রাজনীতির অজ্ঞাত যাত্রা
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৩২
সুদীর্ঘকালের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে বাংলাদেশ নামের এই জনপদের মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয়েছিল স্বাধীনতার স্পৃহা। সেই জাগরণের পটভূমিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে, অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং সর্বোচ্চ উৎসর্গের বিনিময়ে অমূল্য স্বাধীনতার স্বপ্নস্বাদ লাভ করেছিল। দেশের রাজনীতিক, সংস্কৃতিসেবী, শিল্পী-সাহিত্যিকের অংশ নেয়ার মাধ্যমে, সেই রাজনৈতিক আকাক্সক্ষার চেতনায় আপ্লুত মানুষ বিশ্বের বুকে সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়। সে যেন এক মহাকাব্য। তাই এই দেশের মানুষ রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকাকে মুক্তির নিয়ামক বলে বিবেচনা করে। স্বাধীনতার পরও সময়ের অনিবার্যতায় বিভিন্ন গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতাদের রাজপথে নামতে হয়েছে।
কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মানুষের মধ্যে এই অনুভূতি আবারো জাগ্রত হচ্ছে যে, দেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্তিমিত ও গৌণ করে তোলার প্রয়াস চলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই সম্ভবত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীনেরা বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করছেন, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো আর রাজনীতি করতে না পারে। এ জন্য সংবিধানে পরিবর্তন নিয়ে আসছেন এবং সেই পরিবর্তনগুলো করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে সম্পূর্ণরূপে শূন্য করে দেয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।’ দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের এই শীর্ষ নেতার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত এমন বোধ বিবেচনাকে অবশ্যই খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। তার বক্তব্যের গুরুত্বকে সরল ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করলে এটাই বেরিয়ে আসবে যে, বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা দেশের প্রশাসন পরিচালনায় সাফল্য দেখাতে পারছেন না বলে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে এ জন্য যাতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ প্রতিরোধ সমালোচনা না হয়।
তার ব্যবস্থা হিসেবে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের কণ্ঠকে দমিত করে রাখার প্রয়াস নেয়া হতে পারে। এখন ক্ষমতাসীনেরা জনগণকে মুদ্রার একটি পিঠ দেখিয়ে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের প্রতিপক্ষ শক্তি যাতে মুদ্রার অপর পিঠটি দেখিয়ে মানুষকে আসল সত্যটি সম্পর্কে অবহিত করার সুযোগ না পান, সে প্রয়াস চালানো হচ্ছে। প্রচারমাধ্যমের একটি বড় দায়িত্ব হচ্ছে মুদ্রার দুই পিঠকেই দেখানো, যাতে জনগণ সম্পূর্ণ সত্যটি জানতে ও বুঝতে পারে। কিন্তু এখন বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম বর্তমান সরকারের নীতি-আদর্শের অনুসারী বলে মুদ্রার যে পিঠে সরকারের পশ্চাতে আসা বা পিছু হটার চিত্রটি খচিত, সেটা আর তুলে ধরছে না। বরং এসব সংবাদমাধ্যমে সরকারের প্রতিপক্ষের প্রতি নানা শব্দবাণ ছুড়ে দিচ্ছে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য। জনাব মির্জার বক্তব্যের দ্বিতীয় ব্যাখ্যা এমন হতে পারে যে, শাসকদল ক্ষমতায় বসে এখন যে সুখ অনুভব করছে, তাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সব ভিন্নমত এবং ভিন্ন মতাবলম্বী সংগঠনকে নিষ্ক্রিয়-নিস্তব্ধ করে ফেলা। মনে করা হচ্ছে, এভাবে যদি সব কিছু নিজ মুষ্টিতে বদ্ধ করে নেয়া যায়, তবে দেশে তাদের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে এবং তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সব আয়োজন ও কৌশল সফল ও সার্থক হবে।
আগেই বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনেরা প্রশাসন পরিচালনায় যোগ্যতা ও সক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যর্থ। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটার বহু আগে থেকেই এ নিয়ে তাদের নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আর এই মওসুমে যে এডিস মশার বিস্তার ঘটে, এমন সাধারণ তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে থাকার কথা। এরপরও তাদের ‘হুঁশ’ হয়নি। এর স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে সারা দেশে ভয়াবহ আকারে ডেঙ্গু জ্বর দেখা দিয়েছে। এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং অর্ধলক্ষাধিক আক্রান্ত। এই মহামারী প্রতিরোধের ব্যাপারে আজো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রশাসন সক্ষম হয়নি। সরকারের বিভিন্ন মহল এডিস মশা নিধন নিয়ে পরস্পর দোষারোপ করছে এবং এ নিয়ে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও অবিরাম ‘লিপ সার্ভিস’ দেয়া হচ্ছে। যে প্রশাসন মশা নিধনে সক্ষম নয়, তাদের দিয়ে আর কোনো বড় দুর্যোগ মোকাবেলা কি সম্ভব?
এসব বিবেচনা করে দেশের মানুষ হতাশ ও ভীত। অথচ রোগে, শোকে ও বিপদে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাওয়া দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে এটা মনে করার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে যে, খোদ এই প্রশাসনেরই এখন যথোপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন। আরো অনুতাপের বিষয় হলো, সরকারের এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তাদের যাচাই-বাছাই ও পালিশ করবে; তাদের নিজেদের অবস্থাই এখন নড়বড়ে। এখন এই দুর্যোগের মুহূর্তে ত্রাতা তো আর বাইরে থেকে আসবে না। এই প্রশাসনকেই গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে হবে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য।
এবার দেশে আরেক দুর্যোগ ছিল বন্যা। কিন্তু এ বন্যা নিয়ে সরকার ছিল নীরব, দুর্গতদের সাহায্য-সহায়তা দেয়া তো দূরের কথা, দেশের ২৫টির বেশি জেলার লাখ লাখ মানুষ বন্যায় ভেসে চরম দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছে। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনের দায়িত্ব পালনের যে নমুনা দেখা গেছে তা খুবই মর্মান্তিক। এমনকি সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি এ ব্যাপারে। বানভাসি মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো দূরের কথা তাদের হাল অবস্থার খবরও তারা নেননি। বন্যা এ দেশে নতুন কিছু নয়, ফিবছর না হলেও মাঝে মধ্যে বন্যা এসে অগণিত জনপদ ভাসিয়ে দিয়ে যায়। অতীতে সরকারগুলোর ত্রাণতৎপরতা কম-বেশি ছিল।
আর ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সামাল দিয়েছিল তৎকালীন এরশাদ সরকার। শুধু যে সরকারিভাবে এমন নয়, দেশের সব মানুষ, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও সরকারের ত্রাণতৎপরতার পাশাপাশি অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে দুস্থদের পাশে সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার সরকার নিজেও এমন কিছু করেনি এবং সাধারণ মানুষকেও ত্রাণকাজে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এটাকে সরকারের গণবিচ্ছিন্নতা হিসেবেই দেখতে হবে।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাক্সবন্দী করে ফেলছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। দেশে এখন সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। এই শাসনব্যবস্থাকে অধিকতর গণতান্ত্রিক এবং রাজনীতি আশ্রয়ী বলে মনে করা হয়। এ ধারণা কতটুকু, বাস্তবে তা পরখ করে দেখা যেতে পারে। সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা এবং সফলভাবে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য এবং ভারত। এ দুই দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে রাজনীতির সর্বোচ্চ মাত্রার অনুশীলন ঘটে তাদের পার্লামেন্টে এবং লোকসভায়। অথচ বাংলাদেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা কায়েম থাকলেও আমাদের সংসদে বিরোধী দলের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই এ আইনসভায় সরকারের ভুলত্রুটি ধরা এবং তার জবাবদিহি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ফলে নিস্তরঙ্গ এই সংসদের পক্ষে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বস্তুত এমন একটি নিষ্ক্রিয় সংসদ ক্ষমতাসীন দলই চেয়েছিল; যাতে এই ‘রাবার স্ট্যাম্প’ পার্লামেন্ট শুধু তাদের কব্জায় থাকে এবং তাদের সুরেই গীত ও নৃত্য করে। এমন ব্যবস্থা যে দেশের জন্য ভয়ঙ্কর, তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। অথচ এর আগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল এবং বিরোধী দলের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পূর্ণ সুযোগ ছিল তখন, যদিও সেই সংসদ পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার অধীন ছিল না।
এ দিকে, মাঠে ময়দানে রাজনৈতিক তৎপরতা পরিচালনার কোনো সুযোগ বিরোধী দলকে দেয়া হচ্ছে না। এ যেন অনেকটা স্বৈরশাসন আমলে ‘বৈঠকখানায় বসে রাজনীতি করা’র মতো অবস্থা। প্রশাসন যতটুকু সহ্য ও অনুমোদন করে বিরোধী দলের পক্ষে ততটুকু তৎপরতা দেখানো বৈধ ছিল। কিন্তু এ কথা তারা উপলব্ধি করার প্রয়োজন বোধ করেন না যে, বিরোধী দলগুলোর পক্ষে সম্মিলিত যে জনসমর্থন রয়েছে তা ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের চেয়ে বেশি বৈ কম নয়। প্রশাসনের বর্তমান আচরণ প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের প্রতি কঠিন চপেটাঘাত। গণতন্ত্রের প্রতি সরকারের আচরণের নমুনা গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেশবাসী দেখেছে।
অথচ মুক্ত রাজনীতির অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে, মানুষ স্বাধীনভাবে তার মত ও পছন্দকে বিনা বাধায় প্রকাশ করতে পারে এবং নিজ বিবেচনায় সৎ, যোগ্য ও নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাছাই করার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে কোথাও মানুষের পক্ষে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ লাভ করা তো দূরের কথা, তাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ারও সুযোগ হয়নি। আর এমন কাণ্ড মূলত গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেয়, যা গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষের দীর্ঘকালের লালিত স্বপ্নকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা যে প্রেক্ষাপটে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, সেসব নজিরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীনদের পূর্বসূরিদের গণতন্ত্রের ব্যাপারে যে নেতিবাচক কাজের উদাহরণ রয়েছে তা থেকে উল্লেখ করলে বিষয়টি সম্ভবত অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যখন এ রাষ্ট্রের শাসনপদ্ধতি বেছে নেয়ার প্রশ্ন আসে, তখন সততার সাথে অধিকতর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সাথে এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য বহুদলীয় ব্যবস্থাও কায়েম হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রশাসন সংসদীয় ব্যবস্থার উদার গণতন্ত্র, জবাবদিহি ও ভিন্ন মতে সহিষ্ণুতা বেশি দিন দেখাতে সমর্থ হয়নি। তা ছাড়া সে সময় দায়িত্বহীন ও অপরিপক্ব আচরণে গণতন্ত্রের শুভ যাত্রা মাঝপথে লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে। দেশে একদলীয় এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত কর্তৃত্ববাদী শাসনপদ্ধতি প্রতিষ্ঠা পায়, যা এ দেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ও চেতনাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল। তাতে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র ক্ষোভ ও গভীর বেদনা।
ক্ষমতাসীনদের কাছে অতীতের আরো একটি গণতন্ত্র পরিপন্থী কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত উদাহরণ পেশ করা হলো। সেটা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এখনো দলীয় সরকারের অধীনে দেশে স্বচ্ছ ও প্রশ্নমুক্ত ভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সব মহলে এই দাবি উঠেছিল যে, নির্বাচনের আগে দলীয় ক্ষমতাসীন সরকার পদত্যাগ করবে এবং সে স্থলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে এবং তাদের অধীনেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করে এমন বিধান সন্নিবেশিত করা হয়। এই ব্যবস্থা কায়েম হওয়ার পর যে কয় দফা সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো অবাধ নিরপেক্ষ ও প্রশ্নমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই উত্তম ব্যবস্থাটি পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারেনি। এই প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার যে প্রক্রিয়া চালানো হয়েছিল তা রদ করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তদানীন্তন সরকার।
প্রশাসনের বিরাজনীতিকরণের উদ্যোগে উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ প্রকাশকারী সংগঠন বিএনপি ও অন্যান্য দলের কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা বিপুল- সে কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এখন যদি এসব সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করার পন্থা বের করা হয়, তবে সরকারের সে সিদ্ধান্ত শুধু অগণতান্ত্রিকই হবে না, দেশের সংবিধানের মূল চেতনার গোড়ায় কুঠারাঘাত করা হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক সংগঠনের স্বতন্ত্র নীতি ও আদর্শ রয়েছে। তার আলোকে রাষ্ট্রের কল্যাণ বা প্রগতির জন্য তারা নিবেদিত। সেই সুনীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য জনগণকে তারা সংগঠিত করে থাকেন। অথচ প্রশাসনের চিন্তা যদি বাস্তবে রূপ দেয়া হয় তবে তা হবে বিশ্বজনীন মানবাধিকারের বরখেলাপ।
এই চিন্তার প্রতিফলন ঘটানো হলে স্বাধীন মত প্রকাশের তথা সংবাদমাধ্যমের ওপর খড়গ নেমে আসবে। তা ছাড়া দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির ধারণা কোনো এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এলে তা কখনোই পরিশুদ্ধ বা নির্ভুল হতে পারে না। তা ছাড়া কোনো একটি সংগঠন থেকে সব সময় দক্ষ ও সুযোগ্য নেতৃত্ব বের হওয়া সম্ভব নয়। তাদের মন-মস্তিষ্ক থেকে সার্বজনীন কল্যাণ চিন্তা বের না-ও হতে পারে। তাতে বরং একদেশদর্শিতার ত্রুটি পরিলক্ষিত হবে, যা সব মানুষের কাছে নন্দিত হতে পারে না। এমন বদ্ধ সমাজ সৃষ্টি হলে গণতন্ত্রের সমাধি ঘটবে এবং সে স্থলে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠা পাবে। অথচ এমন নীতির বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ দীর্ঘকাল আন্দোলন সংগ্রাম করেছে।
ndigantababor@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা