২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অভিধান

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অভিধান - ছবি : নয়া দিগন্ত

কয়েক দিন ধরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ব্যবহৃত বিদেশী শব্দের অভিধান বইটি পড়ছিলাম। এর সঙ্কলন ও সম্পাদনা করেছেন মো: হারুন রশিদ। এর আগেও হারুন রশিদের অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। এই বইটি তার প্রধান একটি অবদান বলে গণ্য হবে। বইয়ের প্রকাশক বাংলা একাডেমি, ঢাকা। বইটি একাডেমির লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। মূল্য ৪০০ টাকা।

বাংলা ভাষার অভিধান প্রণয়নে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লøাহ। তার দক্ষ সম্পাদনায় ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় আমাদের এলাকার আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলা একাডেমি বিভিন্ন প্রকারের শতাধিক অভিধান, পরিভাষা ও কোষগ্রন্থ প্রণয়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। বাংলা ভাষা একটি জীবন্ত ভাষা। সুতরাং এটি স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য জীবন্ত ভাষার মতো বিদেশী শব্দ গ্রহণ করেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা পর্যালোচনা করলে জানা যায়, তিনি তার রচনায় প্রচুর বিদেশী শব্দ ব্যবহার করেছেন (রবীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড)। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলী পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তিনি কী পরিমাণ আরবি, ফারসি ও অন্যান্য বিদেশী শব্দ ব্যবহার করেছেন।

বাংলা ভাষায় আগত আরবি, ফারসি শব্দের সংখ্যা তেমনভাবে নির্ণয় করা হয়নি। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তার ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে আরবি, ফারসি শব্দ দুই হাজারের বেশি উল্লেখ করেছেন। ড. গোলাম মকসুদ হিলালী তার (পার্সো অ্যারাবিক এলিমেন্টস ইন বেঙ্গলি-১৯৬৭) গ্রন্থে আরবি, ফারসি শব্দের সংখ্যা বাংলায় প্রায় পাঁচ হাজার উল্লেখ করেছেন। ড. মুহম্মদ এনামুল হক নিজে তার গ্রন্থে আরবি ও ফারসি শব্দের সংখ্যা পাঁচ হাজার উল্লেখ করেছেন। কোনো কোনো ভাষাবিজ্ঞানী এ সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার বলে উল্লেখ করেছেন।

আলোচ্য অভিধানটিতে বিশে^র অনেকগুলো ভাষার প্রায় ১৬ হাজার ভুক্তি সঙ্কলিত হয়েছে। এর মধ্যে আরবি প্রায় ছয় হাজার। ফারসি সাড়ে চার হাজার। ইংরেজি তিন হাজার। উর্দু দুই শতাধিক ও হিন্দি এক হাজার শব্দ রয়েছে। আরবি থেকে আসা কতগুলো শব্দের উদাহরণ হিসেবে বেআইনি, বেআক্কল, বেইজ্জত, বেঈমান, বেতার, বেদ্বীন প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। ইংরেজি থেকে যেসব শব্দ এসেছে তার মধ্যে রয়েছে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, চেয়ার, টেবিল, ট্রেন, স্টেশন, বাস, ট্রাক ইত্যাদি।

লেখক তার এ অভিধান সম্পর্কে বলেছেন ‘এ অভিধানে বিদেশী শব্দ সংগৃহীত হয়েছে বিভিন্ন উৎস থেকে। তার মধ্যে প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদ, সাহিত্য ও সাময়িকপত্র থেকেও অনেক শব্দ সংগ্রহ করা হয়েছে। অধিকন্তু এ অভিধান প্রণয়নে দেশ-বিদেশে প্রকাশিত কিছু আরবি, ফারসি, উর্দু, ইংরেজি ও হিন্দি অভিধানের সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে। সকৃতজ্ঞচিত্রে তাদের ঋণ আমি স্মরণ করছি। যেকোনো অভিধান সঙ্কলনের কাজ খুবই দুরূহ এবং সময়সাপেক্ষ। আর কোনো অভিধান প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তার দোষত্রুটি ধরা পড়ে। তাই বেশ কয়েকটি সঙ্কলন প্রকাশিত হওয়ার আগে কোনো অভিধানই সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হয় না। বর্তমান অভিধানটি সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়েছে সে দাবি আমি করি না (লেখকের ভূমিকা থেকে)।’

অভিধানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে এ বইটি ক্রয় করে লাইব্রেরিতে রাখার জন্য অনুরোধ করছি। সব লাইব্রেরিতে এ বইটি থাকা দরকার। বইটি প্রকাশের জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement