ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি ও সার্বভৌমত্ব
- সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:১২
রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই এ দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই বলা চলে। বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা সে ধারণাকে আরো জোরালো ভিত্তি দিয়েছে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য সে দেশের সরকার বাংলাদেশের কাছে ৫২ একর জমি চেয়েছে। বিষয়টির সাথে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত হলেও সরকার ভারত সরকারের এমন অযৌক্তিক দাবি সরাসরি নাকচ করেনি; বরং একটা দায়সারা গোছের ব্যাখ্যা দিয়ে ইস্যুটিকে এখন পর্যন্ত অমীমাংসিতই রেখেছে। এতে জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
কাশ্মির ও আসাম ইস্যুতে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করলেও আমরা এ ক্ষেত্রে বৃত্তাবদ্ধই থেকে গেছি। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব কোনো অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি সরকার। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের কোনো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি কার্যত নেই; বরং বৃহৎ প্রতিবেশীকে কেন্দ্র করে আমাদের বিদেশনীতি আবর্তিত হচ্ছে। আসলে কোনো ক্ষেত্রেই আমরা সেই বৃত্তের বাইরে যেতে পারিনি। ক্ষমতাকেন্দ্রিক নেতিবাচক রাজনীতির কারণে আমরা যে বৃত্তে আটকা পড়েছি তা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর নয়; তেমনিভাবে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের সাথেও সঙ্গতিহীন।
আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যে ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা চলছে, তাতে ক্রমেই আমরা জাতীয় আত্মপরিচয় বিস্মৃত হতে যাচ্ছি। ক্ষমতার বিষের বড়ির ওপর সুমিষ্ট প্রলেপ আমাদের একেবারে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আর এই মোহাচ্ছন্নতা আমাদের কোন গন্তব্যে নিয়ে যাবে, কে জানে। আমাদের জন্য যে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না, তা বেশ জোর দিয়েই বলা যায়। মূলত একটি স্বাধীন দেশের সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ অভ্যন্তরীণভাবেই হওয়ার কথা। বাইরের কারো হস্তক্ষেপ ছাড়া অভ্যন্তরীণ সব বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এর বিচ্যুতি ঘটছে বারবার। এটাকে স্বাধীন দেশে আত্মপ্রবঞ্চনাই বলতে হবে।
আমরা ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন হলেও মানসিক দাসত্ব থেকে আজও মুক্ত হতে পারিনি। আর এটি আমাদের প্রধান জাতীয় সমস্যা। ১৭৫৭ সালে পলাশীর বিপর্যয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অস্তমিত হওয়ার জন্য আমরা মীর জাফরসহ কিছু ষড়যন্ত্রকারীকে দায়ী করে থাকি। আড়াই শতাব্দীর অধিককাল আগে সংঘটিত, পলাশীর বিয়োগান্তক ঘটনার দায়ভার মীর জাফরের ওপর চাপিয়ে এখনো তার নামে দুয়োধ্বনি দেই। একবারও ভেবে দেখি না, সেদিন যদি আমরা এক হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম তাহলে মীর জাফরসহ গুটিকয়েক বিশ^াসঘাতকের কিছুই করতে পারত না।
পলাশীর বিপর্যয়ের পর ভাগ্যহত নবাব সিরাজ উদদৌলা রাজধানী রক্ষার জন্য সবার প্রতি সকরুণ আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার আবেদনে কেউ সাড়া দেয়নি বরং নবাবকে যখন আটক করে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে চরম অবমাননাকর অবস্থায় রাজধানী মুর্শিদাবাদে ফেরত আনা হচ্ছিল, তখন রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে জনগণ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। খোদ লর্ড ক্লাইভে আত্মজীবনীর ভাষ্য মতে, সেদিন যদি তারা প্রত্যেকে একটি ঢিলও ছুড়ত তাহলে হয়তো তাদের প্রায় ২০০ বছরের জন্য গোলামি মেনে নিতে হতো না। তাই বাংলার স্বাধীনতা হারানোর জন্য মীর জাফর গং যতটা দায়ী তার চেয়ে কম দায়ী নয় আমাদের পলায়নপর ও দাসপ্রবণ মানসিকতা।
যে গণতন্ত্র ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা আজও আমাদের কাছে অনেকটাই অধরাই রয়ে গেছে। দীর্ঘকালেও আমরা গণতন্ত্রের সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের জাতিসত্তার ভিত্তিও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশক হয়ে এলো, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা এখনো ক্ষমতার নিয়মতান্ত্রিক পালাবদলের কোনো সুষ্ঠু পন্থা বের করতে পারিনি।
এ দেশে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে বিতর্কটা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্তি হলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে যা ঘটেছে, তা লজ্জাকর ও হতাশাব্যঞ্জকই। কারণ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির এই একতরফা নির্বাচন আমাদের জাতীয় জীবনে কলঙ্কতিলক লেপন করেছে। যে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করেছি এবং অনেক কিছু হারানোর মধ্যে আমাদের প্রাপ্তি যা ছিল এ নির্বাচনের মাধ্যমে তা শেষ করা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর থেকে তা পুনর্বহাল করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে, ৫ জানুয়ারির সে নির্বাচনের আগেই আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সরকারের দলন-পীড়নে তা দানাবেঁধে উঠতে পারেনি। ফলে প্রতিপক্ষ ধরেই নিয়েছেন যে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা যাবে না। সার্বিক বিবেচনায় দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি আন্দোলনের চেয়ে নির্বাচন-পূর্ব ‘আন্তর্জাতিক সমীকরণ’ থেকে রাজনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হওয়া যাবে মনে করেছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও তাদের আশাহত হতে হয়েছে। সে সমীকরণে অনেকটা বাধ্য হয়েই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তত মন্দের ভালো হবে। কিন্তু তা হয়নি; বরং একটি ‘মিডনাইট’ নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীনেরা আবারো ক্ষমতায়। সে নির্বাচনে কারো ভোট দেয়ার প্রয়োজন হয়নি বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসী ও মৃত ব্যক্তিদের ভোট দেয়ার মতো ‘অলৌকিক’ ঘটনাও ঘটেছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে।
বিরোধী দলগুলো প্রত্যাশা করেছিল যে, পরিস্থিতি যা-ই হোক, বাংলাদেশে নির্বাচন প্রশ্নে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান নির্বাচনের সময় স্পষ্ট হবে। বিশেষ করে, ভারত ও চীনের অবস্থান এ ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিল সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে ভারতের অবস্থান নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত বিএনপি যতটা আশাবাদী ছিল, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যায়নি। আর অতীতের ধারাবাহিকতায় এমন আশাবাদী হওয়ার যৌক্তিক কারণও ছিল না। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বাইরের শক্তির দিকে এমন চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকা রাষ্ট্রের স্বাধীন সত্তার সাথে সঙ্গতিহীন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন ততই মঙ্গল।
কোনো দেশের রাজনীতিতে যখন ক্ষমতাই মুখ্য হয়ে ওঠে, তখন জাতীয় স্বার্থ নানাভাবেই উপেক্ষিত হয়। আর বিষয়টি যদি বৈদেশিক শক্তির প্রভাবাধীন হয়, তখন সে দেশ পুরোপুরি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে পারে না। ফলে জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে হলেও বিদেশনীতিতে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি করা ‘জরুরি’ হয়ে পড়ে ক্ষমতান্ধদের জন্য। স্মরণ করা দরকার, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরকালে বাংলাদেশের সাথে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। পরে দেশটির অর্থায়নে নৌবাহিনীর জন্য দুটি সাবমেরিন কেনাকে ভারত বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেনি বলে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় একই সময়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফরে আসেন। এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিতে সই করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, দুটি দেশের সাথে সম্পর্কে ভারসাম্য আনতে ভারতের সাথে বাংলাদেশকে ওই চুক্তি করতে হলো। তবে এই ভারসাম্য রক্ষার সাথে আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি তেমন জড়িত ছিল না; বরং এটি ছিল ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা রক্ষা ও দীর্ঘায়িত করার তাগিদ মাত্র।
এরপর বিরোধী দলগুলো মনে করেছিল, চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ভারতের সাথে সরকারের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণেই বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে ভারতের সাথে বিভিন্নপর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানো হয়। কিন্তু এতে ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের গাঁটছড়ার ইতি ঘটেনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ভারত ও চীনের সাথে বেশ ভারসাম্যমূলকভাবে সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে বর্তমান সরকার। এমনকি ভারতীয় সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চীনের সাথে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
বিরোধী দল হিসাব করেছিল, ভারত ও চীনের প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে সরকারের এই ভারসাম্যের নীতি একসময় অকার্যকর হয়ে পড়বে। কারণ ভারত বাংলাদেশকে নিজের বলয়ের মধ্যে রাখতে চায়। কোনো কোনো প্রতিরক্ষাসহ ক্ষেত্রে চীনের সাথে সরকারের ঘনিষ্ঠতা কখনো কখনো ভারতের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে বিভিন্ন মহল থেকে বিরোধী দলগুলোকে অবহিত করা হয়। বিরোধী পক্ষ মনে করেছিল, এ রকম অবস্থায় ভারত ও চীনের সাথে সমান্তরালভাবে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে সুসম্পর্ক রক্ষা করা কঠিন। তারা আরো মনে করেছিলেন, একাদশ সংসদের নির্বাচনের আগে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোনো-না-কোনো সমীকরণ সৃষ্টি হতে পারে; বিশেষ করে সমানভাবে নাও মিলতে পারে ভারত ও চীনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাব। তেমন পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হতে পারে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রেক্ষাপট। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কারণ আমাদের বৈদেশিক মিত্ররা এ দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে ভাবে না বরং নিজেদের স্বার্থ নিয়েই তাদের ভাবনাটা বেশি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা আজো চলমান। ভূ-রাজনৈতিক হিসাব থেকে এ ক্ষেত্রে ভারতকে সমর্থন করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমার ছাড়াও, দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং সর্বশেষ মালদ্বীপে চীনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। ব্যাপক বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও চীনের উপস্থিতির জানান দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট পরিস্থিতিকে ‘ত্রাহি মধুসূদন’ করে তুলেছে। চীন ও ভারত উভয় মিয়ানমারের বন্ধুত্ব লাভের জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ। আর বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা ঢোকার মতো সঙ্কট সৃষ্টিকারী, মিয়ানমারকে পুরো সমর্থন দিচ্ছে চীন। তা রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা আগে কখনোই দৃশ্যমান ও জোরালো ছিল না। অপরদিকে ভারতের ভূমিকা আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ওই নির্বাচন সমর্থন না করলেও শুধু ভারতের সমর্থন নিয়ে সরকার কোনো রকমে ওই নির্বাচন সম্পন্ন করেছে এবং ক্ষমতাসীনেরা সে নির্বাচনকে ভিত্তি ধরেই মেয়াদ পূর্ণ করে নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন। ভারতে কংগ্রেস সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একতরফা সমর্থন করলেও চীন তখন মাথা ঘামায়নি। কারণ চীন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই বেশি মনোযোগী। এ ক্ষেত্রে দিল্লির সাথে বেইজিংয়ের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু বিজেপির ভারত এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা করা হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ সম্পর্কিত নীতির ক্ষেত্রে বিজেপি-কংগ্রেস এক ও অভিন্ন। কারণ ভারত সব সময়ই নিজের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে; নিছক আবেগকে নয়।
বাংলাদেশে চীন ও ভারত উভয় দেশের বিরাট স্বার্থ রয়েছে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, ভারতের স্বার্থ একই সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক। কিন্তু চীনের স্বার্থ দৃশ্যত শুধু অর্থনৈতিক। দেশটি প্রধানত নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থগুলো পর্যবেক্ষণ করে। ভারত চায় আওয়ামী লীগ সরকার বারবারই ক্ষমতায় আসুক, যাতে তাদের সাথে করা চুক্তিগুলোর ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সে আশা পূরণ হয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জনসমর্থনহীন শক্তিকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় আনা বা ক্ষমতায় রাখা তাদের জন্য অকল্যাণও বয়ে আনতে পারে। কারণ বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে রাখা ভারতের জন্য কল্যাণকর নয়। আবার ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টের কথাও তাদের মাথায় রাখতে হয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশকে নিয়ে একরকম প্রতিযোগিতা ভারত ও চীনের মধ্যে আছে, সেটি ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।
বর্তমান বিশ^ পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার বিশ^। তাই কোনো দেশের রাজনীতিতে আঞ্চলিক, বৈশি^ক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে আমাদের দেশের রাজনীতিসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রণভার যেভাবে বাইরে চলে গেছে বা এখনো যাচ্ছে তা যেমন আতঙ্কের, তেমনিভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীন-সার্বভৌম সত্তার সাথেও সঙ্গতিহীন। তাই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা যেন অসার ও হাস্যকর না হয় সেদিকে আমাদের সবাইকেই খেয়াল করতে হবে। অন্যথায় স্বাধীনতার সুফলগুলো জনগণের কাছে অধরাই থেকে যাবে।
smmjoy@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা