ইসরাইলের সম্প্রসারণ ও আরব ভূখণ্ড
- মাসুম খলিলী
- ৩০ মে ২০২০, ০৭:২৪, আপডেট: ৩০ মে ২০২০, ০৭:০৯
মধ্যপ্রাচ্যে এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও নানামুখী উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ১৭ মে ঐক্য সরকার গঠনের পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, জুলাইয়ের প্রথমার্ধে জর্দান উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের অংশ বিশেষ ইসরাইলের অংশ করে নেয়ার কাজটিই হবে তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এজেন্ডা। এর পরপরই পিএলও প্রধান মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সব চুক্তি ও সমঝোতা ২০ মে থেকে বাতিল ও অকার্যকর ঘোষণা করেছেন। অন্য দিকে জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের সাথে করা শান্তিচুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের প্রকাশ্য অনুমোদন অনুসারে নেতানিয়াহুর সরকার শুধু ৩০ শতাংশ ভূমি দখলে নেয়ার মধ্যে ইসরাইলের মানচিত্র সম্প্রসারণ সীমিত রাখবেন বলে মনে হয় না। এ দফায় নেতানিয়াহু পুরো পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকা ইসরাইলের মানচিত্রভুক্ত করে নিতে চলেছেন বলে মনে হচ্ছে। মাহমুদ আব্বাসের বক্তব্য সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করলে সেটিই সত্য বলে মনে হয়। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি এবং এর পরবর্তী অসলো চুক্তিসহ ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা সব চুক্তি বাতিলের অর্থ হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষ আর বহাল থাকবে না। অসলো চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার আগে পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকার যে অবস্থা ছিল সে অবস্থায় ফিরে যাওয়া হবে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ অকার্যকর হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইলের প্রশাসনের আওতায় চলে আসবে পুরো পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকা। ফিলিস্তিনিরা এই অঞ্চল ত্যাগ করে অন্য কোনো দেশে না গেলে সেখানে ইসরাইলি শাসনের অধীনে থেকে উদ্বাস্ত হিসেবে জীবন যাপন করার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। নেতানিয়াহুর উগ্র ইহুদি সহযোগীদের দাবি হলো, পুরো পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকা ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ে জর্দানকে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র করার জন্য দিয়ে দেয়া। নেতানিয়াহু অঘোষিতভাবে গত ১০ বছর সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন বলে মনে হয়।
জেরুসালেমকে রাজধানী করে নেয়ার পর থেকে ইসরাইল পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকাকে দেশটির মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ ভূমি ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে তথাকথিত শান্তি পরিকল্পনার আওতায় সমর্থন জানানো হয়েছে আগেই। নভেম্বরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই নেতানিয়াহু প্রশাসন এ সংযুক্তি সম্পন্ন করতে চায়। এ নিয়ে কার্যকর কিছু যাতে আরব দেশগুলো করতে না পারে তার জন্য সিরিয়া লিবিয়া ও ইয়েমেনের সঙ্ঘাতকে এমন জটিল করে তোলা হয়েছে যে, এখন আঞ্চলিক মুসলিম শক্তিমান দেশগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে করে অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি দু’টিই নিঃশেষ করছে।
যুদ্ধের চক্রে পড়ে সৌদি অর্থনীতি উদ্বৃত্ত সম্পদ থেকে এখন ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে। ইরান অবরোধের মুখে পড়ে আর প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে ছায়াশক্তি দিয়ে যুদ্ধ করে করে নিজের শক্তিকে নিঃশেষ করে চলেছে। অন্য দিকে যুদ্ধের জালে নতুন করে আটকে যাচ্ছে তুরস্কও। মুসলিম শক্তিশালী দেশগুলোর নিজেদের এ সঙ্ঘাতে ইসরাইল তার মানচিত্র বিস্তৃত করার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য কার্যকরভাবে কিছু করার মতো কেউ থাকছেন না।
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যে আয়োজনের কথা শোনা যাচ্ছে তার বাস্তবায়ন কাল বলা হচ্ছে, এখন থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ। পরিকল্পনা অনুযায়ী জর্দান উপত্যকা ও পশ্চিমতীর ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হবে। ফিলিস্তিনিদের ঠেলে দেয়া হবে জর্দানে। জর্দানের বাদশাহ আবদ্ল্লুাহর পূর্ব পুরুষরা জাজিরাতুল আরব তথা মক্কা-মদিনা ও সন্নিহিত যে অঞ্চলের শাসক ছিলেন তাদেরকে সেটি আবারো দেয়া হবে। তারা উসমানীয় খেলাফত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই অঞ্চলে একটি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সৌদ পরিবারের হাতে পবিত্র ভূমির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সম্পদহীন অনুর্বর একটি অঞ্চলে জর্দান রাষ্ট্র গঠন নিয়ে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বর্তমান সৌদি শাসকদের হাতে থাকবে রিয়াদের পুরনো অঞ্চলটি। বৃহত্তর সৌদি সামাজ্য প্রতিষ্ঠার আগে মোহাম্মদ বিন সউদের প্রতিষ্ঠিত শাসন ছিল এই অঞ্চলে। সৌদি শাসকদের দিয়ে যে নতুন নিওম সিটি তৈরি করা হচ্ছে তার সিনাইসহ বড় অংশটি ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
২০০৬ সালে আমেরিকান আর্মড ফোর্সেস জার্নালে ইসলামের পবিত্র ভূমি নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সময়ে সৌদি রাষ্ট্রের যে সংহতি ও শক্তি ছিল তা এখন আর অবশিষ্ট নেই। আগে সৌদি আরবের কোনো বিদেশী ঋণ ছিল না, হাজার বিলিয়ন ডলার সংরক্ষিত সম্পদ তহবিল ছিল। এখন দেশটির সম্পদ তহবিল নেমেছে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। আর আগে যেখানে কোনো বিদেশী ঋণ ছিল না সেখানে এখন সৌদি আরবের বিদেশী ঋণ ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ইয়েমেনের যুদ্ধ আরো কিছুকাল চললে এবং জ্বালানি তেলের বর্তমান দাম অব্যাহত থাকলে সৌদি আরবের সম্পদ তহবিল শূন্যে নামবে আর এতে নাগরিক সুবিধা আরো ব্যাপকভাবে কাটছাঁট করতে হবে। দেশটির বাজেট হবে আরো বেশি বিদেশী ঋণনির্ভর। তখন সম্পদ তহবিল তৈরির জন্য জাতীয় তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ার বিক্রির কোনো বিকল্প থাকবে না। বিন সালমান তেমন একটি পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছেন।
সৌদি আরবের রাজনৈতিক ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ ভিত্তি ছিল তিনটি, যার মধ্যে রয়েছে, বিপুলায়তন রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ সংহতি, ধর্মীয় নেতৃত্বের সাথে সমন্বয় ও বোঝাপড়া এবং প্রভাবশালী গোত্রনেতা ও বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থন। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপরিবারের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযান, ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজকে সেকুলার করার জন্য নেয়া সংস্কার পদক্ষেপ এবং নাগরিক সুবিধা কাটছাঁট করা আর জনগণের উপার্জন হ্রাসের ফলে এই তিনটি ক্ষেত্রেই সৌদি শাসকদের ক্ষমতার ভিত দুর্বল হয়ে গেছে। এ ধরনের অবস্থায় সৌদি রাজক্ষমতা অনেকখাানি বিদেশী শক্তি বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ দুই শক্তি ও তাদের সহযোগীরা যদি সৌদি আরবের বিভক্তি কামনা করে তাহলে সেটা ঠেকানো এখন রিয়াদের শাসকদের জন্য কঠিন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০০৬ সালে আর্মড ফোর্সেস জার্নালে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করার পর প্রকাশ্যে কোনো কথা বলা না হলেও ভেতরে ভেতরে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ২০১১ সালে আরব বসন্ত শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র এবং শাসক পরিবর্তনের বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনায় আবার সে বিষয়টি পাদপ্রদীপে চলে এসেছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফাঁস হয়েছে। যে ভিডিওতে লিবিয়ার শাসক মোয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ওমানের তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথোপকথন রয়েছে। ওমান মধ্যপ্রাচ্যে এমন একটি রাষ্ট্র যেটি যেকোনো সঙ্ঘাতে নিরপেক্ষ থেকে সবার সাথে সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করে এবং গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সমঝোতায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যের যেসব মুসলিম দেশ সফর করেছেন তার মধ্যে এই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন। সেই ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গাদ্দাফির সাথে কথোপকথনের এই টেপে সৌদি আরব ভাঙার বিষয় নিয়ে আমেরিকান একটি প্রস্তাব নিয়ে কথা হয় দুই নেতার মধ্যে। এর আগে ২০০৩ সালে আরব লিগের সম্মেলনে এক উত্তেজনাকর মুহূর্তে গাদ্দাফি সৌদি বাদশাহ ফাহাদকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। ফাহাদ তখন কোনো জবাব দেননি। কিন্তু তদানীন্তন যুবরাজ ও পরবর্তী বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছিলেন, কার মৃত্যু কোথায় কিভাবে হয় সেটি পরের ইতিহাসে লেখা থাকে। ফাহাদ যুবরাজকে তখন বসিয়ে দেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের পরবর্তী রাজনীতিতে এর একটি প্রভাব থেকে যায়। লিবিয়া আর সৌদি আরবের সম্পর্কের মধ্যে সব সময় একটি আস্থাহীনতা কাজ করে।
ধারণা করা হয়, সৌদি আরব ভাঙার যে আমেরিকান প্রস্তাব নিয়ে কাজ করার জন্য গাদ্দাফির সাথে ওমানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথোপকথন হয় সেটি ২০০৬ সালের পরের কোনো এক সময়ের। এই কথোপকথনে গাদ্দাফিকে বলতে শোনা যায় যে, তাদের প্রস্তাব অনুসারে কাজ করলে তারা যে আমাদেরও ছাড় দেবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিত্র ইরানের রেজা শাহের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগটুকুও তিনি পাননি। পরে গাদ্দাফি সৌদি আরবের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া বা ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন কিনা জানা যায় না। তবে লিবিয়ার আরব বসন্ত এবং গাদ্দাফির হত্যাকাণ্ডের সাথে সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। এ সময় আবদুল্লাহ ছিলেন সৌদি আরবের বাদশাহ।
টেপটি প্রকাশের পর ওমানের ব্যাপারে অভিযোগ করা হচ্ছে, ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও পাঁচ শক্তির যে পারমাণবিক চুক্তি হয় তার মধ্যস্থতার আয়োজন করে ওমান। আর এই চুক্তি বাতিলের পর ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের যে উত্তেজনা বিশেষত সোলাইমানি হত্যার পরবর্তী পরিস্থিতিকে ঠাণ্ডা করার ব্যাপারে ওমান ভূমিকা পালন করেছে। আর সর্বশেষ ইরানের সাথে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে যে বৃহত্তর সমঝোতা হতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে, তার সাথে ওমানের বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। আর ওমানের মাধ্যমে এর নেপথ্যে ইসরাইলের সম্পৃক্ততাও রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় দেশগুলোকে ভেঙে ফেলা ও নানা ধরনের সঙ্ঘাত লাগিয়ে দুর্বল করার ইসরাইলি পলিসি ’৮০-র দশকের শুরুতে নেয়া। ‘ইনোন পরিকল্পনা’ নামে তেলআবিবের এই নীতির মূল কথা হলো আশপাশের আরব দেশগুলোকে ভেঙে টুকরো ও দুর্বল করা আর সেসব দেশের নিরাপত্তা ইসরাইলের ওপর নির্ভরশীল করে তোলা। এভাবে ইসরাইলের সীমানা বৃহত্তর অঞ্চলে বিস্তৃত করা। গত ৩৫ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি বড় ঘটনা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে তার পেছনে ইসরাইলের এই মহা নকশার যোগসূত্র পাওয়া যায়।
২০০৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যে পরিবর্তিত মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছিল তার লেখক ছিলেন আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাবেক এক ইহুদি লে. কর্নেল। তার সাথে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানা যায়। অবলোকনের গত দিনের কলামে তুর্কি কলামিস্ট নেদারেট এরসানেলের বরাত দিয়ে যে গুজব মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার কথা লিখেছিলাম তার সাথে র্যাল্ফ পিটার্সের সেই লেখার যোগসূত্র থাকতে পারে। ইরানের প্রভাব সম্প্রসারণের ভীতি দেখিয়ে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলোর মধ্যে একসময় এমন নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টি করা হয় যাতে এসব দেশ ইসরাইলের সাথে সমঝোতায় বাধ্য হয়। সম্ভবত এ ধরনের কোনো সমঝোতার ধারাবাহিকতায় ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ফর্মুলার অপমৃত্যু ঘটিয়ে পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকাকে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার বিষয়ে ট্রাম্প যে পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তার প্রতি সৌদি আরব ও মিত্র দেশগুলোর গোপন অনুমোদন রয়েছে বলে বিভিন্ন মার্কিন ও ইসরাইলি পত্রিকায় দাবি করা হচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে এসব দেশ ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সমর্থন দেয়ার কথা বলেনি। ইরানের সাথে যে গোপন সমঝোতা ওমানের মাধ্যমে হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়, তার প্রধান শর্তই হতে পারে ইহুদি রাষ্ট্রের সম্প্রসারণের বিষয়টি মেনে নেয়া এবং হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাত থেকে বিরত রাখা।
সিরিয়া ও লিবিয়া পরিস্থিতি এবং কুর্র্দি ইস্যু নিয়ে তুরস্কের সাথেও এ ধরনের একটি সমঝোতা করার চেষ্টা হতে পারে।
এখন বলা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব থেকে তার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং রণতরী প্রত্যাহার করতে চলেছে; ইরানের সাথে বন্দী বিনিময় হচ্ছে; সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত ও কাতার ইরানের সাথে স্বচ্ছ সম্পর্ক নির্মাণ করতে চাইছে; নতুন সরকারের জন্য ইরাক-বাগদাদ প্রশাসন নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে; সিরিয়ায় বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হতে চলেছে; বাশার আসাদ রাশিয়ার গুডবুকে থাকছেন না। সিরিয়া ও তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাকামীদের নতুন করে ঐক্য তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এসবের প্রতিটি বিষয়ই তাৎপর্যপূর্ণ। আর এর সাথে ইসরাইলের নেপথ্য যোগসূত্র রয়েছে।
দেখার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইসরাইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেও এর প্রতিপক্ষ রাশিয়া ও চীনের সাথে ইসরাইলের বাণিজ্যিক ও অন্যান্য সম্পর্ক ইসরাইলের খুবই ঘনিষ্ঠ। ইসরাইলের ভৌগোলিক সীমা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এই সম্পর্কও কাজে লাগানো হতে পারে।
আমেরিকান জার্নালে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত মানচিত্রের সাথে এখনকার পরিকল্পনার কিছু মিল রয়েছে। ওই মানচিত্রে মক্কা-মদিনাকে আলাদা রাষ্ট্র দেখানো হয়। আর বর্তমান সৌদি শাসকদের হাতে রিয়াদ অঞ্চল রাখা হয়। বাকি একটি অংশ ইয়েমেনের সাথে যুক্ত করা হয়। এই লেখাটি পরে আটলান্টিক ম্যাগাজিনসহ অনেক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।
মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এই লেখা প্রকাশ হওয়ার পর গত ১৫ বছরে সৌদি আরব ও এর আশপাশের অঞ্চলে অনেক কিছু ঘটেছে। আরব বসন্তের জের ধরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে গৃহযুদ্ধ আর হানাহানিতে বেশ ক’টি দেশের শাসন কাঠামো ভেঙে পড়েছে। একবার একটি পক্ষকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তো পরে, আরেক পক্ষকে পাল্টা অভ্যুত্থানে মদদ দেয়া হয়। এতে সঙ্ঘাত ও পাল্টাপাল্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা সমাজের গভীরে ঢুকে পড়ে। আরব বসন্ত ও এরপরের দশকের অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এই অঞ্চলের প্রতিটা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত- একমাত্র ব্যতিক্রম ইসরাইল। নতুন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের অখণ্ডতা এবং রাজতন্ত্র বজায় রাখতে এখানকার শাসকরা নানাভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলকে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করার নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার এরকম চেষ্টা গাদ্দাফিও করেছিলেন কিন্তু তাকে নির্মমভাবে নিহত হতে হয়েছে।
তবে এখনকার মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে ইসরাইলের মানচিত্র সম্প্রসারণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বিন্যাসের পরিকল্পনা নিকট ভবিষ্যতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকরা গ্রহণ করেছে। ফিলিস্তিন জর্দান ইয়েমেন সিরিয়া লিবিয়াসহ আশপাশে যা কিছু ঘটেছে তাকে এই পটভূমিতে দেখতে হবে। সম্ভবত সামনের দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত কিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। তবে এর মধ্যে আশাবাদের একটি দৃশ্যপটও রয়েছে। পরের কোনো লেখায় তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা