দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধ উত্তেজনায় নতুন মাত্রা
- মাসুম খলিলী
- ১১ আগস্ট ২০২০, ২০:৪৩
দক্ষিণ এশিয়ায় স্নায়ুদ্বন্দ্ব ক্রমেই যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে বলে মনে হয়। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমটি হলো চীনের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর কাশ্মিরের যে গিলগিট-বাল্টিস্তানের ওপর দিয়ে চলে গেছে সেটিকে কার্যকরভাবে ভারতের অংশ হিসেবে গণ্য করতে শুরু করা নয়াদিল্লির। দেশটির আবহাওয়ার খবরে প্রথমবারের মতো গিলগিট-বাল্টিস্তানের তথ্য নিয়মিতভাবে অন্য ভারতীয় শহরগুলোর সাথে পরিবেশন করা হচ্ছে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ভারতীয় সংসদে আজাদ কাশ্মির গিলগিট-বাল্টিস্তান ও পুরো লাদাখ ভারতের অংশ বলে যে দাবি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ করেছিলেন, সেটিকে কাজে পরিণত করার প্রস্তুতি বিজেপি সরকার নিচ্ছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো, জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদাসম্বলিত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রথম বার্ষিকীতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুরোটাকে বিতর্কিত ভূমি হিসেবে প্রদর্শনের পরিবর্তে পাকিস্তানের মানচিত্রের অংশ হিসেবে দেখিয়েছেন। একই সাথে দেশ বিভাগে পাকিস্তানে যোগদানের অপশন দেয়া ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশীয় রাজ্য জুনাগড়কে পাকিস্তানের মানচিত্রের অংশরূপে দেখানো হয়েছে। কাশ্মিরের যে মানচিত্র ইমরান খান প্রকাশ করেছেন, তাতে লাদাখের অংশটিতে সুস্পষ্ট রেখা না টেনে চীনের সাথে বোঝাপড়ার বিষয়টিই প্রদর্শন করা হয়ে থাকতে পারে। গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর উত্তেজনা নিরসনের কার্যকর ও টেকসই কোনো প্রচেষ্টা এখন সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় চীন এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করেছে বলে জানা যাচ্ছে। অন্য দিকে ভারত ফ্রান্সের কাছ থেকে জরুরিভাবে রাফায়েল যুদ্ধ বিমানের সরবরাহ নিয়েছে।
তৃতীয় ঘটনাটি হলো, ভারত-নেপাল সীমান্তের কালাপানি লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরা অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে নেপালের মানচিত্রে প্রদর্শনের পর সেই ম্যাপ জাতিসঙ্ঘ ও বিভিন্ন বিশ্ব সংস্থার কাছে পাঠানো। আর ভারতের বিতর্কিত সীমান্তের অদূরে নেপাল বিশেষ বিমান ঘাঁটি তৈরি করছে বলেও খবর আসছে। এর অদূরেই সেনা সমাবেশ করছে চীন। ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর হলো, সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চীনা সেনার একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতের উত্তরাখণ্ডের চামিলি জেলার ওই গিরিপথের এলাকাতেই ভারত-নেপাল সীমান্ত রয়েছে। ভারতের কাছে এই এলাকা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, গত জুন মাসেই নেপাল পার্লামেন্টে পাস হয়েছে নতুন মানচিত্র বিল। সে বিলে উত্তরাখণ্ডের কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরার পাশাপাশি লিপুলেখ গিরিপথকেও নেপালি ভূখণ্ডের অংশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় নতুন করে চীনা সেনামোতায়েন তিন দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ভারতীয় সেনাসূত্রের তথ্য অনুসারে, চীনা সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি ভারী অস্ত্রশস্ত্রও নিয়ে আসা হয়েছে ওই এলাকায়। এ ছাড়া উত্তর সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর তৎপরতা বাড়াচ্ছে বেইজিং, এমনটাই দাবি ভারতীয় সেনা সূত্রের।
তিব্বতের কৈলাস এবং মানস সরোবরে তীর্থযাত্রা করতে বহু ভারতীয় এই লিপুলেখ গিরিপথই যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছেন। তাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ধরচুলা থেকে লিপুলেখ পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করছে ভারত। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি এই সড়ক উদ্বোধন করতে যাওয়ায় কড়া বার্তা দিয়েছিল নেপাল।
এর মধ্যে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, চীনের মোকাবেলায় ভারতীয় সেনাদের যুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চীন ও ভারতের মধ্যকার উত্তেজনা থামছেই না। লাদাখের প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার পয়েন্ট এবং দেপসাং উপত্যকা থেকে সেনা সরাতে রাজি নয় চীন। সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে দফায় দফায় বৈঠকেও দু’দেশের মধ্যে বরফ গলেনি। ভারতীয় বার্তা সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রায় তিন মাস ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়েছে চীন। বারবার তাদের সাথে আলোচনা করেও এ বিষয়ে এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হয়নি।
গালওয়ান, হটস্প্রিং, ফিঙ্গার পয়েন্ট ফোর থেকে সেনা সরালেও ভারতীয় ভূখণ্ডের প্যাংগং, দেপসাংয়ে এখনো ঘাঁটি করে বসে আছে চীনা সেনারা। সে কারণেই ভারতীয় সেনাদের ‘সব ধরনের প্রস্তুতি’ নিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। তিনি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে গত কয়েক দিনে লাদাখ থেকে আসাম পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় গেছেন, সেখানে কর্তব্যরত সেনা কমান্ডারদের সাথে বৈঠক করেছেন। সিকিম ও অরুণাচলের চীন সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। ‘সব ধরনের পরিস্থিতি’ মোকাবেলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নয়াদিল্লির দাবি, দেপসাংয়ের বিপরীতে প্রায় ১৫ হাজার সেনা, ট্যাংক, কামান মোতায়েন করেছে চীন। লাদাখের উত্তরে অবস্থিত দেপসাংয়ের রণকৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।
উত্তেজনাকর এই সময়টাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি রামের জন্মস্থান দাবি করেছেন নেপালে। ‘সত্যিকারের অযোধ্যা নেপালে, ভারতে নয়’ এই দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবার ‘রাম জন্মভূমি অযোধ্যা ধাম’ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে তিনি রামের ‘আসল’ জন্মভূমি নামে কথিত নেপালের অযোধ্যাপুরীতে রাম, লক্ষণ, সীতা ও হনুমানের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে মহা ধুমধামে ‘রাম নবমী’ পালনের জন্যও ব্যাপক পরিকল্পনা করেছেন। তিনি থোরির কাছে মাদি এলাকার নতুন নাম অযোধ্যাপুরী রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন। নেপালের সরকারি বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ কমিটির খবরে বলা হয়, আসন্ন দশরথের নবমীতে প্রধানমন্ত্রী ওলি রামমন্দির নির্মাণকাজ উদ্বোধনের পর ‘ভূমি পূজা’ করবেন। এর কয়েক দিন আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে, দেবতা রামের জন্মভূমি ভারতে নয়, সেটি থোরির কাছে নেপালের অযোধ্যাপুরীতে। বিশ্বাস করা হয়, দেবী সীতার জন্মস্থান নেপালের জানকপুরীতে। প্রতি বছর রাম-সীতার বিয়ের বার্ষিকীতে মহা সমারোহে শোভাযাত্রা বের হয় এখানে।
নেপালি প্রধানমন্ত্রী এ দাবি এমন একসময় করেন যখন রামের জন্মস্থল দাবি করে অযোধ্যার বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্থলে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপর বিলাসবহুল রামমন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে রায় প্রদানকারী বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি ও পরে বিজেপির সংসদ সদস্য গগৈ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ করোনা আক্রান্ত থাকায় রামমন্দিরের শিলান্যাসে অংশ নিতে পারেননি।
আরেকটি খবর হলো, পাকিস্তান-ভারত পানি বিরোধে মধ্যস্থতা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ দিন চলে আসা এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ কিংবা সালিশ আদালত গঠনে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে অপারগতা প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করতে পরামর্শ দিয়েছে। ইসলামাবাদে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর পাকিস্তানে বিশ্বব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর প্যাচামুথু ইলানগোভান বলেন, কোন বিকল্পটি বেছে নেয়া হবে, তা নির্ধারণের জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে একত্রে বসেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাকিস্তান সালিস আদালত বসানোর জন্য অনুরোধ করেছে। অন্য দিকে, ভারত তাদের দু’টি হাইড্রো প্রকল্প নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে বলেছে। ১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি সই হয়েছিল। এই চুক্তি সইয়ে মধ্যস্থতা করেছে বিশ্বব্যাংক। চুক্তিতে এ নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা করবে বলে কথা রয়েছে। ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহারে নির্মিত ড্যাম নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলছে।
ভারতের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই চুক্তির আওতাধীন, অভিন্ন নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করার হুমকি দেয়া হয়। আর পাকিস্তান পানি বন্ধ করলে ‘সর্বাত্মক’ যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে পাল্টা জবাব দেয়। দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার মতো উত্তেজনা জাগিয়ে দিতে সিন্ধু পানি চুক্তি এখন একটি দগদগে বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট অভিন্ন নদীর পানির ওপর পাকিস্তানের বড় একটি অঞ্চলের কৃষি আবাদ নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই ইসলামাবাদের।
এ সময়ে শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ নির্বাচনে চীনপন্থী নেতা হিসাবে পরিচিত রাজাপাকসের দল ও মিত্ররা সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। আর ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে পরিচিত ইউএনপির আসন ১০৫ থেকে মাত্র একটিতে নেমে এসেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে নিজেই তার আসনে পরাজিত হয়েছেন। ইউএনপি থেকে বের হয়ে আসা, সাজিথ প্রেমাদাসা নতুন একটি দল গঠন করে ৫৪ আসন নিয়ে সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসছেন।
আফগানিস্তানে তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র তার সেনা প্রত্যাহার অব্যাহত রেখেছে। ডিসেম্বর নাগাদ এই প্রত্যাহারপর্র্ব শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর সদ্য অবসরে যাওয়া এক মেজরকে কক্সবাজারে পুলিশের গুলি করে হত্যা করা নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সেনাপ্রধান এবং পুলিশ প্রধান দু’জনই একযোগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উত্তেজনা নিরসনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। সিনহা নামের সাবেক এসএসএফ টিমের সদস্য, এই মেজরকে হত্যার জন্য টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ এবং এসআই লিয়াকতের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা এখন র্যাবের কাছে রিমান্ডে রয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এসব প্রধান ও অপ্রধান কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোতে মনে হচ্ছে এই অঞ্চলের মনস্তাত্ত্বিক উত্তেজনাযুদ্ধের মতো সঙ্ঘাতের দিকে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই সঙ্ঘাতের তিন প্রধান পক্ষই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং এর মধ্যে একটি দেশ জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থ্য়াী সদস্য।
এই অঞ্চলের উত্তেজনার সাথে বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের নানা সমীকরণও যুক্ত রয়েছে। চীন ২০৩০ সাল নাগাদ অথবা তার আগেই বিশ্বের এক নাম্বার অর্থনীতির দেশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সাথে চীন এশীয় এবং বিশ্বরাজনীতিতে তার প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টায় সক্রিয় হতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, চীনের এই সম্ভাব্য পরাশক্তি হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা ঠেকাতে এশিয়ায় দেশটিকে সীমিত করতে হবে। চীনের চার পাশের বড় শক্তিগুলোর মধ্যে রাশিয়ার সাথে বেইজিং অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বড় আকারের একটি সমঝোতায় উপনীত হয়েছে। জাপানের সাথেও বিরোধকে আর বাড়তে না দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে চীনের। জাপানও চীনের সাথে সঙ্ঘাতে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী বলে মনে হয় না। বাকি রয়েছে ভারত। একসময় ভারত সোভিয়েত বলয়ে থাকলেও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর থেকে দেশটি পাশ্চাত্যের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ভারতে ক্ষমতায় আসার পর কৌশলগত এই পথযাত্রায় একটি উল্লম্ফনের ঘটনা ঘটেছে। পাশ্চাত্যের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সমরাস্ত্র কেনা এবং যৌথ উদোগে উৎপাদনের পথে দিল্লি অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। দীর্ঘ দিনের রুশ অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য এর মধ্যে শতাধিক ধরনের অস্ত্র আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এসব অস্ত্র ভারতে উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে।
এসব কৌশল ভারতকে সমরাস্ত্রে ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় চীনের কাছাকাছি পৌঁছানো এবং এই অঞ্চলে পাশ্চাত্যের মিত্র হিসেবে আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্ন কল্পনা থেকে উৎসারিত। এখন কাশ্মির নেপাল অরুণাচল ইত্যাদি ইস্যুতে যে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে এটি মূলত এই সমীকরণকে ঘিরে। এর বাইরে বিজেপি ভারতের উন্নতি কর্মসংস্থান ও অগ্রগতি এমনকি করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তাতে উগ্র জাতীয়তা এবং যুদ্ধোন্মাদনা জাগিয়ে তোলা ছাড়া তাদের আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত করা যাবে না। এটি ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার যে ডকট্রিন আরএসএস নেতাদের রয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের জন্যও প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কোনো ধরনের যুদ্ধোন্মাদনাই কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। মধ্যপ্রাচ্যে যে সঙ্ঘাত ও হানাহানি তা সেই অঞ্চলের দেশগুলোকে ধ্বংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে গেছে। সেই যুদ্ধ পরিস্থিতি বিশ্বমোড়লরা সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ায় নিয়ে আসতে চাইছেন। উপরে যেসব ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো এ ধরনের একটি নীলনকশার সাথে যুক্ত বলে মনে হয়। এই যুদ্ধ এখনই ঘটবে কি না বলা মুশকিল। তবে আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় কোন দল বা কে আসছে তার ওপর দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতি বেশ খানিকটা নির্ভর করে। আর ইসরাইলের নেতানিয়াহুর সরকারের পতনের জন্য যে আন্দোলন দেশটিতে চলছে সেটিরও প্রভাব অন্তরালে দক্ষিণ এশিয়ায় পড়তে পারে। দেশটি ভারতে তার প্রতিরক্ষাবাণিজ্য জোরদার করা এবং অভিন্ন শত্রু পাকিস্তান ও ইরানকে ঘায়েল করতে এই অঞ্চলে অবস্থান তৈরি করতে চায়। কাশ্মিরে যে পরিস্থিতির উদ্ভব গত বছরাধিক সময়ে ঘটেছে, তার সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা