অংশীদারিত্বমূলক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের উন্নয়ন
- প্রফেসর ড. এম এ মান্নান
- ১১ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:১৩, আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:২৬
১৯৮২ সালে আমেরিকার জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী বিশ্বের অর্থনীতির ওপর বক্তব্য রাখার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আকারে ছোট হলেও যুক্তরাষ্ট্রের খুবই নামকরা ও প্রভাবশালী এই বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার সরকারের নীতি প্রণয়নে এখানকার গবেষণা ও পণ্ডিতদের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। সেখানে ‘সেন্টার ফর কনটেমপরারি অ্যারাব স্টাডিজ’ (সিসিএএস) রয়েছে, যা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখন পর্যন্ত এটি আমেরিকায় একান্তভাবে আরব বিশ্ব নিয়ে গবেষণা ও একাডেমিক ওয়ার্ক করে- এমন একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ইসলামী অর্থনীতির ওপর লেখালেখি করার সুবাদে আমাকে হয়তো তারা জানত। আমাকে ইসলামী ইকোনমি, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ওপর কয়েকটি সেশনে বক্তব্য রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়। জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বেশ উৎফুল্ল হই। তখন সৌদি আরবে কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি অধ্যাপনা করছি। সৌদি আরবে নিয়ম ছিল, তারা সব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক পদগুলোতে সৌদি নাগরিকদের বসাবে। তারা প্রায়ই হতো বয়সে তরুণ। অবশ্য একাডেমিক পদগুলোতে বিদেশীদের বসাতে আপত্তি ছিল না। তবে এসব পদে সাধারণত প্রবীণ স্কলারদের দেখা যেতো। ডিন সাধারণত প্রশাসনিক পদ। কিন্তু সৌদি আরবের সৌন্দর্য হলো সেখানকার ডিনরা কখনোই কোনো প্রবীণ একাডেমিশিয়ানকে তাদের অফিসে ডেকে পাঠাতেন না। আমাকেও কখনো ডিনের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়নি। তারাই বরং আমার অফিসে চলে আসতেন। এটা আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যায়গুলোর নীতির ঠিক উল্টো। আমাদের এখানে বড় চেয়ার পেলেই মাথা গরম হয়ে যায়। আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর যা হোক, একটি নোট লিখে সেটা ডিনের অফিসে পাঠিয়ে দিলাম। আমাকে ছুটি নিতে হবে, অন্তত ১৫ দিনের। তখন আমার প্রতিদিন একটি করে লেকচার ছিল ওখানকার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। আমার চিঠি পাওয়ার পর ডিন নিজেই আমার অফিসে চলে এলেন। এসে বলেন, ড. মান্নান এটা খুবই ভালো খবর। তোমাকে যেতে হবে। কতদিনের ছুটি দরকার? অবশ্য আমার নোটে সেটি উল্লেখ ছিল। আমাকে যাতায়াত, হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ ১৫ দিনের পুরো খরচ সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিয়ে দেয়া হলো। আমি গেলাম।
ওয়াশিংটনে বেশ সমাদরে আমাকে বরণ করা হলো। কারণ কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি বেশ নামকরা। ওই সময় বিশ্বের ৮০টি দেশের এক হাজার ৬০০ পিএইচডি একাডেমিশিয়ান সেখানে ছিলেন। তখন কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে কোন দেশ থেকে পিএইডি অর্জন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে চারটি বেতন স্কেল ছিল : ইন্দোনেশিয়ান পিএইচডি, ফিলিপাইনের পিএইচডি, ইন্ডিয়ান সাব-কনটিনেন্টের পিএইচডি এবং ব্রিটিশ বা আমেরিকান পিএইচডি। সৌভাগ্যবশত আমার ছিল আমেরিকান পিএইচডি এবং এই পিএইচডি ডিগ্রিধারীর বেতন ছিল সবচেয়ে বেশি। তখন সিসিএএসের ডিরেক্টর ছিলেন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার, মিসরের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম ওইস।
তিনি আমার লেকচার শোনার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানালেন। এ ধরনের লেকচার শুনতে সাধারণত সবাই আসে। আমার লেকচার শুরু হলো। প্রথম দিন হলের মধ্যে চোখ বুলিয়ে দেখি, শ্রোতাদের সারিতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ উপস্থিত। টুপি আর পাগড়ি দেখে মুসলমান ও শিখদের তো সহজেই চেনা যায়। ইহুদিও ছিল সেখানে। প্রথমেই যে কথাগুলো গুরুত্বের সাথে বলেছিলাম তা ছিল : আমি ইসলাম প্রচার করতে এখানে আসিনি। ইসলাম যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, সে কথা বলার জন্যও এখানে দাঁড়াইনি। কাউকে ইসলামে দীক্ষিত করার জন্যও আসিনি। প্রশ্ন হলো, ‘তাহলে তুমি কেন এসেছ?’ বললাম, ‘আমি এসেছি আমার দৃষ্টিভঙ্গি তোমাদের জানানোর জন্য। প্রত্যেকটি সিস্টেমের মধ্যে কিছু কমন বিষয় রয়েছে। কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে, কিছু বিষয়কে গুরুত্বহীন করে আমরা একটি সিনথেসিস তৈরি করে থাকি। এটা মানব জ্ঞানের অংশ।
এভাবে শুরু করার পর দেখি, হলের মধ্যে পিনপতন নীরবতা। ভেবেছিলাম, আমার কথা শুনে হয়তো কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেরকম কিছু দেখলাম না। এর পরেই মূলত আমি মূল বক্তব্যটি শুরু করি। আমরা যে সিনথেসিস তৈরি করি, সেটাকে প্যারাডাইমও বলা হয়। ইসলাম একটি প্যারাডাইম, খ্রিশ্চিয়ানিটি একটি প্যারাডাইম। বিভিন্ন ডকট্রিনও রয়েছে। এগুলো সময়ে সময়ে পরিবর্তনও হয়েছে। আমি বলেছি, ইসলামের এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো চাইলেই আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। যেগুলো আল কুরআনে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। শ্রমিকের সাথে ন্যায্য আচরণ করতে বলা হয়েছে, তার কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে মজুরি পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। ইসলামে মুনাফা বা লাভের কথা বলা আছে। সেই লাভ ভাগাভাগি করতে বলা হয়েছে। এখানে ভাড়া গ্রহণযোগ্য। কারণ ভাড়ার মধ্যে ঝুঁকি রয়েছে। লিজের মধ্যে ঝুঁকি রয়েছে। ইসলাম অংশীদারিত্বমূলক অর্থনীতির কথা বলে। আমরা সুদ গ্রহণ করি না। বর্তমান পৃথিবীতে সুদ চালু আছে। খ্রিষ্ট ধর্মেও কিন্তু সুদের নিন্দা করা হয়েছে।
এগুলো বলার পর উন্নয়নের শর্তগুলো ব্যাখ্যা করলাম। প্রথমত, যেকোনো ধরনের উন্নয়নই হোক না কেন, সেখানে গণঅংশগ্রহণ থাকতে হবে। তুমি বড় একটি সেতু করেছ, পাতাল রেল তৈরি করেছ- এমন দৃশ্যমান কিছু অবকাঠামো তৈরি করা হলো কিন্তু সেখানে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তাহলে উন্নয়ন হবে না। গ্রামের মানুষ বেকার, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ব্যাপক, গ্রামের মানুষ শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে দেশে অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উন্নয়নকে গ্রামমুখী হওয়া উচিত। তা নাহলেও, এতে অন্তত জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এটা তৃণমূলপর্যায়ে হতে হবে।
একসময় যেসব ক্লাব খেলাধুলার জন্য নামকরা ছিল, সেগুলোর এখন কী পরিণতি? ছাত্রজীবনে আমরা ফ্যান ছিলাম এসব ক্লাবের। ক্লাবগুলোর খেলাধুলা দেখে ছাত্রজীবনে আমরা রোমাঞ্চিত হতাম। এখন সেগুলো জুয়ার আড্ডায় পরিণত হয়েছে। এটাই হলো, কুরুচিপূর্ণ ভোগ বা ‘ভালগার কনজাম্পশন’। তাই বলছি নিষিদ্ধ পণ্য উৎপাদন করা যাবে না। যত লাভজনকই হোক না কেন, মদ উৎপাদনের অনুমতি দেয়া যাবে না |
উন্নয়নের দ্বিতীয় শর্তটি হলো, উৎপাদনের অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্য বিতরণমূলক বিবেচনা। এর মানে প্রতিটি অর্থনৈতিক সমাজ ও ব্যবস্থায় তিনটি অভিন্ন কর্মকাণ্ড রয়েছে : বিতরণ, উৎপাদন ও ভোগ। প্রত্যেক সমাজে উৎপাদন করতে হবে, বিতরণ করতে হবে এবং সেখানে ভোগও করা হয়। প্রাচীন বা আধুনিক সব সমাজেই এটা রয়েছে। আমরা হয়তো আধুনিক পরিভাষায় এগুলোকে পরিশীলিতভাবে প্রকাশ করছি। উন্নয়ন যে করছ, তার সুফলভোগী কে হবে? যেমন পাতাল ট্রেনের কথা যদি আমরা বলি, তাতে শহরের কিছু মানুষ উপকৃত হবে। কিন্তু আমাদের দেশে কত শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে? এটা কিন্তু পশ্চিমা পুঁজিবাদী ধারণার পুরো বিপরীত। সেখানে উৎপাদনকে সবার আগে ধরা হয়। সেখানে মূল্য বিবেচনা করা হয় সবার আগে। যত পারো, উৎপাদন করো। আগ্রাসী বিজ্ঞাপন দাও। বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি করো। প্রয়োজন হোক বা না হোক, সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে বাজারজাত করো।’ তাহলে বিতরণের দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের উন্নয়নকে বিচার করতে হবে।
এরপর, উৎপাদনকে মানবিকীকরণ করতে হবে। পশ্চিমা বাজার অর্থনীতিতে ‘প্রাইসট্যাগ’ দিয়ে পণ্যকে উপস্থাপন করা হয়। আমরা যখন বাজারে কেনাকাটা করতে যাই, তখন যে প্রাইসট্যাগ দেয়া থাকে, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করি না। প্রায় সব পণ্যের মোড়কের গায়ে উপাদানগুলোর নামও লেখা থাকে। কিন্তু এতে কোনো মূল্যবোধের কথা নেই। আমরা শুধু পশ্চিমা অর্থনীতিকে অবিকল অনুসরণ করছি। এতে কোনো সামাজিক উপাদান নেই। এই উপাদান দিয়ে আমদের উন্নয়নকে বিচার করতে হবে। আমরা বড় কোনো সেতু তৈরি করলে সেটা ব্যবহারের জন্য টোল-ট্যাক্স বসাই। কিন্তু সেই টোল-ট্যাক্সের টাকা কোথায় যাবে, সেই প্রশ্ন করি না কেন? পণ্যের সাথে সামাজিক উপাদানগুলো যোগ করাকেই উৎপাদনের মানবিকীকরণ বলছি।
বিতরণ ও ভোগের মানবিকীকরণের কথা বলেছি। ভোগ ইতর শ্রেণীর বা কুরুচিপূর্ণও হতে পারে, সেটা করা যাবে না। এখন আমরা পত্রপত্রিকায় কী দেখছি? যার যেমন খুশি খরচ করছে। একসময় যেসব ক্লাব খেলাধুলার জন্য নামকরা ছিল, সেগুলোর এখন কী পরিণতি? ছাত্রজীবনে আমরা ফ্যান ছিলাম এসব ক্লাবের। ক্লাবগুলোর খেলাধুলা দেখে ছাত্রজীবনে আমরা রোমাঞ্চিত হতাম। এখন সেগুলো জুয়ার আড্ডায় পরিণত হয়েছে। এটাই হলো, কুরুচিপূর্ণ ভোগ বা ‘ভালগার কনজাম্পশন’। তাই বলছি নিষিদ্ধ পণ্য উৎপাদন করা যাবে না। যত লাভজনকই হোক না কেন, মদ উৎপাদনের অনুমতি দেয়া যাবে না। এটা আমাদের ধর্মে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো কোনো ধর্মের লোকজন হয়তো এটা খান। আমাদের দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কূটনীতিকরা থাকতে পারেন। তাদের জন্য আলাদা আইন থাকতে পারে। ইসলামী শরিয়াহতে একে বলা হয় ‘ডকট্রিন অব জরুরাত’।
এক্ষেত্রে সীমিত অনুমতি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু এ ধরনের নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যাপক উৎপাদন কঠোরভাবে বর্জনীয়। আমরা এখন উৎপাদনকে পরিবেশবান্ধব করার যে কথা বলছি, তা কিন্তু কুরআনেই রয়েছে। সবকিছুর মধ্যে সুসংহতি থাকতে হবে। তুমি প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করতে পারবে না। পরিবেশগত ভারসাম্য, সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করা যাবে না। ফলে উন্নয়নের জন্য যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে যেমন, সুন্দরবনের কাছে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে এর ইকোলজিক্যাল আসপেক্টও দেখতে হবে।
উন্নয়নের জন্য আয় পুনর্বণ্টনের বাধ্যতামূলক ইসলামী ব্যবস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে। ইসলামে আয় পুনর্বণ্টনের দুটি খাত রয়েছে : স্বেচ্ছামূলক ও বাধ্যতামূলক। জাকাত বাধ্যতামূলক, কিন্তু সাদাকাহ তা নয়। উত্তরাধিকার আইন বাধ্যতামূলক, কিন্তু ওয়াক্ফ নয়। ট্রাস্ট বা কর্জে হাসানা বাধ্যতামূলক নয়। এর মানে হলো, যেসব খাতকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তাহলে জাকাতের অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে কেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হবে না? ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে জাকাত বিতরণ না করে এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পারি। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার ‘তাবুং হাজী’সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। সেটা না করায় আমরা প্রায়ই জাকাতের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষ মারা যাওয়ার খবর শুনি।
আমাদেরকে জাকাতের টাকার ফলাফল বা কনসিকোয়েন্সও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সুষ্ঠু উন্নয়নের জন্য। শুনতে খারাপ শোনালেও, জাকাতের টাকা দিয়ে কেউ মদ খেলে তাকে আটকাবে কে? সরকারের জাকাত বোর্ড রয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও জাকাত সংগ্রহ করে থাকে- যদিও এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। কিন্তু যেসব খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে সেগুলোর ফলাফল সামাল দিতে হবে। উন্নয়নের জন্য এইশর্ত পূরণ করতে হবে।
উন্নয়নের জন্য ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক খাতের প্রাতিষ্ঠানিকীরণের কথা বলেছি। বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও সংস্থান থাকতে হবে। তুমি গ্যাস তুলছো, তেল তুলছো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু রাখবে না- সেটা হতে পারে না। ইসলাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে যেতে নিষেধ করেছে। এ কারণে ইসলাম কাউকে সম্পত্তির ১০০ শতাংশ উইল করার অনুমতি দেয় না। সন্তানদের জন্যও তা রাখতে হবে। অর্থাৎ আমাদের উন্নয়নে এমনভাবে সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর হয়। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদেরকে অভিশাপ দেবে।
এরপর উন্নয়নের জন্য আমি অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথা বলেছি। মুসলিম বিশ্বে ওআইসির মতো সংস্থা এ ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। মুসলিম বিশ্বের ১৪ শ’ বছরের ইতিহাসে ওআইসির মতো কোনো সংস্থার জন্ম হয়নি। মুসলিম বিশ্বের সম্পদের পরিমাণ অভাবনীয়। আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। কিন্তু এই সহযোগিতা হতে হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ওয়াশিংটন বা দিল্লি এসে আমাদেরকে কোনো কিছু করতে বললে অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। কিন্তুকোনোভাবেই আমি বিশ্বাস করি না যে, আমরা দুর্বল। ১৭ কোটি মানুষ একই ভাষায় কথা বলে- এমন কয়টি দেশ পৃথিবীতে আছে? বাংলাদেশে জনগণ হোমোজিনিয়াস। প্রতিবেশী ভারতে আমরা দেখি, যখন হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা ওঠে তখন বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রবল বিরোধিতা শুরু হয়ে যায়। আমাদের ভাষা আমাদের একটি নিজস্ব শক্তি।
উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে বিভিন্নভাবে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক একীভবন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিশালী ব্লকের উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই একীভবন আমাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। কোনো সুনির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকেন্দ্রিক না হয়ে আমাদেরকে মানুষের সমস্যা সমাধান করতে হবে। এটাকে আমরা ‘কমনওয়েলথ অব হিউম্যান কমিউনিটিজ’ বলতে পারি। এমন সমাজ ব্যবস্থা গড়তে পারলেই টেকসই উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা