চায়না কার্ড : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- আবু রূশদ
- ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৩৬
(গতকালের পর)
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালে এসে কিছুটা পরিবর্তিত হয়। তখন ক্ষমতার পট পরিবর্তনে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, চীন হয়তো তার অবস্থান হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু, যেকোনো কারণেই হোক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার চীনের সাথে আগের সরকারগুলোর মতো পুরোটা না হলেও বেশির ভাগ সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখে। ততদিনে অবশ্য চীন মুক্তবাজার অর্থনীতির দ্বারস্থ হয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ২০০১ সাল পর্যন্ত চীন থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো ভারী সমরাস্ত্র যেমন ট্যাংক, জঙ্গি বিমান, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করা না হলেও সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সহায়তা চলমান থাকে। চীন বরং সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসা বিএনপির হাতে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন বাংলাদেশ ও চীনের জনগণ দেখতে পায়, ঢাকায় তাইওয়ানের ব্যবসায়িক অফিস খোলার অনুমোদনের আড়ালে কনস্যুলার সুবিধা অর্থাৎ ভিসা দেয়ার ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করা হয়েছে। কাদের ইশারায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা রহস্যময় এবং ওই ঘটনায় চীন ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
কারণ, চীনের কাছে তাইওয়ান বরাবরই এক স্পর্শকাতর বিষয়। তাদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, তাইওয়ান হলো চীনের অংশ এবং কোনো বন্ধুরাষ্ট্র তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিক তা চীন মানতে নারাজ। মূলত চীনের ভেটোর কারণেই তাইওয়ান আজ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘে আলাদা দেশের মর্যাদা পায়নি। সে ক্ষেত্রে চীনের ‘ছাতার নিচে’ বেড়ে ওঠা বিএনপি সরকার কেন, কিভাবে তাইওয়ানকে ঢাকায় ভিসা ইস্যুর অনুমতি দেয় তা কোনোভাবেই বোধগম্য বিষয় নয়। এ নিয়ে চীন এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে যায় যে, তারা কূটনৈতিক ও অন্যান্য চ্যানেলে বিএনপি সরকারকে হুমকি দেয়। বিষয়টি হয়তো বেগম খালেদা জিয়ার পুরো নজরে ছিল না। তবে তিনি এর গূঢ় মর্মার্থ অনুধাবন করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে তাইওয়ানের ওই অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এতে তদানীন্তন বিএনপি সরকারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ায় অপরিপক্বতা এবং শীর্ষ পর্যায়ে কমান্ড চ্যানেলে অস্থিরতার প্রকাশ ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে যতভাবে সম্ভব চীনকে আশ্বস্ত করার প্রচেষ্টা চালান। এতে সামরিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আবারো সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে চীন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি, খুলনা শিপইয়ার্ডে চীনের সহযোগিতায় নৌবাহিনীর জন্য হালকা যুদ্ধযান তৈরির ক্ষেত্রে কারিগরি উন্নয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া, বিমানবাহিনী ৩৬টি আধুনিক মডেলের জে-৭ জঙ্গি বিমান সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় যার মধ্যে ১৬টি ২০০৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। বাকিগুলো সরবরাহ করা হয় পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। এর মধ্যে বেগম জিয়া চীন সফর করে সম্পর্কের অবনতি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। কিন্তু তাইওয়ানের ভিসা কেন্দ্র খোলার ইস্যুটি চীনকে বাংলাদেশ নিয়ে যে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয় তার রেশ বহুদূর পর্যন্ত গড়ায়। বিশেষ করে বিএনপির সাথে চীনের সম্পর্ক আর আগের অবস্থায় কখনো ফেরত যায়নি।
এর মাঝে চীন অর্থনৈতিক খাতে ত্বরিত অগ্রগতি সাধন করে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায় যা তাকে শুধু ব্যবসায়-বাণিজ্যে সুবিধা প্রদান করেনি, বরং সামরিক খাতেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সংযোজনে সহায়তা করে। দেং শিয়াও পিং মুক্তবাজার অর্থনীতির পথ অনুসরণের আগ পর্যন্ত চীনকে যারা দেখেছেন তারা কখনো বর্তমান চীনকে মেলাতে পারবেন না। এখানেই অনেক সিনিয়র পর্যায়ের নেতা ও বিশ্লেষকের চীন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যাপক ভুল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি যারা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে চীন ও চীনের সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতেন তাদের কাছেও বর্তমান চীন এক ভিন্ন বিষয়।
তারা হয়তো এর সমীকরণ মেলাতে পারবেন না। এ কারণেই দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চীনের নীতিমালা কেমন যেন ধোঁয়াশায় পরিপূর্ণ যা চীনপন্থী বিশেষজ্ঞরাও আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি যখন ‘ওয়ান-ইলেভেন’ সংঘটিত হয় তখন ভারত ও পশ্চিমা বলয়ের প্রায় সব মিডিয়াই এমন সব প্রচারণা চালিয়েছিল যে, তাতে সুস্পষ্ট করে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বিস্তার ঠেকানোর কথা রাখঢাক ছাড়া উল্লেøখ ছিল। ভারতের পত্রিকাগুলো একধাপ এগিয়ে বিএনপিকে ‘চীনের ছাতার নিচে থাকা সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম’ বলে চিহ্নিত করে এবং যেকোনো উপায়ে বাংলাদেশকে সেই ছাতার নিচ থেকে বের করে আনার ওপর জোর দেয়। পরবর্তীতে কী ঘটেছিল তা এখানে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। তবে, আপাতদৃষ্টিতে ‘চীনের ছাতার বাইরে থাকা’ পক্ষই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে। তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চীন সফরে গিয়েছিলেন। চীন তাকে সাদরে অভ্যর্থনাও করেছিল। কিন্তু হয়তো চীন এটাও জানত যে, জেনারেল মইন ততদিনে ভারতের সাথে গাটছড়া বেঁধে ফেলেছেন। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনীতে মইনের সেসব নার্ভাসনেসের কথা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সময় চীন বাংলাদেশের রাজনীতি বা অন্যান্য বিষয়ে খুব একটা নজরও দিতে পারেনি। কারণ, ওই বছরই প্রথমবারের মতো চীনে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়। চীনা প্রশাসনের পুরোটা ব্যস্ত থাকে ওই অলিম্পিককে সফল করে তোলার জন্য।
জেনারেল মইনের মেরুদণ্ডহীনতা ও নার্ভাসনেস পর্যবেক্ষণ করে চীন বাংলাদেশ সম্পর্কে হয়তো নতুনভাবে আগানোর কথা চিন্তা করে। তারা দেখতে পায়, তাদের হাতে তৈরি করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান তাদের ঘাড়ের ওপর দিয়ে তাদেরই প্রতিপক্ষের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করছেন। ওটা পুরো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চীনের দুশ্চিন্তা না হলেও তারা বুঝতে পারেন, আগের অনুসৃত পথে কাজ হবে না। তাই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চীন ঝাঁপিয়ে পড়ে ভিন্নভাবে, যা আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় লবিকে হতভম্ব করে দেয়। বড় বড় প্রকল্প, সমর সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় চীন। এতে বিএনপি নেতৃত্বও অনেকটা আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে, বিএনপি বর্জন করার পরও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন ঝড়ের বেগে আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিনন্দন জানান এবং চীনের সমর্থনের কথা জোরের সাথে প্রচার করেন। এর চেয়েও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। সেদিন নির্বাচনের ফল পূর্ণ অফিসিয়ালি প্রকাশিত হওয়ার আগেই শেখ হাসিনার কাছে সোনার নৌকা নিয়ে হাজির হন ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত, সাথে বেইজিং থেকে প্রেসিডেন্ট শি’র অভিনন্দন বার্তা! সঙ্গত কারণেই মনে করা হয়, স্থানীয় চীনা দূতাবাস সোনার নৌকা বেশ আগেই তৈরি করার অর্ডার দিয়েছিল আর প্রেসিডেন্ট শির চিঠিটিও ভালোভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এ বিষয়গুলো চীনের অনুসৃত দীর্ঘ দিনের কূটনীতি, সভ্যতা ও রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেকেই এসব ঘটনায় আশ্চর্যান্বিত হয়ে এমন মন্তব্যও করেন, ভারতের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দেশ চীন কিভাবে শুভেচ্ছা জানানোর দৌড়ে সামিল হয় যেখানে পশ্চিমা কোনো দেশ ওভাবে ‘ভোঁ দৌড়’ দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়নি? এ ব্যাপারে বর্তমান চীনা প্রশাসনের হয়তো নীতি হলো যেভাবেই হোক, বাংলাদেশে হাত রাখা, বাংলাদেশের প্রশাসন, সামরিক বাহিনীতে প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখা। হতে পারে। আবার অনেকে বলেন, চীন রাজনৈতিক দল দেখে না, তারা কান্ট্রি টু কান্ট্রি সম্পর্কে বিশ্বাস করে। এটাও হতে পারে।
তবে, মাও সে তুংয়ের চীনের সাথে এসব কেমন যেন খাপছাড়া। কারণ, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় চীনের যে চিকিৎসক দল ঢাকায় আসে, তাদের সাথে একটি ব্যানারও ঢাকায় আসে। চীনা ও বাংলায় লেখা সেই ব্যানারের স্লোগান ছিল, ‘জয় বাংলা আবারো’। এটা কান্ট্রি টু কান্ট্রি সম্পর্কের বিষয়টিকে সামনে আনে না। বরং ক্ষমতাসীন একটি দলকে সামনে আনার নীতিমালার প্রতিফলন ঘটায়। অনেকের কাছে এসব ক্ষমতাসীনকে আস্থায় রেখে কৌশলগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের বিষয়; অনেকের কাছে নার্ভাস হয়ে পড়ার লক্ষণও বটে। ভারতের কাছে ‘চীনা ছাতার নিচে’ অবস্থান করা বিএনপি এর সবকিছু থেকে বাইরে! এটাও এক বিস্ময়কর বিষয়, অন্তত দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ যারা কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সময় থেকে চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করেছেন তারা কোনো হিসাব মেলাতে পারছেন না। তারা কি চীনের প্রতি আস্থাশীল রাজনীতির পথ অনুসরণ করবেন, না বিপরীত মেরুর দলকে চীনের সুবিধাপ্রাপ্ত দেখে পিছু হটবেন তা বুঝতে পারছেন না। তাদের এবং চীনপন্থী বলে পরিচিত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক গোষ্ঠীর মধ্যেও জন্মেছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। দীর্ঘদিন চীনের প্রতি অনুরক্ত থাকায় সঙ্গত কারণেই তারা পরিণত হয়েছেন ভারত ও পশ্চিমাদের লক্ষ্যবস্তুতে। এদের অনেকে নানাভাবে হেনস্তারও শিকার হয়েছেন; অনবরত ভুগে চলেছেন। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার- চীন তাদের পাশে একবারের জন্যও দাঁড়ায়নি গত কয়েক বছর! বিস্ময়কর হলেও এটা বাস্তব। তাই এই গোষ্ঠী নীরবে দিনাতিপাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা চীনের সাথে বন্ধুত্বের ‘পাপে’ ভারতের কাছে ‘পাপী’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এবং সেই ভারতের সাথেই পাশাপাশি, সমান্তরালে চীনকে এদেশে ছুটে বেড়াতে দেখে যারপরনাই হতভম্ব। এ নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ আজকাল শোনা যায় না। অবশ্য প্রায়ই তাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে বলতে শোনা যায়, ‘চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে’।
কিন্তু, তা কি দীর্ঘ দিনের বন্ধুদের হতাশার বিনিময়ে? সেটা চীনের দেখার বিষয়। কারণ চীন সুপার পাওয়ার। কিন্তু যারা একসময় মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, জীবন বাজি রেখে কৌশলগত খাতে বাংলাদেশে চীনের প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত করেছেন তাদের কারো প্রতিই কি বর্তমান চীনা প্রশাসনের কোনো দায়বদ্ধতা নেই? আজ চীন বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ভদ্রতার খাতিরেও জিয়ার নামটি উচ্চারণ করে না। অথচ, জিয়া চীনের সাথে গভীর সামরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলেই তাকে চীনবিরোধী বিদেশী শক্তির অনুগত ঘাতকের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল। তিনি যদি চীনের সাথে না যেতেন, তাহলে দিব্যি ভালোই থাকতেন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া ও সম্পর্ক স্থাপনের ইতিহাস হয়তো আজ নিজেরাই ভুলে বসে আছেন চীনের কর্তাব্যক্তিরা অথবা তাৎক্ষণিক কোনো কিছুর প্রত্যাশায় ছুটছেন স্রোতের অনুকূলে।
এদিকে চলতি বছর আগস্ট মাসে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস থেকে একটি নিবন্ধ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয় যাতে বাংলদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক স্থাপনের যাবতীয় উদ্যোগে কেবল ‘বঙ্গবন্ধু’র কথা উল্লেখ করা হলো। স্বভাবতই তখন প্রশ্ন জাগে- বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে যেখানে পাকিস্তান পর্যন্ত স্বীকৃতি দিয়েছিল সেখানে চীন কেন স্বীকৃতি দেয়নি? এমন অনেক প্রশ্নই উঠতে পারে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে হয়তো ইতিহাসকেও থমকে দাঁড়াতে হয় বলে মনে করতে পারে চীনের পণ্ডিতমহল এবং বর্তমান সময়ে বিশ্বাসী মানুষও তা মনে করে। তাই আওয়ামী লীগ না বিএনপি ক্ষমতায় থাকল, তা বড় বিষয় নয়।
তারপরও মহান নেতা মাও সে তুং আর অবিস্মরণীয় কূটনীতিবিদ চৌ এন লাইয়ের দেশ মহাচীনের এসব একপেশে অবস্থান সঙ্গত কারণেই অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত। কান্ট্রি টু কান্ট্রি সম্পর্কের থিয়োরি ঠিক আছে, তবে তা পুরনো বন্ধুত্বের বিনিময়ে নয়। এসব কারণে বলতেই হয়- চীনের হাজার বছরের অনুসৃত কূটনৈতিক পথচলা কেমন যেন বেখাপ্পা আজকের সমীকরণে, চিরচেনা চীন যেন অনেকটাই অচেনা। কেউ যেন চীনকে ঠিকমতো ঠাহর করে উঠতে পারছে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিচিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীও না, ক্ষমতাসীন সরকারি দলও না। এটা কি চীনের দুর্বলতা, নাকি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ব্যর্থতা চীনকে বুঝতে পারায়? সময়ই এর উত্তর দেবে, যদি চীন মনে করে বাংলাদেশে তার একঝাঁক পরীক্ষিত বন্ধু রয়েছে, আর বন্ধুদের হৃদয় নিঃসৃত সমালোচনা আমলে নেয়ার প্রয়োজন আছে।
লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক। বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা