জিহাদের পূর্ণ অনুধাবন : ড. ইউসুফ আল-কারযাভীর ফিকহ আল-জিহাদের আলোকে
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ২০ আগস্ট ২০২০, ১৮:৩৯
জিহাদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং নিয়মনীতি যথার্থ অনুধাবন না করাই মূলত বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সশস্ত্র উগ্রবাদ বা বিদ্রোহের কারণ। এই বিষয়টি আলোচনার উদ্দেশ্যেই এ লেখার অবতারণা।
‘ফিকহ আল-জিহাদ’ বা জিহাদের ফিকাহ ড. ইউসুফ আল-কারযাভীর রচিত মৌলিক একটি গ্রন্থ। বইটির এখনো ইংরেজি অনুবাদ হয়নি। মূলত বইটির ওপর ২০০৯ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিউনিশিয়ার ড. রশিদ গানুশির একটি বিশ্লেষণমূলক। আলোচনার ভিত্তিতে বইটির কিছু মৌলিক বিষয়ে আলোচনা করছি। ড. কারযাভী তার গবেষণায় মেথোডোলজিতে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।
১. কুরআন এবং সহিহ হাদিসের ওপরই তিনি নির্ভর করেন। কোনো দুর্বল প্রমাণ তিনি গ্রহণ করেন না। ২. কোনো মাজহাবের পক্ষে বিশেষ পক্ষপাত ছাড়াই ইসলামের সমৃদ্ধ ফিকাহ সাহিত্য থেকে তিনি ফায়দা নেন এবং যথাযথ মতামতটিই গ্রহণ করেন। ৩. অন্যান্য ধর্ম ও আইন ব্যবস্থার তুলনামূলক অধ্যয়ন থেকেও সুবিধা নেন। ৪. সবক্ষেত্রেই ওয়াসাতিয়া তথা মধ্যমপন্থা গ্রহণ করেন। ৫. তিনি বর্তমান সমস্যার সমাধানেই ইজতিহাদ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তায় বিশ্বাস করেন যেভাবে পূর্বের সলফে সালেহীনরা তাদের সময়ের সমস্যার সমাধানে ইজতিহাদ ব্যবহার করেছেন।
জিহাদের আলোচনায় ড. কারযাভী এর বিভিন্ন স্তরের বর্ণনা দিয়েছেন এবং জিহাদ ও কিতালের (সশস্ত্র যুদ্ধ) ব্যাখ্যা স্পষ্ট করেছেন। মক্কায়ও জিহাদের অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কিন্তু সেখানে কোনো কিতাল ছিল না। তখন জিহাদ চলছিল দাওয়াহ তথা দ্বীনের প্রচারের মাধ্যমে। প্রখ্যাত ফকিহ ও মুফাসসির ইবনুল কাইয়্যেমের উক্তি উল্লেখ করে ড. কারযাভী দেখিয়েছেন, নফসের সাথে জিহাদে চার স্তর, শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদের দুইটি স্তর, মুনাফিকির সাথে জিহাদের চারটি স্তর এবং জুলুমের বিরুদ্ধে জিহাদের তিনটি স্তর (হাত, কথা এবং অন্তর) রয়েছে।
বর্তমান রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থা, সংসদ এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে তিনি বিবেচনা করছেন জুলুমকে নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে। পৃথিবীর দেশে দেশে ইসলামিক সেন্টারের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জিহাদ করার বিষয়েও তিনি আলোচনা করেছেন। জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচন করতে গিয়ে তিনি মত প্রকাশ করেন, ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্র রক্ষার প্রয়োজনেই তা প্রকৃতিগতভাবে রক্ষণাত্মক। অতীতের ক’জন ফকিহ আক্রমণাত্মক জিহাদের কথা বলেছেন। কিন্তু তার ভিত্তি কুরআন বা হাদিস ছিল না বরং তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিই এ সিদ্ধান্তের ভিত্তি দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কেননা তখন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য কোনো আন্তর্জাতিক আইন ছিল না।
এছাড়া তিনি এ প্রসঙ্গে নিচের বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন, ১. কুরআনে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশটি সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য কোনো সাধারণ আদেশ ছিল না। বরং এটি ছিল আরব মুশরিকদের কিছু গোত্রের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য সাময়িক আদেশ। (সূরা তওবা দেখুন) ২. সামরিক জিহাদ ব্যক্তিগত ফরজ নয়। সূরা বাকারা, সূরা আনফাল, সূরা মুমিনুন, সূরা রাদ, সূরা লুকমান, সূরা যারিয়াতসহ কুরআনের কোথাও মুমিনদের গুণাবলির আলোচনায় বলা হয়নি যে, সশস্ত্র জিহাদ মুমিনের আবশ্যিক গুণাবলি। ৩. যদি মুসলমানরা নিরাপদে থাকে, তবে কখনোই অমুসলিম রাষ্ট্রে আক্রমণ করা জায়েজ হবে না। ৪. ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়। ৫. শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে ইসলাম আন্তর্জাতিক আইন তৈরি, জাতিসঙ্ঘের মতো প্রতিষ্ঠান গঠন ইত্যাদি পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় যেমনভাবে ইসলাম শান্তি রক্ষা করে এবং শান্তি রক্ষা পছন্দ করে। ৬. জাতিসঙ্ঘের অধীনে বিবিধ চুক্তির ভিত্তিতে সব অমুসলিম রাষ্ট্রই দারুল আহাদ (এমন রাষ্ট্র যাদের সাথে মুসলমানদের চুক্তি আছে)। সুতরাং কোনো রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণের আইনগত বৈধতা নেই।
ইরহাব তথা সহিংসতায় ইসলামের কোনো সমর্থন নেই। তবে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নিয়ম রয়েছে যেখানে ফিলিস্তিনের মতো দেশের জনগণ তাদের ভূমি ও সম্মান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
ড. কারযাভী তার আলোচনায় জিহাদের নীতিগত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন। তার আলোচনার মূল পয়েন্টগুলো হলো, ১. অন্য রাষ্ট্রের ওপর কখনোই প্রথম আক্রমণ নয় যার নির্দেশ কুরআনের সূরা বাকারার ১৯০ নম্বর আয়াতে দেয়া হয়েছে। ২. পারস্পরিক সন্ধি-চুক্তিকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। ৩. সম্পদ, শস্য বা গাছের কোনো ক্ষতি করা যাবে না এবং বেসামরিক লোকের প্রাণহানি করা যাবে না। ৪. পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এসব অস্ত্র সামরিক-বেসামরিক নির্বিশেষে সবার বিপুল ক্ষতি করার কারণে তা ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
তার এই বইটির বিষয়বস্তু সবার পড়া উচিত।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা