কোরবানির ঈদ ও কষ্টের কান্না
- মীযানুল করীম
- ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৫৩
ঈদের দিন যাদের ডেঙ্গু মহামারীর করাল হস্ত কেড়ে নিয়েছে ইহলোক থেকে, তাদের পরিজনের জন্য এবার আসেনি ঈদ-আনন্দ। তাই সে দিন টিভির খবর- ডেঙ্গুতে স্বজনহারা মানুষকে স্পর্শ করেনি ঈদের আনন্দ। তেমনি আরেক সংবাদ : উপকূলের মৎস্যজীবীদের পরিবারে কোরবানির ঈদের দিনেও জোটেনি এক টুকরো গোশত। ঈদ করতে পারেননি রেলপথে নজিরবিহীন শিডিউল বিপর্যয়ের শিকার হাজার হাজার নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধরাও। ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিলম্বের আন্তঃনগর ট্রেন তাদের জন্য স্বজনের সাথে উৎসব করার মাধ্যম না হয়ে ভুলতে না পারা দুঃখের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আজীবন। কক্সবাজারের সৈকতে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ হারাল যে দু’জন তরুণ কিংবা মুন্সীগঞ্জে লঞ্চ থেকে পিছলে পড়ে সলিল সমাধি ঘটেছে যার, তাদের পরিবারেও ছিল না ঈদের আনন্দ।
এসব কিছু সত্ত্বে¡ও ঈদুল আজহা এসেছিল আবার এবং যথানিয়মে বিদায়ও নিয়েছে। তবে ঈদ উপলক্ষে চরমে ওঠা যাতায়াত দুর্ভোগ, বিশেষ করে ‘ডেঙ্গুর ডাণ্ডাবাজি’ সহজে দেশ থেকে বিদায় নেবে বলে মনে হয় না। এর মধ্যেই অশেষ ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য মানুষের বাড়িমুখো ঈদযাত্রা ও ফিরতি যাত্রা, গবাদিপশু ক্রয়ের মহোৎসব এবং ঈদ উদযাপনের মহানন্দ।
গত ঈদুল ফিতরের আগে শেষ কর্মদিবসে অফিস থেকে ঘরে ফিরতে গিয়ে ঢাকার মানুষকে বৃষ্টি-কাদায় নাকাল হতে হয়েছিল। এখনো সে বর্ষা মওসুম অব্যাহত বিধায় এবার ঈদুল আজহার আগেও সর্বশেষ কর্মদিবস প্রবল বর্ষণ ও আনুষঙ্গিক দুর্ভোগের স্মৃতিবাহী হয়ে আছে। দিনটি ছিল গত বৃহস্পতিবার। ঢাকার মতিঝিলপাড়ার চাকুরেরা সে দিন দেখেছেন, ‘বর্তমান আমলের উন্নয়ন এক বৃষ্টিতেই উন্মোচন’। সর্বপ্লাবী উন্নয়নের সর্বগ্রাসী জোয়ারে হাবুডুবু খেতে খেতে অসংখ্য নারী-পুরুষ কর্মজীবী-পেশাজীবীকে এক ঘণ্টার পথ চার-পাঁচ ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে। মতিঝিলে সদর রাস্তা ডুবে বৃষ্টির পানি উঁচু ফুটপাথ ছাপিয়ে যাচ্ছিল। ভিআইপি সড়কে পর্যন্ত সুদৃশ্য শোরুমের কোটি টাকার পণ্য বাঁচাতে বালুর বস্তার স্তূপ দিয়ে যুদ্ধকালীন নিরাপত্তার মতো ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। বিকেলে কোনো কোনো ভবনের বারান্দায় অসহায়ভাবে অপেক্ষমাণ দেখা গেছে পানিবন্দী নর-নারীকে।
পরদিন শুক্রবার গেলাম রাজধানীর একটি পশুর হাটে। সেখানে যেমন বিরাট গরু ছিল অনেক, তেমনি হাটটিও অনেক দূর বিস্তৃত। অবশ্য বৃষ্টি-কাদায় এটি ছিল একাকার। এক জায়গায় দেখা গেল, এক বিক্রেতা প্রায় কোমর সমান কাদাপানিতে দাঁড়িয়ে আছেন গরু নিয়ে। সকালে যখন হাটে যাই, তখনো বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি। সুদূর শেরপুরসহ নানা জায়গা থেকে গরু আসছিল ট্রাক বোঝাই হয়ে। পশু বোঝাই যন্ত্রযানগুলোর সামনের দিকে ঝুলছিল, সে হাটের নাম লেখা ব্যানার। খুব সম্ভবত, পথে পথে হয়রানি ও হামলা এড়াতে এটা করা হয়েছে। হাটে যাওয়ার পথে, সেখান থেকে কিছু দূরে সর্বপ্রথম একজনকে দেখলাম, কোরবানির গরু কিনে হাট থেকে আসছেন। আরো সামনে গিয়ে দেখা গেল, বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড। হাটে মানুষ ও গবাদিপশুর নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য যানবাহনের যাতায়াত এভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভেবে স্বস্তি বোধ হলো। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অজস্র বাস-মিনিবাস, জিপ, কার আর সিএনজির চাপে কোথায় গেল বাঁশ, আর কোথায়ই বা ব্যারিকেড! অনেক মহিলাও গেছেন গরু কিনতে। অনেকে পশুর হাটে গেছেন গাড়ি নিয়ে।
হাটের গেটে উটের ছবিও ছিল গরু-ছাগলের সাথে। সত্যিই সে হাটে ‘মরুর জাহাজ’ হিসেবে খ্যাত অদ্ভুত প্রাণীটির দেখা মিলেছে। হয়তো অনেকে ভক্তিভরে উষ্ট্র দর্শন করে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করেন। তবে এগুলো আরবের নয়, পাশের দেশ ভারতের রাজস্থান এলাকার। একইভাবে, নরেন্দ্র মোদির গুজরাটের কাঁচা খেজুর বিক্রি হচ্ছে এ দেশে। অনেকের এটাকে আরবের খেজুর মনে করা বিচিত্র নয়। যা হোক, উট প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে একটা মজার খবর উঠেছিল পত্রিকায়। তা হলো, একজন ‘প্রভাবশালী’ পীরের ওরস উপলক্ষে কয়েকটি উটের আগমন ঘটেছিল বাংলাদেশে। এগুলো রাখা হয়েছিল রাজধানীর এক জায়গায়। দেখা গেল, লোকজন ভিড় করে উটের প্রস্রাব সংগ্রহ করছে। তাদের বিশ্বাস, এই তরল বর্জ্যরে যত দুর্গন্ধ থাকুক, এটা এক ধরনের মহৌষধ। তবে মূত্র প্রার্থীদের চাহিদা যত বেশি হোক না কেন, উটের পক্ষে ততটা প্রস্রাব করা সম্ভব নয়। অতএব, ধরে নেয়া যায়, অনেকেই তখন সে প্রস্রাব না পেয়ে হতাশ হয়েছিলেন। স্মর্তব্য, মানবমূত্রের ভেষজ বৈশিষ্ট্যের প্রতি প্রগাঢ় আস্থাবাদী, ভারতের গুজরাটি প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই নিয়মিত নাকি নিজের মূত্র সেবন করতেন। অবশ্য এতে তার কী কী রোগ নিরাময় হয়েছিল, জানা যায়নি।
বলছিলাম গরুর বাজারের কথা। কোরবানির সে হাটে এক জায়গাতে তিনটি বিরাট গরু ছাউনি দিয়ে রাখা হয়েছিল। সামনের দিকে ঝোলানো ব্যানারে লেখা : ‘পাবনার দুপালোয়ান আর এক টাইগার’। অবশ্য, ‘টাইগার’ দেখলেও হাটে কোনো ‘লায়ন’ দেখা যায়নি। কোনো কোনো বিক্রেতা অস্ট্রেলিয়ার দৈত্যাকৃতির ফ্রিসিয়ান প্রজাতির গরু হাজির করেছিলেন। এগুলোর একেকটা বাছুর আমাদের পূর্ণবয়স্ক দেশী গরুর সমান।
এবার শুনুন ঈদের দিনের কাহিনী। ঢাকার যে এলাকায় থাকি, সেখানে মানুষ যেভাবে বাড়ছে, সে তুলনায় মসজিদ, দোকান, স্কুল প্রভৃতি বাড়েনি। ঈদের জামাতে তাই ভিড়টা চোখে পড়ার মতো। লক্ষ করলাম, ঈদের নামাজিদের গায়ে দামি পাঞ্জাবি থাকলেও তাদের মধ্যে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহারের চল অনেকটা উঠে গেছে। আর ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পরপরই অনেকে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেলেন। এরপর খুতবা চলাকালে চলে গেলেন আরো বহু লোক। তাদের তাড়া গরু জবাই করার। মুনাজাত শেষ করে মসজিদের সামনের রাস্তায় এসে দেখি, অনেকেই গরু জবাই করে ফেলেছেন কিংবা করার তোড়জোড় করছেন। এক বাসার সামনে জবাই করা গরুটির প্রাণবায়ু নির্গত হওয়ার পরও তার চার পা মোটা রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। অবোধ প্রাণীটি যেন তার এই করুণ দশা থেকে নিষ্কৃতির জন্য স্রষ্টার সমীপে আকুল আকুতি জানাচ্ছিল। একবার একজন আলেমকে বলেছিলাম কোরবানির পশুকে নানাভাবে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে। তিনি অসহায়ভাবে বললেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা বললেও কেউ সে কথা শোনে না।’
ঈদে যানবাহনে ভিড় বাড়ে অতীত থেকেই। তবে গত কয়েক বছর যেভাবে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় বাড়তে বাড়তে চরমে উঠছে, তা নজিরবিহীন বৈকি। প্রতি ঈদের মতো এবারো হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর কষ্ট সহ্য করে কোনো মতে টিকিট কিনেছেন ট্রেনের। ঈদযাত্রীর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, শুধু কমলাপুর নয়, রাজধানীর কয়েকটি স্টেশনে ভিন্ন ভিন্ন রুটের টিকিট বিক্রি করতে হয়েছে। তবে যারা ঈদের আগের দিনের টিকিট পেয়েছিলেন, তাদের বাড়ি গিয়ে ঈদ উদযাপনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কারণ, সকালের ট্রেনের অনেক বিলম্ব করে রাতে ঢাকায় পৌঁছা।
আসলে শিডিউল বিপত্তির সূচনা ৭ আগস্টেই- যেদিন ঈদের ট্রেনের বিশেষ যাতায়াতেরও সূচনা। এরপর বিপর্যয় বাড়তে বাড়তে ১১ আগস্ট অবস্থা দাঁড়িয়েছিল এমন- টিভিতে সন্ধ্যায় বারবার ট্রেনের ‘সম্ভাব্য’ সময় জানিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছিল- “সকাল ৮টার ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেন রাত ১০টায় ঢাকা থেকে ছাড়বে।
‘রংপুর এক্সপ্রেস’ সকাল ৯টার বদলে রাত ১২টায় ঢাকা ছেড়ে যাবে।” অর্থাৎ একটি ট্রেন ১৪ ঘণ্টা এবং আরেকটি ১৬ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। কিন্তু এগুলো এর আগে ঢাকায় এসে পৌঁছারও নিশ্চয়তা দেয়া যায়নি। বরং রেল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, স্বাভাবিকভাবে নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে না এসে যাত্রীরা যেন ওয়েবসাইটে তথ্য জেনে নেন। এ দিকে রোববার রাত যত বাড়ছিল, ততই ফিকে হচ্ছিল বিলম্বিত ট্রেনের যাত্রীদের বাড়ি গিয়ে ঈদ করার সম্ভাবনা। এর মধ্যে রেল সচিব জানালেন, ‘যাত্রীরা ইচ্ছা করলে টিকিটের টাকা ফেরত নিতে পারেন। অতএব বুঝা গেল, ট্রেনের ‘বিলম্ব’ মানে ট্রেন ‘বাতিল’। যা হোক, অতিষ্ঠ যাত্রীদের কেউ বা ক্ষোভের সাথে বললেন, এ দেশে যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিলেও কর্তারা দায় স্বীকার করে কেউ ক্ষমতা ফেরত দেন না।
আমাদের সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর একটি বিশেষ বক্তব্য ঈদের আগের দিনের পত্রিকায় দেখা গেল। তিনি বলেছেন, ‘এবার ঈদের ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফেরাও হবে বাড়ি যাওয়ার মতো স্বস্তিদায়ক।’ কথাটা কিন্তু তিনি রসিকতা করে বলেননি, সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলেছেন। তবে বাস্তব চিত্র ছিল অনেকটাই ভিন্ন। বিশেষ করে রাজধানী থেকে যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যে অসংখ্য যাত্রী উত্তরের জেলাগুলোতে ঈদ উপলক্ষে গেছেন, তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ১০-২০ কিলোমিটার লম্বা যানজটের অস্বস্তি কতটা পীড়াদায়ক। মন্ত্রী ১০ আগস্ট বলেছেন, ‘ঈদযাত্রায় মহাসড়কে কোনো সমস্যা নেই।’ প্রকৃতপক্ষে তিনি নিজে যতই তৎপর হোন না কেন, দেশের মহাসড়কগুলোর অনেক স্থানে ঈদযাত্রীরা গলাকাটা ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় উপলব্ধি করেছেন, ঈদযাত্রার সমস্যা কত প্রকার ও কী কী। মন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’ বাস্তবে এ দেশে দায়গ্রহণের সুযোগ পাওয়া না গেলেও তা এড়ানোর অনেক পথই খোলা থাকে। এবার ঈদযাত্রায় যেসব ভোগান্তি হলো রেলরুট, ফেরিঘাট এবং মহাসড়কের কোনো কোনো অংশে, এর দায় কি কেউ নেবেন? বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এখানে যত বড় ব্যর্থতা ঘটুক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পদত্যাগ করতে চান না। এমনকি নিজের দু’টি পদ (পা) ত্যাগ করতে রাজি হলেও তারা ক্ষমতার চেয়ারের পায়া আঁকড়ে স্বপদে পড়ে থাকবেন। মাদারীপুরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় একটি বাস ও একটি মাইক্রোবাসের জরিমানার পরিমাণ মাত্র সাত হাজার টাকা। এ যেন ‘গরু মেরে জুতা দান’।
এবার দুধের ১১টি সেরা ব্র্যান্ডের বিশুদ্ধতা নিয়ে যখন সন্দেহ তুঙ্গে ও বিতর্ক চরমে, তখন একটি কার্টুনে দেখা গেল, এক গরু আরেক গরুকে জিজ্ঞেস করছে, ‘দুধে ভেজাল দিয়েছে কে?’ অন্য গরুটির তাৎক্ষণিক উত্তর : ‘না, আমরা তো মিশাইনি।’ সত্যিই, চতুষ্পদ গো-সন্তান নয়, দ্বিপদ মানবসন্তানই এই জঘন্য অপরাধের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী। মানবেতর প্রাণীরা সরল হলে কী হবে, ‘সৃষ্টির সেরা’ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই গরলে ভরা। আল কুরআনে সূরা ত্বিনে স্বয়ং মহান স্রষ্টাই এ দিকে ইঙ্গিত করে বলছেন, ‘আমি মানুষকে সৃজন করেছি সুন্দরতর অবয়বে। অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকে নিচে’ (আয়াত ৪-৫)। এ কারণে আজকাল যাদের ‘গুরু’ হিসেবে আধুনিক মানবসমাজে মান্য করা হয়, এদের একটা বড় অংশই গরুর চেয়ে অধম। বিশালাকৃতির গরুকে যতই ‘দানবতুল্য’ বলা হোক না কেন, আসলে দানব রয়ে গেছে সভ্যতাদর্পী মানবের মাঝেই।
কোরবানির হাটের বিক্রীত গরু আর ক্রেতা মানুষের মাঝে কে শ্রেষ্ঠ, কে উত্তম? এ প্রশ্ন অবান্তর মনে হলেও প্রশ্নকারীকে সব ক্ষেত্রে অর্বাচীন মনে করার কারণ নেই। আল্লাহ বলছেন, ‘আমার কাছে কোরবানির পশুর রক্ত নয়, তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে থাকে।’ বাস্তবে আমরা যে, তাকওয়া থেকে অনেক তফাতে অবস্থান করছি এবং পশুর চেয়েও আমাদের মানসিকতা ও আচরণ অধম, তা প্রমাণিত সত্য। শুধু গরুর স্বাভাবিক পরিচর্যা, যতœআত্তি ও পরিচ্ছন্নতার বেলায় নয়, ঈদুল আজহাতে আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশের কাছে আত্মসমর্পণের দিক দিয়েও মানুষ সব সময় কোরবানির পশুর চেয়ে নিজেরা উত্তম বলে প্রমাণ দিতে পারে না। তা না হলে প্রতি বছর কোরবানির মাধ্যমে আমরা নৈতিক ক্রমোন্নতি অর্জন করতে পারতাম। তখন লোভ, মোহ, ভোগ, বিলাসিতা, প্রদর্শনেচ্ছা, স্বার্থদুষ্টতা, অন্যায় উপার্জন, অবৈধ সঞ্চয় ইত্যাদির কলঙ্ক থেকে মানুষ অনেকটাই মুক্ত থাকতে সক্ষম হতো।
পাদটীকা : ক. ঈদের ছুটিতে দেশের সব পার্টির তৎপরতা বন্ধ থাকলেও একটি বিশেষ পার্টির তৎপরতা বেশি দেখা যায়। তাদের অস্বাভাবিক তৎপরতা ঈদের মতো মোক্ষম উপলক্ষে বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। এই পার্টি কোনো রাজনৈতিক দল নয়; বরং যেকোনো দলের লোকেরাই এর টার্গেট হতে পারেন। এর নাম ‘মলম পার্টি’; অপর নাম ‘অজ্ঞান পার্টি’। ‘ধাক্কা পার্টি’ এদের সমগোত্রীয়। কোরবানির ঈদে পশুর হাটে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। বিশেষত বিক্রেতাদের থাকে পকেট গরম। টাঙ্গাইলে এমন পাঁচজন গরু ব্যবসায়ীর টাকা নিয়ে গেছে মলম পার্টির দুর্বৃত্তরা।
খ. ‘মিরকাদিমের গাভী’। কোরবানির সময় মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম এলাকার সাদা গাভীর ব্যাপক চাহিদা থাকে প্রধানত পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এ জন্য ঢাকার লালবাগ এলাকায় হাট বসে। একবার পত্রিকা খবর দিয়েছিল, ‘মিরকাদিমের গাভীর যত্নআত্তি করা হয় খুব। এগুলোকে গোসল করানো হয় দুধ দিয়ে। এদের রাখা হয় মশারির ভেতর।’ যদি তা করা হয়, তাহলে মশা কামড়াতে পারবে না। এমনিতে, গোশালা বা গরুর বাজার মশার আস্তানা হয়ে যায় সহজেই। তাই বলা যায়, মিরকাদিমের গাভীর মতো সৌভাগ্যবান গরুগুলো মশা থেকে নিরাপদ। এডিস মশাও এদের কামড়াতে পারার কথা নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা