‘ধাপে ধাপে নতি, অবশেষে অধোগতি’
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ২০:১৪
পরিবহন আইন নিয়ে অবশেষে ক্ষমতাসীন সরকার আত্মসমর্পণের যে চিত্র দেশবাসীকে উপহার দিয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে বাগধারা ও প্রবাদবাক্যের প্রয়োগ যুৎসই হচ্ছে না। ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেড়ো’, ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’ ইত্যাদি বাগধারার প্রয়োগ যেন খেদ মেটানোর জন্য যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। বিশুদ্ধ বরিশালী ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছে, ‘মারদণ্ড তাপে তাপিত হইয়া, অর্ধেক কোলার মাঝে পড়লাম চিৎড়াইয়া।’ কিছু লোকের অভ্যাস আছে পয়সা না ফুরালে ঘর ছাড়ে না। দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে উঠে দাঁড়ায় না। আমি একজন ভাইস চ্যান্সেলরকে দেখেছি, বিক্ষোভ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কাজটি করেন না। বর্তমান সরকারেরও সেই দশা। যে পর্যন্ত না ক্যাসিনোকীর্তি তাদের ঘরে আগুন লাগার কারণ হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সরব হয়নি। পরিবহন খাতে ‘খাণ্ডব দাহন’, মৃত্যুর বিভীষিকা এবং হাজারও আর্তনাদ তাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। যখন ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের জন্য ‘অভূতপূর্ব কিশোর আন্দোলন’ তাদের ক্ষমতার রশি ধরে টান দিয়েছে, তখনই তারা শক্তি প্রয়োগে তা দমন করেছে। জনগণের নিত্যদিনের মৃত্যু দেখে নয়, বরং মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তখন তারা কিছু সংস্কারের ঘোষণা দেয়। সংসদে পাস হয় একটি পরিবহন আইন। সে আইনটি এক বছর হিমাগারে থাকার পর এ মাসের প্রথম তারিখ থেকে আইনটি কার্যকর করার ঘোষণা দেয় বর্তমান সরকার। কচ্ছপের মাথা বের করা আবার টেনে নেয়ার মতো করে সরকার আইনটি প্রয়োগ করার জন্য প্রথমে এক সপ্তাহ এবং পরে আরো এক সপ্তাহ সময় নেয়। এরপর ১৬ নভেম্বর থেকে আইনটির প্রয়োগ শুরু হয় কচ্ছপগতিতে। প্রচারের নামে এত দিন অপেক্ষা করেও তারা তাদের খাস লোকদের সামাল দিতে সক্ষম হয়নি। সেদিন থেকেই সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকেরা ধর্মঘট শুরু করেন। এর ফলে রাজধানীর সাথে সারা দেশের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো ২০ নভেম্বর ভোর থেকে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদও সারা দেশে ধর্মঘট শুরু করে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পরিবহন ব্যাহত হয়।
অতি সম্প্রতি হাইজাম্প-লংজাম্প দিয়ে পেঁয়াজ-লবণের যে দাম বেড়েছে, এটি তার একটি কারণ হিসেবে জাহির করেন ব্যবসায়ীরা। ওই দিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে আইনের কিছু ধারা সংশোধনের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। তখনো পরিবহন খাতের বড় অংশ বাস-মালিক-শ্রমিকেরা সারা দেশে ধর্মঘটের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এতে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন মেয়াদে যেমন খুশি তেমন করে ধর্মঘট চালিয়ে যান বাস মালিক-শ্রমিকেরা। এ দিকে আইন সংশোধনের কৃতিত্ব ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি নিয়ে যাওয়ায় ভেতরে ভেতরে গোসসা হন বাস মালিক-শ্রমিকেরা। তারা আইনটির নাক-কান কেটে আরো অকার্য করার জেদ করেন। পরবর্তী বৈঠকে নতুন সড়ক আইনের যেসব কঠোর ধারা প্রয়োগ করতে যাচ্ছিল সরকার তা সংশোধনের দাবি করেন বাস মালিক-শ্রমিকেরা। যেসব ধারার কারণে মালিক-শ্রমিকেরা বড় ধরনের আর্থিক জরিমানায় পড়তে পারেন, সেগুলোর প্রয়োগ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দৃশ্যত সড়ক পরিবহন আইনটি শিকায় উঠল। অকার্যকর হয়ে পড়ল। এভাবে সড়ক পরিবহন আইনটির সর্বনাশ সাধন করে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক নেতাদের বৈঠক শেষে বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। পরে বাস মালিক-শ্রমিকদের বৈঠকে তিনি আরো সংস্কার ও পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলেন।
চালকদের লাইসেন্স সংক্রান্ত ও যানবাহনের আকৃতি পরিবর্তন অপরাধের শাস্তি আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত কার্যকর না করার ঘোষণা দেন তিনি। এ ছাড়া আইন সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো সুপারিশ আকারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরে সমঝোতার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বলেন : ‘নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন করার সময় কয়েকটি যৌক্তিক জটিলতা দেখা যায়। আমরা প্রস্তাব আকারে ৯ দফা দাবি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এ বিষয়ে যৌক্তিক ব্যবস্থা নেবেন।’ ক্রমহ্রাসমান উপযোগ বিধির মতো ধাপে ধাপে নতি স্বীকার করার পর মূলত অধোগতি নির্দেশ করে তিনি স্বীকার করেন, ‘আইনটি বাস্তবায়নের মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা আইনটি পরিবর্তন করব।’ এখন সঙ্গতভাবেই যে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন, তাহলে কি যথেষ্ট হোমওয়ার্ক ছাড়াই আইনটি প্রয়োগ করতে যাচ্ছিল সরকার? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় তাদের সেই ব্যর্থতার অকপট স্বীকৃতিই মিলল।
এ দেশে সব সময়ই কিছু অতি উৎসাহী লোক দেখা যায়, যারা বাস্তবতার ধার ধারেন না। নিজের জেদ ও মেধার প্রভুত্ব খাটাতে চান সর্বত্র। একটি কঠিন এবং কঠোর আইন পরিবহন ক্ষেত্রে অনিবার্য ছিল- এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যে আইন এ দেশের বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই তা কী করে কার্যকর হবে? ১৬ তারিখের পর আংশিকভাবে আইনটির প্রয়োগ শুরু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। নতুন আইনে ৪১টি ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ও পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি ধারায় সর্বোচ্চ সাজা দুই বছর। বাকি সাতটি ধারায় সাজা তিন বছর বা এরও বেশি। এই ৭ ধারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ারের বাইরে রাখা হয়েছে। দুই বছরের কম কারাদণ্ড রয়েছে, এমন ধারাই প্রয়োগ করতে পারবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ধর্মঘটকারীরা নতুন সড়ক আইনের যে ৯টি ধারার পরিবর্তন চেয়েছেন, সেগুলো হলো : ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৮৪, ৮৬, ৯০, ৯৮ ও ১০৫। এর মধ্যে ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা সবচেয়ে কঠোর। এসব ধারার অপরাধে মামলা অজামিনযোগ্য। এর বাইরে চালকের লাইসেন্স-সংক্রান্ত ৬৬ ধারা এখনই প্রয়োগ করা যাবে না বলে তারা দাবি তুলেছেন। নতুন আইনের ৮৪ ধারায় মোটরযানের কারিগরি পরিবর্তনের বিষয়টি রয়েছে। ৯৮ ও ১০৫ ধারায় সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে এ তিনটি ধারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ তিনটি ধারারই পরিবর্তন চান মালিক-শ্রমিকরা। এ ছাড়া এসব ধারায় থাকা তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কমানোর দাবি করেছেন তারা। সব ধারাতেই উল্লিখিত জরিমানার পরিবর্তন চান তারা। আইনানুসারে ৭৪ ধারায় মোটরযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ধারা অমান্যের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ৭৬ ধারায় ট্যাক্স-টোকেন হালনাগাদ না থাকলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। ৭৭ ধারায় রুট পারমিট ছাড়া যানবাহন চালালে সর্বোচ্চ শাস্তি তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা। ৮৬ ধারায় অতিরিক্ত মাল বহনের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকার জরিমানা। ৯০ ধারা অনুসারে, নির্ধারিত স্থানের বাইরে যানবাহন রাখা যাবে না। এর সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ হাজার টাকা।
মালিক-শ্রমিকেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন, ড্রাইভারদের ৮০ শতাংশ হালকা ও মাঝারি যানের লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাচ্ছেন। এই অপরাধে নতুন আইনের ৬৬ ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বৈঠকে এই ধারা বাতিলের দাবি করেন মালিক-শ্রমিকেরা। এতে করে সরকারের আইন করার উদ্দেশ্যটুকু ব্যর্থ হতে চলেছে। যারা এত কসরত করে আইনটি করলেন, তারা কি এ তথ্য জানতেন না? লোম বাছতে কম্বল উজাড় হওয়ার মতো আইন কি বাস্তবসম্মত? প্রয়োজন ছিল এটি ক্রমেই বৈধকরণের বা লাইসেন্স সঠিককরণের প্রক্রিয়া বাতলানো। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মালিক-শ্রমিকদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত লাইসেন্স সংক্রান্ত ৬৬ ধারায় মামলা আর হবে না। এখন যার যে লাইসেন্স আছে তা দিয়েই ভারী যানবাহন চালাতে পারবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স হালনাগাদ করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাস্তব ক্ষেত্রে এই পরামর্শের কোনো মূল্য আছে বলে মনে হয় না। তার কারণ ইতোমধ্যে তিনি ছয় মাস ৯ মাসের অবাধ সুযোগ দিয়েছেন। মন্ত্রী আরো নিশ্চিত করেছেন, ৮৪ ধারার অপরাধেও আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নতুন আইনে শাস্তি হবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, নতুন সড়ক আইনের প্রায়োগিক দিক বিবেচনার জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। তারা মালিক-শ্রমিক নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে একাধিক বৈঠক করে আইনের কিছু কিছু বিষয় সংশোধনের প্রস্তাব করে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য জমা দেন। এরই মধ্যে ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এখানে একটি বিষয় অস্পষ্ট থেকে যায় যে, যোগাযোগমন্ত্রী কি প্রদত্ত সুপারিশ বিবেচনায় নিয়েছিলেন? নীতিগতভাবে যেকোনো আইন প্রণয়নের সময় প্রায়োগিকতা যেমন যাচাই করা হয়, তেমনি সব স্টেকহোল্ডার বা সংশ্লিষ্ট সবার মতামত গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের মতামত যদি গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তাহলে কেন এই ব্যর্থতা? এই ব্যর্থতার দায় কি সরকার অস্বীকার করতে পারে?
তাহলে দেখা যাচ্ছে, মালিক-শ্রমিকদের দাপটে মুখ থুবড়ে পড়ে আইন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথম দিন বিভিন্ন অপরাধে এক লাখ ২২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছিল। পরদিন আইনটি শিথিল হয়ে পড়ায় জরিমানা আদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৩৫ হাজার টাকা। যদিও নতুন সড়ক আইনে মামলা না দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর কার্যত মালিক-শ্রমিকদের ঠেলায় প্রথম থেকেই আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এখন এটা খোলামেলা সত্য যে আইনটি নামে থাকলেও কাজে আর থাকছে না। সরকারের এই আত্মসমর্পণের পর পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ পরিবহন ক্ষেত্রে তাদের নৈতিক ভিত্তি হারাবে। সরকারের এই নতজানু সমঝোতার পর এটাই স্পষ্ট যে, তারা ‘শক্তিমানের স্বার্থই’ রক্ষা করে। যারা খুনি, দিনদুপুরে ও রাতে অনবরত মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছে, তারা পার পেয়ে গেল। আর সাধারণ মানুষ ট্রাক বা বাসের চাকায় পিষ্ট না হওয়ার মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো। শুধু সড়ক ও পরিবহন ক্ষেত্রে নয়, মানুষের রক্ত ঝরছে সর্বত্র। আইনটির প্রায়োগিক সমস্যা থেকে এটা স্পষ্ট হলো, সরকার সব কিছুকে আরোপ করতে চাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে যেমন সরকারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে জনবিচ্ছিন্নতা আবারো প্রমাণিত হয়েছে। বিগত সময়গুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরিবহন সেক্টর সরকারের আজ্ঞাবহ লোকদের একটি বড় আখড়া। একজন হলেন সাবেক ডাকসাইটে মন্ত্রী। অন্যজন হলেন গৃহপালিত বিরোধী দলের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং এখন একজন অনুগত নেতা, বিরোধী দলের কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে এদেরকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এমন কোনো হরতাল, অবরোধ বা জনসভার কর্মসূচি নেই, যেখানে আজকের এই পরিবহন শ্রমিক-মালিকপক্ষ একত্র হয়ে রাস্তা থেকে ঘোষণা দিয়ে পরিবহন প্রত্যাহার না করেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, এজন্য ওইসব নেতাকে লাখ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। সুতরাং নৈতিকতার জায়গা থেকে সরকারের ভিত্তি খুবই দুর্বল। যাকে একবার আপনি চুরি করার সুযোগ দিয়েছেন, সে কেন আপনার নতুন সদুপদেশ শুনবে? এই সেক্টরের নাটের গুরুদের সবাই চেনেন। সেই সময়ে বারবার আলোচিত হয়েছে, কী করে একজন ক্ষমতাসীন মন্ত্রী সড়ক ও জনপথ শ্রমিকদের প্রধান হর্তাকর্তা, বিধাতা হতে পারেন? এই সেই ব্যক্তি, যখন নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, তখন শহীদ মিনারে তার সামনে ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে জুতোর মালা পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার ছবিতে থুথু নিক্ষেপ করা হয়েছিল। শুধু এই অপরাধে যে ইলিয়াস কাঞ্চন মানুষের জন্য নিরাপদ সড়ক চান। যখন ট্রাকের চাকায় গণতন্ত্র পিষ্ট হচ্ছিল, ওই মন্ত্রী তখন ঝাড়–মিছিল নিয়ে দেশের সবচেয়ে সম্মানীয় জনপ্রিয় ব্যক্তিকে অপমান করতে গিয়েছিলেন। বর্তমান মালিক-শ্রমিক আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। লোকে বলে মন্ত্রিত্বও ফিরে পাওয়ার কায়দা-কৌশল করছেন তিনি। এ ধরনের লোকেরা ক্ষমতার জন্য সব কিছুই করতে পারে। এ জাতির দুর্ভাগ্য যে, তারা আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। এরা যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দেয়া সত্যিই কঠিন হবে। পরিবহনের মতো সব কিছুই পরিত্যক্ত হতে পারে শুধু ক্ষমতার স্বার্থে। সুতরাং জনস্বার্থে পরিবর্তন অনিবার্য।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা