অপরাধীদের স্বর্গ প্রতিষ্ঠা
- জসিম উদ্দিন
- ১২ আগস্ট ২০২০, ১৮:৪৮
৩১ জুলাই ৯টা ২৫ মিনিটে টেকনাফে অব: মেজর সিনহাকে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত ও তার দল ‘ডাকাত ধরা’র প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। সিনহা সেখানে পৌঁছলে লিয়াকত পরিচয় জানতে চান। সিনহা গাড়ির ভেতর থেকে নিজের পরিচয় দেন। লিয়াকত তাকে হাত উপরে তুলে বেরিয়ে আসতে বলেন। সিনহা বেরিয়ে আসার পরপরই লিয়াকত তাকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করেন। একটি পত্রিকায় সিনহা হত্যার ঘটনার এ বিবরণ পাওয়া যায়।
এর আগেই প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে জানা গেছে, সিনহার প্রতি চেকপোস্টে পুলিশ কেমন আচরণ করেছে। এমন বিবরণের বিশ্বস্ত বয়ান সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে জানা যাচ্ছে, সিনহা গাড়ি থেকে বের হলে তাকে মাটিতে বসতে বলা হয়। তিনি বসার কসরত করতেই গুলি চালানো হলো। তখনই পড়ে যাওয়া সিনহাকে কিছুক্ষণ পর এসে লাথি মারেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি প্রদীপ।
কী এমন ঘটেছিল, লিয়াকত ও প্রদীপরা যে কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা সিনহার প্রতি এমন ভয়াবহ ঘৃণার বর্বর বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। এটা যেনতেন বিদ্বেষ হিংসা ও ঘৃণা নয়। আমরা ইতিহাসে দেখেছি, প্রতিপক্ষের প্রতি বিদ্বেষ এমন হয়েছিল তাদের কবর খুঁড়ে হাড়গোরের ওপর বর্বরতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে। এমনও হয়েছে, কয়েক শ’ বছর আগে মৃত ব্যক্তির কবরের ওপরও পাশবিক জিঘাংসা চরিতার্থ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠান। এ দিকে, পুলিশকে সরকার বিভিন্ন সময় নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা কম হলেও প্রতিনিয়ত তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এ বাহিনীর মধ্যে অনেক অফিসার রয়েছেন যারা এই চরম দুর্দিনেও সততা ন্যায়ের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। অন্য দিকে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ওপর দেশের মানুষের গভীর আস্থা রয়েছে আজো। এ বাহিনীকে তারা ভালোবাসে। বিগত কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের ওপর মানুষ বিরক্ত। কিন্তু সেনাবাহিনীর কিছু বিতর্কিত সদস্য ছাড়া বাকি বাহিনীর ওপর মানুষ ভরসা করে। কক্সবাজার বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। নিরাপত্তার কারণে এই এলাকায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে।
সিনহা কক্সবাজারে একটি টিম নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছিলেন। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তা। তাই স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্য হতে পেরেছিলেন। যেভাবে তাকে মারা হলো, বিশ্বাস করা যায় না। তিনি এভাবে নির্মম হত্যার শিকার হবেন জানলে নিশ্চয়ই বাঁচার চেষ্টা করতেন। একজন দক্ষ যোদ্ধা হিসেবে উপস্থিত পুলিশকে ধরাশায়ী করা তার পক্ষে অসম্ভব ছিল না। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত কেন কোনো সুযোগ না দিয়ে সিনহাকে হত্যা করলেন? সহযোগী একটি বাহিনীর সদস্য হয়ে কেন এমন শত্রুতামূলক আচরণ করলেন? এর পেছনে অন্য কী ঘটনা রয়েছে? লিয়াকত ও প্রদীপের বিচারের চেয়েও এ প্রশ্নের উত্তর জানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লিয়াকত পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াটের সদস্য। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের জন্য ২০০৮ সালে এ বাহিনী গঠিত হয়। বিশেষ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের কিছু কৌশলও শেখানো হয়। বাংলাদেশে জঙ্গি দমনের নামে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম হয়েছে। জঙ্গি দমনের নামে সরকার তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের শায়েস্তা করার কাজে বিশেষ বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। ওই সময়ে নিরপরাধ অনেক মানুষ হত্যা গুমের শিকার হয়ে গেছেন। যাদের সাথে জঙ্গিপনার দূরতম সম্পর্কও ছিল না। এসব অপারেশন কার নিদের্শে কোথা থেকে পরিচালিত হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। এই বাহিনীরই এক সদস্যের হাতে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারের জীবনাবসান হলো। শেষ পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তার জন্য গঠিত বাহিনীর ট্রেনিং, দক্ষতা ও যোগ্যতা আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতায় সোয়াট গঠিত হয়েছিল। এ অবস্থায় প্রদীপ লিয়াকতের নির্মমভাবে সেনা কর্মকর্তা হত্যা জন্ম দিলো আরো কিছু রহস্য ও বিতর্কের। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সেনাবাহিনীর মর্যাদা বজায় রাখা এবং পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফেরানোর জন্য এর যথযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
ঘটনার যে প্রাথমিক বিবরণ টেকনাফ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি সঠিক মনোভাব দেখা যায়নি। তাতে মনে হয়েছে, সিনহাকে মানুষ চোর বা ডাকাত সন্দেহ করা হয়েছে। তার গায়ে ছিল সেনাবাহিনীর পোশাক। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোশাক নিয়ে কেউ চুরি ডাকাতি করেছে এমন নজির নেই। দেশের মানুষের মধ্যে এমন ধারণা নেই যে, সেনাবাহিনীর পোশাকে কেউ এ দেশে চুরি ডাকাতি কিংবা সন্ত্রাস করে। বরং এ পোশাকে কাউকে দেখলে এ দেশের মানুষ আস্থা রাখে। দৌড়ে তার কাছে যায় প্রতিকার পাওয়ার আশায়। পুলিশের ক্ষেত্রে এমন আস্থা মানুষ পায় না। যা হোক, থানার কর্মকর্তা নন্দদুলাল ওই বিবরণ তৈরি করেছিলেন।
বাংলাদেশে আইন ও বিচারের প্রয়োগ স্পষ্ট বৈষম্যমূলক। যেখানে দেশে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে; অনেক সম্পদ লুটপাট করা হচ্ছে; সম্মানহানি করা হচ্ছে; সন্ত্রাস চাঁদাবাজি হচ্ছে; বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে; এসব অপরাধীর অনেককে মানুষ চেনে। লিয়াকত ও প্রদীপরা দেশের মানমর্যাদাকে বর্বর কায়দায় লুণ্ঠন করছেন। তাদের অপরাধ দিবালোকে স্পষ্ট। অথচ এই অপরাধীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করছে পুলিশ। তাদের রাজার হালতে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। অন্য দিকে, সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা আমরা দেখেছি। মানুষ জানে না, এই সাংবাদিক কী অপরাধ করেছেন। কাজলদের মতো যাদের অপরাধ কী, কেউ জানে না, তাদের হাতকড়া পরিয়ে চোর ডাকাতের মতো অমর্যাদাকর অবস্থায় আদালতে হাজির করা হচ্ছে।
দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যাকারীদের প্রতি সম্মানজনক ও সহনশীল আচরণ করা হচ্ছে। তাদের সম্মান দিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। দেখে মনে হয় না, তারা ক্রিমিনাল। আর আমরা দেখেছি রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর কতটা বর্বরোচিত ও অন্যায় আচরণ করা হয়েছিল। চাওয়া মাত্র রিমান্ড দেয়া হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ রিমান্ড দেয়া একটা মামুলি ব্যাপার হয়ে যায়। এমনকি, কারো ভাগ্যে জুটেছে কয়েক মাসব্যাপী রিমান্ড। রাজনৈতিক বন্দীদের সাথে কতটা অসম্মান আচরণ করা হয়েছিল সবাই দেখেছেন। তাদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে জনসমক্ষে হাজির করা হয়েছে। তারা চোর ডাকাত ছিলেন না। আর প্রদীপ লিয়াকতের অপরাধ প্রমাণিত। তবুও তাদের প্রতি অনেকটাই যেন ‘জামাই আদর’। রাষ্ট্র যখন তার সম্মানিত নাগরিকদের অসম্মান আর অপরাধীদের সম্মান দেয়, সে রাষ্ট্র খুব বেশি দূর যেতে পারে না। এই রাষ্ট্র কখনো মানবিক হতে পারে না। রাষ্ট্রকে তার এমন কদর্য অবস্থান থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে।
এই হত্যাকাণ্ড আরো কয়েকটি বিষয় অত্যন্ত জোরালোভাবে সবার সামনে হাজির করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য পুলিশকে পুরস্কার দেয়া হয়। সততা যোগ্যতা দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যুগ যুগ ধরে পুরস্কার পেয়ে আসছেন পুলিশের সদস্যরা। ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর জানা যায়, তিনি টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। তার অত্যাচারের ভয়াবহ সব ঘটনা এখন ফাঁস হচ্ছে। তিনি এতটা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ মুখ ফুটে বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছিলেন। অনেক পরিবারেরই এমন ঘটেছে যে, তাদের পরিবারের সদস্য ক্রসফায়ারে প্রাণ হারানোর পর তারা বিচার চাওয়া দূরের কথা, জীবন বাঁচানোর জন্য এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কেউ কেউ এলাকায় থাকলেও পালিয়ে তারা জান রক্ষা করছিলেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া ঘটনা থেকে দেখা গেছে, দিনমজুর থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও এই পুলিশের দাপটের কাছে অসহায় হয়ে গেছেন। একজন নির্বাচিত মেম্বারকে হত্যা করার পর তার বাড়িঘর লুটপাট করে অর্ধকোটি টাকার সম্পদ প্রদীপ হাতিয়ে নেন। পরিবারের বাকি সদস্যরা এর বিচার চাওয়ার পরিবর্তে প্রদীপের উপর্যুপরি আক্রমণে দিশেহারা হয়ে যান। ওই মেম্বারের পরিবারের বাকি সদস্যরাও ক্রসফায়ারের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন।
সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ওপর প্রদীপ নির্বিচারে ক্রসফায়ার নাটক সাজিয়েছেন। থানাকে বানিয়ে রেখেছেন একটি টর্চার চেম্বার। সেখানে দিনের পর দিন মানুষকে আটক রেখে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। কখনো কখনো কয়েক মাসও আটক রাখেন। দেশের এসব নাগরিকের পরিবারের সদস্যরা কাকুতি-মিনতি করেও কোনো প্রতিকার পাননি। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাও প্রদীপের কাছ থেকে এই নির্যাতিত নাগরিকদের রক্ষা করতে পারেননি। তবে ক্ষমতাসীন দলের অনেকে প্রদীপ সিন্ডিকেটের সদস্য। এখন কেউ কেউ কথা বলে উঠেছেন। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হচ্ছেন।
প্রদীপ মূলত মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অজুহাতে এসব করছিলেন। এখন তার কাছে অগাধ সম্পত্তি। সম্পদ অর্জনের জন্য তিনি ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। মানুষকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বার্থসিদ্ধি যারা করে, তাদের সন্ত্রাসী বলা হয়। প্রদীপের কর্মকাণ্ড ছিল সন্ত্রাস। বাংলাদেশে সাধারণত রাজনৈতিক ক্যাডারদের উৎপাতকে ‘সন্ত্রাস’ বলা হয়। প্রদীপ যা করেছেন সেটা তো এর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। তবুও তিনি কি সন্ত্রাসী নন? গণমাধ্যমে আসা ঘটনার বিবরণ থেকে বোঝা যায়, টেকনাফে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন কাজ করেনি। সেখানে চলেছে একজন ব্যক্তির নৈরাজ্য। এই প্রদীপকে দেয়া হয়েছে পুলিশের সম্মানিত পুরস্কার। একবার দু’বার নয়, তিনি ছয়বার এ পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এখন প্রদীপের অপরাধকে কিভাবে কর্তাব্যক্তিরা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলবেন। মিথ্যা ও ছলচাতুরীর একটা সীমা থাকা দরকার।
বর্তমান সরকারের প্রথম টার্মের শুরুতে পুলিশের কিছু ব্যক্তির অধপতনের মাত্রা সবাই দেখেছে। তখন ঢাকায় সংসদ ভবনের কাছে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর এক পুলিশ কর্মকর্তার আক্রমণের কথা সবার মনে থাকার কথা। বিরোধী দলের হুইপকে রাস্তায় ফেলে ওই কর্মকর্তা বেদম প্রহার করেছেন। একবার মেরে তিনি ক্ষান্ত হননি। কয়েকবার তাকে প্রহার করে প্রায় আধমরা করে ফেলেন। তার সহকর্মীরা বহু কষ্টে ওই পুলিশের হাত থেকে সে দিন ওই নেতাকে বাঁচিয়েছিলেন। ন্যক্কারজনকভাবে একজন রাজনীতিককে পুলিশের সন্ত্রাসী কায়দায় মারধরের চিত্র টেলিভিশনে সারা বিশ্ব দেখেছে।
একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সবাই ভেবেছিল, এর প্রকাশ্যে প্রমাণ থাকায় উদ্ধত পুলিশ কর্মকর্তার বিচার হবে। কিন্তু সে ধরনের কিছু হতে দেখা গেল না। বরং কিছু দিন পর জানা যায়, তিনি পুলিশের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছেন। আরো পরে জানা গেল, তার প্রমোশন হয়েছে দ্রুতবেগে। তদুপরি, তাকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং দেয়া হয়েছে। শেষে জানা গেল, তিনি পুলিশে সবচেয়ে প্রভাবশালী। তাকে কেউ থামাতে পারছে না। দেশের এক শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার জন্য তাকে জিম্মি করেছিলেন। তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও জিম্মি করে নির্যাতন চালান। আর শোনা গেল তিনি এভাবে নিজের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আরো অনেকের সাথে জঘন্য সব অপরাধ করেছেন। রাষ্ট্র যখন একটা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তাকে দানব হয়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়, সে রাষ্ট্রে শেষ পর্যন্ত নৈরাজ্যের অসংখ্য পকেট তৈরি হবে এতে কোনো সন্দেহ থাকে না। এমন একটি ‘পকেট’ ছিল টেকনাফ।
সারা দেশে অনেক ‘টেকনাফ’ রয়েছে। সেখানে দেশের প্রচলিত আইন চলে না। চলে প্রদীপের মতো কর্মকর্তাদের নির্দেশ। ক্ষমতাসীন দলের চেয়েও এরা বেশি শক্তিশালী। কারণ সরকারের অস্তিত্ব রক্ষায় দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়ে এদের ভূমিকাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়েছে। পুলিশও মনে করে, তারাই সরকার টিকিয়ে রেখেছে। ক্ষমতাসীনদের অনেকে মনে করেন, পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকা না থাকলে দুর্বল নির্বাচন দিয়ে পুনঃ পুনঃ সরকার প্রতিষ্ঠায় সফল হওয়া যেত না। ফলে প্রদীপদের সিন্ডিকেটের সাথে না থেকে এর প্রতিবাদ করাও বিপজ্জনক। সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মীও ক্রসফায়ারে পড়েছেন। সারা দেশে এর অনেক নজির রয়েছে।
কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের শক্ত সংগঠন রয়েছে। তার পরও এত মানুষ বিচার না পেয়ে সামান্য একজন ওসির কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়ার ঘটনা এই পরিপ্রেক্ষিতে খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। প্রদীপ গং একটি বাস্তব প্রেক্ষাপটে নিজেদের রাজত্ব কায়েমের সুযোগ পেয়ে স্বাধীন দেশে সেটা চর্চা করে চলেছে। এ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের উত্তরণ কোন পথে কেউ জানে না।
jjshim146@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা