২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জাতি জবাব পাবে কি?

-

১। ভারত থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কী ‘নিয়ে এলেন’, সংবাদ সম্মেলনে তার সন্তোষজনক জবাব পাওয়া গেল না। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, ‘ভারতকে সারাজীবন মনে রাখার মতো’ ট্রানজিট, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, সাত রাজ্যের নিরাপত্তা, নদী, সমুদ্রবন্দর, প্রতিরক্ষা, রেমিট্যান্স, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে এবার হয়তো খালি হাতে ফিরতে হবে না।

২। তার সফরের আগে বলেছিলাম, ‘সব প্রধানমন্ত্রীই বিদেশ সফরে কিছু না কিছু আনতে যান। আর আমাদের নেতানেত্রীরা ভারত সফরে গিয়ে সবকিছু উজাড় করে দিয়ে আসেন! তাই, আমাদের সরকার প্রধান ভারত সফরে গেলে দেশের মানুষের উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়।’ দৃশ্যত এবারো বাংলাদেশের মানুষের উৎকণ্ঠার কোনো তোয়াক্কা করা হলো না!

৩। জনমনে ধারণা, ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দর ‘দিয়ে আসা হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে তার সদুত্তর দিতে পাওয়া যায়নি। আমাদের বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের অধিকারও আছে বলে যে, ঘোষণা শোনা গেল, তাতে দেশবাসী মর্মাহত!

৪। সফরের দুই দিন আগে বলেছিলাম, ‘এবারো তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো চুক্তি হবে না।’ তাই হলো, আমরা তিস্তার পানি চাইতেই পারলাম না। বরং ফেনী নদীর পানি দিয়ে আসতে হয়েছে ভারতকে। আর এখন বলতে হচ্ছে, ‘কেউ পানি চাইলে, তা যদি না দেই, সেটা কেমন দেখায়?’ সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব নিজ দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। নিজেদের পানি চাহিবামাত্র বিনাস্বার্থে অন্যকে উজাড় করে দিয়ে আসা উচিত নয়।

৫। দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এই সফরে দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দৃশ্যমান নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। অথচ প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পর্যন্ত একবারের জন্যও উচ্চারণ করা যায়নি! ‘রোহিঙ্গা’ না বলে, বলা হলো, ‘মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আশ্রয়চ্যুত মানুষজন’।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে ভোটদানে বিরত থাকা, ভারতকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ দেয়া দূরের কথা, বরং তাদের জন্য দেশটির ত্রাণের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করতেই তো পুরো সময়টা পার হয়ে গেল। ৬। চরমভাবে উদ্বিগ্ন দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল, আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) বিষয়ে পরিষ্কার একটি বার্তা মিলবে। অথচ যৌথ বিবৃতির কোথাও ‘এনআরসি’ শব্দটির পর্যন্ত কোনো উল্লেখ নেই। সরকার দাবি করেছিল, ‘নিউ ইয়র্কের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, এতে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই।’ কথাটা মোদির নিজের মুখ দিয়ে একটি বারও বলানো গেল না। এমনকি ভারত সরকারের কোনো পর্যায় থেকে এই আশ্বাস বাণীর প্রকাশ্য একটা ঘোষণাও আদায় করা সম্ভব হল না! ৭। দেশবাসী বলছে, ভারতে গেছেন তিস্তার পানি আনতে, আর ভারতকে দিয়ে আসলেন গ্যাস। সংবাদ সম্মেলনে শোনা গেল, ‘বটল গ্যাস দিচ্ছি... আমদানি করে দিচ্ছি... গ্যাসের কিছু ত্রিপুরায় দিচ্ছি...।’

জনগণের প্রশ্নের জবাব দেয়াই সমীচীন। ‘বিএনপির ২৯ বছর আগের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার’ কথা এতবার শোনালে কী লাভ? ৮। কয়েকদিন আগে বলেছিলাম, ‘এই সফরে সীমান্ত হত্যা বা বাণিজ্য ঘাটতির মতো নোইস্যুগুলো কোন অ্যাজেন্ডায় স্থান খুঁজে পাবে না!’ হয়েছেও তাই। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে, দেশের জাতীয় স্বার্থে, এ কথাগুলো বলার মতো কোনো সৎসাহস কেউ পেলেন না কেন? হিন্দিতে রসিকতা করে হলেও তো এ দাবিগুলো তোলা যেত। ৯।

জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী চুক্তি করা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্রবন্দর, ফেনী নদীর পানি, এবং জ্বালানি সঙ্কটময় স্বদেশের গ্যাস অন্যকে তুলে দিলে, তা সংবিধানপরিপন্থী। এটা বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। রাষ্ট্রবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী চুক্তি মানে, সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করা। নিজ দেশের স্বার্থের চাইতে নব্য কোনো রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা হলে সরকার ক্ষমতায় থাকার সব সাংবিধানিক অধিকার হারিয়ে ফেলে। ১০। অভিযোগ, ক্যাসিনোসম্রাটকে গ্রেফতারের ইস্যু দিয়ে মিডিয়ার মুখ বন্ধ রাখা হচ্ছে সুকৌশলে। দেশের স্বার্থে প্রতিবাদ ও লেখালেখি করায়, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের উগ্র অনুসারীদের হাতে মারা পড়তে হলো এক প্রতিবাদী ছাত্রকে।

লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ


আরো সংবাদ



premium cement