২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মানুষ অতিমাত্রায় অকৃতজ্ঞ

মানুষ অতিমাত্রায় অকৃতজ্ঞ - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘কৃতজ্ঞ’ এবং ‘কৃতজ্ঞতা’ শব্দ দুটি সম্পর্কে প্রায় সব মানুষই অবহিত। কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হৃদয়ানুভূতিই হচ্ছে কৃতজ্ঞতা। আর কৃতজ্ঞ বলতে বোঝায় কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হৃদয়বান মানুষকে। যিনি উপকারীর কাছে ঋণী মনে করেন নিজেকে এবং উপকারীর প্রত্যুপকারের চেষ্টা করেন। কিন্তু কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হৃদয়বান মানুষের অভাব সর্বত্র। বিশেষ করে বাংলাদেশে! দেশের সব ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যেই এই কৃতজ্ঞতার অভাব প্রকট। যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের কৃতজ্ঞতা এখন নেই বললেই চলে।

প্রায়ই প্রচার মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়, বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ সমস্যা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব পরিবারের মধ্যেই বিরাজ করছে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরই শ্রদ্ধা-ভক্তি জানানোর যে মা-বাবার স্থান, সেই মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে সমাজে। বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোই নয়, এর চেয়েও মর্মান্তিক খবর পাওয়া যায় কখনো কখনো। ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে শারীরিকভাবেও নির্যাতন করেন। অথচ যারা অবহেলা করেন, নির্যাতন করেন সেই ছেলে কিংবা মেয়েকে মমতাময়ী মা ১০ মাস ১০ দিন পেটে রেখে জন্ম দিয়েছেন। অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে তাদের লালনপালন করে বড় করেছেন। আদর স্নেহে খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করেছেন। তাদের মলমূত্র নিজ হাতে পরিষ্কার করেছেন। অথচ সেই সন্তানেরা মা-বাবাকে অবহেলা করেন, অসম্মান করেন, নির্যাতন করেন। এ কি ভাবা যায়! অথচ আমাদের ভাবতে হচ্ছে। লিখতে হচ্ছে। ২০০৭ সালে টইটম্বুর নামক পত্রিকা কর্তৃপক্ষ মাকে নিয়ে দুটি কথা শিরোনামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। গ্রন্থে ১৮০জন ‘মা’ সম্পর্কে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কবি এবং গীতিকার ফজল-এ -খোদা লিখেছেন-

মা-এর চেয়ে ভালো কথা

শুনিনি ভুবনে :
মা-এর চেয়ে সুন্দর মানুষ
দেখিনি জীবনে।
মা আমার পূর্ণিমা চাঁদ
শুধুই বিলায় আলো,
মোমের মতো জ্বলে জ্বলে
দূর করে সব কালো।
মা আমার সুখের খনি,
মা আমার চোখের মণি।

আলোকচিত্র ও গ্রাফিক ডিজাইনার মাজেদ চৌধুরী লিখেছেন-
বেহেশত যার পায়ের নিচে
তাঁকে নিয়ে কিছু লেখার
ক্ষমতা কি আমার আছে!
তাই তো শুধুই তাঁর দয়া ও
ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে
চিরদিন তাকিয়ে থাকা-

আমরা যে চোখ মেলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহাবিশ্ব এবং বিশ্বের অপূর্ব সুন্দর বিষয়গুলো দেখি, আমরা যে শিক্ষা নিয়ে সভ্য-ভব্য হয়ে কাজর্কম করে বিত্তবৈভবের মালিক হই, তার সবই তো মায়ের জন্যই পাওয়া। মা কী? মায়ের গুরুত্ব মহত্ব কতটা, মায়ের মমতার গভীরতা, এর কোনোটাই পরিমাপ করে প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত শব্দই আবিষ্কৃত হয়নি বলে মনে হয়। অথচ বেহেশততুল্য মাকে আমরা কতই না অবহেলা, অবজ্ঞা করি। মায়ের মনে আঘাত করি। মাকে নির্যাতন করি। একই কথা বাবার ক্ষেত্রেও। শুধু যে মা-বাবা তাই নয়, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, অফিসের কর্তা, সবার ক্ষেত্রেই ঘটছে একই ঘটনা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলেও দেখা যায়, যে মহান আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অকাতরে দিয়ে চলেছেন, সেই মহান আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয় মানুষ! মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বহুবার মানুষকে তার প্রতি নত হতে এবং সিজদা করতে বলেছেন সালাতের মাধ্যমে। বলেছেন, মহা ক্ষমতাধর শয়তান মানুষকে ভুলপথে পরিচালিত করবে। তবে মানুষ যদি তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। এমন সুযোগ থাকার পরও মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে না। অনেক মানুষ আছে যারা আল্লাহকে বিশ্বাসই করে না। যারা বিশ্বাস করে তাদের মধ্যে আবার অনেক মানুষ বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয় না। অথচ আল্লাহ তার বান্দাহদের ক্ষমা করার জন্য আগ্রহী, কিন্তু তারা ক্ষমা চায় না কিংবা ক্ষমা চাওয়ার বিষয়কে স্মরণেই আনে না!

অর্থাৎ কৃত অপরাধের জন্য মানুষ ক্ষমাও চায় না, আবার আল্লাহর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে না! এ কারণেই সম্ভবত পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ‘মানুষ তো অতিমাত্রায় অকৃতজ্ঞ’ (সূরা হজ, আয়াত ৬৬)।

আল্লাহর সৃষ্ট মানুষ যাতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে, আল্লাহকে ভয় করে, সৎ জীবনযাপন করে এবং পরকালে বিশ্বাস করে- সেজন্য পবিত্র কুরআনে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ইহকাল এবং পরকালে যে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে, সে কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু মানুষ এসব বক্তব্য এবং পরকালের শাস্তিকে ভয় পায় বলে মনে হয় না। অথচ অফিসের বস বা মালিক এবং তার নিয়ম-কানুনকে ভীষণ ভয় পায়। হাড় কাঁপানো শীতের দিনে দেখা যায় যথাসময়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে অতি ভোরে অন্ধকার কুয়াশার মধ্যে বাসের জন্য কিংবা অফিসের গাড়ির জন্য অগণিত মানুষ রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছে। এরূপ কষ্ট স্বীকারের উদ্দেশ্য বসের সুনজরে থাকা এবং খাতায় লাল কালির দাগ লাগতে না দেয়া। যারা যথাসময়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে অবর্ণনীয় এই কষ্ট ভোগ করেন, বসকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য বসের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলেন, তাদের অনেকেই হয়তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য সালাত আদায় করেন না এবং আল্লাহর আদেশ-নির্দেশও মেনে চলেন না। আর এ জন্য যে প্রতিনিয়ত তার জন্য প্রস্তুতকৃত হিসাবের খাতায় আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতা কত লাল কালির দাগ দিচ্ছেন তার হিসাবও রাখেন না!

কারণ, এই হিসাবের খাতা এবং খাতায় লাল দাগ দেয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান নয়। দৃশ্যমান নয় প্রাপ্ত সুখ-শান্তি ও ভোগদখলে থাকা অগাধ সম্পদ ও সম্মান যে আল্লাহই দেন সে বিষয়টিও। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন, যিনি আকাশ হইতে পানি বর্ষণ করিয়া তদ্বারা তোমাদিগের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, যিনি জলযানকে তোমাদিগের অধীন করিয়াছেন, যাহাতে উহা সমুদ্রে বিচরণ করে তাহার বিধানে এবং যিনি তোমাদিগের অধীন করিয়াছেন নদীসমূহকে। তিনি তোমাদিগের অধীন করিয়াছেন সূর্য ও চন্দ্রকে, যাহারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদিগের অধীন করিয়াছেন রাত্রি ও দিবসকে এবং তোমাদিগের যাহা প্রয়োজন তিনি তোমাদিগকে তাহা দিয়াছেন। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করিলে উহার সংখ্যা নির্ণয় করিতে পারিবে না। মানুষ অবশ্যই অতিমাত্রায় সীমালঙ্ঘনকারী, অকৃতজ্ঞ’ (সূরা ইবরাহিম-৩২, ৩৩, ৩৪)।

মানুষ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে যেসব বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে তা যে কতটা যৌক্তিক তা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও মুসলিম সম্প্রদায় যে ইসলাম এবং ইসলামের বিধি-বিধান থেকে বিচ্যুত হয়েছেন তা পদে পদে প্রমাণিত। হেন অপকর্ম নেই যা তারা করছেন না।

বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রণালয়ের কথাই ধরা যাক। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ধর্মবিষয়ক কাজকর্মের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষের কল্যাণ সাধন করা, যাতে মানুষ ধর্মের প্রতি আগ্রহী হন, ধর্ম পালনে উৎসাহী হন, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন এবং ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে সব মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারেন। কিন্তু সেই ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কে কোনো সুখবর নেই। আছে দুঃসংবাদ- ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যিনি প্রধান, তার (ডিজির) বিরুদ্ধে উঠছে নানা অনিয়ম আর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। মুখে সফেদ দাড়ি, মাথায় টুপি, পরিধানে ইসলামী পোশাক, সব মিলে নূরানী চেহারার ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজলের দেয়া জবাব এবং সময় বৃদ্ধির আবেদন নাকচ করে তার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার অনিয়মের রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে সিভিল অডিট অধিদফতর। এতে ৯৬ খাতে অনিয়মের টাকার অংশ এক হাজার ৩২ কোটি টাকা! এমনই খবর প্রকাশিত হয়েছে প্রচারমাধ্যমগুলোতে (নয়া দিগন্ত, ২৭ নভেম্বর ২০১৯)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সামীম মোহাম্মদ আফজলকে ইসলামের সেবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাননি।

কারণ অতি লোভ তাকে অকৃতজ্ঞ করেছে। আল্লাহর আদেশ-নির্দেশের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে তার লোভ। এই লোভ যে শুধু তাকেই বিপথগামী করেছে তা নয়, বিপথগামী করেছে সরকারের অগণিত কর্মকর্তা ও সমর্থককে। বিপথগামী করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের। খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ী এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষই এখন বিপথগামী হয়েছেন। ক্যাসিনো, পর্দা, বালিশ, হাসপাতালের সামগ্রীসহ নানা বিষয় কেনাকাটার ক্ষেত্রে যে সাগর চুরি হয়েছে এবং হচ্ছে সে খবর তো প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে পাচ্ছে।

ধর্ষণ, খুন, লুণ্ঠন তো আছেই। সব মিলে দেশ এক মহা অরাজকতাপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। জীবন বাঁচানো ওষুধে ভেজাল, মেয়াদ শেষ হওয়া ওষুধে পুনরায় মেয়াদের নতুন লেবেল লাগিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ভেজাল দিয়ে খাদ্যকে বিষে পরিণত করা হয়েছে। এ এক মহা ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিযোগিতা চলছে দেশে। এমন দেশ পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। অথচ এসব ধ্বংসযজ্ঞে যারা লিপ্ত তারা সবাই মুসলমান! এরা কোন মুসলমান? কোন ধরনের মুসলমানের এই বাংলাদেশ? এমন বেঈমান মুসলিম নামধারী মানুষ পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের মানুষ কতটা অধপতনের পঙ্কিলে নিমজ্জিত হয়েছে নিম্নের তথ্য থেকে তা আরো স্পষ্ট হবে।

১. ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) ধর্মীয় বই ছাপানোর নামে ১৭ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের কপি কম ছাপিয়ে, আরবি ভাষা শিক্ষার টিচার্স গাইড ও উগ্রবাদবিরোধী বই না ছাপিয়ে ইফার মহাপরিচালক (ডিজি) লিখিত বইয়ের রয়্যালিটির নামে এই টাকা তছরুপ করেছেন। এর মধ্যে এক লাখ কপি কুরআন শরিফ কম ছাপিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় দুই কোটি টাকা।

২. রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন- কচু ছাড়া সব কিছুতেই ফরমালিন, নির্ভেজাল খাবার দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। খাদ্যে ভেজালের কারণে ক্যান্সারসহ জটিল রোগ হচ্ছে। কিছু মানুষ দানব হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে মানুষকে ফেরাতে হবে। আগে পকেট মারার কারণে পকেটমারকে গণপিটুনি দেয়া হতো, এখন খাদ্যে ভেজালদানকারী মানুষকেও গণপিটুনি দিতে হবে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পঞ্চম সমাবর্তনে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেছেন।

৩. ওসি পরিচয়ে প্রবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার অভিযুক্ত এসআই শিশির কুমার বিশ্বাসকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে নোয়াখালী জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
৪. রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেয়ার ঘটনায় তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

৫. শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে ১৪ কোটি টাকা দুর্নীতি তদন্তে নামছে দুদক।
৬. রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেয়ার মামলায় নির্বাচন কমিশনের দুই কর্মচারীকে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
৭. বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের পেয়ে বসেছে -আইনমন্ত্রী।
৮. অপশক্তি যেন বিচারাঙ্গনকে কলুষিত করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে -প্রধান বিচারপতি।

উল্লিখিত তথ্যগুলো ২ ডিসেম্বর ২০১৯ নয়া দিগন্ত পত্রিকার। এগুলো ছাড়াও পত্রিকায় আরো অনেক তথ্য রয়েছে যেগুলোকে জাতির জন্য দুঃসংবাদ ছাড়া অন্য কিছু বলার সুযোগ নেই। এ প্রবন্ধ যখন শেষ করছি, তখনো পত্রিকাটি আরো দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে। আজকের পত্রিকায়ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুর্নীতি প্রাধান্য পেয়েছে। বলা হয়েছে- ‘ইমামসহ এক হাজার ৭৫৫ জনবল নিয়োগে জালিয়াতি।’ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- ১. বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম নিয়োগে জালিয়াতি, ২. ডিজির বাড়িতে মাদরাসা দেখিয়ে শিক্ষকের বেতন পরিশোধ, ৩. বিধি লঙ্ঘন করে পরিচালক পদে ১৯ জনের পদোন্নতি, ৪. পরীক্ষায় অকৃতকার্যকে জাল সনদে প্রথম শ্রেণীর পদে নিয়োগ, ৫. দুইবার কার্য বিবরণী তৈরি করে নিয়োগ (নয়া দিগন্ত, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯)।

এ সব তথ্য কি প্রমাণ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান? এটা তো আল্লাহর বিধানবিরোধী লুটেরাদের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে! কোনো মুসলমানের পক্ষে কি এসব কাজ করা সম্ভব? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরনের অকৃতজ্ঞ বেইমান ব্যক্তিদের বসিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। কোন প্রতিষ্ঠান ভালো আছে দেশে? যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকেন সেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরও কেউ কেউ কতটা বিপথগামী হয়েছেন তাও স্পষ্ট হয়েছে উল্লিখিত তথ্যে। যে আইন-আদালত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, সেই আইন-আদালত নিয়েও আইনমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি সুখের সংবাদ দিতে পারেননি। এসব কিসের আলামত। আল্লাহই ভালো জানেন।

আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করিতে চাহি তখন উহার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করিতে আদেশ করি, কিন্তু উহারা সেথায় অসৎকর্ম করে, অতঃপর উহার প্রতি (জনপদের প্রতি) দণ্ডাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হইয়া যায় এবং আমি উহা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি’ (সূরা ইসরা, আয়াত-১৬)।

আল্লাহ লুটেরা ও অকৃতজ্ঞদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করুন। কৃতজ্ঞ জাতির দেশ হিসেবে সমৃদ্ধিশালী করুন বাংলাদেশকে। আমিন।


আরো সংবাদ



premium cement