২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দেশ জাতি রাষ্ট্র ‘সব ঝুট হ্যায়’

- ফাইল ছবি

রবীন্দ্রনাথের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পটি হয়তো বা আপনাদের মনে আছে। গল্পে পরিত্যক্ত প্রাচীন প্রাসাদে বুড়ো নৈশরক্ষী চোখের সামনেই গান-বাজনা ও নৃত্য হতে দেখে। কিন্তু কিছুই সে বিশ^াস করতে পারে না। সারা বাড়িময় সে চিৎকার করে বলে ‘সব ঝুট হ্যায়’- সবই মিথ্যা- সবই মায়া।

বিগত কয়েক সপ্তাহে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি, বন্যার ভয়াবহতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সম্পর্কে মন্ত্রী-মিনিস্টারদের মন্তব্য ও অস্বীকৃতি দেখে এই গল্পের কথাটি মনে পড়ল। ‘ক্ষুধিত পাষাণে’ নাইট গার্ড রহস্যঘন মায়াবী দৃশ্যকে ‘ঝুট’ বলেছে। অলীক অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আর এখন বাংলাদেশে জাজ্বল্যমান সত্যকে, প্রকাশিত তথ্যকে এবং ঘটমান বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

মন্ত্রীরা বলছেন, এই ‘গুজব’ বিরোধীদের সৃষ্টি। পারলে যেন বলে ফেলেন, ডেঙ্গু বিএনপি-জামায়াতের কাজ। বন্যাও তাদেরই সৃষ্ট! আর মানবাধিকারের অভিযোগ-‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। এ দিকে, বিরোধীরা বলছে, সরকার মন্ত্রীরা গোয়েবলসীয় কায়দায় ক্রমাগত অসত্য তথ্য প্রচার করে যাচ্ছেন। সব কিছুকে হলদে চোখ দিয়ে দেখছেন। এর আগে ছেলেধরা গুজবের ক্ষেত্রে তথ্যমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের লোকদের ‘সংশ্লিষ্টতা’ খুঁজে পেয়েছিলেন। মন্ত্রী বলেছেন, ‘ছেলেধরার এই গুজব অত্যন্ত জঘন্য ও বিপজ্জনক। গণপিটুনির প্রতিটি ঘটনাই একেকটি হত্যাকাণ্ড। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা এই গণপিটুনির সাথে জড়িত কয়েকজন দুষ্কৃতকারীকে গ্রেফতার করেছেন।

গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের ৭০ শতাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।’ ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর একটা বাগধারা আছে। মন্ত্রীর কথায় সেটিরই প্রতিধ্বনি লক্ষ করা যায়। পরবর্তীকালে যখন ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ আসে, তখন মন্ত্রী মহোদয়গণ একই সুরে, একই তালে ‘সব ঝুট হ্যায়’ বলতে চেয়েছেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে ঢাকা সিটির দুই মেয়র ব্যর্থতার দায় নিতে নারাজ। অপর দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও দায় স্বীকার করছেন না। অথচ ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের কারণে দেশ আজ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে। সারা বিশ্বের মিডিয়া বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে যে চিত্র আঁকছে তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায়, এটি মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশের প্রায় সব ক’টি জেলা এখন ডেঙ্গুকবলিত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ছেলেধরার মতো সবই ‘গুজব’ বলে পার পেতে চাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য ‘অতিকথনদুষ্ট।’ সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম করে দেখানো হয়।

দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পারি, চিকিৎসা নিতে আসা মাত্র ২ শতাংশ রোগী সরকারি নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। ৯৮ শতাংশের কোনো হদিস নেই। আবার আক্রান্তদের মধ্য থেকে ৮৫ শতাংশই চিকিৎসা নেন না। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর অনুমিত সংখ্যা ছিল প্রায় চার লাখ। এই হিসাব তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সহায়তা করেছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। এই যে রোগীর সংখ্যা কম করে দেখানোর প্রবণতা, একে পাকিস্তানি বা ঔপনিবেশিক মানসিকতা বলেছেন, একজন সাবেক সচিব। কর্মজীবনের উদাহরণ দিয়ে তিনি গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কোনো হত্যা বা দুর্যোগের সময় পাকিস্তানি শাসকেরা সংখ্যাকে কম করে দেখাতে বলতেন। তিনি মন্তব্য করেন, বর্তমান মন্ত্রীদের ঘাড়ে পাকিস্তানি ভূত চেপেছে। কম সংখ্যা দেখানোর ব্যাপারে আর একটি অভিযোগ এ রকম যে, বর্তমান সরকার যেহেতু জনগণবিচ্ছিন্ন, সে জন্য তারা সত্যি কথা বলতে ভয় পান। তথ্য গোপন করে কাকের মতো আপাত মুখ লুকিয়ে রক্ষা পেতে চাচ্ছেন।

বিরোধীদলীয় নেতারা অভিযোগ করছেন, শুধু তথ্য অস্বীকার করা নয়, সরকারের লোকেরা ক্রমাগত গোয়েবলসীয় কায়দায় অসত্য বলছেন। উল্লেখ্য, জার্মানির ড. পল জোসেফ গোয়েবলস একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। হিটলারের সময় নাৎসিদের প্রপাগান্ডামন্ত্রী ও প্রচারণা বিশেষজ্ঞ ছিলেন এই গোয়েবলস। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। একই সাথে, গোয়েবলস ছিলেন অ্যাডলফ হিটলারের প্রধান সহযোগী এবং তার একনিষ্ঠ অনুসারী।

বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতা এবং ইহুদিবিরোধী তৎপরতার জন্য তিনি ছিলেন কুখ্যাত। বলা হয়ে থাকে, হিটলার জার্মানিতে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যার প্রধান ভূমিকা ছিল, তিনি হলেন এই গোয়েবলস। মিথ্যাকে এমনভাবে প্রচার করে, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতেন যে, নাৎসিবাদ ও হিটলারকে জার্মানিতে তুমুল জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এই গোয়েবলস এখন রীতিমতো প্রবাদ। গোয়েবলসীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি মিথ্যা কথা যদি ক্রমাগতভাবে বলা যায়, তা সত্যের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। যে মিথ্যা প্রচার করছে, নিজের অজান্তে সে-ও মিথ্যাকে সত্য বলে ভাবতে শুরু করে। একজন রাজনীতিক অভিযোগ করেন, হিটলার তার মিথ্যা প্রচারের জন্য একজন গোয়েবলস নিয়োগ করেছিলেন। বর্তমান সরকার প্রত্যেক মন্ত্রীকে গোয়েবলস বানিয়ে ফেলেছে। মন্ত্রীরা সব বানোয়াট- এ কথা এখনো বলেই যাচ্ছেন। যেমন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে (একটি দৈনিক রসিকতা করে লিখেছে, মশা কি মন্ত্রীর ভাষা বোঝে?)। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, ডেঙ্গু নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এ নিয়ে অনেক কথাবার্তাও চলছে। ডেঙ্গু দেশে আগেও ছিল, তবে এবার এর প্রকোপ বেশি। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে ডেঙ্গু নেই। এ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।’ গত ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টায় মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এ সময় মন্ত্রী তার বক্তব্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘এ পর্যন্ত দেশে ২৫ হাজার লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। ১৮ হাজার ব্যক্তিকে আমরা সুস্থ করে দিয়েছি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ‘মাত্র’ সাত হাজার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। ৪ আগস্ট ‘মাত্র’ এক হাজার ৯০০ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।’ ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকলেও দুই দিন পরপর আমার সাথে ডেঙ্গু নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। তার নির্দেশে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে।

সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’ আগেই বলা হয়েছে, মন্ত্রীর দেয়া তথ্য এবং বেসরকারি তথ্যে অনেক ফারাক। সিভিল সোসাইটির নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এ রকম একটা ব্যাপারেও যদি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রয়োজন হয়, তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য কারো এসব পদে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না।’ এডিস মশা নিয়েও যে সরকারি দলের নেতারা রাজনীতি করেন, তার উদাহরণ জুগিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আগস্ট শোকের মাস। এই মাস এলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধীরা। এরা এডিস মশার চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাই আগস্ট মাসে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’ গত ৫ আগস্ট সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ষড়যন্ত্রের কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে কি না এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী কোনো তথ্য না দিয়ে অতীতের আগস্ট মাসের ঘটনাবলির উল্লেখ করেন।

‘সব ঝুট হ্যায়’- সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রকট প্রমাণ পাওয়া যায় জেনেভায় অনুষ্ঠিত নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে। এ ধরনের কনভেনশনে সারা বিশে^র নির্যাতিত মানুষের পক্ষে সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও এ বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার যেসব অভিযোগ উঠছে, তার প্রামাণ্য বিবরণ জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে তুলে ধরেছে ‘মানবাধিকার ফোরাম বাংলাদেশ।’

এতে নির্যাতনের শিকার হওয়া অন্তত ৬৭ জনের দুর্ভোগের কথা উঠে এসেছে। তা ছাড়া, নির্যাতনের যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাও বর্ণনা করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার দিন-তারিখ অনুসারে একটি তালিকাও এতে সংযুক্তি হিসেবে দেয়া হয়েছে, যাতে এক দিনে সর্বোচ্চ ১৫টি কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের তথ্য রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের নির্যাতনবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে (কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার বা ক্যাট) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জোট ‘মানবাধিকার ফোরাম’ এই রিপোর্ট পেশ করেছে।

সূত্র মতে, ফোরাম তাদের রিপোর্টে ‘নির্যাতনের’ বিভিন্ন কৌশলের বর্ণনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো, যা জেনারেল থেরাপি বা ‘সা-রে-গা-মা’ নামে পরিচিত; হাত-পা বেঁধে দুই টেবিলের মাঝখানে শুইয়ে পায়ের তলায় পেটানো, ব্যাট থেরাপি বা বাদুড় ধোলাই; ছাদে ঝুলিয়ে নির্বিচারে পেটানো বা স্নেক থেরাপি; মাটিতে ফেলে মুখে ভেজা কাপড় ঢুকিয়ে নাকমুখে পানি ঢালা বা ওয়াটার থেরাপি যাতে ফুসফুসে পানি ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে; পুরুষাঙ্গে ইট বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে হাঁটতে বলা এবং ধাতুর তৈরি আংটিতে আঙুল ঢুকিয়ে বৈদ্যুতিক শক দেয়া ইত্যাদি। আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং মহিলা পরিষদসহ মানবাধিকার ফোরামের ২১টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা ওই আলোচনায় ইনপুট দিয়েছেন। তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্যাতনবিরোধী কমিটির এই পর্যালোচনার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবেদন দেয়নি।

বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে ওয়ার্ল্ড কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট ডেথ পেনাল্টি, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, ওডিআরআই ইন্টারন্যাশনাল রাইটস আলাদা আলাদা প্রতিবেদন পেশ করেছে। ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার, ওএমসিটি, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সসহ পাঁচটি সংগঠন বাংলাদেশের অপর একটি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর সাথে যৌথভাবে আরেকটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে ২৬টি বহুল আলোচিত ঘটনার বিবরণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের বিচারবহির্ভূত হত্যা। এই প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট দুই হাজার ৮৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালেই নিহত হয়েছেন ৪৬৫ জন। একই সময়ে মোট ৫২৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে গুম হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের উত্তরে সম্মেলনে যোগদানকারী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার প্রদত্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নির্যাতনমূলক সব সহিংসতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ দিকে দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার অ্যান্ড আদার ক্রুয়েল টিজ, ইনহিউম্যান অর ডিগ্রেডিং ট্রিটমেন্ট অর পানিশমেন্ট (আনক্যাট), ১৯৮৪-এর ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার একটি স্বতন্ত্র এবং বিস্তৃত প্রতিবেদন পেশ করেছে। সেখানে আনক্যাট বিধানের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সংসদের আইন, অধ্যাদেশ, বিধিবিধান, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তগুলো এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে নেয়া তথ্যের সমন্বয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। উত্থাপিত সব নিপীড়ন ও নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন যে, জেনেভাতে নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘নির্জলা মিথ্যা’ বলে এসেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার ১০-১২ বছর ধরে ক্ষমতায়। কিন্তু নির্যাতনবিরোধী ফোরামে এতকাল কোনো জবাবদিহি করেনি।

জাতিসঙ্ঘের ওই কমিটি নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশকে ডাকে এবং বাংলাদেশে যে নির্যাতন হয়েছে সে সম্পর্কে সরকারের বক্তব্য কী, জানতে চায়। সেখানে আমাদের আইনমন্ত্রী অবলীলায় অসত্য বলে এসেছেন। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো গুম-খুনের ঘটনা তার জানা নেই। মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলেন, মাত্র সে দিন একজন সিনিয়র সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান গুম হয়ে গেছেন। তিনি অতীতে গুম হওয়া তাদের দলের এমপি ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমের নাম উল্লেখ করেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে এসব অভিযোগ অস্বীকার না করে যৌক্তিক কথা বলতে পারতেন মন্ত্রী। কিন্তু ‘সব ঝুট হ্যায়’ এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তারা নিরেট সত্যকেও অস্বীকার করেছেন।

মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। সত্য একদিন উদ্ভাসিত হবেই। Abraham Lincon-এর সেই বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি- “You can fool all the people some of the time, and some of the people all the time, but you cannot fool all the people all the time.”

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে নলকূপ থেকে পানি নেয়ায় দলিত যুবককে পিটিয়ে হত্যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি : পাকিস্তানকে ৫৯১ রুপি দিয়ে সমাধানের ভাবনা আইসিসির এবার লিভারপুলের কাছে আটকে গেল রিয়াল মাদ্রিদ উত্তরসূরী হিসেবে রাউহির নাম ঘোষণা করলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আইসিসি’ এশিয়া ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস পুরস্কার পেল অধিকার মারবা? পারবা না। ৩ আমেরিকানকে মুক্তি দিলো চীন আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান

সকল