দারিদ্র্য বিমোচনে স্বেচ্ছামূলক খাত ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা
- প্রফেসর ড. এম এ মান্নান
- ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:১৭
অতিমাত্রায় বিদেশী সাহায্যনির্ভরতা আমাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে রেখেছে। ইতঃপূর্বে আমার বেশ কয়েকটি লেখায় বলেছি, এ দেশের মাটি-মানুষ ও তার কৃষ্টির মধ্যে যে অসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে তা আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে বারবার উপেক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের সমাজব্যবস্থায় যে বিপুল পুঁজি অনাদর-অবহেলায় পড়ে আছে তার উন্নয়ন এবং এগুলোর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনসহ অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সমাধানের দিকে কখনো তেমন নজর দেয়া হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের আমাদের এই দেশে সুপ্ত সামাজিক পুঁজির তিনটি প্রধান উৎস হলো জাকাত, ওয়াকফ সম্পত্তি ও ক্যাশ ওয়াকফ। এ ছাড়া সাদাকাতুল ফিতর, সাদাকাতে নাফেলা, হিবা, ওয়াসিয়াত, উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদির মতো উপেক্ষিত সামাজিক পুঁজিগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে, বিশেষ করে সংবিধানে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাক্যটি সংযোজিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রস্তাবিত কোনো বাজেটেই ইসলামী অর্থনীতির কোনো চেতনা প্রতিফলিত হয়নি। একে সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী বললে অত্যুক্তি হবে না। আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলছি। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক খাতগুলো যে বিশাল অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে বাজেটে কোনো রকম চিন্তা-ভাবনা লক্ষ করা যায় না। অথচ রাষ্ট্র থেকে আরোপ করা কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই এ দেশের মুসলমানেরা ইসলামী অনুশাসন প্রতিপালনে পিছিয়ে নেই। তারা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা জাকাত দিচ্ছে। জাকাত আদায়ের জন্য আমাদের দেশে সরকারের একটি জাকাত বোর্ড রয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আদায় করা জাকাতের পরিমাণ নগণ্য। জাকাত আদায়ব্যবস্থাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতায় এনে আয়কর আদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা যেতে পারে।
এই জাকাত আদায়ের ব্যবস্থা হবে স্বেচ্ছামূলক। তবে যে ব্যক্তি তার সঞ্চিত সম্পদের ওপর জাকাত সরকারি তহবিলে জমা দেবে, তার সম্পদের আয় করমুক্ত থাকবে। স্বেচ্ছায় সরকারি তহবিলে জাকাত সংগ্রহ করা হলে তার পরিমাণ আয়করের চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে। আয়কর হবে শুধু উপার্জনের ওপর। অন্য দিকে জাকাত পুঞ্জীভূত ও বিনিয়োগযোগ্য উভয় সম্পদের ওপর নির্ধারিত হয় বলে আয়করের বিকল্প হিসেবে জাকাতের অংক অনেক বেশি হয়। স্বেচ্ছায় জাকাত দানের ক্ষেত্রে কেউ সম্পদের হিসাব গোপন করে না। কিন্তু আয়করের হিসাব দেয়ার ক্ষেত্রে আয় গোপন করা একটি সাধারণ ঘটনা। জাকাতের অর্থব্যয়ের জন্য নির্ধারিত যে আটটি খাত রয়েছে তার মধ্যে সাতটিই দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। সুতরাং আয়করের বিকল্প হিসেবে জাকাত আদায় হলে বাজেটের ব্যয় বরাদ্দের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।
১৯৮৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে পাকিস্তানের করাচিতে ‘ম্যানেজমেন্ট অব জাকাত ইন মডার্ন মুসলিম সোসাইটি’ শীর্ষক একটি সেমিনার হয়েছিল। আইডিবি, পাকিস্তান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকিং ইনস্টিটিউট ও পাকিস্তান সরকারের সেন্ট্রাল জাকাহ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। আমি ছিলাম সেমিনারের একজন কো-এডিটর। এতে অনেক স্থানীয় এবং বিদেশী ইসলামী চিন্তাবিদ অংশগ্রহণ করেন। তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেনারেল মোহাম্মদ জিয়াউল হক। সামরিক শাসক হিসেবে তিনি যাই থাকুন না কেন, আমি যতটুকু দেখেছি ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন খুবই অমায়িক ও ধর্মপ্রাণ মানুষ। পকেটে সব সময় কুরআনের একটি কপি রাখতেন। জিয়াউল হক ব্যাংকিং সিস্টেমে থাকা সঞ্চয়ী আমানত থেকে শরিয়াহ বিধান অনুযায়ী জাকাত কর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মতামত জানতে চাইলেন। স্থানীয় অর্থনীতিবিদেরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তারা বললেন, এতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধসে পড়বে। কিন্তু বিদেশীদের মধ্যে আমি এবং মিসরের ড. আহমদ নাজ্জার পক্ষে মত দিলাম। তবে একটি শর্তে : জাকাত খরচের ব্যাপারে আল কুরআনে যে আটটি খাতের কথা বলা হয়েছে টাকা সেসব খাতেই ব্যয় করতে হবে এবং যে এলাকা থেকে জাকাত সংগ্রহ করা হবে ওই টাকা সংশ্লিষ্ট এলাকায় খরচ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সুনির্দিষ্ট খাতগুলোতে জাকাতের অর্থ খরচের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জিয়াউল হক ঠিকই আমাদের বক্তব্য শুনলেন এবং নির্দেশ জারি করে দিলেন। ফলে রাতারাতি ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মতো সংগ্রহ হলো। জনগণকে তিনি বললেন, জাকাতের টাকা কুরআন নির্দেশিত আটটি খাতেই খরচ করা হবে। এই আট খাতের সাতটিই দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। একটি খাত শুধু যে সংগ্রহ করছে তার পারিশ্রমিক হিসেবে।
মানুষ যখন দেখে তার জাকাতের টাকা তারই এলাকায় দারিদ্র্য বিমোচনের কাজে খরচ করা হচ্ছে, তখন তারা শান্ত মনে তা মেনে নেয়। ব্যাংকিং খাত ধসে পড়বে বলে যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পরের বছর ৫০০ মিলিয়ন ডলার সংগৃহীত হয়। পাকিস্তানে এভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। জাকাত আদায় ও ব্যয়কে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য আমরা পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের দেশের ওয়াকফ সম্পদও বিশাল অবদান রাখতে পারে। এদেশে দেড় লাখের বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে এবং প্রায় তিন লাখ মসজিদ ওয়াকফ সম্পত্তির সাথে যুক্ত। এসব সম্পদ বাণিজ্যিকভাবে উন্নয়নের চিন্তা কখনো করা হয়নি। তা করা গেলে সরকারের সমাজকল্যাণমূলক অনেক কর্মকাণ্ড ওয়াকফের আওতায় নিয়ে আসা যেত। ফলে রাজস্ব সাশ্রয় হতো।
১৯৮২ সালের কথা। আমি তখন আইডিবিতে। তখন সৌদি আরবের শূরা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ একদিন আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা বললেন। সেখানে মুহাম্মাদিয়া নামে একটি সংগঠন আছে। তাদেরকে যেন একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমি পরামর্শ দিই। তিনি আমার হাতে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার প্লেনের টিকিট ধরিয়ে দিলেন। টিকিট হাতে নিয়ে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসেছিলাম। তিনি কী ভেবে বললেন, ডোন্ট ওরি, ওরা তোমার জন্য সব ব্যবস্থা করবে। ফলে সাত দিনের একটি ট্রিপ নিয়ে আমি জাকার্তা গেলাম।
সেখানে লোকমান হারুন নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে মুহাম্মাদিয়ার একটি গ্রুপ আমাকে রিসিভ করে। হারুন ইন্দোনেশিয়ায় ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি ছিলেন এবং তিনি মুহাম্মাদিয়ার সক্রিয় সদস্যও। এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে প্রথমে তাদের অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি ভেবেছিলাম মুহাম্মাদিয়া হয়তো কোনো ছোটখাটো এনজিও হবে। তাই অবাক হলাম তাদের পাঁচতলা ভবনের বিশাল অফিস দেখে। তখন আমাকে বলা হলো, একটি ফাইভ স্টার+ হোটেলে আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোটেলের নামটি এখন মনে নেই। তবে হোটেলে যাওয়ার আগে আমাকে তাদের ইসলামিক হসপিটালটি দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব করা হলো। আমরা গেলাম। বলতে কি আজো সেই মুহাম্মাদিয়ার পরিচালিত ‘ইসলামিক হসপিটাল অব জাকার্তা’ গোটা ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। তখনই হাসপাতালটি ছিল ৫০০ শয্যার। স্টেট অব দ্য আর্ট টেকনলজিতে সজ্জিত। আমাকে বিভিন্ন বিভাগ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখানো হচ্ছে।
আমার অবাক হওয়ার পালা তখনো বাকি ছিল। যখনই কোনো রুমে প্রবেশ করি দেখি সেখানে লেখা রয়েছে- এটা ওয়াক্ফ সম্পত্তি, অমুক ব্যক্তি দান করেছেন। ইংরেজি ও ইন্দোনেশীয় ভাষায় লেখা। বিভিন্ন ব্যক্তির দানের ওয়াক্ফ থেকে বিশাল এই হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে প্রবেশের পর আমার মনে ভিন্ন এক ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সেখানে লেখা আছে ‘আমরা শুধু চেষ্টা করি, কিন্তু আমাদের সবাইকে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যেতে হবে।’ এমন এক মহিমান্বিত পরিবেশ যা সবাইকে আবেগাপ্লুত করবে। ‘আমরা মৃত্যুকে ঠেকাতে পারব না। আমরা শুধু চেষ্টা করছি যেন তোমার দুঃখ কিছুটা লাঘব করা যায়।’
১৯১২ সালে হাজী দাহলান এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দীর্ঘ দিন মক্কায় ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি দেখেন খ্রিষ্টান মিশনারিরা প্রচুরসংখ্যক মুসলমানকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করছে। এটা দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ সা:-এর নামে মুহাম্মাদিয়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। আর এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক খাতগুলোর সম্পদ কাজে লাগান। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় নাধলাতুল উলামার পর মুহাম্মাদিয়া সবেচেয়ে বড় সংগঠন। যার সদস্য সংখ্যা ২৯ মিলিয়নের বেশি। মুহাম্মাদিয়া পরিচালিত স্কুল রয়েছে ৫৭৫৪টি। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে এই সংস্থার ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সারা দেশে রয়েছে অত্যাধুনিক হাসপাতাল, নার্সিং স্কুল ও ক্লিনিকের চেইন। এর সবই অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।
হাসপাতাল থেকে আমি হোটেলে ফিরি। পরে ওদের সাথে আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু ওরা আমাকে ব্যাংকের ব্যাপারে কিছু বলছে না দেখে একসময় নিজে থেকেই বললাম, দেখো নাসিফ সাহেব তো তোমাদেরকে একটি ইসলামিক ব্যাংক অর্গানাইজ করার জন্য বলেছেন। এ ব্যাপারে তোমাদের চিন্তাভাবনা আমাকে বলো। তাদের সাথে কথা বলে জানলাম, তারা অসংখ্য সমবায় সমিতি করেছে। তখন আমি সেগুলোর সাথে কথা বলি। ওইসব সমবায় ঠিক ইসলামী নিয়মনীতি মেনেই কাজ করছিল। আমি বললাম, তোমরা তো ইসলামী অর্থনীতির নিয়মনীতি মেনেই কাজ করছো। এগুলোকে সমন্বিত করে ব্যাংকিং রূপ দেয়া যেতে পারে।
ওই ঘটনার পর আমি বহুবার ইন্দোনেশিয়া গেছি। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বি জে হাবিবির সাথেও আমার কথা হয়। এর জের ধরে মুহাম্মাদিয়ার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতের ঠিক ১০ বছর পর ১৯৯২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামী ব্যাংকÑ ব্যাংক মুয়ামালাত প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশটির সবগুলো ব্যাংকই শরিয়াহ ভিত্তিক। বিশেষ করে বিংশ শতকে শেষ দিকে যখন ডলারের পতন হয় তখন ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে একরকম বিপ্লব ঘটে। এর পেছনে হয়তো আমার ক্ষুদ্র কিছু অবদান রয়েছে, কিন্তু ওদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর ইন্দোনেশিয়া গিয়েছি। সেখানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কে অংশ নিয়েছি, মতামত দিয়েছি। শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে হয়তো আরো যাওয়া হতো। এর জন্য আমি গৌরব বোধ করি। এখনো আমি মুহাম্মাদিয়ার এক্সটার্নাল অ্যাডভাইজার। ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক খাতের বিপুল শক্তি সম্পর্কে আমার প্রথম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয় মুহাম্মাদিয়ার কাছ থেকে।
মালয়েশিয়ার তাবুং হাজীর কথাও আমরা জানি। এটাও বিশাল সংস্থা। তারা মূলত হজ ব্যবস্থাপনার কাজ করে। তাদের সম্পদের পরিমাণ অবাক করার মতো। তাদের নিজস্ব বিমানবহর রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে শুধু এই সংস্থার বিমানকে মালয়েশিয়া থেকে সরাসরি মদিনায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা শাফি মাজহাবের অনুসারী, আমাদের মতো সুন্নি নয়। ইন্দোনেশিয়ানরাও শাফি মাজহাবের। ওদের সমাজে বিয়ের আগে হজ করার রীতি প্রচলিত। অথচ আমরা মৃত্যুর আগে একবার হজ করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি। ইসলামে যৌবনকালে, যখন মানুষের মধ্যে লোভ-লালসা বেশি থাকে, তখনই ইবাদত করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
তাই আমি সরকারের প্রতি দারিদ্র্য বিমোচন প্রচেষ্টায় ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক খাতগুলোর প্রতি নজর দেয়ার অনুরোধ করব। বিভিন্ন মুসলিম দেশে স্বেচ্ছাসেবক খাতে যেসব কাজ হচ্ছে, সেগুলো দেখার জন্য সরকার মিশন পাঠাতে পারে। আমরা উন্নয়নের জন্য বিদেশের কাছে ধরনা দিচ্ছি। পরমুখিতা নিয়ে সত্যিকার অর্থে বাঁচা যায় না। আমরা কেন আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ করছি না, আমাদের যে সহজাত শক্তি রয়েছে সেগুলো কেন কাজে লাগাচ্ছি না? এখানে সরকারের আন্তরিকতা বা রাজনৈতিক সদিচ্ছা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতুর কথাই ধরা যাক। বিশ্বব্যাংক সরে গেল। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল। তিনি নিজস্ব সম্পদ দিয়েই কাজটি শুরু করে দিলেন। এখন নির্মাণকাজ অনেকখানি এগিয়েও গেছে। দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠছে, সেগুলো অবশ্যই যাচাই করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সবার ওপরে যে কথাটি বলছি, সেটি হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে পদ্মা সেতু হতো না। এমন ঝুঁকি শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বই নিতে পারে।
আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হতে স্বেচ্ছাসেবক খাতগুলোকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর জন্যও রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। একটি পর্যায় পর্যন্ত ঋণ করা যায়। পশ্চিমাদের প্রযুক্তি কাজে লাগাতে আমাদের বাধা নেই। তাদের অভিজ্ঞতাও আমরা কাজে লাগাতে পারি। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে ইউরোপ ৫০ বছরে যে অগ্রগতি করেছে, শ্রীলঙ্কা এক বছরে তা করেছে। কারণ, তারা ফলাফলকে গ্রহণ করে সেটি বাস্তবায়ন করেছে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হয়, ফ্রুটস অব ডেভেলপমেন্ট, সিডস অব ডেভেলপমেন্ট। আমাদেরকে উন্নয়নের বীজ বপন করতে হবে। সেটি করার জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা