টিভি ও ইন্টারনেট ব্যবহার কম করুন, সময়কে কাজে লাগান
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৫৮
টেলিভিশন আধুনিক সভ্যতার একটি বড় অবদান। এর ফলে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। মানুষের পরস্পরের জানাজানির সুযোগ-সুবিধা ও যোগাযোগ বেড়েছে। এ সবই বিজ্ঞানের অবদান। আমার এক ছাত্র আমাকে একটি বই দেয়। বইটির নাম Four Arguments for the Elimination of Television, Author- Jerry Mender।
বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে টেলিভিশনের ক্ষতিকর ছয়টি দিক তুলে ধরে বলা হয়েছে, এসব কারণে টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া উচিত। এ ছাড়াও ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে টেলিভিশনের ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়। এসব কী প্রমাণ করে? এসব প্রমাণ করে যে, টিভির ব্যবহার বা কল্যাণকামিতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সে প্রশ্ন কতটুকু সঠিক আর কতটুকু সঠিক নয়, সে সামগ্রিক আলোচনায় যাচ্ছি না।
কিন্তু সে প্রশ্ন উঠেছে ইতোমধ্যেই; আর তা উঠেছে পাশ্চাত্য দেশগুলোতেই। এ রকম বই আমাদের দেশেও লেখা হয়নি। আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত। এসব চ্যানেলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান দিকটি হলো খবর। এরপরই দেখা যায় নাচ, গান আর সিনেমা। এ নাচ, গান, সিনেমাই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সময় জুড়ে রয়েছে। সেখানে খেলাধুলার প্রোগ্রাম রয়েছে। তবে খেলাধুলার জন্য আলদা কয়েকটি চ্যানেলই আছে। ২৪ ঘণ্টাই খেলাধুলা সংক্রান্ত অনুষ্ঠান সেখানে দেখানো হচ্ছে। কার্টুন চ্যানেলও আছে। কিন্তু সমাজে এর প্রভাব কিভাবে পড়ছে? বাস্তবে এটিকে কিভাবে দেখা হচ্ছে আর বাস্তবে মানুষের সময় কিভাবে ব্যয় হচ্ছে? সার্বিকভাবে আমরা দেখতে পাই, শিশু-কিশোর থেকে যুবকশ্রেণী পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনেকেরই ৬-৭ ঘণ্টাই টেলিভিশনের পিছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা স্পোর্টস অ্যাডিকশনের বা নেশার ফলে ৫-৬ ঘণ্টাই খেলা দেখার জন্য ব্যয় করছে। এটি অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এতে তাদের অন্যান্য কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে, লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে।
তেমনি, শিশুরা কার্টুন নিয়ে প্রায়ই ব্যস্ত থাকে। রাতে বা সকালে লেখাপড়ার মূল সময়টাও অনেকে কার্টুন দেখে কাটায়। আবার কার্টুনের সব যে ভালো, তাও আমি বলব না। সেখানেও মারামারি আছে, অস্ত্র চালানোর ব্যাপার আছে। সেসব দেখে একটু বয়স হলে তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, আমার বন্দুক কোথায়? স্পোর্টস, কার্টুন, নাচগান, সিনেমা কিংবা সিরিয়াল, মেগাসিরিয়াল প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানুষের যে খুব একটি মানসিক কিংবা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় তা বলা যায় না। এর সার্বিক প্রভাব নৈতিকও নয়, কল্যাণকরও নয়। কিছু ভালো প্রোগ্রাম আছে। এ বিষয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু সার্বিক প্রভাব কল্যাণকর বলা মুশকিল। টেলিভিশন প্রসঙ্গে যে বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরতে চাই তা হচ্ছে সময়ের অপচয়। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই বিষয় দেখা যায়। ফেসবুক ও সোস্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, অনেকে অহেতুক ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করছে যা মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। টেলিভিশন প্রোগ্রামের মধ্যে কতটা আদর্শ ও নৈতিকতা আছে আর কতটা নেই এসব আলোচনা নিবন্ধের মূল বিষয় নয়। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে, এতে কতটা সময় যাচ্ছে।
আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ করেছি, ছেলেমেয়ে, শিশু, গৃহিণী আর ছাত্রদের কী পরিমাণ সময় টেলিভিশনের বিভিন্ন প্রোগ্রামের পেছনে ব্যয় হয়। আমরা এটাও লক্ষ করলাম যে, এই সময় দিনে এক ঘণ্টা নয়, বরং গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭-৮ ঘণ্টাও খরচ হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি জাতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। একটি স্টাডিতে দেখা গেছে যে, একজন মানুষের ৫০-৬০ বছরের জীবনে ১২ বছর সময়ই ব্যয় হয়েছে শুধু টিভি দেখার পেছনে। একটি জীবনের যদি ১২ বছরই টিভির পেছনে চলে যায় তাহলে তার অবস্থা আমরা কল্পনা করতে পারি। কিন্তু এর সমাধান কী?
আমার মনে হয়, এর জন্য একটি সামগ্রিক আন্দোলন করা দরকার। এ আন্দোলন সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত, সামাজিক- সব পর্যায় থেকেই করতে হবে। সে আন্দোলনের স্লোগান হবে, টিভি কম দেখব এবং সময়কে আমরা কাজে লাগাব। এখানে আমরা টিভি দেখব না বা টিভি বন্ধ করে দিতে হবে, তা বলছি না। আমরা শুধু বলছি, টিভি দেখার সময় আমাদের কমাতে হবে। যে যার পছন্দ অনুযায়ী টিভি প্রোগ্রাম বেছে নিতে পারে। কিন্তু এ জন্য সারা দিনই তাকে টিভি দেখতে হবে- এর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে, সময়। আর এই সময় হচ্ছে জীবন। আর জীবনই হচ্ছে সময়। সময় যদি আমরা অপচয় করে শেষ করে দিই তাহলে কী করে আমাদের উন্নতি সম্ভব হবে? রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কোনো উন্নয়নই সময়ের সদ্ব্যবহার ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা যদি সময়কে কাজে লাগাতে পারি, তবে অনেক সময় বেঁচে যাবে যা আমরা ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারব। আমরা সময় বাঁচাব, সময়কে মানবতার কাজে লাগাব, মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করব। জাতির কল্যাণে, জাতিগঠনে ব্যবহার করব।
সময়কে আমরা ফ্যামিলির উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করব, নিজের আত্মগঠনে ব্যবহার করব, আত্মীয়-স্বজন-প্রতিবেশীর জন্য ব্যবহার করব। সবশেষে, গোটা জাতির কাছে বলতে চাই, সবাই এ বিষয়টি ভেবে দেখবেন এবং প্রত্যেকেই তার নিজের ফ্যামিলিতে টিলিভিশনের ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে ফ্যামিলিতে মায়েদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। তারা নিজেরাই যদি বেশি টিলিভিশন দেখেন, তাহলে শিশুদের আটকানো সম্ভব হবে না। আশা করি, এ বিষয়টি সবাই বিশেষভাবে বিবেচনা করে দেখবেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা