জলবায়ু সম্মেলন বিশ্বনেতাদের বার্ষিক পিকনিক!
- মুজতাহিদ ফারুকী
- ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:৫৩, আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:২০
সুনির্দিষ্ট ফলাফল ছাড়াই গত রোববার স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে শেষ হলো সর্বশেষ জলবায়ু সম্মেলন। ২ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল জাতিসঙ্ঘের এই সম্মেলন। অংশ নিয়েছে প্রায় ২০০ দেশ। দুই সপ্তাহ ধরে চলা জাতিসঙ্ঘ জলবায়ু সম্মেলন শেষ হয়েছে গত রোববার। ‘জাতিসঙ্ঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (ইউএনএফসিসি) কাঠামোর আওতায় প্রতি বছর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এবারের সম্মেলনে বিশ্বের পরিবেশ উন্নয়নে স্পষ্ট কোনো সমাধানে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর বিরোধিতাই এর কারণ। শেষ পর্যন্ত তারা একটি পরিমিত সমঝোতায় পৌঁছেন।
সেই সমঝোতার মূলকথা হলো দু’টি- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতা দেয়া দরকার, এ বিষয়ে সব দেশ একমত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রয়োজন আছে, এ বিষয়েও সব দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তায় অর্থের জোগান দেয়া অথবা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের অঙ্গীকার কোনোটাতেই রাজি হয়নি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ধনী দেশগুলো।
অথচ এবারের সম্মেলনটি ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। তার মানে হলো, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরিতে বিশ্বের দেশগুলো সময় পাচ্ছে মাত্র এক বছর। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয় দেশগুলো। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার চেষ্টার কথাও বলা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বনমুক্ত হওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য দেশগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করবে, সেটিই বলতে হবে অ্যাকশন প্ল্যানে। যেসব দেশ এখনো এই কাজ শেষ করতে পারেনি, তাদের ওপর চাপ তৈরির শেষ সুযোগ ছিল এবারের সম্মেলন। সে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল।
প্যারিস সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর আশু বাস্তবায়নে কপ-২৫-এ পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল। কারণ প্যারিসে বিশে^র তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানো সম্ভব হয়নি, বরং তা বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলতি শতক শেষ হওয়ার আগেই তাপমাত্রা ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি থেকে ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে বাড়তে পারে। এতে করে বিশ্বের পরিবেশগত সঙ্কট তীব্রতর হবে। সুতরাং, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।
মাদ্রিদ সম্মেলন সেই সুযোগ এনে দিয়েছিল। এ ছাড়া, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ার একটি বড় ঝুঁকির মুখে রয়েছে বিশ্ব। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে বিশ্বের বায়ুমণ্ডলে এরই মধ্যে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমে উঠেছে, তার পরিমাণ বাড়তে দেয়া যাবে না, বরং তা কমিয়ে আনতে হবে এবং তা এখনই। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ ছিল কপ-২৫-এ। এজন্যই বিশ্বের সব পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ, পরিবেশ তথা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ক্ষতির ঝুঁকির মুখে থাকা বিপুল মানুষের নজর ছিল মাদ্রিদ সম্মেলনের দিকে।
বিশ্বের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কপ-২৫ সম্মেলনকে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, কার্বন নিঃসরণে দায়ী ধনী দেশগুলোর আগ্রহের অভাবেই সম্মেলন থেকে কোনো ফল এলো না। ধনী দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। অন্য দিকে, এই সম্মেলন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খোদ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘কার্বন নিঃসরণ কমাতে পদক্ষেপ নিতে বড় ধরনের সুযোগ হারাল দেশগুলো। পরিবেশ বিপর্যয় রুখতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
ফলে বাংলাদেশসহ অন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে কপ-২৫ সম্মেলন থেকে খালি হাতেই ফিরতে হলো। মাদ্রিদে দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ধরে বৈঠক করেও আগামী বছর থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাজি করানো যায়নি ধনী দেশগুলোকে। সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর ভূমিকা ছিল গা-ছাড়া। কিন্তু জোরালো ভাষায় ঘোষণাপত্র তৈরিতে বাধা দেয়ার ক্ষেত্রে তারা সোচ্চার ছিল গাঁটছড়া বেঁধেই। তাদের চাপাচাপির কারণে সম্মেলনে সভাপতিত্বকারী চিলির পরিবেশমন্ত্রী ক্যারোলিনা স্মিথের তৈরি করা মুসাবিদা নাকচ হয়ে যায়। সম্মেলনের শেষ দিন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বলেছে, কার্বন নিঃসরণের জন্য প্রধানত দায়ী যেসব ধনী দেশ তারা সম্মেলনে গরিব দেশগুলোকে কোণঠাসা করে ফেলেছে।
এ দিন পাপুয়া নিউগিনির প্রতিনিধি কেভিন কনরাড বলেছেন, ‘আলোচনা হওয়া উচিত উন্মুক্ত ও স্বচ্ছভাবে। কিন্তু এবারের সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর কণ্ঠ একেবারেই শোনা যায়নি।’ বলা দরকার, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কপ-২৫ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। তারা কয়েকজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন। অথচ এই দেশগুলো বিশ্বের ৬০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।
জানা গেছে, ব্রাজিল, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের বিরুদ্ধে রীতিমতো প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা কেন বাধার সৃষ্টি করছে তার কারণ অস্পষ্ট কিংবা অজানা নয়। প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প প্রশাসন পরে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়েছে। তারা এখন আর কার্বন নিঃসরণ কমানোর কোনো বাধ্যবাধকতার আওতায় নেই। কার্বন নিঃসরণকারী দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র, পরিমাণ শতকরা ১৪ দশমিক ৬ ভাগ। চীন এক নম্বরে। নিঃসরণ করে শতকরা ২৭ দশমিক ২ ভাগ। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বড় দেশ না চাইলে জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন করা যাবে না, এটাই ধরে নেয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে পরিবেশ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা ভবিষ্যদ্বাণী কোনোটাই মানেন না। এরও কারণ আছে। অভিযোগ আছে, তিনি বড় বড় তেল কোম্পানির স্বার্থ দেখছেন। চুক্তি কার্যকর হলে বড় বড় কোম্পানির তেল উত্তোলন ও বিপণন ঝুঁকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন ১৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। সৌদি আরব করে ১২ মিলিয়ন। চীনের তেল উত্তোলনের পরিমাণ কম, মাত্র ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন। তবে আমদানি করা জ্বালানি পুড়িয়েই দেশটি কার্বন নিঃসরণের শীর্ষে রয়েছে। এ মুহূর্তে কার্বন নিঃসরণ কমাতে গেলে তার শিল্প উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। ব্রাজিল ও ভারতের অবস্থানও একই। এসব কারণেই বড় দেশগুলো প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বড় বাধা।
১৯৯৫-এর প্যারিস সম্মেলন থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের মাদ্রিদ সম্মেলন পর্যন্ত কপ-এর ২৫টি সম্মেলন হয়ে গেল। কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবণতা রোধের ক্ষেত্রে খুব যে অগ্রগতি হয়েছে তা বলার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত স্মরণ করতে পারি। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতি বছর ১৪ মিলিমিটার করে পানি বাড়ছে। ২০ বছরে সাগরের উচ্চতা বেড়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। সাগরের পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে।
প্রতি সাতজনে একজন উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। বিশ^বাসী জলবায়ু উদ্বাস্তুর সাথে প্রথম পরিচিত হয় ২০০৫ সালে, যখন বাংলাদেশে ভোলার চরাঞ্চল থেকে পাঁচ লাখ মানুষ অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান পেনেনটি ২০১১ সালে প্রকাশিত তার গ্রন্থ টপিক অব ক্যায়স : ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য নিউ জিওগ্রাফি অব ভায়োলেন্স-এ উল্লেখ করেছেন সে কথা। পেনেনটি আরো উল্লেখ করেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ২২ মিলিয়ন, অর্থাৎ দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ সরে আসতে বাধ্য হবে।
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর যে কোটি কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের অস্তিত্বের বিপক্ষে ধনী দেশগুলোর বর্তমান আচরণকে ‘জলবায়ু সম্পর্কিত ফ্যাসিজম’ এবং ‘জলবায়ু সহিংসতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন পেনেনটি। তিনি বলেছেন, এই ফ্যাসিবাদও মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। কারণ, যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ হুমকিতে রয়েছে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাক সেটা মেনে নেয়া যায় না। কারণ, তারা যে কেবল নিজেরাই ধ্বংস হবে এমন নয়, বরং তারা অন্যান্য দেশকেও নিজেদের সাথে টেনে নিয়ে যাবে।
এ দিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাস্তব পদক্ষেপ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় তার ভাষায়- ‘চাতুর্যপূর্ণ সৃজনশীল প্রচারণা’ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। মাদ্রিদে আয়োজিত সদ্যসমাপ্ত কপ-২৫-এ সে এ কথা বলেছে। গ্রেটা থুনবার্গ বলেছে, ‘সত্যিকার বিপদটা হলো যখন রাজনীতিবিদ ও সিইওরা সত্যিকার পদক্ষেপ গ্রহণের ভান ধরেন, কিন্তু আসলে কিছুই করা হয় না।’
সুইডেনের ১৬ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী গ্রেটা বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘের একটি সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের কড়া সমালোচনা করে বিশ্বব্যাপী সংবাদ শিরোনাম হয় সে। তার গড়ে তোলা পরিবেশ আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ ইতোমধ্যে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সব কিছু বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী টাইম এবার এই পরিবেশকর্মীকেই ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ বা বছরের সেরা ব্যক্তিত্ব ঘোষণা করেছে। কিন্তু কথা সেটি নয়।
কথা হলো, কপ এখন নিছকই বিশ্বনেতাদের একটি বার্ষিক পিকনিকে পর্যবসিত হয়েছে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী নামের এই গ্রহের পরিবেশ ধ্বংসের যে ভয়াবহ চিত্র বিজ্ঞানীরা তুলে ধরেছেন, তাতে বিশ্বনেতাদের সত্যিকারের আস্থা আছে, এমনটি গত ২৫টি সম্মেলনের ফল থেকে মনে করার কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। বরং মনে করার কারণ আছে যে, সুনামির মতো বড় বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা উপর্যুপরি না ঘটলে বিশ্বনেতাদের চোখ বোধহয় খুলবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা