২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রাষ্ট্রের স্বরূপ ও বৈশ্বিক সঙ্কট

-

রাষ্ট্র এমন এক রাজনৈতিক সংগঠন, যা কোনো একটি ভৌগোলিক সীমানা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারীদের শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান ও নিয়ম-কানুন তৈরি ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার ব্যাপারে একচ্ছত্র ক্ষমতাবান। যদিও রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া-না পাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে রাষ্ট্র হিসেবে তার ওপর প্রভাব রাখা রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতির ওপর। সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্রীয় পরিসর শুধু জাতীয় নয় বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল পর্যন্তও বিস্তৃত।

রাষ্ট্র হিসেবে কোনো কিছুর অস্তিত্বকে প্রায়োগিক বা আইনি দৃষ্টিতে অথবা উভয় দিক থেকেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। প্রায়োগিক দিক থেকে দেখতে গেলে, ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাবশালী সংজ্ঞানুযায়ী- এটি এমন একটি সংস্থা, নির্দিষ্ট এলাকার ভেতর আইনসিদ্ধ বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে যার রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। আইনি দিক থেকে দেখতে গেলে, কোনো কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক আইনে রাষ্ট্র হতে পারে যদি অপরাপর রাষ্ট্রসমূহ তাকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বলপ্রয়োগের ক্ষমতা ও অপরাপর জাতিরাষ্ট্রের স্বীকৃতির সাথে সাথে সফল রাষ্ট্রের জন্য সুশাসনের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর রাষ্ট্র তখনই সফল ও সার্থক হয়ে ওঠে যখন রাষ্ট্রে সুশাসন ও সাধারণ মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত হয়।

মূলত প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় সবচেয়ে বড় রাজনীতিবিষয়ক উদ্ভাবন ছিল গ্রিক নগর-রাষ্ট্র এবং রোমান প্রজাতন্ত্র। চতুর্দশ শতকেরও আগে গ্রিক নগর-রাষ্ট্র তার মুক্ত বাসিন্দাদের জন্য নাগরিকত্ব প্রদান করে। এথেন্সে এই অধিকার স্বীকৃতি পায় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতির প্রত্যক্ষ রূপের মাধ্যমে, যা পরবর্তীতে সমকালীন ইতিহাস ও রাষ্ট্রচিন্তায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। অন্য দিকে রোমে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রজাতন্ত্র। যা রোমান অভিজাতদের দ্বারা প্রভাবিত সদস্যসভা দ্বারা শাসিত হতো। রোমান রাজনৈতিক কাঠামো, আইন ও নিয়মতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের উন্নতিতে অবদান রাখে এবং একই সাথে অধিকার-কর্তব্যের ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষেত্রের মাঝে সুস্পষ্ট সীমারেখা টেনে দেয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় যুগান্তকারী বলে মনে করা হয়।

পশ্চিমে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে রোমান সাম্রাজ্যের অবলুপ্তির মাধ্যমে। এর ফলে সাম্রাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভাজিত হয়ে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণহীন স্থানীয় জমিদারদের ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যাদের রাজনৈতিক, আইনি ও সামরিক সিদ্ধান্তগুলো ছিল স্থানীয় উৎপাদন কাঠামোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্ধারিত। মার্কসবাদীদের মতে, এমন পরিস্থিতিতেই সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো স্থানীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

১৯ শতকের শেষভাগ থেকে পৃথিবীর আবাসযোগ্য সমগ্র ভূমি কম-বেশি নির্ধারিত সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের নামে চিহ্নিত হয়। আগে বেশ বড় বড় এলাকা হয় নির্দাবিকৃত, না হয় অনাবাসকৃত ছিল অথবা যাযাবরদের এমন আবাসস্থল ছিল, যা রাষ্ট্র হিসেবে সংগঠিত ছিল না। বর্তমানে দুই শতাধিক রাষ্ট্রকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গঠিত, যাদের বেশির ভাগই জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্র। তাই আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অতীতের চেয়ে সুশৃঙ্খল হয়েছে একথা বলা হলেও সব ক্ষেত্রেই তা সফল ও সার্থক হয়ে ওঠেনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তাত্ত্বিকদের মতে, এই রাষ্ট্রগুলো এমন একটি ব্যবস্থাপনার ভেতর আছে যেখানে রাষ্ট্র নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অপরাপর রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে।

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব ও মূলধনের প্রবাহ এবং বহুসংখ্যক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভবের যৌথ প্রভাবে রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। স্বাধীন সিদ্ধান্ত প্রহণের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতার উদাহরণ হলো পশ্চিম ইউরোপ যেখানে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ঐক্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যদিও ১৬ শতক থেকে এখনো রাষ্ট্রই বিশ্বের রাজনৈতিক একক। ফলে রাষ্ট্রকেই রাজনৈতিক পঠন-পাঠনের মূল কেন্দ্রীয় বিষয় বলে মনে করা হয় এবং এর সংজ্ঞা নিয়েই তাত্ত্বিকদের মাঝে পাণ্ডিত্বপূর্ণ বিতর্ক সবচেয়ে বেশি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক প্রবণতা ও আইন অনুযায়ী একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নির্ভর করে ওই রাষ্ট্রের রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করার ব্যাপারে কূটনৈতিক স্বীকৃতি থাকা-না থাকার ওপর। তবে স্বীকৃতি ও সার্বভৌমত্বের মাত্রা ভিন্ন ভিন্নও হতে পারে। অবশ্য রাষ্ট্র হওয়ার জন্য আইনি শর্তাবলি অবশ্য পালনীয় নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আইনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রায়ই যে দলিলের কথা উল্লেখ করা হয় তা হলো, ১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও সমঝোতার প্রথম ধারা যাতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের একটি অংশগ্রহণকারী পক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রকে নিম্নোক্ত শর্তাবলি পূরণ করতে হবে- ক. স্থায়ী জনগণ খ. নির্ধারণকৃত এলাকা গ. সরকার ঘ. অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক তৈরির সক্ষমতা। তবে রাষ্ট্রের সফলতার ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও সুশাসনবিষয়ক অনুষঙ্গগুলো।

বস্তুত, রাষ্ট্র যা আদর্শ মনে করে তাই রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য পরম সত্য ও অলঙ্ঘনীয় বলে মনে করা হয়। এ কথা ঠিক যে, শিল্পবিপ্লব ও ফরাসিবিপ্লব পরবর্তী সময়ে ইউরোপে জাতি-রাষ্ট্রভিত্তিক আদর্শের প্রসার গুরুত্ব লাভ করতে শুরু করে। আর এই আদর্শের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অপর দিকে গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদ যখন উগ্র জাতীয়তাবাদে রূপ নেয়, তখন জন্ম নেয় বিভিন্ন সঙ্ঘাত ও প্রাণঘাতী যুদ্ধের। এমনকি তা জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করে। শ্রেণিবাদী তাত্ত্বিকরা রাষ্ট্রব্যবস্থা বিশ্লেষণ করেন শ্রেণিতত্ত্বের আলোকে, জাতিতত্ত্বের আলোকে নয়। এ শ্রেণিতত্ত্বের অন্যতম পুরোধা ছিলেন কার্ল মার্কস। তিনি মনে করতেন, শিল্প-সভ্যতার অনিবার্য পরিণতি হিসাবে পুঁজিবাদের পতন ঘটবে এবং এক অনিবার্য বাস্তবতায় জন্ম নেবে সমাজতন্ত্রের। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শেষপর্যায়ে কমিউনিজম বা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু এটি যে বাস্তবসম্মত ছিল না তা সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের দুঃখজনক পতনের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে।

অপর দিকে উনিশ শতকে মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের বিপরীতে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অমার্কসীয় সমাজতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। যা ছিল মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের জন্য রীতিমতো চপেটাঘাত। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল ফেবিয়ান সমাজতন্ত্র। ১৮৮৪ সালে চার্লস রিড ও এডওয়ার্ড পিজের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডে ফেবিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর লোকেরা তখন ফেবিয়ান সমাজবাদী ভাবধারার নেতৃত্ব দিতেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সিডনি ওয়েব, জর্জ বার্নার্ড শ’, এইচ জি ওয়েলস, গ্রাহাম ওয়ালাস ও হ্যারল্ড লাস্কি।

এদের প্রভাবেই ফেবিয়ান সমাজতান্ত্রিক আদর্শের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেছিল। মূলত কয়েকটি বিষয়ে তারা মার্কসের আদর্শের সাথে একমত হতে পারেননি। তারা সংসদীয় আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। এছাড়া বৈপ্লবিক পন্থায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কথা অস্বীকার করতেন। একুশ শতকের শুরু থেকে ব্রিটিশ লেবার পার্টি ফেবিয়ান ভাবধারায় অনুপ্রাণীত হয়ে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়ন করেন। ব্রিটেনে শিল্প, কল-কারখানা, ব্যাংক ইত্যাদি জাতীয়করণ করা হয়েছে ফেবিয়ান সমাজবাদের ভিত্তিতে। এই মতবাদের প্রভাব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষত ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে।

বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য। স্বাধীনভাবে ও নির্বিঘেœ মতামত প্রকাশ প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক ও সার্বভৌম অধিকার। ব্যক্তির এ অধিকার রাষ্ট্র ক্ষুণœ করতে পারে না যদি তার মতামত ও কার্য দ্বারা অপরের ক্ষতি সাধন না হয়। আর স্বাধীনতা কখনোই স্বেচ্ছাচারিতার স্থলাভিষিক্ত নয়। তাই স্বাধীনতা এমন হওয়ার সুযোগ নেই যে তা অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। মূলত স্বাধীনতাও সংবিধিবদ্ধ।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের অন্যতম প্রবর্তক জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে, ‘মাত্র একজন বাদে সমগ্র মানবজাতি যদি কোনো একটি মত পোষণ করে তাহলেও এই একজনের ভিন্নমত স্তব্ধ করে দেয়ার অধিকার কারো নেই।’ আর একেই বলা হয় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। যে সমাজে বৈচিত্র্য ও মুক্তবুদ্ধির মূল্য দেয়া হয় না সেখানে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার সার্থকতা লাভ করে না এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও বিকশিত হতে পারে না। জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ব্যতিরেকে বস্তুবাদের যান্ত্রিক প্রয়োগ সামাজিক অগ্রগতির পক্ষে সহায়কও নয়।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেসব সঙ্কট দেখা যাচ্ছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে আদর্শহীনতা ও আদর্শগত দ্বন্দ্ব। আর এজন্য আদর্শহীনতাকে দায়ী করাই অধিক যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শাসনক্ষমতা শেষ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি বা কিছু ব্যক্তির হাতে চলে যায় এবং তাদের অপশাসন ও দুঃশাসনের ফলাফল সবাই ভোগ করে।

যেমনটি হয়েছে আমাদের দেশের রূঢ় বাস্তবতায়। কারণ, আমাদের দেশে শ্রেণিবিশেষের ক্ষমতালিপ্সা ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কাছে পুরো জাতিই এখন জিম্মি বলে মনে করা হয়। রাষ্ট্র বলপ্রয়োগ করছে যথারীতি। কিন্তু সুশাসন ও গণতন্ত্রের সুফলগুলো সাধারণ মানুষের কাছে অধরাই থেকে যাচ্ছে। বিষয়টি গণতান্ত্রিক বা একনায়কতান্ত্রিক উভয় শাসনব্যবস্থায়ই সমানভাবেই প্রযোজ্য। উভয় শাসনব্যবস্থায় শাসকদের দায়িত্ব, কর্তব্য, ব্যক্তিস্বাধীনতা, সরকারের সমালোচনা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নীতিগত পার্থক্য থাকে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে শাসকবর্গ যেভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ করে তাতে মৌলিক কোনো পার্থক্য থাকে না। চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, কিউবাতে সমাজতন্ত্রের নামে যে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে, তা দেখে সমাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের ক্রমেই অনীহা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক শাসনের প্রেক্ষাপটও এ থেকে আলাদা কিছু নয়।

স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে, তখন পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো মনে করতে শুরু করে যে, তাদের আদর্শের বিজয় হয়েছে। বিখ্যাত দার্শনিক ফ্রান্সিস ফোকিয়ামা বলেছিলেন ‘ইতিহাসের সমাপ্তি’। তখন থেকেই তারা তাদের আদর্শকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এবং তা চাপিয়ে দেয়া গোটা বিশ্বের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করতে শুরু করেছিল। এ কারণে তারা বিশ্বের দেশে দেশে নানা ছলছুতায় সামরিক অভিযান শুরু করে। নিজেদের মধ্যে অহেতুক ইসলামভীতির কথা প্রচার করে মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ দখল করা শুরু হয় ব্যাপকভাবে। অপর দিকে, এসব দেশে স্বৈরশাসকদের অপশাসনের ফলে সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। কারণ, সুশাসনের অনুপস্থিতি ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন সর্বসাধারণকে নিজ নিজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বিষ্ট করে তোলে। আর এ সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগায় বিশ্ব পরাশক্তিরা।

ইসলামকে হুমকি হিসেবে দেখার পশ্চিমা প্রবণতার কারণে মুসলিম বিশ্বের অনেক সরকারই কথিত ইসলামি সন্ত্রাসবাদের হুমকিকে ইসলামি মৌলবাদ, ইসলামিজম ও রাজনৈতিক ইসলামের সাথে একাকার করে গণতান্ত্রিক ইসলামি আন্দোলনগুলোকে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ব্যবহার করে থাকে। তারা নিজেদের দেশে এবং পশ্চিমা বিশ্বে কথিত ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ভীতি ছড়িয়ে দেয় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। ঠিক অতীতে যেমন অনেকে স্বৈরাচারী শাসনকে বৈধ করা ও পশ্চিমা শক্তির সমর্থন লাভের জন্য কমিউনিজমবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায় পাশ্চাত্যের প্রতি মুসলিমদের একরৈখিক মনোভাব ও তাদের সব সমস্যার জন্য ইউরোপ ও আমেরিকাকে দায়ী করার প্রবণতা। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে পরস্পরকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখার নেতিবাচক মনোভাব। ফলে দেশে দেশে ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সঙ্কট। সঙ্ঘাতপূর্ণ ও অস্থির হয়ে উঠছে বিশ্ব পরিস্থিতি। আর এ প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে বৈ কমছে না।

আদর্শের সঙ্ঘাত ও আদর্শগত শূন্যতার কারণে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেসব সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে তার অন্যতম সমাধান হচ্ছে প্রত্যেক রাষ্ট্রের নিজস্ব আদর্শের বাস্তবায়ন। যেখানে নিশ্চয়তা থাকবে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সুশাসন ও জনগণের মৌলিক অধিকারের। আদর্শবান নেতা ও আদর্শ নেতৃত্ব সৃষ্টি করে সবার কল্যাণে আধুনিক রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠন, সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। অন্যথায় শোষণ-বঞ্চনামুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ও শান্তির বিশ্বের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তত আছে : পুতিন নেশন্স লিগের শেষ আটে কে কার মুখোমুখি হবে মুরাদনগরে পিঠা পুলি জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের সাথে বসতে চান পুতিন মাদকের টাকার জন্য মাকে হত্যা! আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভারতীয় অর্থনীতি-রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলবে বিচ্ছেদে খুশি নন সায়রা-রহমান কেউই! তবুও কেন হলো অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের সাথে বর্ণবৈষম্য, আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ মণিপুরে আরো ১০ হাজার জওয়ান পাঠাচ্ছে ভারত সরকার এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি 'সহানুভূতিসম্পন্ন' সব সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে ৬৫.৯ ভাগ মানুষ

সকল