প্রশাসনের বিচ্যুতি ও জনদুর্ভোগ
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:২৩
খবরের কাগজ ও বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রতিদিন যে বেশুমার নেতিবাচক তথ্য-উপাত্ত মানুষের কাছে আসছে, তা সবার মন-মস্তিষ্ককে ভারাক্রান্ত করে তুলছে। এই প্রেক্ষাপটে এমন ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে ওঠা স্বাভাবিক যে, সমাজ থেকে নীতি-নৈতিকতার অন্তর্ধান ঘটছে। আর এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা এটাই যে, দেশ দ্রুত এক ক্রান্তিকালের দিকে ছুটে চলেছে। অথচ এ নিয়ে রাজনৈতিক সামাজিক নেতারা ও সমাজপতিরা এতটুকু উৎকণ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে নীরব নির্লিপ্ত হয়ে আছেন। সুশীলসমাজ ও বুদ্ধজীবীদেরও এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো নমুনা-নজির লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অধোগতিতে যদি সবাই নিরোধ-নীরব হয়ে থাকে, তবে সমাজে অপশক্তির পদভারে সুনীতি নিষ্পেষিত হতে থাকবে। যেসব নেতিবাচক তথ্য গণমাধ্যমে আসছে তার যদি শ্রেণিবিন্যাস করা হয়, তবে এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উঠে আসবে দেশের নারীসমাজের নিরাপত্তাহীনতা। উল্লেখ্য, কোনো রাষ্ট্রের মোটামুটি প্রায় অর্ধেক নাগরিকই হচ্ছে নারী।
দেশে তারা মান, সম্ভ্রম, ইজ্জত, আব্রু নিয়ে এখন চরম বিপদগ্রস্ত। এরপর উল্লেখ করতে হবে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত জনগণের অর্থের খেয়ানত ঘটছে। প্রশাসনের কর্মে নিযুক্ত দায়িত্বশীলদের কর্তব্য পালনে ব্যর্থতা, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের অসামর্থ্য, আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ করা নাগরিকদের অধিকার। কিন্তু সে অধিকার আজ কেবলই কিতাবে রয়েছে, বাস্তবে নেই। অথচ একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার যে অবকাঠামো থাকা দরকার তার সব বিদ্যমান রয়েছে। আর এসব বহাল রাখতে দেশের দরিদ্র মানুষের দেয়া করের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু তা থেকে সুফল আসছে কোথায়! আর এসব খেয়ানতের জবাব দেবে কে? কেননা জবাবদিহি করার যে প্রতিষ্ঠান, তা এখন অকার্যকর ও অথর্ব। মোদ্দাকথা হচ্ছে, সব ব্যবস্থাপনার পেছনে যেসব ব্যক্তি রয়েছে তাদের কর্তব্য পালনে অসমর্থতাই সব সমস্যার মূলে।
এরা শুধরে গেলেই সব ঠিক হওয়ার কথা। এসব সমস্যা দূর করার ব্যবস্থা রাষ্ট্রাচারে থাকলেও তার সঠিক অনুশীলন নেই। ওপরে খানিকটা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের জবাবদিহি নেয়ার যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা কার্যকর নয়। এভাবে যদি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে দেশে সুশাসন বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সুশাসন ও আইনের শাসন না থাকলে রাষ্ট্র স্বয়ং অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। অথচ এই রাষ্ট্রের স্থপতিরা অত্যন্ত কষ্টক্লেশ করে বহু মূল্যের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আজ তাদের উত্তরসূরিদের দায়িত্ব সেই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। আজ সেই উত্তরসূরিদের তাদের নিজেদের কাছে জিজ্ঞেস করা উচিত, তারা কি সে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন? অবশ্যই এর জবাবে তারা ইতিবাচক কোনো কিছু বলতে পারবেন না। আর সেজন্য কি তারা আত্মশ্লাঘায় ভুগছেন! অনুশোচনার দাহ কি তাদের দগ্ধ করছে?
এই নিবন্ধের প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে দেশে নারীসমাজের দুর্ভোগ-দুর্গতির কথা। বিভিন্ন গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের নারীসমাজ নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশু অহরহ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন নির্যাতনের খবর প্রকাশ ও প্রচার হচ্ছে। কিছুকাল আগে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে প্রকাশ, বিভিন্ন জেলা থেকে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে এ সময়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৫৯ শতাংশের ওপর ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে এমন খবর পাওয়া গেছে যে, শিশু-কিশোররা নিজেদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাতেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এমন আশঙ্কাও রয়েছে, নারী নির্যাতনের সব তথ্য সব সময় আসে না। কারণ, লোকলজ্জা ও সম্ভ্রমহানির ভয়ে অভিভাবকেরা তা প্রকাশ করেন না। এসব দুর্ভাগ্যের কাহিনীর জন্য সমাজ থেকে যে সমবেদনা-প্রতিকার পাওয়ার কথা, সংশ্লিষ্টরা তা না পেয়ে বরং চটকদার কল্পকাহিনী ছড়িয়ে দুঃখ-বেদনাকে শতগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।
আরো পরিতাপের বিষয় হলো, ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তান ও স্বজন। তাই নিরীহ নির্যাতিতরা সমাজ থেকে কোনো প্রতিকার পান না। এমনকি এসব নির্যাতনের বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কাছে নালিশ জানালে তার কোনো প্রতিকার পাওয়া তো দূরের কথা, বরং পাল্টা হয়রানির শিকার হতে হয়। অথচ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হলে দুর্বৃত্তরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেত। তাতে সমাজে এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হতো না। সবচেয়ে দুঃখ লাগে এ জন্য যে, জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এসব দুর্ঘটনা আদ্যোপান্ত সমাজের কাছে তুলে ধরে, কিন্তু সমাজপতি ও ক্ষমতার অধিকারীরা এসব ক্ষেত্রে যে কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখা উচিত ছিল সেটা রাখছেন না। এর পেছনের কারণ যদি অনুসন্ধান করা যায়, তবে দেখা যাবে- এর তলদেশে রয়েছে রাজনীতি। এটা শুধু নিছক কোনো অনুমান নয়। সম্প্রতি এমন কিছু বিষয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো এর গভীরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে যে, শক্তি-ক্ষমতার প্রভাবে সব কিছু ধামাচাপা দেয়া হয়। এভাবে যদি শাক দিয়ে মাছ ঢাকা হয়, তবে তার পরিণতি অবশ্যই শুভ হতে পারে না। সমাজের এই অনিয়মগুলো যদি সারিয়ে না তুলে কেবলই মাটিচাপা দেয়া হয়, তবে এক সময় এগুলো এমনভাবে বিস্ফোরিত হবে, সেই বিস্ফোরণ থেকে কেউই নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগে হুঁশিয়ার হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে বাণী-বচন শুনতে পাওয়া যায় আর তাকে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে সঠিক ধরে নেয়া হয়, তবে বর্তমানে যে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে সেই কথিত উন্নয়নের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নিতে হবে। এই দুর্নীতি এখন অক্টোপাসের মতো শত হাত দিয়ে সব কিছু আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে গ্রাস করে ফেলছে। অনিয়ম-দুর্নীতি কম-বেশি সব সমাজেই থাকে। কিন্তু তার প্রতিকার-প্রতিবিধানের জাল যতটা বিস্তৃত থাকে, তাতে সে জালে তা আটকা পড়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা হওয়ার নয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ সমাচারের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দামের বইপত্র ৮৫ হাজার পাঁচ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুকুর, দীঘি, খালবিলের দেশ।
অবাক হওয়ার বিষয় এই যে, সে দেশের লোকদের পুকুর কাটা শেখানোর জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিদেশে যাওয়ার খবর বেরিয়েছে। অতি সম্প্রতি পর্দার দাম সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, ওয়াসার তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পাইপ কেলেঙ্কারি এবং সরকারিভাবে কেনা চালে জীবন্ত-মৃত কীট পাওয়ার খবরে প্রশ্ন উঠেছে। এমন সব দুর্নীতি ধরার কাজ যে সংস্থার, খোদ সেই সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই দুর্নীতির দায়ে আটক হয়েছেন। যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো হবে, তাতেই যদি ভূত বাসা বাঁধে, তবে এর পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
প্রতিদিন প্রায় প্রতিটি খবরের কাগজে হাজারো দুর্নীতির কাহিনী প্রকাশ পায়। এটা এ কারণে নয় যে, পত্রিকাগুলো এমন খবর প্রকাশে উৎসাহ বোধ করে বরং এটা হচ্ছে এ জন্য যে, সমাজের সঠিক চিত্র তুলে ধরার লক্ষ্যে; যাতে দেশের নীতিনির্ধারকেরা সজাগ হন এবং প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা নেন। আগেই বলা হয়েছে, উন্নয়নের বাণী-বচনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফিরিস্তি হাজির করা হয় এবং এসবের জন্য অর্থের সংস্থান করা হচ্ছে। আর দুর্নীতি অর্থ হচ্ছে, সেই বরাদ্দের ঝুড়িকে তলাবিহীন করে দেয়া। উপরে বরাদ্দ করা অর্থ অপচয়ের যে দৃষ্টান্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে, বাকি সব প্রকল্পের ভাগ্যেও তাই ঘটতে পারে। শেষে বেসরকারি খাতের অনিয়মের একটি নমুনা পেশ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত জনৈক অধ্যাপক সম্প্রতি অর্থনীতি সমিতির এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন তথ্য দিয়েছেন যে, বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন গার্মেন্ট মালিকরা। অথচ এই বিপুল অর্থ যদি দেশে আসত, তবে অর্থনীতির চেহারাই পাল্টে যেত।
কোনো সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করার অধিকারটি মানুষের সর্বোচ্চ সোপানের একটি বিষয়। শান্তি-শৃঙ্খলা ও জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপুল আয়োজন থেকে থাকে বটে; কিন্তু তা তখনই সার্থক হবে যখন তা নাগরিকদের সর্বাধিক সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। এই আয়োজনের সাথে যারা সম্পৃক্ত, তাদের লক্ষ্য হবেÑ দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। এখন দেখা যেতে পারে এ দেশের নাগরিকেরা কী ধরনের সেবা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়ে থাকে। প্রথমেই বলতে হয়, যারা নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্বে তাদের নিয়ে। দুর্ভাগ্য যে, সব সংস্থা-সংগঠনের দায়িত্ব নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা এখন রাজনীতিতে আক্রান্ত। সেজন্য তারা নিরপেক্ষ নন। অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে তাদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ হয়ে থাকে। তাই এখন এই সংস্থাগুলো বিশেষ মতাদর্শের অনুরক্তদের সুরক্ষা দিতেই ব্যস্ত। আইনের নিরিখে কর্ম নির্ধারণ হয় না। নিরাপদে জীবন যাপন করা নাগরিকের মৌলিক অধিকার বটে, তবে আরো কিছুর প্রয়োজন যোগ করতে হয় এর সাথে।
সমাজে মানুষে মানুষে আয়ের ভারসাম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে মানুষের মধ্যে রয়েছে বিপুল আয়বৈষম্য। ধনিক শ্রেণীর মানুষ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার আনুকূল্য পেয়ে সহায়সম্পদে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। পক্ষান্তরে নি¤œ আয়ের মানুষের আয়রোজগার দিন দিন কমেছে। এভাবে ন্যায়নীতির গুরুত্ব সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশে যেসব আইনকানুন বিদ্যমান, তার আলোকে যদি দেশ পরিচালিত হতো, তবে নানা বিষয় নিয়ে যে আক্ষেপ বর্তমান, আর হয়তো থাকত না। বাংলাদেশের সংবিধান সমাজ থেকে সব ধরনের বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিলেও তার প্রতি সম্মান দেখানো হয় না।
যেসব সমস্যা-সঙ্কটের কথা উপরে লেখা হয়েছে, তার অন্যতম প্রধান কারণ নীতিনৈতিকতার ক্ষেত্রে আমাদের দেউলিয়াত্ব। আমাদের শিক্ষা কর্মসূচিতে এমন কোনো পাঠ নেই, যা অনুসরণ করে আমাদের শিশু-কিশোররা একটি শক্তিশালী নীতিনৈতিকতার ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে, ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে গিয়ে সমাজের দায়িত্ব নিতে পারে। অথচ এমন নৈতিকতার অভাবহেতু দেশে আজ অবক্ষয় ও অনিয়মের শেকড়-বাকড় সম্প্রসারিত হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। মূল্যবোধের এই সঙ্কট জাতিসত্তাকে হীনবল ও দিকভ্রান্ত করে তুলেছে। হালভাঙা তরী যেমন তীরে পৌঁছতে পারে না, তেমনি আজ আমাদের অবস্থা। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন কোনো ক্ষেত্রই এই সর্বনাশা প্রবণতা থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু এসব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া, প্রতিরোধ বা প্রতিবিধান করে সমাজ রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা যাদের দায়িত্ব; তারা নিজেরাই পঙ্কিলতার নোংরা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
আর তাদের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ, তারাই এই অধোগতির জন্য কার্যত দায়ী এবং তাদের ইন্ধনেই একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত এসবের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ কারণে বিশ্বে আমাদের এমন ‘তকমা’ এঁটেছে যে, এই দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ দেশগুলোর একটি। ফলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছি না, বরং দিন যত যাচ্ছে ততই আমাদের অবনমন ঘটছে বলতে হবে। যারা সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা শুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ নন। তাই তাদের পক্ষে কী করে শুদ্ধাচারের আন্দোলন গড়ে মানুষকে শুচি করে তুলবে। আরো কথা রয়েছে, শুদ্ধাচারী হতে হলে তো সবার আগে নিজেকেই সংশোধিত হতে হবে। কেননা, আপনি আচরি ধর্ম পরকে শিখাও।
অথচ এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজপতিদের দুর্বলতা সীমাহীন। প্রকৃতপক্ষে আমরা আসলে আয়নায় নিজেদের অবয়ব দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। আত্মসমালোচনা করা তো দূরের কথা, অন্য কারো সমালোচনা আমাদের গাত্রদাহ সৃষ্টি করে। নিজেদের কর্মের বৈধতা না থাকলেও অন্যের কাজের শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করতে আমরা করিৎকর্মা। তাই সমাজের অশুচিই এখন যেন আমাদের নীতি-আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গন্ধ দূর করতে সুগন্ধির পরিবর্তে কদর্যতাকে অবলম্বন করা হচ্ছে। সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন বিচ্যুত দেশ-জাতির ভাগ্যবিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিচ্যুতির জন্য যারা দায়ী, তাদের এ নিয়ে জবাবদিহি করার পথ-পদ্ধতি এখন থেকেও নেই। যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি এসব দায়িত্ব পালনে কর্মে নিযুক্ত, তারা সব কিছু ভুলে গিয়ে কেবলই নিজেদের নিয়ে নিমগ্ন হয়ে আছে। সেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহীর শত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও কেবল চলে প্রশংসার জারিগান।
ndigantababor@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা