কুরআনে উল্লিখিত মূল্যবোধগুলো
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৪৩
কয়েক বছর ধরে মানবজাতির প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করছিলাম। মনে হয়েছে, বিশ্বে সবখানেই বড় সমস্যা হলো অনৈতিকতা। ব্যক্তিপর্যায়ে পরিবারে ভাঙন থেকে শুরু করে অপরাধের বিস্তার, মাদকাসক্তি বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোর অন্যায় আচরণ অনৈতিকতার ফল। আমি মনে করি, এই অনৈতিকতা থেকে পুঁজিবাদ বা নাস্তিকতা বা সেকুলারিজম উদ্ধার করতে পারবে না মানবজাতিকে। নৈতিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন ধর্ম। বিশেষ করে স্রষ্টায় বিশ্বাস এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস। এ ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা অনন্য। সে কারণেই কুরআন থেকে ইসলামের মূল্যবোধগুলো বের করার চেষ্টা করেছি এবং একটি তালিকা তৈরি করি, যা নিম্নে দেয়া হলো। এই মূল্যবোধগুলোকে ইসলামের এবং কুরআনের নির্যাস বলা যায়।
১. পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি না করা (লা তুফসিদু ফিল আরদ)। ২. আল্লাহ তায়ালারই ইবাদত করা, অন্য কারো নয়; আল্লাহ তায়ালার কাছেই সাহায্য চাওয়া (ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন)। ৩. সবরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া। ৪. রাগ হজম করা। ৫. মানুষকে ক্ষমা করে দেয়া। ৬. ভালো অবস্থা ও মন্দ অবস্থায় সাধ্যমতো দান করা। ৭. ফকির-মিসকিনদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করা। ৮. কয়েদিদের সাহায্য করা (সূরা ইনসান)। ৯. ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। ১০. ইহসান বা ভালো আচরণের প্রচলন। ১১. নিকটাত্মীয়দের সাধ্যমতো দান করা। ১২. অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা। ১৩. কাজকর্মে বাড়াবাড়ি না করা। ১৪. ভালো কাজের আদেশ দেয়া। ১৫. মন্দ কাজ দূর করার জন্য চেষ্টা করা। ১৬. বিজয় হলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা বা শুকর আদায় করা এবং গর্ব না করা (সূরা নাসর)। ১৭. অতিরিক্ত ধনসম্পদের দিকে না ছোটা। ১৮. সত্য সাক্ষ্য দেয়া। ১৯. মিথ্যা সাক্ষ্য না দেয়া। ২০. নেক কাজ করা (আমলে সালেহ)। ২১. হকের বা ন্যায়ের ব্যাপারে একে অন্যের সহযোগিতা করা। ২২. সবর করার ব্যাপারে একে অপরের সহযোগিতা করা। ২৩. শয়তানের ওয়াসওয়াসা (উসকানি) থেকে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। ২৪. সব খারাপ কাজ থেকে (কুল্লু শাররিন) আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা। ২৫. ভালো কাজের ক্ষেত্রে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা। ২৬. মন্দ কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা না করা। ২৭. গিবত (পেছনে অন্যের মন্দ বলার) অভ্যাস পরিত্যাগ করা। ২৮. কোনো জাতির সবাইকে নিন্দা না করা (সূরা হুজুরাত)। ২৯. ইসলামবিরোধীদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা। ৩০. মন্দ নামে কাউকে না ডাকা (সূরা হুজুরাত)। ৩১. এতিমদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করা। ৩২. সাহায্যকারী প্রার্থীদেরকে সাহায্য করা। ৩৩. আল্লাহর পথে ব্যয় করা (ফি-সাবিলিল্লাহ)। ৩৪. স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি। ৩৫. স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা (আশেরুহুন্না বিল মারুফ)। ৩৬. নিজে দোষ করে অন্যের ওপর চাপানো হারাম। ৩৭. চুক্তি রক্ষা করা। ৩৮. ওয়াদা রক্ষা করা। ৩৯. আমানতের খিয়ানত না করা, অর্থাৎ আমানত রক্ষা করা। ৪০. যৌনক্ষেত্রে পবিত্রতা অনুসরণ করা। ৪১. বিবাহের বাইরে অবৈধ সম্পর্ক না রাখা। ৪২. বিপদে পড়লে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা। ৪৩. ঋণের চুক্তি লিখে রাখা। ৪৪. ঋণের চুক্তিতে সাক্ষী রাখা। ৪৫. পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। ৪৬. পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা (রাব্বিরহামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগিরা)। ৪৭. সম্বলহীন পথিককে সাহায্য করা। ৪৮. অপব্যয় না করা। ৪৯. কৃপণতা না করা। ৫০. নরহত্যা বা খুন না করা। ৫১. এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ না করা। ৫২. মাপ এবং ওজন সঠিকভাবে করা, কাউকে না ঠকানো। ৫৩. যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, তার পেছনে না ছোটা। ৫৪. বেহুদা বা অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে দূরে থাকা। ৫৫. জাকাত দেয়া। ৫৬. নামাজের পূর্ণ হেফাজত করা।
আমার বিশ্বাস, উপরিউক্ত মূল্যবোধগুলো অনুসরণ করা হলে মুসলিম জাতির অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং সমাজে নৈতিকতা ফিরে আসবে। আমি মনে করি, এই নৈতিক মূল্যবোধগুলোর ব্যাপক প্রচার হওয়া দরকার। এতে কেবল মুসলিম জাতি উপকৃত হবে না, অন্য জাতির লোকেরাও উপকৃত হবে। আশা করি, যারা এ লেখা পড়বেন, সবাই লেখাটি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে ইসলামী সংগঠন ও ইসলামী ব্যক্তিদের বিশেষভাবে এগিয়ে আসা উচিত।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা