।

ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) মনে করে, হলিউড সিনেমার মতো একটি অ্যাস্টেরয়েড এসে পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে। পৃথিবীর মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে, এক-দু’শ তলা বিল্ডিং ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে, পায়ের নিচের মাটি দু’ভাগ হয়ে গলিত লাভা বেরিয়ে আসবে। ব্যাপারগুলো কি খানিকটা পরিচিত লাগছে? প্রায় সব ধর্মেই উল্লেখ আছে- পৃথিবীর চূড়ান্ত পরিণতির দিনের কথা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যাকে কিয়ামত বলে জানেন। ধর্মগ্রন্থের হিসাবে এই শেষ দিনে সমস্ত পৃথিবী এভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে। ২০১৯ সালে প্ল্যানেটরি ডিফেন্স কনফারেন্সে এমনই কিছু তথ্য দিলেন নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রাইডেন স্টাইন। তিনি বললেন, ‘সময় এসেছে সিনেমা, হলিউড এসব কিছুর কথা ভুলে এই পৃথিবীকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সেদিকে বেশি মনোযোগ দেয়ার। বিগত কয়েক বছর প্রায় প্রতিদিনই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে ভূমিকম্প হচ্ছে। বলা হচ্ছে- ভূমিকম্পেই শেষ হয়ে যাবে পৃথিবী। সূর্যের শরীরে সৌরকলঙ্কের চিহ্ন ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। তাই এরকম একটি পরিস্থিতি ঘটতেই পারে। শুধু তাই নয়, এর সাথে সূর্যের চুম্বকীয় ক্ষমতাও ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে মহাজাগতিক রশ্মি অতিরিক্ত মাত্রায় সৌরজগতে প্রবেশ করছে।

যার ফলে ভয়ঙ্কর একটি ভূমিকম্প হলেও হতে পারে সমগ্র পৃথিবীজুড়েই। পৃথিবীর নানা প্রান্তে বরফ গলতে শুরু করেছে। ফলে বাড়তে চলেছে শীত। সেই সাথে বাড়ছে বন্যার আশঙ্কাও। গত কয়েক বছরে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের ফলে বরফ গলেছে অনেক স্থানে। বছরের শেষ দিকে, তীব্র ঠাণ্ডায় যখন জবুথবু এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকা, তখন ভয়াবহ দাবানলের আগুন গ্রাস করে ফেলে অস্ট্রেলিয়াকে। প্রায় সময়েই এরকম ঘটনা ঘটছে অস্ট্রেলিয়ায়। এছাড়া ২০১৯ সালেই পুড়ে ছাই হয়েছে বিশ্বের ফুসফুস আমাজন বনাঞ্চল। ফণী ও আমফান তারই ইঙ্গিত। ধ্বংস হয়ে গেছে চাষের জমি। ধুয়ে গেছে বাড়িঘর। ঘূর্ণিঝড় আমফানে শেষ আশ্রয়টুকুও হারিয়েছে মানুষ।

মহাকাশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যেকোনো সময় পৃথিবী লক্ষ্য করে তিনটি বিশালাকৃতির গ্রহাণু ধেয়ে আসতে পারে। এই গ্রহাণুগুলোর কোনো একটির সাথে পৃথিবীর ধাক্কা লাগলেই মানবসভ্যতার বড়সড় ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রাচীন সভ্যতা, মধ্যযুগীয় সভ্যতা সব সভ্যতাই আজ ধ্বংস হয়ে গেছে- পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন ‘আর, কত সভ্যতাকে আমি ধ্বংস করেছি তাদের পূর্বে! তুমি দেখতে কি পাও তাদের কোনো নাম-নিশানা? শুনতে কি পাও তাদের দীর্ঘশ্বাস।’ (আল কুরআন ১৯ : ৯৮) আল্লাহর এই ঘোষণার পর কিছু সচেতন মানুষের মাঝে জেগেছে উপলব্ধি। তারা অবস্থার পরিবর্তন চাইছে। বিকশিত হচ্ছে প্রয়োজনবোধ ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার মিলিত শক্তিই তাই বর্তমান বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ আজ মানুষেরই হাতে। পছন্দনীয় ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য আমাদের সামনে খোলা আছে সব ধরনের সম্ভাবনার দুয়ার। যুক্তিবাদী মানুষ ঘটনাগুলোকে সেভাবে না দেখলেও একটি বিষয় পরিষ্কার। সবারই জানা আছে, বর্তমান বিশ্ব পার করছে এক ভয়ঙ্কর সময়। পত্র-পত্রিকা আর টিভি সংবাদের বেশির ভাগ অংশজুড়ে থাকে দুঃসংবাদ- যুদ্ধ, মৃত্যু আর দুর্ঘটনা। সারা বিশ্বে বইছে অশান্তির ঝড়। মানুষের তৈরি কৃত্রিম সঙ্কটের পাশাপাশি প্রকৃতিও যেন প্রতিশোধের নেশায় ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, সুনামি, মহামারী, দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিচ্ছে। একসময় খবরের কাগজে দুর্যোগ সম্পর্কিত শিরোনামগুলো ছিল বিরল। এখন সেগুলো পরিণত হয়েছে সাধারণ ঘটনায়। আমরাও জানি, প্রকৃতি মানবজাতির কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস আর সারা জীবনের অর্জনকে একদিনে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই এখনো আমরা এর ক্ষমতাকে কিছুটা সমীহ করি। কিন্তু অজস্রবার একই জিনিস দেখ দেখে অভ্যস্ত হওয়ায় এখন আর আমরা তেমন বিস্মিত হই না। একবিংশ শতকের প্রথম বছরগুলোতে ঘটেছে ব্যাপক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। টর্নেডো, হারিকেন, মারাত্মক বজ্রঝড়, ভয়াবহ বন্যা, খরা। নজিরবিহীনভাবে ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে মানুষের জান, মাল আর পৃথিবীর বৃহৎ অবকাঠামোর। এসব উদাহরণ সবারই জানা। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে মাত্র একটি ভূমিকম্পে ৬৯ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। আর ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। মিয়ানমারে সাইক্লোন নার্গিস ৮৪ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটিয়েছে। আর ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতির কারণ হয়েছে। কয়েক বছর আগে উত্তর আমেরিকায় হারিকেন ক্যাটরিনা নিউ অরলিন্স শহর লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। মারা গিয়েছিল এক হাজারেরও বেশি মানুষ যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৮১ বিলিয়ন ডলার। ১১ মার্চ ২০১১ জাপানে ঘটে গেল স্মরণকালের ভয়াবহ সুনামি। আমাদের এই ছোট ভূখণ্ডে অহরহ ঘটছে সিডর বা আইলার মতো ভয়াবহ সাইক্লোন। প্রতি বছর মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যা আর জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের অতি সাধারণ ঘটনা। সম্প্রতি এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভূমিকম্প আর পাহাড় ধস। ২০১০ সালের ১৫ জুন কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মারা পড়ল ৫৩ জন। পাহাড় ধসে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় প্রায়ই কিছু না কিছু লোক মারা যাচ্ছে। সেই সাথে আছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। ১১ জুলাই ২০১১-এ চট্টগ্রাম শহরে ঘটেছিল মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনায় এক সাথে ৪৩ জন স্কুলছাত্রের মৃত্যু ঘটেছিল। মিশুক মুনীর বা তারেক মাসুদের মতো সৃষ্টিশীল ব্যক্তিদের হতে হয়েছিল দুর্ঘটনার শিকার। যুক্তিবাদীরা হয়তো বলতে পারেন- এগুলো নেহাতই দুর্ঘটনা। কিন্তু এ দুর্ঘটনাগুলোই কেন সব একসাথে শুরু হবে বিশ্বজুড়ে? বিগত একশ বছরে ভূ-প্রকৃতি পাল্টে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে পৃথিবীর সব জায়গায় শুরু হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় গ্রিনল্যান্ড ও আর্কটিকের বরফ আশঙ্কাজনক হারে গলতে শুরু করেছে। আর্কটিক মনিটরিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের (অগঅচ) একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে। আর্কটিকের রেকর্ডকৃত ইতিহাসে গত ছয় বছরে (২০১০ সাল পর্যন্ত) সবচেয়ে গরম পড়েছে। পৃথিবীর সমস্ত বরফের প্রায় ১০ ভাগ জমে আছে আর্কটিক সার্কেলে। এর বরফ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে প্রায় ৭ দশমিক ৫ মিটার। এর ফলাফল যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব কিছুর মূলে রয়েছে মানুষ। সমসাময়িক ভূতত্ত্ববিদ এবং পরিবেশবাদী দার্শনিক টমাস বেরির সাথে সবাই একমত হবেন। পৃথিবী যদি মানুষের উপস্থিতির প্রতি বিদ্বেষী হয়ে ওঠে তাহলে এর প্রধান কারণ হবে, আমরা পৃথিবী আর তার বাসিন্দাদের প্রতি সৌজন্যবোধ হারিয়ে ফেলেছি।

ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, মানবজাতির সমগ্র ইতিহাসে বিংশ শতাব্দী এক মহাদুর্দশার সাক্ষী হয়ে আছে। এক মানবগোষ্ঠীর হাতে অন্য মানবগোষ্ঠীর অসংখ্য মানুষ নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ হারিয়েছে। বিংশ শতক সম্পর্কে ইতিহাসবিদ এরিকের মূল্যায়ন বিবেচনা করলে এ বিবৃতির সত্যতা সম্পর্কে কোনোই সন্দেহ থাকে না। তিনি বলেন, বিংশ শতাব্দী রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সবচেয়ে হত্যাময় শতাব্দী। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জিবিগনিউ ব্রিজিনস্কি হিসাব করে বলেন, এমনকি বিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগে শুধু ১৯৯০ সালের মধ্যেই ‘মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিকতা’ থেকে নিঃসৃত সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ১৬৭ থেকে ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স আর ইতালির মোট জনসংখ্যা মিলিয়েও এত লোক হবে না। মধ্যপ্রাচ্যেই মারা গেছে বহু মানুষ। ভূখণ্ড, তেল, খনিজ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ। সেই সাথে রয়েছে ধর্ম আর জাতিগত বিদ্বেষ। আবার ২০০০ সালের পর থেকে অদ্যাবধি এ হত্যা প্রতিযোগিতার হার যেন বেড়ে গেছে অনেক বেশি।

বেশ কয়েক বছর আগে, নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এক ব্যক্তি বোমা ও বন্দুক দিয়ে আক্রমণ করে ৭৩ জন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলল। অথচ এর পেছনে কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। বিশ্বের শ্রেষ্ঠজাতি হিসেবে পরিচিত ইংরেজদের দেশ ইংল্যান্ডে সাদা-কালোর মাঝে চলছে তুমুল দাঙ্গা। প্রায়ই শোনা যায়, কিছু মানুষ ভারসাম্য হারিয়ে অকারণে কিছু শিশু, নারী, স্কুলের ছাত্রছাত্রীকে হত্যা করছে। অতীতের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, ইদানীং এ ধরনের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। মোট কথা, মানুষের অন্তরে বিরাজ করছে এক অদ্ভুত হিংস্রতা, এক ভয়াবহ অস্থিরতা। পৃথিবীর কেউই যেন আজ স্বস্তিতে নেই। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কয়েক বছর আগে আমিনবাজারে একদল গ্রামবাসী মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলল ছয়জন মেধাবী কলেজছাত্রকে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী পুলিশ স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখল।

টেলিভিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে অস্বাভাবিক হত্যাকাণ্ড। মা তার শিশুকে হত্যা করছে, সন্তান খুন করছে বাবা-মাকে। অতি সাধারণ কথায়ও মানুষ সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। লেগে যাচ্ছে তুমুল গণ্ডগোল, ঘটছে রক্তারক্তি কাণ্ড। কারো মাঝে সহনশীলতার লেশ মাত্র নেই। আমি জানি আমার এ লেখার সময়ও পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ঘটছে নির্মম হত্যাকাণ্ড আর ধ্বংসযজ্ঞ। এসব অনাচারই পৃথিবীকে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। আর পৃথিবী সৃষ্টিকর্তাকে বলছে- হে প্রভু, আপনি আমাকে এ দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি দিন। হয় আমাকে মেরে ফেলুন- না হয় মানবজাতির মধ্যে সুবুদ্ধি প্রদান করেন।


লেখক : গ্রন্থকার ও গবেষক
E.m: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায় বহাল কুড়িগ্রামে পুরনো কাপড়ের দোকানে ভীড়, কমেনি কমেনি শীতের তীব্রতা ইসরাইলি হামলায় গাজায় একই পরিবারের ৭ শিশুসহ নিহত ১১ বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা রাজধানীর বিজয় সরণিতে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত উত্তরা ও তুরাগ নদী-সংলগ্ন এলাকায় সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বাংলাদেশীদের ভিসা কিমানোয় ভারতে বিদেশি রোগী অর্ধেকে নেমেছে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আদর্শবান ও মানবিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে : আল্লামা মাহফুজুল হক ঘনকুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ তড়িঘড়ি করে আর্টিকেল ৭০ তুলে দিলে এমপি কেনাবেচা শুরু হবে : রিজভী ডাকসুসহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, ক্যাম্পাসে বিবাদের আভাস

সকল