সমাগত বিপর্যস্ত সময়
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ২২ এপ্রিল ২০২০, ২১:০২
বিপর্যস্ত পৃথিবী। বিপন্ন পৃথিবীর মানুষ। করোনাভাইরাসের মহাগ্রাস শুধু মৃত্যু-মহামারীকে ডেকে আনেনি, ডেকে এনেছে সভ্যতার জন্য বিপর্যয়। মানুষের জীবনের যতগুলো খাত আছে- সংসার থেকে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতি সব ক্ষেত্রেই আঘাত হেনেছে এই মহামারী। লাখ লাখ মৃত্যুকে ধারণ করে যে পৃথিবী জীবনের অনিবার্যতায় এগিয়ে চলেছে সে জীবন যেন মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর। যে মৃত্যু বরণ করে সে যেন বেঁচে যায়, আর যারা বেঁচে থাকে ভাইরাস নিয়ে অথবা ভাইরাস ছাড়া দুঃসহ সে জীবন। কল্পনা করা যায় যে, পৃথিবীর প্রতিদিনের গতি থেমে নেই, বার্ষিক গতিও থেমে নেই, কিন্তু থেমে আছে মানুষের জীবন। এই মুহূর্তে গৃহবন্দী পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ। মানবসভ্যতার ইতিহাসে মৃত্যু, দুর্যোগ ও মহামারী এসেছে। কিন্তু এত বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করেনি কখনো। আরেকবার প্রমাণিত হলো স্রষ্টার কাছে মানুষের অসহায়ত্ব।
বাংলাদেশ স্রষ্টার আশীর্বাদপুষ্ট একটি দেশ। সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা আমাদের এই মাতৃভূমি। জীবনের সব উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে পৃথিবীর এই অংশ সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি। সভ্যতার সুপ্রভাতে নদী ছিল মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের ধারক। সে কারণে নীল, দজলা-ফোরাত ও সিন্ধু নদের তীরে গড়ে উঠেছিল মানুষের বসতি, সে একই কারণে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার তীরে এই ঘনবসতি। সেই প্রাণ-প্রাচুর্য অতিক্রান্ত হয়েছে হাজার বছর ধরে। এখন সেই আনন্দময় জীবন পরিণত হয়েছে বিষাদে। ‘আপন মাংসে যেমন হরিণী-বৈরী’ তেমনি এ দেশের আকাশ, বাতাস ও আবহাওয়া জীবনের বিপরীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
ঘনবসতি ও নিকট সান্নিধ্য জীবনের কারণে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এই করোনাভাইরাস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে সংক্রমণের গতি অপ্রতিহত। ক্রমে ক্রমে মহামারী ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এমনকি সাগরসৈকতে। যখন প্রথমবারের মতো লকডাউন করা হয়, তখন ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদল মানুষ, যারা কম বোঝে, তাদের মনে যে ঈদের আনন্দ। বাড়ি যাচ্ছে। আপনজনের সাথে অনেক দিন পরে অনেকসময় নিয়ে যেতে পারছে। যারা বোঝে তাদের মনে আতঙ্ক- কী যেন কী হয়! দিন যতই যেতে থাকে সবার চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। তৈরী পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেল। সরকারি বেসরকারি অফিসে তালা ঝুলছে। পরিবহন তথা যাতায়াত বন্ধ। চাল ডাল তেলের দাম বৃদ্ধি। কৃষকের শাকসবজি তরিতরকারি ক্ষেতেই মজে যাচ্ছে। সাগরপারের রসালো তরমুজ পচে যাচ্ছে। শহরে খাদ্যের হাহাকার। ক্ষেতে ধান আছে কাটার লোক নেই। শঙ্কিত বোরো মৌসুম। দোকানপাট বন্ধ।
হাসপাতাল আছে, ডাক্তার নেই। ডাক্তার আছে, ওষুধ নেই। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বের হয় রাস্তায়। রিলিফের আশায়। বিক্ষোভ করে তারা। রিলিফ চুরির হিড়িক পড়ে যায়। সঞ্চয় ফুরিয়ে আসছে মানুষের। আর যেন চলে না। আমদানি-রফতানি একরকম বন্ধ। বিদেশ থেকে আসছে না রেমিট্যান্স। তৈরী পোশাক যাচ্ছে না বিদেশে। বরং বাতিল হচ্ছে চাহিদাপত্র। উৎপাদনের সব উপায় উপকরণ বন্ধ। অব্যাহত ও অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে আছে দেশ। দেশের মানুষ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশে এক রকম অবরুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যে ক্ষতির কথা এতক্ষণ আলোচিত হয়েছে তার হিসাব অনেক বড়। ২৬ মার্চ থেকে অবরুদ্ধ অবস্থার শুরু হয়েছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষতির হিসাব কষেছেন একজন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক। তিনি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, উল্লিখিত সময়ে ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর অবরুদ্ধ অবস্থা মে মাস পর্যন্ত চললে ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তার গবেষণায় এই বড় তিনটি খাতের উপখাতগুলোও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন- জিডিপির প্রতিদিনের গড় আর্থিক মূল্য বিবেচনায় নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষক প্রফেসর সৈয়দ আবদুল হামিদ ব্যাখ্যা করেন যে, ২০১৮-১৯ সালের জিডিপির নিরিখে স্বল্পমেয়াদে চলতি ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন উপখাতের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সীমিত আকারে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়েছে। গত ২৮ মার্চ থেকে চলতি এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত গবেষণার জন্য টেলিফোনে প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার ও তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কৃষির প্রধান উপখাত- শস্য উৎপাদন, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সম্পদ। স্বল্পমেয়াদে এসব উপখাতে উৎপাদন না কমলেও দেশী ও বিদেশী অর্থনীতি অবরুদ্ধ থাকার ফলে উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্যের ওপর নিম্নমুখী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর ফলে অর্থনীতিতে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। গবেষণার হিসাব বলছে, শিল্প বিশেষ করে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে ক্ষতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ খাতে প্রতিদিনের অনুমিত ক্ষতি এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা। সেবা খাতে প্রতিদিনের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। এ খাতের অনুমিত ক্ষতি দুই হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ গবেষণার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ক্ষতি যে বিপুল পরিমাণ হচ্ছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের শুরু করা এক হাজার ৬০০ প্রকল্প আছে। সেগুলোর প্রায় সব ক’টি বন্ধ।
এ ছাড়া ১০ কোটি, পাঁচ কোটির টাকার ছোট ছোট অসংখ্য প্রকল্প এখন বন্ধ। তিনি মন্তব্য করেন, এখন যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নেয়ার মতো দক্ষতা কারো আছে বলে মনে হয় না। কমানোর চেষ্টা করা যাবে। কিন্তু ক্ষতি অপূরণীয়। গবেষণার পরও আরো খারাপ খবর আছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশও বিশ^ অর্থনীতির চরম সঙ্কটের বার্তা দিচ্ছে। বিশ^ ব্যাংক সাউথ এশিয়া ফোকাস শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ২ থেকে ৩ শতাংশ হবে বলে আভাস দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেছে, এ বছর প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ হবে। এসব বিশেষজ্ঞ মতামতের অপেক্ষা না করেই বলা যায় যে, এ ক্ষতি হবে বহু মত্রিক। যা কখনো হবে না পূর্ণ। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, প্রকৃত ক্ষতি অনুমানের চেয়েও বেশি হতে পারে। তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, যারা ইতোমধ্যে কাজ হারিয়েছেন, তারা যে খরচ করতেন তার একটি অর্থনৈতিক মূল্য আছে। এখন সব মানুষ সঞ্চয় ভাঙিয়ে ফেলেছেন, খাবারের জন্য সেটি তারা নষ্ট করছেন। আবার নিম্ন আয়ের মানুষ কিছু না কিছু বিনিয়োগ করতেন। এখন পরিস্থিতির কারণে ওই বিনিয়োগ হবে না। বরং তারা জীবনযাপনের জন্য অর্থনৈতিক দুর্দশার সম্মুখীন হবেন। পর্যবেক্ষক মহল সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক গ্রস্ত খাদ্যনিরাপত্তা ক্ষেত্রে।
দু’জন অর্থনীতিবিদ ২০ এপ্রিল প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন যে, দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ বা পাঁচ কোটি মানুষ এখন তীব্র খাদ্যসঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। আগামী ছয় মাস থেকে ১২ মাস এই খাদ্যসঙ্কট অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব মানুষ কিভাবে তাদের পরিবারে জন্য তিন বেলা খাবার জোগাড় করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সরকার বলছে, পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। সরকারের খাদ্য বিতরণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকার দেশব্যাপী ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কর্মসূচি স্থগিত করেছে। অথচ এই সময়টিতে এ ধরনের কর্মসূচি বেশি প্রয়োজন ছিল। সামাজিক দূরত্ব মেনে চাল না নেয়ার কারণে এটি বন্ধ করা হয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। এতে সরকারের ব্যর্থতাই ফুটে ওঠে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভুক্তভোগী মানুষ। সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, পাকা ধান কাটার লোক নেই। আবার বোরো মৌসুম সমাগত। সেখানেও ধান কাটার লোকজন নেই। ধান কাটার জন্য এক এলাকা থেকে সাধারণত অন্য এলাকার লোক আসে। এবারে করোনাভাইরাসের জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না।
আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব কাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ধানের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যাতে খাদ্যঘাটতি না হয়, সে দিকে সরকারের নজর আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। আরো ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি লোক খাদ্য সহায়তা পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, খাদ্যসামগ্রীর অবাধ লুটপাট চলছে। প্রতিদিন গণমাধ্যমে যে চুরির খবর আসছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সুতরাং সরকারকে খাদ্য সহায়তার বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। শহরগুলোতে অভিযোগ, যারা ভাসমান মানুষ তাদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে না। তাদের কাছে পরিচয়পত্র বা ভোটার কার্ড চাওয়া হচ্ছে। তারা দেশের মানুষ- এর চেয়ে কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।
দেশের অর্থনীতির অবস্থা চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভশীল। এগুলো হলো- ১. রেমিট্যান্স ২. গার্মেন্ট শিল্প ৩. ব্যবসায় বাণিজ্য ৪. কৃষি উৎপাদন। বাংলাদেশ ভাগ্যবান এ কারণে যে, গত বছর রেমিট্যান্স সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। এর পরিমাণ ছিল ১৮.৩২ বিলিয়ন ডলার। এবছর সর্বনাশা মহামারীর কারণে রেমিট্যান্সে ধস নামারই আশঙ্কা। ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিসংখ্যন আসছে। গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশের অথনৈতিক ক্ষেত্রে প্রধান মাধ্যম। জাতীয় আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। বাংলাদেশ বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক সামগ্রী রফতানি করে। কিন্তু এ বছর গার্মেন্ট শিল্পের জন্য এটি সঙ্কটময় বছর। করোনাভাইরাসের কারণে গার্মেন্ট শিল্প মহাসঙ্কটের সম্মুখীন। দেশের কারখানাগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার একবার চালু আরেকবার বন্ধের আদেশ দিয়ে এ ক্ষেত্রে তুঘলকি কারবার ঘটিয়েছে। খোলা রাখার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে এরা ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশ থেকে ক্রমাগত ভাবে ক্রয় আদেশ বাতিলের খবর আসছে। ওই সব দেশও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সুতরাং সমাগত দিনগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ তলানিতে ঠেকতে পারে। ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প-বাণিজ্যক্ষেত্রে লোকসানের পর লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে খাদ্যশস্য উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির সব উৎস একে একে বন্ধ হয়ে গেলে দেশ মহাসঙ্কটে নিপতিত হবে। দেশে মহামারীর সাথে সাথে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। দেশকে বাঁচাতে হলে সরকারকে সব উপায়-উপকরণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই গুরুতর জাতীয় দুর্যোগময় মুহূর্তে সরকারের তরফ থেকে সে রকম সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। সরকারকে একক কৃতিত্ব নেয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একত্র করে করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা