তাকে আমার বেয়াইবাড়িতে দাওয়াত
- গোলাম মাওলা রনি
- ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:২৪
ইদানীং অদ্ভুত সব ইচ্ছা এবং আশা আকাঙ্ক্ষা প্রায়ই আমাকে পেয়ে বসে। বাংলাদেশের বর্তমান সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রীকে নিয়েও অনেক কিছু করতে ইচ্ছে হয়। তার সাথে আমার অতীত সম্পর্ক এবং দেশের বহু স্থানে ভ্রমণ করার দারুণ অভিজ্ঞতা স্মরণ হলে মনে হয়, জনাব ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে একবার নেত্রকোনা জেলা শহরে বেড়িয়ে আসি। সেখানকার বারহাট্টা সড়কের শেখ পরিবারে আমার কন্যা নন্দিতার বিয়ে হয়েছে। আমার বেয়াই শেখ রফিকুল ইসলাম দুলাল শহরের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং ভোজনরসিক মানুষ। আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও বেয়াই কিন্তু খাস আওয়ামী লীগার। সুতরাং আমার বেয়াইবাড়িতে যদি যোগাযোগমন্ত্রী অতিথি হিসেবে যান তবে উপর মহলে তার যে নম্বরের খাতা রয়েছে তাতে কোনো ক্ষতি হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
আমি নিজে যোগাযোগমন্ত্রীর ভোজনরসিকতা, কাব্যপ্রীতি এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কে সম্যক অবগত। নেত্রকোনা শহরের আশপাশের এলাকার বিলঝিল হাওরগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর। সেখানে নৌকাভ্রমণ, হাওরের ছোট ছোট ঢেউয়ের তোড়ে পড়ন্ত বিকেলে ছোট ডিঙ্গি নৌকাগুলোর দোল খাওয়া এবং শরতের আকাশের সাদা মেঘের ভেলার দৃশ্য যদি যোগাযোগমন্ত্রীকে বলি তবে তিনি সেখানে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে উঠবেন। হাওরের তরতাজা বাহারি দেশী মাছের বারো পদের তরকারি, হরেক রকম ভাজি-ভর্তা এবং পায়েসের পাশাপাশি নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী ‘বালিশ মিষ্টির’ রসনার কথা শুনলে মন্ত্রী হয়তো কোনো বিলম্ব না করেই আমার বেয়াই সাহেবের মেহমান হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবেন। মাননীয় মন্ত্রীর মধ্যাহ্ন ভোজন এবং ভোজনের পর যেন তিনি তার পছন্দের মসলা দিয়ে পান খেয়ে একটু দিবানিদ্রার পর হাওর ভ্রমণে যেতে পারেন সেজন্য যে রাজকীয় নৌবিহারের ব্যবস্থা করা হবে। তা শুনলে প্রিয় কাদের ভাই আমাকে আর না করতে পারবেন না।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদেরকে যেন সড়কের কোনো গ্লানি এবং ক্লান্তি স্পর্শ না করে সে জন্য আমি তাকে হেলিকপ্টারে করে নেত্রকোনা নিয়ে যাবো। তিনি সেখানে পৌঁছার পর হেলিকপ্টারটি ঢাকায় ফিরে আসবে এবং আমাদের ফেরার ঘণ্টা খানেক আগে তা পুনরায় নেত্রকোনা গিয়ে আমাদের উঠিয়ে নিয়ে আসবে। সুতরাং নেত্রকোনার আলোবাতাস হালাল খাবার এবং প্রকৃতি পরিবেশ উপভোগ করার ক্ষেত্রে ঢাকা-গাজীপুর, গাজীপুর-ময়মনসিংহ এবং ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়ক মহাসড়কের কোনো কিছুই মন্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না। ফলে মন্ত্রী সাহেব শরতের বিকেলে নেত্রকোনার হাওরে নৌভ্রমণের সময়, উকিল মুন্সীর বিখ্যাত গানগুলো স্থানীয় শিল্পীদের কণ্ঠে শুনতে শুনতে যখন তার প্রিয় কবি কাহলিল জিব্রানের কিছু কবিতার কথা ভাবতে ভাবতে অসীমে হারিয়ে যেতে চেষ্টা করবেন ঠিক তখন আমার মলিন মুখ দেখে পান চিবুতে চিবুতে জিজ্ঞাসা করবেন কী হলো!
বিব্রত বিধ্বস্ত এবং ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে অসহায়ের মতো মন্ত্রীর মুখপানে কিয়ৎকাল চেয়ে থাকব। তারপর বিরস কণ্ঠে বলব, কাদের ভাই! একটু সমস্যা হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার কোম্পানি জানিয়েছে যে, ‘তাদের হেলিকপ্টারে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সুতরাং মন্ত্রীকে তুলে আনার জন্য তারা নেত্রকোনায় রাতে হেলিকপ্টার পাঠাতে পারবে না।’ আমার কথা শুনে মন্ত্রী মহোদয়ের মুখ শুকিয়ে যাবে। তার মাথা থেকে কবিতার ছন্দ ছপাৎ ছপাৎ করে হাওরের পানিতে পড়ে যেতে আরম্ভ করবে। তিনি পান চিবানো বন্ধ করবেন এবং আমার দিকে এমনভাবে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাবেন, তা দেখে মনে হবে প্রশ্নবোধক চিহ্নটির উচ্চতা হয়তো আকাশের মেঘমালাকে ভেদ করে আরো উপরে পৌঁছে গেছে। আমি আশ্বস্ত করার জন্য বলব, এখানে দুটো বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। একটি হলো অত্যাধুনিক লেক্সাস জীপ এবং অন্যটি হলো বিশ্ববিখ্যাত জার্মান ব্র্যান্ড অডি নির্মিত এ এইট মানের লিমুজিন। মন্ত্রী অডি লিমুজিনের কথা শুনে আশ্বস্ত হবেন এবং আবার পান চিবুতে চিবুতে প্রকৃতি ও পরিবেশের দিকে মনোযোগী হয়ে দেশ জাতির কথা ভাবতে আরম্ভ করবেন।
মন্ত্রীর ঢাকাতে ফেরত আসা যখন হেলিকপ্টারকেন্দ্রিক থাকবে তখন সিদ্ধান্ত হবে যে, সূর্য ডোবার আগে হালকা চা নাস্তা খেয়ে তিনি নেত্রকোনা ত্যাগ করবেন। কিন্তু তার যাত্রা যখন সড়কপথে হবে, তখন পুরো নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ-গাজীপুর এবং ঢাকার কয়েকটি সরকারি দফতর নড়েচড়ে বসবে। অনেকের গলদঘর্ম শুরু হয়ে যাবে। কারণ পুরো পথের লক্ষ কোটি খানাখন্দক, ভাঙাচোরা রাস্তা, মহাসড়কের বেপরোয়া যানবাহন এবং সামান্য বৃষ্টি হলে টঙ্গীসহ কয়েকটি এলাকার মহাসড়কে যে কোমরসমান পানির প্লাবন হয় তা কেউই সাহস করে মন্ত্রী মহোদয়কে বলতে পারবেন না। তারা এ কথাও বলতে পারবেন না যে, মাঝে মধ্যে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে উত্তরা পর্যন্ত যানযট এত তীব্র হয় যে, এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ১০ ঘণ্টা লেগে যায়। অধিকন্তু বাস গাড়ি ট্রাকের ধাক্কাধাক্কিতে মহাসড়কটি মাঝে মধ্যে মরণফাঁদ হয়ে ওঠে এবং কখনো কখনো ডাকাতির ঘটনাও ঘটে যায় গভীর রজনীতে।
যোগাযোগমন্ত্রী বছর তিনেক আগে বেশ চটপটে ছিলেন। হিন্দি সিনেমার নায়ক অনিল কাপুর অথবা কলকাতার বাংলা সিনেমা ফাটাকেস্টর মিঠুনের মতো তিনি সারা দেশে চরকির মতো ঘুরতেন। ফলে রাস্তাঘাটের অবস্থা তার পূর্বসূরি সৈয়দ আবুল হোসেনের জমানার চেয়ে অনেক ভালো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে সড়কের যে কী বেহাল অবস্থা হয়েছে তা মন্ত্রী মহোদয় বিভিন্ন কারণে স্বচক্ষে দেখেননি। ফলে তিনি নেত্রকোনা থেকে সড়কপথে ঢাকা ফেরার ব্যাপারে থাকবেন অনেকটা নিরুত্তাপ এবং ভাবনাহীন। তাই তিনি রাতের খাবারের মেন্যু বলে দেবেন এবং মন্ত্রীকে খুশি করার জন্য আমার বেয়াইবাড়ির হেঁসেলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠবে; বড় বড় কড়াইতে তেল ফুটতে আরম্ভ করবে এবং মাছ গোশতের মসলার ঘ্রাণে পুরো বারহাট্টা সড়ক ম ম করতে আরম্ভ করবে। শহরবাসী বুঝবে, কিছু একটা রান্না হচ্ছে বটে!
মন্ত্রীর শুভার্থীরা পরামর্শ দেবেন যে, রাত ১১টার সময় যাত্রা আরম্ভ করলে মোটামুটি তিন ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছানো যাবে। মন্ত্রী অডি গাড়ির মালিকের দিকে তাকাবেন। তিনি বেশ গর্বের সাথে জানাবেন, স্যার নতুন কিনেছি। বাংলাদেশে এমন বিলাসবহুল লিমুজিন দুই তিনটের বেশি নেই। পুরা গাড়িটি ইলেকট্রনিক সাসপেনশননির্ভর। ফলে রাস্তার কোনো ক্লান্তি স্পর্শ করবে না। প্রতিটি সিটে বডি ম্যাসেজ অপশন রয়েছে। এছাড়া গান শোনা বা সিনেমা দেখার জন্য রয়েছে ডলবি ডিজিটাল প্রোলজিক সিস্টেম। গাড়িটি বুলেট প্রুফ এবং অগ্নিনিরোধক। এছাড়া মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটলেও গাড়ির যাত্রীরা থাকবেন নিরাপদ। গাড়ি মালিকের কথা শুনে মন্ত্রী মহোদয়ের তৃপ্তি বেড়ে যাবে। তিনি অতিরিক্ত কয়েক টুকরো মাগুর মাছ এবং মহাশোলের টুকরো গলাধকরণ করতে থাকবেন। তারপর ‘বালিশ মিষ্টি’ খেয়ে মুখে পান ঢুকিয়ে ঘণ্টাখানেক বিশ্রামের কথা বলে একটি রুমে ঢুকবেন।
রাত ১১টার সময় মন্ত্রী মহোদয় লিমুজিনে চড়বেন এবং ঢাকার পথে রওনা দেবেন। শহর পার হয়ে তিনি মাইলখানেক পথ অতিক্রম করার পরই ভাঙাচোরা রাস্তার কবলে পড়বেন। উঁচু-নিচু ভাঙাচোরা খানাখন্দকে ভরা রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে তিনি রীতিমতো আঁতকে উঠবেন। রাস্তায় শত শত ট্রাকের সারিÑ প্রচণ্ড যানজটের কারণে ট্রাক ড্রাইভার, হেলপার, যাত্রীবাহী বাস এবং ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমেই রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় লক্ষ করে জলত্যাগ করবেন। যারা আরো বড় কিছু করবেন তাদের কেউ কেউ রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষের মতো লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে রাস্তার পাশেই বসে যাবেন। মন্ত্রী তার গাড়ির স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ওসব দৃশ্য দেখে যখন লজ্জিত ও আতঙ্কিত হবেন, তখন গাড়ির ড্রাইভার বুদ্ধি করে গাড়ির জানালার স্বয়ংক্রিয় পর্দা তুলে দেবেন। তিনি মন্ত্রীর মেজাজকে ঠাণ্ডা করার জন্য গাড়ির সিটের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানকার বডি ম্যাসেজ অপশন চালু করে দেবেন। ফলে মন্ত্রীর তন্দ্রা এসে যাবে।
অডি লিমুজিনের এয়ার সাসপেনশনের কারণে পুরো গাড়ি খানাখন্দক কিংবা ভাঙাচোরা রাস্তা অতিক্রম করতে গিয়ে নৌকার মতো দোল খেতে থাকবে। মন্ত্রীর ভরা পেট, তন্দ্রাযুক্ত চোখ, ক্লান্ত শরীর এবং নৌকার মতো দোল খাওয়া গাড়ির ঝাঁকুনি একত্র হয়ে এক অসাধারণ রসায়ন সৃষ্টি করবে। এ অবস্থায় মন্ত্রী পেটে এবং তলপেটে বেশ চাপ অনুভব করবেন। তার তন্দ্রাভাব চলে যাবে। তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখবেন, রাত দুটো বেজে গেছে। তিনি ধারণা করবেন, হয়তো ঢাকা পৌঁছে গেছেন। তবুও তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন- কতদূর এলাম। আমি বলব- ভালুকা পর্যন্ত এসেছি। আমার কথা শুনে তিনি নড়েচড়ে বসবেন এবং তার পেট ও তলপেটের তাপ-চাপ বেড়ে যাবে। তিনি তার গানম্যানকে গাড়ি থামাতে বলবেন। গানম্যান জানাবেন, রাস্তায় থামানোর মতো কোনো পেট্রলপাম্প বা হোটেল-রিসোর্ট দেখা যাচ্ছে না। মন্ত্রীর ধমকে গানম্যান আসল ঘটনা বুঝে যাবেন এবং কাছাকাছি একটা পেট্রলপাম্পে গাড়ি থামানোর ব্যবস্থা করবেন।
গ্যানম্যান ওয়াকিটকি হাতে পেট্রলপাম্পের ম্যানেজারের রুমে ঢুকে যাবেন এবং ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলবেন। ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে পাম্পের দোতালায় অবস্থিত মালিকের খাস কামরা খুলে দেবেন। মন্ত্রী গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে কাদায় তার দামি জুতো নষ্ট করবেন। কিন্তু প্রাকৃতিক চাপের কারণে ওসব খেয়াল করার সময় পাবেন না। তিনি দ্রুত পেট্রল পাম্প মালিকের রুমে ঢুকবেন এবং কিছুক্ষণ পর তার মধ্যে অদ্ভুত এক স্বস্তি দেখা দেবে। তিনি নিচে নেমে আসবেন এবং একটি ছোটখাটো জটলা দেখে থমকে দাঁড়াবেন। তিনি দেখতে পাবেন, একটি ১১-১২ বছরের কাজের মেয়ে হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে এবং একজন মধ্যবয়সী মহিলা সেই হাসি থামানোর জন্য মেয়েটিকে চপেটাঘাত করছেন। কিন্তু মেয়েটির হাসি না থেমে বেড়েই যাচ্ছে। মেয়েটি বলছে, খালু হাগি দিছে আর এ কথা বলে খিল খিলিয়ে হাসছে। মন্ত্রীর গানম্যান প্রকৃত ঘটনা শুনে এসে জানাবে যে, একজন বয়স্ক লোক রাস্তার ধকলে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার পেট খারাপ হয়ে যায়। তাকে যখন ধরাধরি করে বাথরুমের সামনে নেয়া হয় তখন সেখানে চার পাঁচজনের লম্বা লাইন ছিল। বৃদ্ধ লোকটি আর অপেক্ষা করতে না পেরে দাঁড়ানো অবস্থাতেই কাপড় চোপড় নষ্ট করে ফেলেন। বৃদ্ধের এই করুণ অবস্থা দেখে চপল গ্রাম্য বালিকা হাসি থামাতে পারছে না- অন্য দিকে বৃদ্ধের কন্যা তার পিতার করুণ অবস্থা দেখে এবং কাজের মেয়েটির হাস্যরস দেখে দৈর্যহারা হয়ে পড়বেন।
এ দৃশ্য দেশে মন্ত্রী অনেকটা উদাসীন হয়ে পড়বেন। তিনি পুনরায় গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করবেন, ঢাকা পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে? ইতোমধ্যে মন্ত্রীর গানম্যান ওয়াকিটকির মাধ্যমে পুরো রাস্তার যানজট এবং বেহাল অবস্থা জেনে ফেলবেন। তিনি মন্ত্রীকে বলবেন যে, টঙ্গী এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কোনো কোনো এলাকার কোমর পানিতে সব গাড়ি আটকে আছে। এ অবস্থায় আগামীকাল সকাল ১০টার আগে ঢাকা পৌঁছানো যাবে না। এ কথা শুনে মন্ত্রীর মন খারাপ হয়ে যাবে। তিনি বিকল্প কিছু করা যায় কি না প্রশ্ন করবেন। গানম্যান বলবেন, জয়দেবপুর চৌরাস্তা পাড়ি দিয়ে টঙ্গীর দিকে না গিয়ে বাম দিকের বাইপাস ধরে সিলেট মহাসড়ক হয়ে পূর্বাঞ্চল তিনশ’ ফিট সড়কে উঠলে সময় কম লাগতে পারে। মন্ত্রীর সম্মতি পেয়ে গাড়ি সেদিকে ছুটবে এবং ভোর ৫টার দিকে তিনশ’ ফিটের কাছাকাছি এসে ছোটখাটো একটা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যাবে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যেখানে ওভারপাস নির্মিত হচ্ছে গত সাত আট বছর ধরে সেই ওভারপাসের নিচ দিয়ে বড় একটা জলাভূমি তৈরি হয়েছে। তা পার হতে গিয়ে গাড়ির এয়ার সাসপেনশনের অর্ধেক বসে যাবে। বাকি অর্ধেক বসে যাবে কাঞ্চন ব্রিজের কাছে এসে। তিনশ’ ফিট রাস্তায় যে নতুন খানা-খন্দক, খোঁড়াখুঁড়ি এবং বাইপাস আন্ডার পাসের নামে যা হচ্ছে সেগুলোর কবলে পড়ে মন্ত্রীকে বহনকারী পৃথিবীর প্রধানতম নিরাপদ লিমুজিনটির এয়ার সাসপেনশন এবং এয়ার ব্যাগ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ি থেমে যাবে। ভীতসন্ত্রস্ত ড্রাইভার তার মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর জানাবেন। মালিক ড্রাইভারকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেবেন, যার দুই চারটি শব্দ মন্ত্রীর কান অবধি পৌঁছে যাবে। ফলে তিনি বিষণ্ন হয়ে পড়বেন এবং গাড়ি থেকে নেমে তিনশ’ ফিট রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের রূপরেখা ‘ভিশন-২০২১’ এর কথা ভাববেন। ইতোমধ্যে মন্ত্রীকে উদ্ধার করার জন্য ভাটারা থানা পুলিশের একটি গাড়ি আসবে। মন্ত্রী সেখানে উঠবেন এবং আমিও তার সাথে উঠব। তার মুখের দিকে তাকাব এবং তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজতে থাকব।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা