২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রিজার্ভ জনগণের আমানত, রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

রিজার্ভ জনগণের আমানত, রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের - ছবি : নয়া দিগন্ত

কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো খুবই টেকনিক্যাল বিষয়। এটা হলো রাষ্ট্রীয় আমানত। এটা দেশের জনগণের আমানত, যা রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেয়া হয়েছে। রিজার্ভ থাকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশ কোনো সঙ্কটে পড়লে তা সামাল দেয়ার জন্য। অর্থাৎ একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে এটা সংশ্লিষ্ট। বিদেশ থেকে কিছু আমদানি করতে হলে অনেক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থাকে। সেগুলো এই রিজার্ভ তহবিল থেকে মেটানো হয়। তাই এটা একান্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাপার এবং জনগণের স্বার্থে তা কাজ করে। এই রিজার্ভ কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমে। ২০০০ সালের দিকে আমাদের রিজার্ভ এত কমে গিয়েছিল যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোও সম্ভব ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বলা হয় ‘রিজার্ভ সঙ্কট দেখা দিয়েছে’। তখন চেষ্টা করা হয় যেন রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। এখন এই রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মতো। কিন্তু এতেও উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই। বিদেশে অনেক ব্যক্তির হাতেও এর চেয়ে বেশি টাকা আছে। কারণ আমাদের রিজার্ভের বেশির ভাগ এসেছে রেমিট্যান্স আর দুই একটি খাত থেকে। আমাদের সস্তা শ্রম বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাদের রেমিট্যান্স থেকে আয় হচ্ছে। তৈরী পোশাক থেকে একটি অংশ আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় ও বাজেট সহায়তা কমে যাওয়া এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়ার কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। কিন্তু শক্তিশালী রিজার্ভের জন্য যে অভ্যন্তরীণ সামর্থ্য প্রয়োজন সেটি আমাদের নেই। এর মানে রিজার্ভের টাকা যদি আমাদের রফতানি করা পণ্য থেকে আসত তাহলে আমরা বলতে পারতাম- ‘হ্যাঁ, আমাদের সামর্থ্য আছে, আমাদের রিজার্ভ শক্তিশালী। রফতানির তুলনায় আমাদের আমদানি এখনো অনেক বেশি। আমরা আমদানিপণ্যের বিকল্প এখনো তৈরি করতে পারিনি। আমদানি বিকল্প মানে হলো, যে পণ্যটি আমি আমদানি করছি সেটি আর করার দরকার নেই। কারণ, এর বিকল্প আমরা দেশেই তৈরি করছি।’ বাংলাদেশের নাম এখনো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায়, উপরের দিকে। যাদের ম্যানুফেকচারিং খাত দুর্বল তারাই ‘স্বল্পোন্নত’ দেশ। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু দেশে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে তার সাথে ওই স্বপ্ন পূরণের কাজের বৈপরীত্য রয়েছে। আঙ্কটাডের সংজ্ঞা অনুযায়ী, এই তালিকা থেকে বের হতে হলে জিডিপির ১০ শতাংশ ম্যানুফেকচারিং খাত থেকে অর্জিত হতে হবে। আমাদের আয়ের প্রধান উৎস ম্যানুফেকচারিং নয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কথা বলা হলে রফতানি থেকে আয়ের প্রশ্ন আসবে।

আসলে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে যত বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছি বিষয়টা সেরকম নয়। এসব প্রসঙ্গের অবতারণা মূলত সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি উদ্বেগজনক খবরের কারণে। তাতে বলা হয়েছে- দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহের জন্য শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের দিকে নজর দিয়েছে। তাদের টার্গেটও মোটামুটি বড়-৯০৬.১৭ মিলিয়ন ডলার (সূত্র : ডেইলি স্টার)। আমার জানা মতে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫০ বছর বা তারও আগে পাকিস্তান আমলের ২৩ বছর মিলিয়ে গত ৭৩ বছরে রিজার্ভ ফান্ড থেকে কোনো প্রাইভেট কোম্পানি তো দূরের কথা, কোনো বেসরকারি ব্যাংকও টাকা নেয়নি। পকিস্তান প্লানিং কমিশনের ‘ফিসক্যাল মনিটরিং সেকশনে’ অ্যাসিসট্যান্ট চিফ ছিলাম। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের কথা আমরা শুনেছি, যারা দেশের শিল্প, ব্যাংক, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করত। তারাও সরকারের রিজার্ভ ভেঙে সেটা কাজে লাগানোর কথা ভাবেনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের রিজার্ভ ভেঙে কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, অনিশ্চিত ও নজিরবিহীন কাজ। এমন কাজ করা কোনোভাবেই সরকারের উচিত হবে না। আমি এসআইবিএলের চেয়ারম্যান থাকাকালে ওই প্রতিষ্ঠানটির সাথে ব্যাংকের লেনদেন হয়েছে। তা হয়েছে পুরোপুরি নিয়ম মেনে। এই নিয়ম মানার সংস্কৃতি বজায় রাখতে পারায় আমার সময়ে ব্যাংকটির ঋণ আদায়ে বকেয়া তেমন প্রায় ছিলই না। এটি তখন পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করতে পেরেছিল। অথচ এখন আমাদের দেশে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তার একটি চিত্র কিছুদিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী তুলে ধরেছেন সংসদে খেলাপি তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, ব্যাংকগুলো কাদের কিভাবে ঋণ দিচ্ছে তা তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে, যার ছয়টিই সরকারি খাতের।

এই যখন পরিস্থিতি তখন উল্লিখিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (পত্রিকার খবর অনুযায়ী) প্রথমে রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংক ও পরে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও একটি অংশ নাকি এ ঋণ দেয়ার পক্ষে। এমন আশঙ্কা অমূলক নয় যে, প্রতিষ্ঠানটি এ কাজে সফল হলে সেটা হবে রিজার্ভ তসরুপের সূচনা মাত্র। যারা এ কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন আইন সম্পর্কে তাদের জানাশোনা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২’ অনুযায়ী, রিজার্ভ থেকে এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া যায় না। রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে হলে তার গ্যারান্টার হতে হয় সরকারকে। এমনকি সরকারও যদি এখান থেকে তহবিল নেয় তার জন্যও গ্যারান্টি দিতে হবে।

ব্যাংকগুলো এসব সার্বিক বিষয় কতটুকু বিবেচনা করছে, সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্ট দেখা হয় কি না, ইত্যাদি প্রশ্নও থেকে যায়। আর রিজার্ভ ভেঙে কয়লা পোড়ানোর মতো পরিবেশদূষণমূলক প্রকল্প স্থাপনের চেষ্টাকে কেউ কেউ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ বলছেন। রিজার্ভ থেকে টাকার নেয়ার সিস্টেম বিশ্বের কোনো দেশে নেই। এশিয়ার মাত্র কয়েকটি ধনী রাষ্ট্র ইতঃপূর্বে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ব্যবহার করেছে। চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ তাদের রিজার্ভের উদ্বৃত্ত অংশ বিনিয়োগ করেছে। বেশির ভাগ টাকাই তারা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার করেছে অন্যান্য দেশে। কিন্তু, বাংলাদেশের মতো নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর রিজার্ভ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ধরনের উদাহরণ দেখা যায় না।

রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত কিছুটা তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এটা ইউনিক গ্রুপ যখন ওয়েস্টিন হোটেল করার জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়, তখনকার ঘটনা। যেকোনো প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের উদ্যোগ নিলে মেলা, শোভাযাত্রা এসব করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই সময় রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক ২০০ টাকা দরে ওয়েস্টিন হোটেলের শেয়ার কেনে। আমি ‘বাংলাদেশ সোস্যাল পিস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অলাভজনক জনকল্যাণমূলক ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি। এর তহবিল বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের দেখাদেখি আমিও ১৭০ টাকা দরে তিন কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিলাম। এরপর ওয়েস্টিনের উদ্যোক্তারা যখন নিয়মিত বাজারে শেয়ার ছাড়তে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জের কাছে অনুমতি চায় তখন এর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলে যে, শেয়ারের দাম ৬০ টাকার বেশি হবে না। তখন আমি শেয়ারপ্রতি যে বাড়তি টাকা দিয়েছি সেটি ফেরত চাইলাম। কিন্তু ওয়েস্টিন হোটেল আর আমার কথায় কান দেয় না। বাড়তি টাকা ফেরত পেতে হাইকোর্টে মামলা করি। তখন আমি জানতে পারি, একই কারণে রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকও মামলা করেছে। যেহেতু তিনটি মামলা একই ধরনের তাই হাইকোর্ট একই সাথে শুনানির কথা বলে। আদালত সাধারণত এমনটা করে থাকে। আইনজীবী নিয়োগ নিয়ে মামলা লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। হাইকোর্টে মামলা চালাতে কতটা আর্থিক চাপ সহ্য করতে হয় তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।

আমার আইনজীবী মামলার শুনানি করতে আদালতে হাজির হলেও দেখা যায় ব্যাংক দুটির পক্ষে কোনো আইনজীবী হাজির হচ্ছে না। ব্যাংককে তো টাকা দিয়ে আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। আজ ১০ বছরের বেশি সময় হয়ে গেল, ব্যাংক কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেয়নি। আজো মামলাটি হাইকোর্টে ঝুলছে। আর আমি আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে আছি। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা বোর্ডের গরজ নেই নিজেদের পাওনা টাকা উদ্ধার করার। অথচ তারাই এখন একটি বেসরকারি গ্রুপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে টাকা পাইয়ে দিতে চাইছে।

আজকে আমাদের দেশে আইন প্রয়োগ ও জবাবদিহিতার ব্যর্থতার কারণেই এ ঘটনাগুলো ঘটছে। এটা রাষ্ট্রকে অকার্যকর হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইনের দ্বারা এতটাই সুরক্ষিত যে, তারা কিভাবে এসব অনিয়মের অনুমতি দেয় সেটিই ভাবনার বিষয়। আমার মনে হয় নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে তারা অবহিত নন। আইন প্রয়োগ করে অনিয়ম দূর করার বদলে তারা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাতের নির্বিচার বিস্তার শুরু হয় বিএনপির সময়ে। আওয়ামী লীগ আমলে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। এরশাদের সময় ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর বেশ নিয়ন্ত্রণ ছিল। তখন ইসলামী ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। আমি তার কাছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তিনি বললেন, আমি আর বেসরকারি খাতে কোনো ব্যাংক দিচ্ছি না। তবে আমাকে বলা হলো, এই ব্যাংক কেন অন্য ব্যাংকের চেয়ে আলাদা, সেটি তুলে ধরতে বঙ্গভবনে প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। সেই প্রেজেন্টেশন দিই। একটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমতি আদায় করতে তখন আমাকে অবর্ণনীয় ঘাম ঝরাতে হয়েছে।

আমি তখন আইডিবিতে চাকরি করি। সেখান থেকে প্রায় ২৭ বার ঢাকা আসতে হয়েছে বিভিন্ন মহলে দেনদরবার করার জন্য। বঙ্গভবনে প্রেজেন্টেশন পর্যন্ত দিতে হয়েছে, সেটিও নজিরবিহীন। তখন আমি বলি, এ ব্যাংক দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য। বিশ্বে সম্ভবত এটাই প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক যেটি দারিদ্র্য দূরীকরণকে তার লক্ষ্য হিসেবে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলে ঘোষণা দিয়েছে। আমার প্রেজেন্টেশন এরশাদকে মুগ্ধ করে। তিনি যে আমাকে অর্থমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সে কথা আমার লেখায় আগেই বলেছি। এরপরও আমার ব্যাংকের অনুমতি আদায় করতে ১০টি বছর লেগেছে। অথচ আজ রাতারাতি ব্যাংক হয়ে যাচ্ছে। ফলে এগুলোর আর্থিক ভিত্তি ততটা মজবুত হচ্ছে না। আইন মান্য করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কড়াকড়ি করা হচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশের লোকসানি শাখার অধিকারী শীর্ষস্থানীয় ১০টি ব্যাংকের মোট ১০ হাজার ৪৬৫টি শাখার মধ্যে লোকসান দিচ্ছে এক হাজার ৯০৭টি শাখা। এই ১০টি ব্যাংকের মধ্যে ছয়টিই রাষ্ট্রমালিকানাধীন যাদের মধ্যে আলোচ্য গ্রুপকে রিজার্ভের টাকা পাইয়ে দেয়ার কাজে জড়িত অগ্রণী ব্যাংকও রয়েছে। এই যে প্রায় দুই হাজার শাখার লোকসান, তা আসলে কার? আসলে লোকসান দিচ্ছে সরকার তথা জনগণ। এসব লোকসানি শাখা অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মনে করি যদিও সরকার এটা করতে চাইবে না। কারণ এতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ক্ষেপে যেতে পারে, বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। কিন্তু কয়েক হাজার শাখা বন্ধ করে দেয়া হলে হাজার হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে। এসব শাখার জনবলকে অন্যান্য শাখায় ব্যবহার করা যায়। তাদেরকে নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্যত্র কাজে লাগানো যায়। দেশে অনেক মেগা প্রজেক্ট আসছে, সেগুলোতে নিয়োগ দেয়া যায়।

এ ক্ষেত্রে আমার একটি প্রস্তাব থাকবে দেশের প্রতিটি জেলায় ইউনিট ব্যাংকিং করার। এ দেশে ব্রিটিশ আদলে ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমেরিকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো ইউনিট সিস্টেম। আমেরিকার ব্যাংকগুলো সবাই স্বাধীন। আমেরিকার অর্থনীতির গতিশীলতা এখানেই। যে ব্যাংক মুনাফা করতে পারছে না সেটি বন্ধ করে দিতে তারা মুহূর্তকাল দেরি করে না। তারা যে এলাকায় ব্যাংক স্থাপন করতে যায় সেখানকার ভোগ বা অর্থ খরচের প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করে থাকে। আয়ের একটি স্বাভাবিক ক্রিয়া হলো খরচ। তারা খরচের খাতওয়ারি বিভাজন (ব্রেক আপ) দেখে। আমেরিকায় কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেই।

আমরা ফেডারেল রিজার্ভ হিসেবে যাকে জানি, সেটি কোনো সেন্ট্রাল ব্যাংক নয়। আমরা কি ব্রাঞ্চ ও ইউনিট ব্যাংকিংয়ের মিশ্রণ তৈরি করতে পারি না? আমরা প্রতি জেলায় একটি করে ইউনিট ব্যাংকিং ইউনিট করতে পারি। সেগুলোর নাম জেলার নামে দেয়া যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট জেলার লোকদেরকেই ওই ব্যাংকের স্পন্সর করার বিধান রাখা যেতে পারে। সেই সাথে ব্যাংকের ‘পেইড আপ ক্যাপিট্যাল’ সহনীয় করতে হবে। এমনটা করা গেলে আমার মনে হয় সারা দেশে সম্পদের ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটা পরিসংখ্যানে দেখেছি, সারা দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে হেডকোয়ার্টারে যে টাকা আসে, তার প্রায় ৬০ শতাংশ শুধু ঢাকাতেই বিনিয়োগ করা হয়; ২০ শতাংশ যায় চট্টগ্রামে; বাকি ২০ শতাংশ সারা দেশে।

জেলাভিত্তিক ইউনিট ব্যাংকিং করা গেলে এমনটা হবে না। তখন আমাদের উন্নয়ন হবে শান্তির উন্নয়ন। যে উন্নয়ন আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না, যে উন্নয়ন দূষিত বায়ু জোগান দেয়, যে উন্নয়ন মানুষকে অসুস্থ করে তোলে, সেটি উন্নয়ন হতে পারে না। দিনের শেষে শান্তিতে ঘুমাতে পারাই সত্যিকারের উন্নয়ন। এই উন্নয়নই সবাই চায়। ইউনিট ব্যাংক পারে এই শান্তির উন্নয়ন বিস্তারের বাহক হতে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement