বুয়েটের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করুন
- জসিম উদ্দিন
- ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৪৪
আবরার হত্যার বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাদের আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। গত ৪ ডিসেম্বর বুয়েটের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ ঘোষণা দেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যায্য দাবির এ ধরনের সফল আন্দোলন নিকট অতীতে দেখা যায়নি। যদিও আবরার হত্যার মূল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এমন উদাহরণও রয়েছে, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর দলীয় কোটায় অপরাধী মাফ পেয়ে গেছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও ছাড় পেয়েছেন আমাদের দেশে।
আপাতত আন্দোলনকারী ছাত্রদের তিন দফা দাবির সবই কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে। এসব দাবির মধ্যে ছিল মামলার অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার। বুয়েটের তিনটি হলে আগে ঘটে যাওয়া র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোয় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি প্রদান এবং সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র্যাগিংয়ের জন্য শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন।
এই আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বুয়েটের সাধারণ ছাত্রদের একযোগে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ। এ ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, ছাত্ররা অভিভাবকদের নিয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হয়েছেন। অভিভাবকরা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে নিজেদের সন্তানদের ক্যাম্পাসে একা আসতে দিচ্ছিলেন না। আবরারকে যে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, সেটা অভিভাবকদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। আদৌ প্রতিবাদকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে তাদের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে পারবেন কি না, সেই শঙ্কা তাদের মধ্যে ছিল। এই দুঃসময়ে তাই নিজেদের সন্তানদের একা ছাড়তে চাননি অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবকই সন্তানদের পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচিতে ছিলেন কিংবা তারা সন্তানদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দিয়ে পাশে থেকে লক্ষ রেখেছেন। প্রতিবাদ করতে এসে সন্তানরা কোনো বিপদে পড়ে যাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে অভিভাবকরা ছিলেন উদ্বিগ্ন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতটা অনিরাপদ বোধ করার কারণ হচ্ছে, বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবাধে চলা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। যারা ক্ষমতার চাদরের মধ্যে থেকে অন্যায় অপকর্ম করছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল না। ফলে একের পর এক অপরাধীরা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছিল।
এ আন্দোলনে হাজির হয়েছিলেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীরাও। ঢাকায় থাকা সাবেক ছাত্রদের অনেকে উপস্থিত থেকে আন্দোলনে শক্তি জুগিয়েছেন। যে যেখানে ছিলেন; সেখান থেকে তারা আন্দোলনের নৈতিক শক্তি জুগিয়েছেন। এ কাজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। সাবেক বুয়েটিয়ান, যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন; তাদের অনেকে সরাসরি ছাত্রদের এ আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। যে যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন, সেখান থেকে কথা বলে উঠেছিলেন। এর প্রধান কারণ, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবীদের প্রতিষ্ঠান। জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বুয়েট ছাত্রদের অনেকেই অবদান রেখে চলছেন। তারা এ জন্য বুয়েটের শিক্ষক ও পরিবেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। বুয়েটে তারা পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছিলেন। ছাত্র-শিক্ষক সবার মধ্যে একাডেমিক পরিবেশ নিয়ে সমঝোতা ছিল। যে সময়ে বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে, তখন বুয়েটে চলেছে নিবিড় পড়াশোনা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জাতীয় রাজনীতির লেজুড় হয়ে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বারোটা বাজিয়েছেন, তখন বুয়েট যাবতীয় বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পেরেছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষাঙ্গনে দূষিত রাজনীতির প্রভাব বুয়েটেও পড়তে শুরু করেছিল।
বুয়েটের ভিসি নিয়োগেও রাজনীতি প্রধান বিবেচ্য হয়ে ওঠে। বুয়েটকেও একান্ত অনুগত করার জন্য সরকার লোভী হয়ে ওঠে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানেও ভিসি নিয়োগ শুরু হয়। ফলে কলুষিত দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনে কর্মকর্তা নিয়োগে দলীয় বিবেচনা দেখা গেল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনও হলো। কিন্তু দলীয় ভিসিরা যেভাবে আন্দোলনের প্রতি সাড়া দেন, বুয়েটের নবনিযুক্ত ভিসি সেভাবে সাড়া দিলেন। শিক্ষক রাজনীতিতে কালো ছায়া পড়তে শুরু করেছিল মাত্র। তার লক্ষণ হিসেবে ছাত্ররাজনীতিতে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের চর্চা শুরু হয়েছিল। গেস্টরুম রাজনীতি আরম্ভ হয়েছিল। নিরীহ ছাত্রদের ওপর দলীয় ক্যাডারের হানা দেখা দিলো। র্যাগিংয়ের নামে কিছু ছাত্রের ওপর চরম অপমান-লাঞ্ছনা নেমে আসছিল। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও একই দিকে টার্ন নিলো। সাবেক বুয়েটিয়ানরা এসব জানতে পেরে বড় আপসোস করছিলেন। এ সময় আবরারের হত্যা অনেকটাই যেন বলিদান। ঘটনাটির নির্মমতা বুয়েটকে তার আগের পরিবেশে ফিরে আসার পথ করে দিলো।
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লেজুড় ছাত্রসংগঠনে নিয়ন্ত্রিত হয়। হলগুলোতে প্রশাসন রয়েছে নামমাত্র। হলের আবাসন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে ক্যাডাররা। আবাসিক শিক্ষকরা এ কাজে তাদের সহযোগী বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ছাত্রাবাসের আসন বণ্টন করা এবং তদারক করার দায়িত্ব হলো প্রশাসনের। প্রভোস্ট, হাউজ টিউটররা এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক। এ কাজ করার বিনিময়ে তারা বাসস্থান পান, বিশেষ ভাতা পান, অধীনস্থ কর্মচারী পান।
প্রমোশনের সময় এ দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়। বাস্তবে হল প্রশাসন এখন সরকারি ছাত্রসংগঠনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। শিক্ষকরা এ নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলতেও নারাজ। একজন ছাত্র যখন সরকারি ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে চরমভাবে নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হন; এ শিক্ষকরা তাদের পক্ষে কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। হল প্রশাসনে নিযুক্ত থাকা শিক্ষকরা এতসব সুযোগ সুবিধা নেয়ার পরও ছাত্রদের জন্য কিছু করতে না পেরে নিজেরা কোনো অনুশোচনায় ভোগেন- এমনটি দেখা যায় না। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এভাবে ছাত্র নির্যাতনের পরও কোনো হাউজ টিউটর তার প্রতিবাদ করে ইস্তফা দিয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুম নির্যাতন চেম্বার। এ রুমে ডাক পড়ার ভয়ে সাধারণ ছাত্ররা সব সময় তটস্থ। বুয়েটের কয়েকটি হলেও একই সংস্কৃতি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলছিল। শিক্ষকরাও তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিলেন। আবরারকে যখন রাতভর নির্যাতন করে মেরে ফেলা হলো, আবাসিক শিক্ষকদের কেউ এগিয়ে আসেননি। ভিসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ ক্যাডারদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করেননি। অথচ সময়মতো প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে রাতভর তারা এ নির্যাতন চালাতে পারত না। অর্থাৎ হলের দণ্ডমুণ্ডের পুরো কর্তৃত্ব প্রশাসন ছাত্রলীগের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেটা তারা চর্চা করে চলছিল। নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্য পুলিশও হলে প্রবেশের অনুমতি পায়নি। ছাত্রলীগ অনুমতি দিলেই কেবল পুলিশ হলে প্রবেশ করতে পারে। আবরারকে রক্ষা করতে এসে পুলিশ হলের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। আবরারের এ বলিদান না হলে বুয়েট তার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার সুযোগ পেত না। আবরার হত্যার সাথে জড়িত ২৬ ছাত্রকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আহসানউল্লা ও সোহরাওয়ার্দী হলের ২৬ ছাত্রকেও র্যাগিংয়ের দায়ে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এর আগে র্যাগিংয়ের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নিতে চায়নি। নির্যাতিত ছাত্ররা রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার অধিকারও হারিয়ে ফেলেছিল। খোলা হয়েছিল একটি অনলাইন সাইট; সেখানে যে কেউ তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা সংযুক্ত করতে পারত। সরকার এ অনলাইন সাইটটিও বন্ধ করে দিয়েছিল। এভাবে এক দমবন্ধ অবস্থা থেকে বুয়েট স্বাধীনতার মুক্ত নিঃশ্বাস যেন ছাড়ল। এ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরাধীদের নিশ্চয়ই পিছু হটাবে। বুয়েটে আপাতত আর ছাত্র নামের সন্ত্রাসীরা চড়াও হতে পারছে না। আগের সেই শিক্ষার পরিবেশ ফিরে পাচ্ছে বুয়েট।
একটা সুযোগ এসেছিল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করার। অন্ততপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ থেকে মুক্ত ও স্বাধীন হতে পারত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট ঢাকায় পাশাপাশি এলাকায় অবস্থিত। আগেও যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্তদের হাতে পর্যুদস্ত হতো, পাশে অবস্থিত বুয়েটের ছাত্রবান্ধব পরিবেশ দেখে আপ্লুত হতো। তারা সব সময় বুয়েটের মতো পরিবেশই আকাক্সক্ষা করত। বুয়েট তার মুক্ত পরিবেশ ও স্বাধীনতা হারাতে হারাতে আবার ফিরে পেয়েছে। সেটা ফিরে পেতে তাদের বড় বলিদান করতে হয়েছে। তারা হারিয়েছে এক মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে। পাশে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত স্বাধীন হওয়ার জন্য এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে পারত। সে সুযোগ তাদের হাতছাড়া হয়ে গেল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ কতটা অবনতি হয়েছে, সেটা বুঝতে পারি যখন প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে পানিতে ছুড়ে ফেলা হলো। সরকারি সংগঠনের ছাত্ররা অবৈধ সুযোগ সুবিধা চায়। সেটা যত অন্যায় অনৈতিক হোক না কেন, কর্তৃপক্ষকে মানতে হবে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সরকারি সংগঠনের ছাত্ররা চাইলো তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে। পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে ক্লাসে পর্যাপ্ত উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়। প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাদের সেই সুযোগ দেননি। তাদের পীড়াপীড়ির পরও তিনি অনুমতি দেননি। ফলে সন্ত্রাসী ছাত্ররা জোরজবরদস্তি করে প্রিন্সিপালকে টেনেহিঁচড়ে পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয়। চট্টগ্রামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে একই কারণে এক প্রবীণ শিক্ষককে আরো বাজেভাবে হেনস্তা করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রথমে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। এ জন্য তার বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। তাকে ক্যাম্পাস থেকে বয়কট করার অপচেষ্টা করা হয়। সবশেষে তাকে টেনেহিঁচড়ে মাটিতে ফেলে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা যারা সম্মানিত শিক্ষকদের ওপর ঘটাচ্ছে, তারা সাধারণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে কেমন অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে পারে; সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
আবরারের হত্যার পর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি সরকারি ছাত্রসংগঠন, যারা ক্যাম্পাসে ভয়াবহতা চালায়, তারাও বিক্ষোভ করেছে। একটা সুযোগ এসেছিল সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান চালানোর, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর মূল কারণ প্রতিবাদকারীদের অনৈক্য। ছাত্র নির্যাতন, অপমান-লাঞ্ছনা ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন বড় বড় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ থেকে স্বয়ং ভিসি ছাত্রলীগের সদস্যদের বখরা দিচ্ছেন। জাহাঙ্গীরনগরের ভিসি নিজে দায়িত্ব নিয়ে তা বণ্টন করেছেন। অন্য দিকে, ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ করে দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাত্রলীগের সদস্যদের অন্যায়ভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্বয়ং ভিসিদের এতটা নৈতিক অধঃপতন এর আগে দেখা যায়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন দাঁড় করানো যায়নি। যারা অন্যায় অনিয়মের শিকার তারা সংখ্যায় অনেক বেশি হওয়ার পরও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মোটা দাগে বাম ও ডান ঘরানায় বিভক্ত। বাম ধারার শিক্ষকরা সংখ্যায় কম হলেও প্রতিবাদ বিক্ষোভে সোচ্চার হন। কিন্তু তাদের সংখ্যা এতটা কম যে তাদের পক্ষে কার্যকর আন্দোলন করা সম্ভব হয় না। অন্য দিকে, শিক্ষকদের বিশাল অংশ জাতীয়তাবাদী ডান ঘরানার। তারা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের চাপে অনেকটাই পিষ্ট। তবে বামরা যদি প্রতিবাদ বিক্ষোভের মাধ্যমে দাবি আদায় করার জন্য জাতীয়তাবাদীদের সাথে ঐক্য স্থাপন করতে পারতেন, তাহলে সফলতা পেতে পারতেন। অন্য দিকে সরকারি ছাত্রসংগঠন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্রদল ও শিবিরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। ফলে জাতীয়তাবাদী ইসলামী ধারার বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী নেতৃত্বহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামদের জোরালো আওয়াজের মিছিল দেখা যায়; কিন্তু সেগুলোতে উপস্থিতি নগণ্য। ক্যাম্পাসে থাকা কোটাবিরোধীদের ব্যানারটিকেও তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভের জন্য সহযোগী হিসেবে নিতে পারেননি।
বুয়েটে আবরার হত্যার প্রতিবাদে সবাই একজোট হতে পেরেছেন। একই কায়দা অবলম্বন করতে পারলে বাংলাদেশে জিম্মি হয়ে থাকা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীন ও মুক্ত হতে পারত। কিন্তু নির্যাতিত-বঞ্চিতরা এক হতে পারেননি। বুয়েটের আন্দোলনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াতে পারে। অন্ততপক্ষে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিজেরা স্বাধীন ও মুক্তভাবে চলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
jjshim146@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা