২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জানা-অজানা ভাইরাস করোনা

- ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কাছ থেকে কোনো করুণার প্রত্যাশা করা যায় না। করুণার মালিক একমাত্র পরম করুণাময় আল্লাহ। কোনো আশাবাদ ছাড়াই করোনা জীবাণুটি ঘন ঘন তার স্বরূপ বদলায়; চেহারা পাল্টায়। ভাইরাসটি সারা পৃথিবীতে তোলপাড় তুলেছে মহামারী বয়ে এনে। তার সৃষ্ট ‘নোভেল কোভিড-১৯’ মহামারী অতীতের প্লেগের মতোই ভয়াবহ ও সংক্রামক।

অপর দিকে, করোনা দুর্যোগের কিছু ‘ইতিবাচক’ পরিণতি আছে বলেও অনেকে মনে করেন। তা হলেও, কেউ চান না এমন বিপদ প্রলম্বিত হোক আর একটি মুহূর্তও এবং সবার কামনা- এমন জীবাণুর প্রাদুর্ভাব যেন আর কোনো দিন দুনিয়ার কোথাও না ঘটে বিন্দুমাত্রও। অবশ্য করোনার কারণে বিশ্বে উত্তরণ ঘটছে অনলাইন যুগের। মনে হয়, যেন তথ্যপ্রযুক্তির এই রূপান্তরে বিরোধিতা কিংবা বিলম্ব করা হলে মানুষকে বিষম ‘বেলাইন’ বা বেকায়দায় পড়তে হবে। এ সুযোগে অবশ্য ডিজিটাল প্রতারণার যুগে ‘অনলাইন প্রতারণা’য় লিপ্ত হয়েছে কিছু অসৎ লোক।

যা হোক, যুগের চাহিদাকে অস্বীকার করা যায় না। অনলাইনে সমাজের জীবনযাত্রার উন্নতি হলে তাকে অগ্রগতি হিসেবে মেনে নিতে হবে। এর বাস্তবতা অস্বীকার করে পুরনো প্রথা আঁকড়ে ধরা আর সম্ভব নয়।

করোনাকালের এ সময়ে ইন্টারনেটে ‘পৃথিবী সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য’ তুলে ধরা হয়েছে। এর কয়েকটি বিষয় অনলাইনসহ তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটির সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, বলা হয়েছেÑ মানবজাতির দীর্ঘ ইতিহাসে যে ক’টি জিনিস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তার কারণে ‘সর্বাধিক বিক্রীত’ বলে গণ্য, তার মধ্যে প্রথমেই আসে আইফোনের (ও-ঢ়যড়হব) নাম। সাথে আছে রুবিক্স্ কিউর এবং একটি বই ‘হ্যারি পটার’, যা লেখিকা লিখেছিলেন কিশোর বয়সে। করোনা তাণ্ডবের এ দুঃসময়ে সব ব্যবসা মার খেলেও অনলাইন ব্যবসার রমরমা। এর কাটতি আরো বাড়বে বলে মনে করা যায়। প্রাসঙ্গিক একটি তথ্য হলোÑ বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও মূল্যের এ যুগে বহুল ব্যবহৃত স্মার্টফোনে চার্জ দিতে সারা বছরে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করতে হয়, এর দাম এক ডলারেরও কম। বাংলাদেশের মতো কোনো কোনো রাষ্ট্রে বিদ্যুতের পেছনে খরচ বাড়ছে বারবার। অন্য দিকে, অনলাইনের এ সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া কেউ ‘স্মার্ট’ হতে পারে না বলে মনে করা হয়। এবার আইটিসংক্রান্ত আরেকটি তথ্য। বাস্কেট বল খেলাটি বিশ্বের ‘সর্বাধিক ধনাঢ্য দেশ’ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জগতে বেশ জনপ্রিয়। ল্যারিবার্ড একজন নামকরা ‘বাস্কেটার’। তার নামানুসারে, সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট টুইটারের লোগো যে ‘বার্ড’ বা পাখি, এর নাম রাখা হয়েছে ‘ল্যারি।’

আসা যাক ভাইরাসজনিত মহামারীর এ সময়ে অণুজীব প্রসঙ্গে। অণুজীব বা ভাইরাস করোনা পৃথিবীব্যাপী ভয়াল ‘কম্পন’ সৃষ্টি করেছে। তার গতিপ্রকৃতি ও গঠনবৈশিষ্ট্য বুঝার প্রাণপণ প্রয়াস ও গবেষণা চলছে দেশে দেশে। আসলে মানুষ যতই অহঙ্কার করুক না কেন, তার জ্ঞানের পরিধি খুব সীমিত একবিংশ শতকেও। করোনা নামের অণুজীবের উৎপত্তি ও সংক্রমণ সম্পর্কিত তথ্য দূরে থাক, খোদ মানবদেহের ৯৯ শতাংশ অণুজীব সম্পর্কে আজও বিজ্ঞান জানে না। অতএব, করোনাকে বুঝতে সময় লাগা স্বাভাবিক; তদুপরি এর ধরন ধারণ যেখানে ঘন ঘন বদলায়।

সবার জানা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর ব্রাজিল ও ভারতের মতো দুটো বড় দেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। ব্রাজিল দেশটা আমাদের বাংলাদেশের ৭০ গুণেরও বেশি বড়।

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দু’চারটি ছাড়া সব দেশের সাথে ব্রাজিলের রয়েছে সীমানা। এর রিও গ্রান্ডে নামের রাজ্যে বাস করে দেশটার লোকসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ। তবে ব্রাজিলিয়ান মডেলদের শতকরা ৭০ ভাগই এই রাজ্যের। তেমনি এখন বলা হচ্ছে, ব্রাজিলের আমাজন মহারণ্যবর্তী মানাউশ রাজ্যে করোনার রোগী সর্বাধিক। এর সংক্রমণের হার নাকি অরণ্যের আদিবাসীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি। অপর দিকে, ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর সাওপাওলোতে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ। বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর ঢাকা নিয়েও এমন আশঙ্কা অনেকের।

আলোচ্য ‘অজানা’ তথ্যে আরো আছে, মানুষের নামের শেষাংশরূপে ভ্যান, লি ও জ্যাং বিশ্বে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়। সর্বাধিক জনবহুল চীনের ২১ শতাংশ মানুষ এগুলো নামের মধ্যে ব্যবহার করেছেন। তবে যে চীনের একটা নগরীতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সূচনা ও বিস্তার, সে দেশে নিশ্চয়ই এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যেসব শব্দ তার মধ্যে আছে করোনা, কোভিড, কোয়ারেন্টিন, লকডাউন, আইসোলেশন, টেস্ট, ল্যাবরেটরি, ভ্যাকসিন প্রভৃতি।

জাপানে কিছু ট্রাফিক সিগনালে সবুজের বদলে নীল বর্ণের বাতির ব্যবহার চলছে। কারণ মনে করা হয় যে, একই শব্দ এই দু’রঙের নামের উৎস। তা বলে আমাদের দেশে করোনাঘটিত লকডাউনের বেলায় নিশ্চয়ই গ্রিন জোনকে ‘ব্লু জোন’ বলা হবে না।

এর মধ্যে খবর পাওয়া গেল, ‘হিমালয়দুহিতা’ নেপালের উঁচু উঁচু পাহাড়ে লম্বা মৌমাছি দেখা যায়, যাদের মধু খেলে এক ধরনের মতিভ্রম বা বিভ্রান্তি ঘটে। কিন্তু বর্তমানে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কোভিড মহামারী ঠেকাতে আফ্রিকায় শুরু হয়েছে মধু ও কালিজিরার মিশ্রণ সেবনের নোসখা। নাইজেরিয়ার একটা রাজ্যের গভর্নর কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর জনৈক গ্রাম্য ডাক্তার তাকে পরামর্শ দেন কালিজিরা ও মধু খেতে। তিনি এ পরামর্শ গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছেন বলে পত্রিকার খবর।

ভারতের ‘অর্থনৈতিক রাজধানী’ বলা যায় বোম্বে বা মুম্বাই মহানগরীকে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এই বন্দরনগরে। ‘বোম্বে ফেনোটাইপ’ হলো বিশেষ এক ধরনের রক্তের গ্রুপ যাতে কিছু নির্দিষ্ট উপাদান নেই। বিশ্বের মানুষের মাত্র দশমিক ০০০৪ শতাংশ এটা ধারণ করে। অথচ মুম্বাই শহরে এই রক্তের প্রাপ্তির হার দশমিক ১ শতাংশ; এর অর্থ, প্রতি ১০ হাজারে একজন করে। কাকতালীয় ব্যাপার হলোÑ এবার ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ চরমে উঠেছে; যার মধ্যে মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্র রাজ্যের পরিস্থিতি সর্বাধিক ভয়াবহ। মুম্বাই এর রাজধানী। এ নগরী ও এ প্রদেশে কোভিডের প্রকোপ নাকি সর্বাধিক।

পাদটীকা : (ক) চার্লস ডারউইন শুধু বিবর্তনবাদের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত নন; তিনিই সর্বপ্রথম, অফিসের চেয়ারে চাকা লাগিয়েছিলেন, যাতে মানুষ সহজে নড়াচড়া করতে পারে। এখন বাস্তবতা হলো, লকডাউনের দরুন মানুষের ‘নড়াচড়া’ একদম কমে গেছে। আর ভাইরাস মহামারীর কারণে অফিসের প্রয়োজনও হ্রাস পাচ্ছে। কারণ, বলা হয়েছে, যতটা সম্ভব বাড়িতে থেকে কাজ করতে। এতে মহামারীর সংক্রমণ থেকে বাঁচা সহজ হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

(খ) মানুষ ও বানর ছাড়া সব স্তন্যপায়ী প্রাণী অতি বেগুনি রশ্মি দেখতে পায়। মানুষ তা পারে না বলে বিদ্যুতের তার থেকে সে নিরাপদ নয়। আসলে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ হওয়ার দাবিদার মানুষ কতটাইবা নিরাপদ? মাত্র এক সেকেন্ড পরে কী ঘটবে, সেটাও জানা নেই তার। বিশেষ করে, করোনাভাইরাসের কবল থেকে তো মানুষ নিরাপদ নয় সামান্যও।

(গ) আমরা জানি, আইনস্টাইন ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কিন্তু তিনি তার জীবনের শেষ দু’টি শব্দ বুঝাতে পারেননি। কারণ তার পরিচর্যাকারী নার্স জার্মান ভাষা জানতেন না। তেমনি বলা যায়, কোভিড-১৯ ব্যাধির ওষুধ শুধু আবিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়। এটা কেনার সুযোগ ও সামর্থ্য থাকতে হবে সাধারণ মানুষের। না হয়, বিরাট জ্ঞানী ব্যক্তিদের গবেষণাপ্রসূত এ উদ্ভাবনও হবে নিষ্ফল। 

 


আরো সংবাদ



premium cement