২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কেন কাঁদবে না হৃদয়

- ছবি : নয়া দিগন্ত

করুণাহীন করোনা ক্ষতবিক্ষত করেছে আমাদের হৃদয়। রবীন্দ্রনাথের নিবেদন হৃদয়ের কাছে ‘আনন্দ-বেদনার’। তার ভাষায়, ‘আছে আমার হৃদয় আছে ভরে/এখন তুমি যা-খুশি তাই করো/এমনি যদি বিরাজ অন্তরে/বাহির হতে সকলি মোর হরো।/সব পিপাসার যেথায় অবসান/সেথায় যদি পূর্ণ করো প্রাণ,/তাহার পরে মরুপথের মাঝে/উঠে রৌদ্র উঠুক খরতর’। একই সাথে তিনি বলছেন, ‘এক দিকেতে ভাসাও আঁখিজলে/আরেক দিকে জাগিয়ে তোলো হাসি’। আজকে বাংলাদেশের লাখ মানুষের কাছে সেই আনন্দ-বেদনার স্মৃতি। বাঙালির হৃদয়বৃত্তি নিয়ে কারো কোনো অনুযোগ-অভিযোগ নেই। ভালোবাসায় অবারিত সে হৃদয়। আজ সে হৃদয় বিষণ্ন ব্যথিত, এমনকি নিষ্ঠুর-নির্মম।

প্রতিদিন সংবাদপত্রে, গণমাধ্যমে হৃদয়ের যে করুণ ছবি দেখছি প্রতিদিন তা ব্যথিত না করে পারে না কোনো হৃদয়কে। স্বাভাবিক সময়ের অস্বাভাবিক চিত্র আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও রক্তপাত যেন সমাজের সমরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। করোনা ভাইরাসের প্রায় তিন মাসে আশা ছিল- ব্যথিত হৃদয়ের চিত্র দেখা যাবে না, সাময়িকভাবে হলেও। গোটা পৃথিবীর মৃত্যু-দুঃখ-কষ্টের সমব্যথী হবে এ দেশের মানুষ। ভীতি ও সহানুভূতির মিশ্রণে আশ্রয় পাবে মানুষ। কিন্তু পরিতাপের বিষয়- এর বিপরীত চিত্র দেখতে হলো আমাদের।

আমরা দেখলাম, নিজের গর্ভধারিণী মাকে গভীর রাতে বনের মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে যায় তার সন্তান। জন্মদাতা বাবাকে কবর না দিয়ে ছেলে যায় পালিয়ে। নিজ স্বামীকে গভীর রাতে ঘরে জায়গা না দিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে বলে স্ত্রী। প্রবাসীর স্ত্রী কবর পায় না, বাপের বাড়িতে অথবা স্বামীর বাড়িতে। স্বজনের লাশ নিতে অস্বীকার করে আপনজন। করোনায় আক্রান্ত মানুষকে করুণা দেখানোর পরিবর্তে ওই বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে অমানুষরা। বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করা হয় বাড়ির লোকজনকে। বাধা দেয়া হয় করোনার নমুনা সংগ্রহে। কে জানে, হয়তো ভাইরাস নয়, অন্য রোগে মৃত্যু হয়েছে তার। তবুও রোদে শুকায়, বৃষ্টিতে ভেজে মানুষের লাশ। এসব মানুষ লাশ দাফনেও দেয় বাধা। করোনা সন্দেহে ফেলে যায় বাসস্ট্যান্ডে। দেখেও না দেখার ভান করল আশপাশের মানুষ। করোনা সন্দেহে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করে হাসপাতালের পর হাসপাতাল। বিনা চিকিৎসায় মারা গেল অসংখ্য মানুষ। প্রবাসী গণধোলাই খায় মানুষের হাতে। বাংলাদেশের সমাজ জীবনের এ এক করুণ চিত্র। ‘জীবন পাতার অনেক খবর, রয়ে যায় অগোচরে’।

যে মানব হৃদয় প্রেম ভালোবাসায় ব্যাকুল, যে হৃদয় সেবা মমতায় আকুল, আজ তা যেন হারিয়ে গেছে করোনার আঁধারে। অথচ মানুষ তার সমস্ত মমত্ব দিয়ে, হৃদয়-অনুভূতি দিয়ে নির্মাণ করেছে এই প্রীতিময় পৃথিবী। সেবা দিয়ে, প্রেম দিয়ে আলোকিত করেছে মানুষের হৃদয়। আজ যেন সেই অনুভূতি-উপলব্ধি থমকে দাঁড়িয়েছে। হাজী মুহসীন, আহসান উল্লাহ, রনদা প্রসাদ সাহা অথবা দূরের নাইটিঙ্গেল, ব্যাডেন পাওয়েল হারিয়ে গেছে এই প্রাচ্যে অথবা পাশ্চাত্যে। এখানে এখন ঘোর অমানিশা। ‘অবাক পৃথিবী! অবাক যে বারবার/দেখি এই দেশে মৃত্যুরই কারবার/হিসাবের খাতা যখনি নিয়েছি হাতে/দেখেছি লিখিত ‘রক্ত খরচ’ তাতে। এ দেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম।’ সুকান্ত সেকালের দুর্ভিক্ষ দেখেছিলেন। এ কালের করোনা মহামারী দেখেননি। কত দূর সেকাল আর এ কাল! অথচ যেন বদলায়নি কিছুই। হঠাৎ আলোর ঝলকানি মিলিয়ে যায়। হাহাকারে হারিয়ে যায় মানবতা। অথচ কত কথা কত গান, কত জ্ঞানী-গুণী কত মহাজন বলেছেন মানবতার কথা। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, মানবীয়তা। মানুষকে আর মানুষের ভালোবাসাকে এক ও অভিন্ন করে দেখেছেন তিনি। আমরা শিখেছি, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই’।

পড়েছি রাস্কিনের উদ্ধৃৃতি : ‘ডিউটি টুয়ার্ডস গড, ডিউটি টুয়ার্ডস প্যারেন্টস, ডিউটি টুয়ার্ডস ম্যানকাইন্ড’। সব ধর্মে, মহৎ কর্মে, মরমি আবেদনে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে মানবতার জয়গান। ইসলাম বলে, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। কবিতায় পড়েছি, ‘হাশরের দিন বলিবেন খোদা- হে আদম সন্তান/তুমি মোরে সেবা কর নাই যবে ছিনু রোগে অজ্ঞান।/মানুষ বলিবে তুমি প্রভু করতার,/আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার?/বলিবেন খোদা- দেখনি মানুষ কেঁদেছে রোগের ঘোরে,/তারি শুশ্রƒষা করিলে তুমি যে সেথায় পাইতে মোরে।/খোদা বলিবেন- হে আদম সন্তান, আমি চেয়েছিনু ক্ষুধায় অন্ন, তুমি করো নাই দান।/মানুষ বলিবে- তুমি জগতের প্রভু,/আমরা কেমনে খাওয়াব তোমারে, সে কাজ কি হয় কভু?/ বলিবেন খোদা- ক্ষুধিত বান্দা গিয়েছিল তব দ্বারে,/মোর কাছে তুমি ফিরে পেতে তাহা যদি খাওয়াইতে তারে।/পুনরপি খোদা বলিবেন- শোনো হে আদম সন্তান,/পিপাসিত হয়ে গিয়েছিনু আমি, করাওনি পানি পান।/মানুষ বলিবে- তুমি জগতের স্বামী,/তোমারে কেমনে পিয়াইব বারি, অধম বান্দা আমি?/বলিবেন খোদা- তৃষ্ণার্ত তোমায় ডেকেছিল জল আশে,/তারে যদি জল দিতে তুমি তাহা পাইতে আমায় পাশে।’ আমাদের প্রিয় নবী সা: তার পথে কাঁটা দিত যে বুড়ি, তাকে দিয়েছিলেন সেবা। সেই কৌশলে শুধু মানুষের সেবায় গড়ে তুলেছিলেন ‘হিলফুল ফুজুল’। অসংখ্য আসমানি তাগিদ এসেছে মানুষের সেবায় বিলিয়ে দিতে মনপ্রাণ। বলা হয়েছে- ‘যে প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে, ‘পেট পুরে খায়, সে প্রকৃত মুসলমান নয়’। “হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন? কাণ্ডারি, বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র” -লিখেছেন কবি নজরুল। আসলে ‘কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভিতরে সবারই সমান রাঙ্গা’।

বাঙালিরা কালো-ধলো কিংবা বাদামি হলেও ভেতরে বইছে ‘রক্তলাল’। তবে জাতি হিসেবে রয়েছে তার স্বাতন্ত্র্য। নিজস্ব বিষয় বৈশিষ্ট্য। এবনে খালদুন তার আল মোকাদ্দিমায় আশিরিয় বা গোত্র তত্ত্ব দিয়েছেন। জাতি-গোষ্ঠীর গতি-প্রকৃতি, আচার-আচরণ গড়ে ওঠে ভূগোল, ইতিহাস আর আবহাওয়াকে কেন্দ্র করে। সাগর-নদী-খালবিল এ ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়ায় নিয়ামক। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সোনার বাংলার যেমন রয়েছে শুনাম, তেমনি দুর্নামও। অতীতের কোনো কোনো পরিব্রাজক ও ঐতিহাসিক আমাদের সম্পর্কে খুব ভালো কথা বলেননি। আবুল ফজল সুবেবাংলাকে বলেছেন ‘বুলঘক খানা’ বা অশান্ত দেশ। পর্তুগিজ ইস পিওরেস বলেছেন ‘বিশ^াসঘাতক’। মেকলে বাঙালিকে দেখেছেন ‘প্রতারক হিসেবে’। আধুনিক আকবর আলি খান এসব কথা বলে ‘ছলনা জালের’ প্রমাণ দিতে চেয়েছেন। তার সাথে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। কথায় বলে ‘স্বভাব যায় না মলে’। মানুষ হিসেবে আদমের যা আদল ছিল আমাদেরও তা। সুতরাং করোনাভাইরাসের আগে ‘সহিংস স্বাভাবিক’ এবং ভাইরাসের সময় অসম্ভব আচরণ কি আমাদের পূর্বপুরুষের ডিএনএ’র কথা মনে করিয়ে দেয় না! আমরা বিশ^াস করতে চাই না অন্যায় অতীতে, বিশ^াস করতে চাই উজ্জ্বল ভবিষ্যতে।

স্বামীজী বলেছেন, ‘জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ^র’। আজ মানুষ জীবে দয়া করে না। ঈশ^রের সেবা করে না। সেবা পরিণত হয়েছে সার্ভিসে। একই সাথে এটি চাকরি এবং ব্যবসায়। রাষ্ট্র আলো দেয়ার নামে অবিশ্বাস্য মূল্য নেয়। হাসপাতালগুলো অভিজাত হোটেলের ভাড়া নেয়। যাতায়াত সবসময়ই প্রতারণার প্রামাণ্য উদাহরণ। এখন মানুষকে পেয়ে বসেছে ভোগ-লালসায়। ‘মানুষ বাঁচে সমকালে’। অতীত তার কাছে অর্থহীন। বর্তমানকে ঘিরে তার ভাবনা। ‘ইট, ড্রিঙ্ক অ্যান্ড বি মেরি’। ‘দুনিয়াকা মজা লে লো দুনিয়া তোমহারই হ্যায়’। ‘যত খুশি তত খাও, নাচো গাও’। রাজপথে বিলবোর্ড- ‘আয়েস করুন ঐশ^রীয়ার মতো’। এখন ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করি আমরা। ওয়াশিংটন থেকে টেকনাফ বা তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত তার আবেদন। পুঁজিবাদী এই পৃথিবী। পুঁজির আবেদন ত্যাগ নয় ভোগ। গোলকায়নের কবলে আমাদের সকাল-সন্ধ্যা। দেশজ ও বৈশি^ক উভয় প্রেক্ষাপটেই ব্যক্তি নিবিষ্ট ভোগে। সমাজ উন্মূখ ভোগের সামগ্রী সরবরাহে। রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে ভোগ আর সামগ্রীর নিশ্চিত সমীকরণে। একটি হতদরিদ্র দেশ যখন ‘ক্যাসিনো কালচারে’ সয়লাব হয়ে যায়, তখন বোঝা যায় রাষ্ট্রের চালচরিত্র।

এসব কথা পর্যালোচনা করলে তিনটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমত ব্যক্তি, দ্বিতীয়ত সমাজ, তৃতীয়ত রাষ্ট্র। এ তিনটি একে অপরের সাথে একান্তই সংশ্লিষ্ট, পরিপূরক ও নির্ভরশীল। ব্যক্তি মানুষের ভালোমন্দ, চাওয়া-পাওয়া এবং আশা-আকাক্সক্ষা একান্তই নিজস্ব। ভালো-মন্দ মিলেই ব্যক্তি মানুষ। মানুষের ভালোত্ব সম্পর্কে স্রষ্টার সার্টিফিকেট রয়েছে। তেমনি রয়েছে মন্দ সম্পর্কে। আল্লাহ বলছেন, ‘মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত’। সৃষ্টির সেরা জীব। আবার তিনিই বারবার সতর্ক করছেন, ‘মানুষ কতই না নিকৃষ্ট’। উৎকৃষ্ট বা নিকৃষ্ট- নির্ভর করে ব্যক্তির আচরণের ওপর।

কেউ মদ বেচে দুধ খায়, আবার কেউ বা দুধ বেচে মদ। বিচিত্র এই দুনিয়া। তবে ব্যক্তির এসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পরিবার বা পরিচর্যানির্ভর। সমাজবিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া’ (ঝড়পরধষরুধঃরড়হ চৎড়পবংং)। সমাজ যা লালন করে মানুষ তা গ্রহণ করে। রাষ্ট্র যা চায় নাগরিক সেভাবে বেড়ে ওঠে। রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, তাহলে সে সোনার মানুষ না হলেও রুপার মানুষ হতে পারে। আর রাষ্ট্র যদি চায় ভোগের চেতনায়, উন্নয়নের তাড়নায় গড়ে উঠবে নাগরিক জীবন- তবে তাই হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কেতাবি ভাষায় এটি হলো- ‘জাতি গঠনের প্রক্রিয়া’ (ঘধঃরড়হ ইঁরষফরহম চৎড়পবংং)। এরিস্টটল রাষ্ট্রকে নৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে বর্ণনা করেছেন। নাগরিকের জীবন সততা, নৈতিকতা ও দেশপ্রেম দিয়ে গড়ে তোলা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য অনুযায়ী নাগরিকদের জীবন আবর্তিত, বিবর্তিত ও প্রতিষ্ঠিত। সে জন্য রাষ্ট্রের আদর্শভেদে নাগরিক গড়ার পথ ও পাথেয় ভিন্ন হতে বাধ্য। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা যে নাগরিক চেয়েছি তাই পেয়েছি। এই নাগরিকদের ‘চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র’ কি না- তা সবাই জানেন। তেঁতুলগাছ লাগিয়ে যেমন মিষ্টি আম খাওয়া যায় না, তেমনি চোরের খনিকে সোনার খনিতে রূপান্তর করা যায় না। সমাজ কোনো আকাশ-পাতালের বিষয় নয়। বাস্তবের মাঝেই তার অবস্থান। ‘সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি’। অতীতে সমাজে যে নৈতিক অবস্থান ছিল আজ তা লুপ্ত। গত ৫০ বছরে ক্রমেই সমাজের নেতৃত্বে পরিবর্তন ঘটেছে ব্যাপক। গ্রাম বা শহরে এখন একধরনের পেশাজীবী, কর্তৃত্বশীল, অর্থলোলুপ নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়েছে। তারা সবসমই একটি দল করেন- ক্ষমতাসীন দল। বারবার ক্ষমতা পরিবর্তন হলে তারা তো বারবার দল পরিবর্তন করতে পারেন না! তারা ভাগ্যবান জগৎশেঠ। গত ১২ বছরের এটাই বাস্তবতা। এই পরিবেশে সাধারণ মানুষ কত অসহায়! বিচারপতি আবদুর রহমান ১৯৮০ সালে বলেছিলেন- ভালো মানুষরা আজ অসহায়।

এখনো ২০২০ সালে তাদের অসহায়ত্ব বেড়েছে বৈ কমেনি। সুতরাং সমাজ কোনো অপরাধের শাস্তি দিতে পারে না। এমনকি ধর্ষকেরও না। ক্ষমতার সাথে যুক্ত হয়েছে অর্থ, বিত্ত-বৈভব। সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ বাক্যটি ধার করতে চাই যাযাবর থেকে- ‘বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ’। মায়ের হাতপাখা অচল এখন ইলেকট্রিক ফ্যানের কাছে। বাবার আদেশ অকার্যকর ‘মোবাইল ভাইরাস’-এর কাছে। পৃথিবীর অন্যত্র ছোট হয়ে আসছে রাষ্ট্র, আর আমাদের মতো দেশে আরো বড় হয়ে উঠছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ও সরকার একাকার। বোঝা কষ্ট ‘সোনার হাতে সোনার কাকন কে কার অলঙ্কার?’ কথাবার্তা, সভা-সমিতি বা ব্যবসাবাণিজ্যের একক মালিক-মোক্তার তারাই। রাষ্ট্রের কাছে সমর্পিত সবাই। এমনকি মহামারী করোনাভাইরাসের গতিবিধি পরিবর্তন, নিয়ন্ত্রণ, পরিবর্ধন, পরিমার্জনও তাদের মালিকানাধীন। সুতরাং আপনার আচার-আচরণ ও আক্রান্তের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি মানবিক বা গণতান্তিক না হওয়াই স্বাভাবিক। এ কারণেই আরোপিত ভীতির রাজত্বে বসবাস করছি আমরা। এ থেকে উত্তরণের উপায়- ভয়কে জয় করা।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement