গণতন্ত্রের পশ্চাৎযাত্রা
- জসিম উদ্দিন
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৮
১৫ সেপ্টেম্বর ছিল ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’। ২০০৭ সালে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ গণতন্ত্রের বিকাশের লক্ষ্যে দিবসটির প্রচলন করে। লক্ষণীয় বিষয় হলো- এই অল্প সময়ে বিশ্বের দেশে দেশে গণতন্ত্র চর্চার উন্নতি নয়, অবনতি ঘটেছে। আসলে গণতন্ত্রের সৌন্দর্যহানি আরো অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, শাসনপদ্ধতিটি একটি গোষ্ঠীর অবৈধ ক্ষমতা চর্চার হাতিয়ার হয়ে উঠছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
গণতন্ত্র একটি সার্বজনীন মূল্যবোধ। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের মধ্যে এর সার্থকতা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এর মাধ্যমে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিকে নির্ধারণ করা হয়। নাগরিকের জীবনের সর্বক্ষেত্রে অব্যাহত চর্চার মাধ্যমে তা নির্ধারিত হওয়ার কথা। জাতিসঙ্ঘ যে দিবসটি উদযাপন করতে চায়, সেটি এমন গণতন্ত্রের কথাই বলেছে। হতাশার কথা হলো, সময় যত গড়াচ্ছে গণতন্ত্রের পশ্চাৎযাত্রা সবার কাছে উৎকটভাবে ধরা পড়ছে।
‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হয়েছে। প্রত্যেকের মতামত প্রায় কাছাকাছি। তারা সবাই বলছেন, গণতন্ত্র ম্রিয়মাণ হতে চলেছে; ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে এর জৌলুশ। মুক্ত স্বাধীন সমাজের বদলে গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে তৈরি হচ্ছে দম বন্ধ করা পরিবেশ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমাজের বৃহত্তর অংশ তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা হারাচ্ছে। অপরদিকে, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ভোগ করছে চরম স্বাধীনতা। এ অল্প কিছু মানুষ তাদের ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ চরিতার্থ করতে গিয়ে বেশির ভাগ মানুষের মতামতকে পদদলিত করছে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে।
নিঃসন্দেহে গণতন্ত্র একটি উন্নত শাসনব্যবস্থা। সামাজচিন্তকদের অভিমত এমনই। বিগত কয়েক শতকের চিন্তাবিদদের মধ্যে গণতন্ত্রের বিকাশ ও এর চর্চার ব্যাপারে অনেক যুক্তি দেয়া হয়েছে। তাদের মতে, একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ থাকে এই শাসনব্যবস্থায়। তবে একুশ শতকের শুরুতে এসে দেখা যাচ্ছে, গণতন্ত্র নিজেই এক প্যারাডক্স রচনা করেছে। এর সব কিছু ভালো, এটি এতটা ভালো যে, অন্যের ইচ্ছার মূল্য দিতে গিয়ে আত্মাহুতি দিতে বসেছে। যতই সময় যাচ্ছে, আত্মাহুতির ঘটনা বাড়ছে।
গণতন্ত্র চর্চার বৈশ্বিক মান নিয়ে কাজ করে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন নিবন্ধকারেরা। প্রধানত ওয়াশিংটন-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউজ এবং লন্ডনের সাময়িকী ইকোনমিস্টের গবেষণা শাখা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের রেফারেন্স ব্যবহার করছেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বে গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এর সাথে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গণতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, শত বছরের ব্যবধানে গণতন্ত্র এখন ক্ষয়িষ্ণু।
ফ্রিডম হাউজ পৃথিবীর মানুষের স্বাধীনতার সূচক প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে সেসব দেশও নিশ্চয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেখানে গণতন্ত্র নেই। তাদের প্রতিবেদন অনুযাযী, বিশ্বের ৫৬ শতাংশ মানুষ আংশিক স্বাধীনতা ভোগ করছে। ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স বলছে, পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অধীনে এখন বসবাস করে। ওই প্রতিবেদনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকৃতির দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে স্বীকৃত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ‘জগাখিচুড়ি’ শাসনের উদ্ভব ঘটছে বলে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। একে ‘হাইব্রিড রেজিম’ নামে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। এ দেশগুলো ওপরের আবরণে ‘গণতান্ত্রিক’। এগুলোকে গণতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী কোনোটি বলা যাচ্ছে না পরিষ্কার করে। এমন শাসনব্যবস্থা এখন বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান। শাসক পরিবারের জন্য এটি আকর্ষণীয় বলা যায়। ২০০৬ সালে এমন দেশের সংখ্যা ছিল ৩০। ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯টিতে। এখন বিশ্বের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ এমন শাসনের অধীনে। অন্য দিকে, পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা এক দশকে ৩০ থেকে কমে ২০ হয়েছে। একেবারে প্রথম সারির গণতান্ত্রিক দেশও এর মধ্যে রয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন ও ভারত গণতন্ত্রের যে অদর্শ স্থাপন করেছে; সেখানেও বড় ধরনের বিচ্যুতি শুরু হয়েছে।
গত শতকের শেষ দশকে যেসব দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে, সেগুলোর প্রায় প্রত্যেক দেশে শাসনব্যবস্থায় ক্ষয় দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও প্রথম অবাধ স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনটি হয়েছিল ১৯৯০ সালে। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার সে বছর এ দেশে দেখতে পাই আমরা। এরপর বেশ কয়েকটি নির্বাচন ‘স্বচ্ছ স্বাধীন’ নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে এ দেশে। ২০০৬ সালে এসে এর ব্যাপক অবনতি ঘটে। এরপর কয়েকটি নির্বাচন এবং প্রতিটি নির্বাচনের পর সরকার গঠিত হয়েছে। গণতন্ত্র যদি ক্রমবিকাশ হওয়ার ব্যাপার হয়; বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর বিপরীত দেখা যাচ্ছে।
আগের চেয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কমে গেছে। সমাজের বৃহত্তর অংশের নির্ভয়ে মতামত প্রকাশের পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। ১৯৯০ সালের আগের শাসকেরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ছিলেন না। অথচ সেসব আমলে মানুষ যতটা ব্যক্তি হিসেবে ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতেন নাগরিকেরা, এখন তার চেয়ে অবস্থার অবনতি হয়েছে। স্বাধীনতা যথেষ্ট ভোগ না করার পরও বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক শাসন’ চলছে।
শাসনব্যবস্থার মান নিয়ে মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মত হচ্ছে, বিশ্বে দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের আধিক্য বাড়ছে। অর্থাৎ ‘গণতান্ত্রিক’ বলে পরিচিত দেশগুলো হয়ে উঠছে কর্তৃত্ববাদী। যেসব দেশের শাসকেরা আগে থেকে কর্তৃত্ববাদী ছিলেন, সেগুলোর কর্তৃত্ববাদ আরো কঠোর হয়েছে। উদার গণতান্ত্রিক দেশে অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারীকরণ প্রক্রিয়া আরো জেঁকে বসছে। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের ‘ভোট’কে একটি ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ‘চোরাগোপ্তা রাস্তা’ নির্মাণ করে দিচ্ছে স্বৈরাচারীদের। তারা জনপ্রিয়তা অর্জন করে ‘নির্বাচিত’ হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন শাসকদের দৃষ্টান্ত। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও উদার গণতান্ত্রিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান।
জনতুষ্টিবাদী স্লোগান দিয়ে তারা ভোটারের মন জয় করেছেন। সাধারণ ধর্ম-জাত-পাত নিয়ে চটুল কথা বলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যাকে কোনোভাবে গণতান্ত্রিক মনোভাব হিসেবে গণ্য হতে পারে না। কিন্তু গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা যে নিজে শত্রুদের মোকাবেলা করতে পারে না। ফলে ট্রাম্প, জনসন, মোদিসহ অনেক বর্ণবাদীর আবির্ভাব ঘটছে। ভবিষ্যতে ঠিক এ পথেই আরো অনেকের আগমন ঘটবে বলে পুরো বিশ্বে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমান সময়ের স্বৈরাচারীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- তারা বিশেষ ধর্ম বা জাতির আভিজাত্য প্রাধান্য দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করেন। তাদের প্রচারণায় মানুষ এতটাই মুগ্ধ হয়ে যায় যে, তাদের খুন রাঙানো হাতের কথাও মানুষ বেমালুম ভুলে যাচ্ছে। ট্রাম্প একজন স্পষ্ট বর্ণবাদী। তার নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও নি¤œরুচি পর্যন্ত সব কিছুর আড়ালে চলে গেল নির্বাচনের সময়। ব্রিটেনের বরিস জনসনের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ। অন্য দিকে ভারতে ২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ব্যাপারটি কোনো গুরুত্ব পায়নি নির্বাচনে।
ওই দাঙ্গায় হাজার হাজার সংখ্যালঘু মুসলিম প্রাণ হারায়। অনেকে বসতবাড়ি থেকে উৎখাত হয়। এ দাঙ্গার জন্য গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়ে গেছে সরাসরি। এতসব অপরাধের অভিযোগ থাকার পর তারা নির্বাচিত হচ্ছেন। নির্বাচিত হয়ে তারা নিজেদের শুধরে নিয়ে মানুষের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন, এমন লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। বরং তারা হয়ে উঠছেন মাত্রাতিরিক্ত বর্ণবাদী। যেমন, হিন্দু নন, এমন জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে ভারতে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত সে দিকে জোরকদমে হাঁটছে। নিজেদের জাতপাতের পক্ষে সরাসরি সাফাই গাইছেন তারা। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এটি স¤পূর্ণ পরিপন্থী।
গণতন্ত্রের উদারতাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে এই ব্যক্তিরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। স্বৈরাচারীরা প্রথমে উদারতার প্রতীক সাংবিধানিক প্রাতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি দুর্বল করে দেন। করেন ক্ষমতার অপব্যবহার। পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশের দিকে ঝুঁকে পড়েন অতিমাত্রায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দুর্বল করে জনগণের স্বার্থকে খর্ব করেন। এতে অনেক দেশে সংখ্যালঘুরা উপায়হীন এবং অসহায় হয়ে পড়েন। খর্ব হওয়া অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকে না তাদের।
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করতে ট্রাম্প পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে যান। এ জন্য তার নির্বাহী ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটান তিনি। মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের জন্য রাখা জরুরি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এ জন্য। এ ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ জাতীয় জীবনের জরুরি প্রয়োজনেই শুধু প্রয়োগ করা কথা। মেক্সিকো থেকে আসা অভিবাসীদের ঠেকাতে যে অনুদার অপচেষ্টা, তা মার্কিন গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ দেয়াল নির্মাণে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন। ব্রিটেনের জনসন তো নিজের মতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে একেবারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন। ভারতের মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস এবং জাতীয় সংস্থাগুলো দলীয় মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করছেন।
অক্সফোর্ডের গ্লোবাল ইকোনমিক গভর্নেন্সের অধ্যাপক নাগাইর উডস মন্তব্য করেন, ‘গণতন্ত্র এখন ব্যক্তির ক্ষমতায়ন করছে। তৈরি হচ্ছে ব্যক্তির আধিপত্য। এতে নেতার প্রতি আনুগত্য-জবাবদিহি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা কমছে। গণতন্ত্রে সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। কার্যত গণতন্ত্রের উদারতার সুযোগ নিয়ে তারা নিজে সব ক্ষমতার উৎস বনে যাচ্ছেন।’ নেতারা নাখোশ হলে চাকরি থাকছে না, পদবঞ্চনা ঘটছে। ট্রাম্পের শাসনের পুরো সময় এমন নীতি দেখা যাচ্ছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে নিয়োগ ও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের গণছাঁটাইয়ের নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। যোগ্যতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব মোটেও গুরুত্ব পায়নি। দেশ, জনগণ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল- এমন লোক বাছাইয়ের কোনো চেষ্টা দেখা যায়নি। পছন্দের লোক যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। একই ধরনের প্রক্রিয়া ভারতেও প্রকট। পছন্দের ব্যক্তিদের ক্ষমতায় অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়েছে। একেবারে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রেই মোদির ব্যক্তিগত পছন্দ সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে।
গণতান্ত্রিক শাসন বিকৃতির ফলে প্রথমে আক্রমণের শিকার হয় গণমাধ্যম। রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আসার পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন গণমাধ্যমে বিরোধ বেধে যায়। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে তিনি অব্যাহতভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যাচ্ছেন। দেশটিতে কঠিন আইনি ছাতার নিচে থাকা সংবাদমাধ্যম ও এর কর্মীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প খুব বেশি কিছু করতে পারছেন না বটে; তবে ভবিষ্যতেও যে এমন আইনি সুরক্ষা দেশটিতে তারা পাবেন, এর নিশ্চয়তা নেই। ট্রাম্প বা বর্ণবাদী অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট ফের ক্ষমতার বলে সুযোগ পেলে আইন পাস করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ সীমিত করে দিতে পারেন, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বেশির ভাগ দেশেই গণমাধ্যমের রক্ষাকবচ নেই। ফলে তারা ছদ্মবেশী গণতান্ত্রিক শাসকদের কোপানলে পড়ছেন হরহামেশা। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে নিজেরা সেন্সরশিপ আরোপ করছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে সুবিধা দিয়ে কব্জা করা হচ্ছে। ভারতে সংবাদমাধ্যম ও শাসকদের মধ্যে সমঝোতার অভিযোগ তীব্রভাবে উঠেছে। দেশটির গণমাধ্যমের একটা অংশ সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে অশুভ আঁতাত করেছে বা হাত ধরাধরি করে চলছে। এমন অবস্থায় সাধারণ নাগরিকদের বঞ্চনা বেড়ে যায়। তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। তখন তারা অধিকারহারা হয়ে পড়েন। এভাবে জনগণ কোণঠাসা হয়ে গেলে সেখান থেকে তাদের উত্তরণের উপায় কী? শাসকদের পরিবর্তন করে কি ভালো গণতন্ত্র বাছাই করা যায়? গণতন্ত্র বিশ্বের মানুষের মুক্তির সুপ্ত আকাক্সক্ষা জাগ্রত করেছিল। তা যে টেকসই মুক্তি দিতে পারছে না; এটি এখন উৎকটভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার এই দুর্বলতা কিভাবে ঘুচবে? এ দিকে বিশ্ববাসীর জন্য আর কোনো উন্নত বিকল্পও আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
jjshim146@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা