২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আল কুরআনে অর্থনীতি : ২

ইয়াতিম ও নারীদের সমস্যা এবং অধিকার

-

এবং লোকেরা তোমার কাছে নারীদের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানতে চায়। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন এবং (সে সাথে সে হুকুমগুলোও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) এই কিতাবে বর্ণিত যে, ইয়াতিম মেয়েদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান করো না, তাদের বিবাহ করতে তোমরা আগ্রহ পোষণ করো না এবং (সেই হুকুমগুলোও) যা অসহায়-অক্ষম শিশুদের সম্পর্কে দেয়া হয়েছে। তোমরা ইয়াতিমদের প্রতি ন্যায় বিচার করবে। তোমরা যে কল্যাণকর কাজ করবে, তা আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। কোনো নারী যদি তার স্বামীর দিক থেকে নিষ্ঠুর আচরণ কিংবা তাকে পরিত্যাগের আশঙ্কা করে, তখন স্বামী-স্ত্রী যদি তাদের মধ্যে পারস্পরিক আপসে মিটমাট করে, তাতে দোষ নেই। এরূপ ক্ষেত্রে আপসই উত্তম; যদিও মানুষের মন লালসার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু তোমরা যদি ইহসান অবলম্বন করো ও আত্মসংযমী হও তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কর্মনীতি সম্পর্কে অবহিত আছেন (সূরা আন-নিসা : ১২৭-১২৮)

পরিপ্রেক্ষিত
সূরা নিসায় ব্যাপকভাবে পারিবারিক ব্যবস্থাপনা, নারী ও ইয়াতিমদের অধিকার ও সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আয়াত দু’টিতেও ইয়াতিম ও নারীদের সমস্যা,তাদের অধিকার ও তৎসম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লামা আলূসি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, মিরাসের আয়াত নাজিল হলে বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করল। কেননা এটা তাদের কাছে কঠিন মনে হলো। তারা প্রশ্ন করতে থাকে, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম-অযোগ্য কম বয়সী ছেলেরাও কি ওয়ারিস হবে? কম বয়সী মেয়েরাও কি উত্তরাধিকার পাবে? আসলে তারা আশা করছিল যে, এ ব্যাপারে আসমান থেকে কোনো সংশোধনী আসবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সাগ্রহে অপেক্ষা করতে করতে তারা দেখল, কোনো ওহি আর এলো না। তখন তারা ভাবল, এ বিষয়ে যা হওয়ার তা হয়েই গেছে তবে তো মিরাস সংক্রান্ত হুকুম মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। তারা বলাবলি করল, চলো, রাসূলুল্লাহ সা:কে আবার প্রশ্ন করা যাক। এ প্রস্তাব অনুসারে তাঁকে তারা পুনরায় প্রশ্ন করায় এ (১২৭ নং) আয়াত নাজিল হয়।

সাধারণ তাৎপর্য
নারীদের অধিকার সম্পর্কে যেসব বিধান ও নির্দেশ এ সূরার শুরুতে দেয়া হয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে আয়াতদ্বয়ে। এ ছাড়াও ইয়াতিম ছেলে-মেয়েদের সম্পত্তি ও অন্যান্য অধিকারের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। ইয়াতিম ও নারীদের আর্থ-সামাজিক অধিকারের বেশ কিছু আলোচনা সূরা নিসার পূর্ববর্তী আয়াতগুলোর আলোচনা প্রসঙ্গে এ গ্রন্থে বলা হয়েছে। ১২৮ নং আয়াতে নতুন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। এ আয়াতের মাধ্যমে তালাক ও বিচ্ছেদের পরিবর্তে পারস্পরিক অধিকারের কিছু কম বেশির ভিত্তিতে আপস করে নেয়াকে উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মানসিক সঙ্কীর্ণতাকে নিন্দা করা হয়েছে। স্ত্রীর সদ্ব্যবহার বা ইহসানকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

আর্থ-সামাজিক তাৎপর্য
পারিবারিক সংগঠন ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য পারিবারিক শান্তি রক্ষা সংক্রান্ত বিস্তৃত বিধি-বিধান ইসলাম দিয়েছে। এর বিরাট অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। মজবুত পারিবারিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত কল্যাণকর। এর মাধ্যমে কেবল সামাজিক শান্তিই রক্ষা পায় না, অনেক অসহায় লোকেরও সুব্যবস্থা হয়। যে সমাজে পারিবারিক ব্যবস্থা শক্তিশালী, সেখানে দুঃস্থ লোকের দায়-দায়িত্ব সরকার ও সমাজকে কম বহন করতে হবে। ১২৮ নম্বর আয়াতে উল্লিখিত তালাকের পরিবর্তে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আপস-মীমাংসার বিধান এ জন্যই দেয়া হয়েছে। তেমনিভাবে ১২৭ নম্বর আয়াতে ইয়াতিম শিশুদের কথা ও ইয়াতিম মেয়েদের কথা আলাদা আলাদাভাবে উল্লেখ করে তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাওয়া, তাদের সম্পত্তি তাদের প্রত্যর্পণ করা এবং তাদের অন্যান্য দান পাওয়ার (যেসব বিষয় সূরা নিসার প্রথম দু’রুকুতে আলোচিত হয়েছে) অধিকারের কথা জোরের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি ইসলামী রাষ্ট্র সরকার ও সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে এসব বিষয়কে যথাযোগ্য গুরুত্ব দিয়ে আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে শিশুদের সব অধিকার সংরক্ষণ করা।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement