২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নৈতিকতা অবক্ষয়ের কারণ ও সমাধান

-

নৈতিক অবনতি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয়। আমরা দেখছি, কিভাবে এক দল ছাত্র অন্য দলের ছাত্র সন্দেহে একজনকে রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হত্যা করেছে। এ দিকে, দেশ জুয়াতে ভরে গেছে। ত্রিশ চল্লিশটি ক্লাবে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর বসত, লেনদেন হতো হাজার কোটি টাকা। এতে বড় বড় ব্যবসায়ী,ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এবং অন্য ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। এটা কিভাবে সম্ভব হলো বোঝা যায় না, যেহেতু জুয়া দেশের আইনে নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে প্রশাসন কী করল, পুলিশ কর্তৃপক্ষ কী করল- এটা বড় প্রশ্ন। এত লোক ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত, তা আমরা জানতামই না! এর সঙ্গে রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার, যা জুয়াড়িরা এবং অন্যরা করেছে। এ ছাড়া রয়েছে খুন, গুম, ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধ।

এই চিত্র কেবল বাংলাদেশে নয়। নৈতিকতার অধঃপতন বিশ্বের বেশির ভাগ জায়গাতেই ঘটেছে। পাশ্চাত্যেও নৈতিকতার পতন ঘটেছে। সেখানে এর ধরন একটু ভিন্ন। সেখানে পরিবার ভেঙে গেছে, বিয়ের প্রথা উঠে গেছে। বৃদ্ধরা ও শিশুরা অবহেলিত। মাদকতা শতকরা নব্বই ভাগ লোকের মধ্যে আছে। কোকেন এখন কফিশপেও পাওয়া যায়। এমনকি, পাশ্চাত্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নৈতিকতাহীন; যেমন কাশ্মির সমস্যা। এ ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব আছে যে, সেখানে গণভোট হবে। কিন্তু ৭০ বছর পরও অদ্যাবধি সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আরেকটি বিরাট সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন। সেখানেও ৭০-৮০ বছর ধরে সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। সেখানে দুই রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল। একটি ফিলিস্তিনিদের জন্য, একটি ইহুদিদের জন্য। কিন্তু বড় রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার দরুন এটি কার্যকর হচ্ছে না। আমেরিকার আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণ করে থাকে মূলত বড় পুঁজিপতিরা এবং আমেরিকার ইহুদি সম্প্রদায়। এসব পুঁজিপতির মাথায় থাকে, অস্ত্র কিভাবে বিক্রি করতে হবে। সে জন্য তারা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নীতি এখন সম্পূর্ণরূপে নীতি-নৈতিকতাহীন।

এগুলো বাংলাদেশে এবং পাশ্চাত্যে হচ্ছে কেন? এর কারণ, পাশ্চাত্যে খ্রিষ্টীয় ধর্মবিশ্বাস দুর্বল হয়ে গেছে। তার কারণ, স্কুল-কলেজে খ্রিষ্টান ধর্ম পড়ানো হয় না। আমাদের দেশেও ধর্মীয় শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না এবং স্কুল-কলেজে দেয়া হচ্ছে না পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা। এর ফলে নৈতিকতার পতন ঘটছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে বিজ্ঞাপন, ইন্টারনেট এবং মোবাইলে ব্যাপক অশ্লীলতা। এ প্রেক্ষাপটে নারীর ওপর নির্যাতন বেড়েছে, ধর্ষণ বেড়েছে। যত তর্কই করা হোক সত্যি কথা হচ্ছে, নৈতিকতার ভিত্তি স্রষ্টাতে বিশ্বাস করা মানে, আখেরাতে জবাবদিহিতা। যে কেউ যদি ভাবে, পরকালে আমাকে নিজ কর্মের হিসাব দিতে হবে, সে অন্যায় করতে পারে না। ড. জামাল বাদাবি তার ইসলামী শিক্ষা সিরিজ গ্রন্থে বলেছেন, নৈতিকতা নাস্তিকতা দিয়ে আসে না। নৈতিকতার ভিত্তি হচ্ছে, যেমন বলেছি, স্রষ্টায় বিশ্বাস এবং আখেরাতে বা পরকালে বিশ্বাস।

বাংলাদেশে সবাই বলছেন, বর্তমান সমাজের নৈতিকতার অধঃপতনের রাশ টেনে ধরা এবং নৈতিকতা ফিরিয়ে আনা উচিত। এখন সবাই ‘নৈতিকতা নৈতিকতা’ করছেন। কিন্তু বেশির ভাগই মানুষ নৈতিকতা কিভাবে ফিরে আসবে তা বলছেন না। বামপন্থী এবং সেকুলার ব্যক্তিরাও নৈতিকতা নৈতিকতা করছেন। কিন্তু নৈতিকতার পথ দেখাতে পারছেন না। নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে ধর্ম শিক্ষাকে স্কুল এবং কলেজে আবশ্যকীয় পাঠ্য করতে হবে। কুরআন শরিফ থেকে অন্তত সূরা বাকারা এবং আমপারা (আল কুরআনের ত্রিশ নং পারা) পড়াতে হবে। রাসূলের বিস্তারিত জীবনী পড়াতে হবে। আবু বকর, উমর, আলী, উসমান রা:-দের জীবনী পড়াতে হবে। খাদিজা, আয়েশা এবং ফাতেমা রা:-এর জীবনী পড়াতে হবে। ইসলামের ইতিহাস পড়াতে হবে।

অন্যান্য ধর্মের লোকের জন্য একইভাবে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ধর্মীয় নেতাদের জীবনী পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ছাড়া যেসব কারণে মানুষ নৈতিকতা হারায়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মদ, জুয়া, বিজ্ঞাপনে অশ্লীলতা, ইন্টারনেটের অশ্লীলতা- এ সবই আইন করে বন্ধ করতে হবে। যদি আইন থাকে, তাহলে তার প্রয়োগ সঠিকভাবে করতে হবে। সারা বিশ্বের চিন্তাশীল লোকদের এবং সরকারপ্রধানদের এ বিষয়ে ভাবতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
সোনার দেশ- এটিই হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ জুলাই বিপ্লবে আহত বাবুকে নেয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড সৈন্যের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে রাশিয়া! প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

সকল