করোনাভাইরাস প্যানডেমিক : বছরের আলোচিত চরিত্র
- সৈয়দ আবদাল আহমদ
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:২৮, আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩০
নতুন বছর ২০২১ সাল দরজায় কড়া নাড়ছে। বিদায় নিচ্ছে বহুল আলোচিত ২০২০ সাল। কালের গর্ভে বছরটি বিলীন হতে চলেছে। তবে ইতিহাসের পাতা থেকে কোনো দিন একে মুছে ফেলা যাবে না। ২০২০ সাল বিশ্বব্যাপী চিহ্নিত হয়েছে একটি বিধ্বংসী বছর হিসেবে। অতিক্ষুদ্র অদৃশ্য এক ভাইরাস বছরজুড়ে পৃথিবীকে অস্থির করে রেখেছে। এখনো যার ত্রাস অব্যাহত আছে। এই ভাইরাস বিশ্বের সাড়ে ১৭ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সেই সাথে আট কোটিরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত। মহামারীর প্রভাবে অর্থনৈতিক খাতে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, মহামারীতে কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ১০০ কোটিরও বেশি শিশু এ কারণে স্কুলে যেতে পারেনি।
ক্ষুদ্র এই ভাইরাস গত প্রায় একটি বছর মানুষের জীবনের স্বপ্ন ও পরিকল্পনার অনেক কিছুই চুরমার করে দিয়েছে। অনেক মানুষ চিরকালের জন্য তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেক মানুষ প্রিয়জনের সাহচর্য ছাড়া নিঃসঙ্গ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই করুণ অসহায় মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপজুড়ে, তেমনি আমাদের বাংলাদেশ, প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বজুড়ে। যদি বলতে বলা হয় ২০২০ সালে পৃথিবীর বর্ষসেরা ঘটনা কোনটি কিংবা আলোচিত বিষয় বা চরিত্র কোনটি? তাহলে যে কেউই একবাক্যে বলবে করোনাভাইরাস মহামারী। বিবিসি, সিএনএনসহ বিশ্ব মিডিয়া খুললেই যে শব্দ কানে বাজে তা হচ্ছে, ‘করোনাভাইরাস প্যানডেমিক’।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে দেশে লকডাউন। তাই মানুষকে থাকতে হয়েছে ঘরবন্দী। কোটি কোটি মানুষ কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে। বছরটি শেষ হয়ে গেলেও প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবা শেষ হয়ে যায়নি। বরং নিত্যনতুন রূপ ধারণ করে নিজের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে করোনাভাইরাস। ঘন ঘন রূপ বদলানো এ ভাইরাসের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। এ শত শত সাধারণ রূপান্তর ইতোমধ্যে ঘটেছে। এর মধ্যে মারাত্মক দু’টি ঘটেছে এই গত সপ্তাহে। একটি রূপান্তরের ধরন চিহ্নিত হয় যুক্তরাজ্যে, অন্যটি দক্ষিণ আফ্রিকায়। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি যুক্তরাজ্যেও চিহ্নিত হয়েছে। ফলে ভাইরাসের আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ কোনোভাবেই কাটছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগ বিগত ১০০ বছরের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বড় ধরনের স্বাস্থ্যসঙ্কট।
নতুন ভাইরাসকে বলা হচ্ছে সার্স-কোভিড-২। পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২। নাম অনেক বড় হলেও ভাইরাসটি কিন্তু অতিক্ষুদ্র। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১২০ ন্যানোমিটার অর্থাৎ ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ। সহজভাবে বলা যায়, একটি আলপিনের ডগায় ১০ কোটি এ ভাইরাস কণা অনায়াসে স্থান করে নিতে পারে। এর থেকে মাত্র কয়েক শ’ ভাইরাস কণা সংক্রমিত করতে যথেষ্ট। আর একবার সংক্রমিত হলে এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ওই রোগকেই বলা হয় ‘কোভিড-১৯’।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বে যত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হয়েছে, অন্য কোনো রোগের ক্ষেত্রে এক বছরে এতটা অগ্রগতি হয়নি। কোনো একটি ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরি করতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এইডস রোগের টিকা এত বছরেও উদ্ভাবিত হয়নি। অথচ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর হচ্ছে, মাত্র ১০ মাসের মধ্যে এই ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের একাধিক টিকা তৈরি এবং মানবদেহে তার প্রয়োগও শুরু হয়ে গেছে। ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার তৈরি দু’টি টিকা অনুমোদিত হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও অনুমোদিত হতে যাচ্ছে। রাশিয়া তাদের স্পুটনিক-৫ টিকা অনুমোদন করে সে দেশের মানুষের দেহে পুশ করছে। চীনও তাদের সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন সহসাই করতে যাচ্ছে।
২০২০ সালটা আরো কিছু কারণে ইতিহাসের পাতায় চিহ্নিত হয়ে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল দেশটির অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পরাজিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনই এত বিপুলসংখ্যক ‘পপুলার ভোট’ পেয়েছেন যা অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পাননি। জো বাইডেন পেয়েছেন আট কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার ৫০২ পপুলার ভোট। অন্য দিকে ট্রাম্প পেয়েছেন সাত কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৫৯৩ ভোট।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন। তিনি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন ৩০৬টি। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। কিন্তু তবুও এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানাননি, যা আমেরিকার গণতন্ত্রের একটি ঐতিহ্যগত রেওয়াজ হিসেবে চলে আসছে। জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগে ট্রাম্পের করা ৫০টিরও বেশি মামলা কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট তাকে ‘এবার থামুন’ বলে সর্বসম্মত এক ‘অর্ডার পাস’ করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ তৎপরতা থেকে বিরত হচ্ছেন না। আমেরিকায় ১০০ বছর আগে ১৯১৯ সালে নারীর ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। আর ১০০ বছর পর ভাইস প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় উচ্চতম পদে প্রথম একজন নারী, কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হয়েছেন। এটাও রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড ও ব্রেওনা টেলরের হত্যাকাণ্ড দেখেছে। তাই দাসপ্রথার মোড়লদের মূর্তি গুঁড়িয়ে দেয়া এবং বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন জোরদার ছিল। এ বছরটিতেই বিশ্ব দেখেছে একাধিক, বিধ্বংসী দাবানল।
বাংলাদেশের জন্য এ বছরটি আলোচিত পদ্মা সেতুর জন্য। দেশের দীর্ঘতম ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি স্থাপিত হয়েছে গত ১০ ডিসেম্বর। এই স্প্যান পদ্মার দুই পাড়কে সংযুক্ত করেছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের এক বড় স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আরেকটি বিষয় সর্বমহলে গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে। তা হলো, দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক দুর্নীতি এবং নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুতর অসদাচরণের জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী মহামারী পরিস্থিতি
বিশ্বের ১৮৮টি দেশে করোনাভাইরাস তার বিস্তার ঘটিয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট কোটি ছাড়িয়েছে। করোনায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৭ লাখ। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি লোক করোনা থেকে সেরে উঠেছেন। তবে তাদের বেশির ভাগই করোনাপরবর্তী জটিল সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে যেসব রোগী হাসপাতালের আইসিইউ থেকে ফিরেছেন, তারা ফুসফুস, হার্ট, কিডনি এবং ডায়াবেটিসজনিত ভয়াবহ সমস্যা মোকাবেলা করছেন।
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ভারতে করোনা রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে দেড় লাখ মানুষ। ব্রাজিলে করোনা রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু দুই লাখ ছুঁইছুঁই। করোনা রোগী ও মৃত্যু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, রাশিয়া, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত প্রভৃতি দেশ।
বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন সাড়ে সাত হাজার মানুষ। এর বাইরে করোনার উপসর্গে মারা গেছেন আরো দুই হাজারের বেশি। করোনায় বাংলাদেশে ১১৬ জন ডাক্তারের মৃত্যু হয়েছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০-এর ৯ জানুয়ারি। এর ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিষয়ে প্রথম সতর্ক করার চেষ্টা করেন একজন চীনা ডাক্তার, যিনি চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে উহানের একটি হাসপাতালে কাজ করতেন। নাম লি ওয়েনলিয়াং। দুঃখজনক হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত তিনিও করোনাভাইরাসে মারা যান। এ ভাইরাসের কথা প্রকাশ করায় তাকে চীনা সরকার কড়া নজরদারিতেও রেখেছিল। চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন থাইল্যান্ডে গত ১১ জানুয়ারি। তবে থাইল্যান্ড কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করায় সেখানে করোনাভাইরাস থাবা তেমন বিস্তার করতে পারেনি। করোনায় চীনের বাইরে প্রথম কোনো রোগী মারা যান ফিলিপাইনে গত ২ ফেব্রুয়ারি। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩০ জানুয়ারি বিশ্বে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করে। ১১ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাস থেকে রোগের নামকরণ করা হয় ‘কোভিড-১৯’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাসকে ‘বৈশ্বিক মহামারী’ রূপে ঘোষণা করে।
করোনার নতুন রূপধারণ!
ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও মানবদেহে তার প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর পৃথিবীর মানুষ যে মুহূর্তে নতুন আশায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, সে সময় করোনাভাইরাসের নতুন রূপ বদলের (স্ট্রেইন) খবরে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন বৈশিষ্ট্যের এক করোনাভাইরাস লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানান ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা সেটিকে নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করেন। এই নতুন ভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের সাথে ৪০টিরও বেশি দেশ বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর শেষ হতে না হতেই আরো একটি নতুন করোনাভাইরাস বিস্তারের খবর আসে। এর উৎসস্থল দক্ষিণ আফ্রিকা। সে দেশের বিজ্ঞানীরা জানান, ভাইরাসের এই ভ্যারিয়ান্টটিও ‘দ্রুত ছড়ায়’। দুই ভাইরাসেরই একটি নির্দিষ্ট অংশে এন ফাইভ জিরো ওয়ান ওয়াই (N501y) নামে পরিবর্তন হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানান। ওই অংশ দিয়ে মানুষের দেহের কোষকে আক্রান্ত করে ভাইরাসগুলো। নতুন এই করোনাভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে। সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশেও এই নতুন ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে খবরে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, করোনার নতুন ধরনটি ইতোমধ্যে হয়তো আটলান্টিক পাড়ি দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, গত বছরের ডিসেম্বরের চীনের উহানে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর করোনাভাইরাস এ পর্যন্ত ১৭ বার জোরালোভাবে মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেছে।
টিকা ও নতুন বছরের আশাবাদ
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব, মাইক্রোসফট সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তার লেখায় ২০২১ সালকে ‘একটি আশাবাদের বছর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, নতুন বছরটি আগের বছরের চেয়ে ভালো হবে। কারণ কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরো বিশ্ব একজোট হয়েছে। বিশ্বের সরকার ও কোম্পানিগুলো এবং বিজ্ঞানীরা একজোট হয়ে মহামারী অবসানে কাজ করছেন। ফাইজার ও বায়োএনটেকের তৈরি করা টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। মডার্নার টিকা ৯৪ শতাংশ এবং অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রজেনেফার টিকা ৭০ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত। জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। ২০২১ সালে করোনার টিকা ও চিকিৎসার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছবে যে, এর বৈশ্বিক প্রভাব জোরদার হতে থাকবে। এই টিকা সর্বত্র পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গতি কমিয়ে দেয়া সম্ভব।
হতাশার খবরও আছে। করোনাভাইরাসের টিকা ধনী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য একচেটিয়া কিনে নিচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো তিনগুণ টিকা কিনে রেখেছে; কানাডা কিনে রেখেছে চারগুণ। গরিব ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ ক্ষেত্রে অসহায়। জাতিসঙ্ঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ব্যাপারে এগিয়ে না এলে টিকা থেকে এসব দেশ বঞ্চিতই থেকে যাবে। মহামারী দমন করতে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, মানুষের জীবনকে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মুনাফার ওপরে স্থান দিতে হবে। পৃথিবীর সব প্রান্তে স্বল্পতম সময়ে ও খরচে কোভিড টিকা পৌঁছে দিতে হবে। নতুবা মহামারী দমন করা যাবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জো বাইডেন। নতুন বছরের ২০ জানুয়ারি তিনি দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। নির্বাচিত হওয়ার প্রায় সবগুলো স্তর তিনি সফলভাবে পার হয়ে এসেছেন। সর্বশেষ আরেকটি স্তর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ সভা, যা ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এ সভা শেষ হলে আর কোনো বাধা থাকবে না তার সামনে। ২০ জানুয়ারি হবে অভিষেক। সেদিন তিনি প্রবেশ করবেন হোয়াইট হাউজে। আর সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘটবে প্রস্থান। প্রভাবশালী টাইম সাময়িকী বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচন করেছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজ পরিবর্তনের জন্য, প্রকট বিভেদের চেয়ে সহানুভূতিকে তুলে ধরার জন্য এবং বিপর্যস্ত বিশ্বকে মহামারী থেকে আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্য জানানোর জন্য তারা টাইমের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হয়েছেন।
জো বাইডেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি প্রথম ১০০ দিনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ কোটি লোককে করোনার টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। টিকা নিতে জনগণকে আগ্রহী করে তুলতে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে নিজে টিকা নিয়েছেন জো বাইডেন। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনে যে যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছিলাম, ক্ষমতা ছাড়ার দিনে তার চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ ও ভালো যুক্তরাষ্ট্র রেখে গেলাম; এটাই আমার উদ্দেশ্য।’ বাইডেন আরো ঘোষণা করেছেন, নতুন বছরে জলবায়ু চুক্তিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটিও আগামী পৃথিবীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা