২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া

হাসপাতালে খালেদা জিয়া - ফাইল ছবি

তাকে বাঁচতে দিন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বিভক্ত-বিভাজিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সেতুবন্ধ তিনি। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পুরোধা। সামরিক স্বৈরতন্ত্র ও ‘গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র’-এর বিরুদ্ধে আপসহীন নেত্রী তিনি। বাংলাদেশের আত্মার আত্মীয় তিনি। তার আদর্শে ও কর্মে বাংলাদেশের চিরায়ত জীবনবোধ প্রতিফলিত। তিনি ন্যায় ও সত্যের ধারক ও বাহক। অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন ও জেল-জুলুমের শিকার তিনি। মৌলিক মানবাধিকারের চিরপ্রহরী তিনি। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক এলিটদের ভীতির কারণ তিনি। শোক ও সংগ্রামে নির্ভীক তিনি। বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে আস্থাভাজন, জনপ্রিয় নেত্রী তিনি। নিপীড়িত, নির্যাতিত জনগণের মাতৃসম ব্যক্তিত্ব তিনি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কাণ্ডারি তিনি। তিনিই জাতির অভিভাবক। তার দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

এসব কারণেই তিনি ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পতিত হয়েছেন। সবাই জানে এবং বোঝে, তাকে নিঃশেষ করে দিতে পারলে ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ করার যথার্থ আর কেউই থাকবে না। তাই ঠুনকো মিথ্যা মামলায় তিনি কারাগারে নির্মম জীবন যাপন করছেন। তিনি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের এক মহীয়সী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কোনো পদ বা উত্তরাধিকার দিয়ে তাকে বিশেষিত করার প্রয়োজন নেই।

বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি কারা অন্তরালে রয়েছেন। যে মামলায় তিনি আসামি সেটি সহজেই জামিনযোগ্য। এ দেশে দাগি অপরাধী, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও চরম নারী নির্যাতনকারীরা জামিন পায়। তিনি পান না। কারণ, তিনি খালেদা জিয়া। শাসকগোষ্ঠী তাকে জামিন না দেয়ার জন্য কত যে কারসাজি ও ষড়যন্ত্র করেছে তা গোটা জাতির সামনে রয়েছে। একটি মামলা থেকে খালাস পেলে আরেকটি মামলা দেয়া হয়েছে। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ক্ষমতাসীনদের এজেন্টরা একের পর এক মামলা দিয়েই যাচ্ছে।

এভাবে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮টি। কারাগারে এবং মামলা পরিচালনায় তার সাথে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে। শাসকদল সব রাজনৈতিক সৌজন্য ও শিষ্টাচার অতিক্রম করেছে। তাকে অবশেষে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও তার যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি বলেছে, ‘তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে তার সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে দলটি। বিগত কয়েক মাস বেগম খালেদা জিয়া তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের দাবি করছিলেন। কিন্তু সরকার তথাকথিত জেল কোডের বাহানা তুলে তা অগ্রাহ্য করেছে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত শনিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। লিখিত ব্যক্তব্যে তিনি বলেন, অস্বাভাবিক মানসিক চাপে খালেদা জিয়ার আকস্মিক হৃদরোগ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুনে বেড়ে গেছে। মারাত্মক জীবনবিনাশী জীবাণু দিয়ে ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া কারাগারে থাকার সময় সেখানকার পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর মাত্রার ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়ামশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এটি হাড়ের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এমনিতেই অনেক আগে থেকে তিনি বাম কাঁধ ও হাতের ব্যথায় ভুগছেন। এখন সেই ব্যথা ডান কাঁধে ও হাতে সম্প্রসারিত হয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।

তিনি এখন দুই হাতেই নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন বলেন, দেশনেত্রীর সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, ইনসুলিন ব্যবহারের পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তো হচ্ছেই না, বরং তা বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে তার মুখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, এই ক্ষতের জন্য মুখে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে তিনি স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না, কোনো রকমে জাউ খেয়ে জীবন ধারণ করেছেন। অথচ সরকার থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতারা বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন, যা শুধু অমানবিকই নয়, নিষ্ঠুর মনুষ্যত্বহীন মনেরও বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘বেগম জিয়া আয়েশ করে পায়েস খাচ্ছেন। তিনি অসুস্থতার নামে নাটক করছেন।’ দেশের একজন বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের অসুস্থতা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বিদ্রƒপ ও রসিকতা করে আসছেন তা নজিরবিহীন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সভ্য দেশ ও সমাজে একেবারেই বিরল। কারাগারে দূষণযুক্ত পরিবেশে তার স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও জীবন সবই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বেগম জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বেগম জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য একজন বন্দীর মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করার শামিল এবং ওই বক্তব্য কেবল প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য বলে উল্লেখ করেন জমির উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিষ্ঠুর রসিকতায় একটি স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ রূপটিই ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার একপর্যায়ে বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া কোনো দিনই কারাগার থেকে বের হবে না। তিনি দেশে এসে সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করেছেন।

ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জে আদালত স্থানান্তরের এসআরো জারি করা হয়েছে। অশুভ উদ্দেশ্যেই কারাগারে আদালত বসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কোনো সাজাই চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থী। বেগম জিয়ার অসুস্থতার যাতে চরম অবনতি না ঘটে সে জন্য তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর দাবি জানান জমির উদ্দিন সরকার। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আপাতত কোনো চিন্তাভাবনা নেই বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। সরকার দাবি না মানলে, যা করলে দাবি মানবে তা করব আমরা। দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আজকে সরকারের একটি অংশ ষড়যন্ত্র করছে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাকে কেরানীগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার জন্য। খালেদা জিয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে, শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

গুজব রটেছিল যে, বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের জাতীয় সংসদে যোগ দানের বিনিময়ে খালেদা জিয়াকে জামিনে অথবা প্যারোলে মুক্তি দেয়া হতে পারে। এমনও শোনা গিয়েছিল, তলে তলে বিএনপির সাথে একটা আপসরফা হয়ে গেছে। গণমাধ্যম বিষয়টি ইতিবাচক করে তুলছিল। কিন্তু দিন শেষে আমরা কী দেখলাম? তলে তলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আপসরফায় না পৌঁছলেও, নির্বাচিত অন্য পাঁচজন এমপি সরকারের টোপ গিলেছেনÑ এটা প্রমাণ হলো। একজন তো একরকম গোপনীয়ভাবে শপথ নিলো। অন্য চারজন যখন সিদ্ধান্ত নাকচ করে যোগদানের বিষয়টি একরকম চূড়ান্ত করে ফেলেছিল, তখন ‘জেনে শুনে বিষ পান না করে’ বিএনপি নেতৃত্বের বিকল্প ছিল না। এভাবে নৈতিক পরাজয় ও আদর্শিক চেতনার অভাবে বিএনপি রাজনৈতিক কৌশলকেও পুঁজি করতে পারল না। দেখা গেল আইনি প্রক্রিয়ায় তারা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারল না। অথচ বিএনপির বাঘা বাঘা প্রবীণ আইনজীবী বলে আসছিলেন, আইনি প্রক্রিয়ায়ই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। তাহলে সরকার কতটা নিচে নামতে পারে সে সম্পর্কে আইনজীবীরা কোনো অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

অপর দিকে, আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন তীব্র করতে বিএনপির নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থতা স্বীকার করে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রখ্যাত আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে জনপ্রিয়তা রয়েছে, সেভাবে আমরা তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছি। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটক রাখা হয়েছে। আইনি সাধারণ প্রক্রিয়ায় তাকে বের করা সম্ভব নয়, যদি না সরকারের সদিচ্ছা থাকে। খালেদা জিয়ার মুক্তির তিনটি পথ- আপসরফা, আইনি প্রক্রিয়া এবং গণ-আন্দোলন সবই যদি ব্যর্থ হয় তাহলে কি অনন্তকাল ধরে বেগম খালোদা জিয়া জেলে থাকবেন? ঘোষিত প্রতিশোধের বাক্য যা গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ‘তারেক জিয়াকে বলে দেবেন, সে যেন লন্ডনে বেশি বাড়াবাড়ি না করে। করলে তার মা আজীবন জেলে থাকবে’- সেটিই কি সত্য প্রমাণ হবে? খন্দকার মাহবুব হোসেন আশা প্রকাশ করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের দিকে তাকিয়ে না থেকে বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও আইনজীবী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের নেতৃত্বে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে। গণতন্ত্রের যদি মুক্তি হয়, বেগম খালেদা জিয়ারও মুক্তি হবে। একটি দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ তথা সিভিল সোসাইটি যদি গতিশীল হয়, তাহলে গণতন্ত্রের আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।

দুঃখের বিষয়Ñ বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির একটি বড় অংশ সরকারের তোষামোদ ও খোশামোদের বাহক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা অতি মাত্রায় রাজনীতিক প্রবণ হয়ে উঠেছে। অপর অংশ ডান ও বাম ধারায় বিভক্ত হলেও গণতন্ত্রের সপক্ষে সক্রিয় রয়েছে। পেশাজীবীদের মধ্যে আইনজীবীরা যেহেতু আইনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, সুতরাং তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের প্রাক্কালে বাংলাদেশের আইনজীবীদের অবস্থান গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পাকিস্তান একটি সামরিক বাহিনী প্রভাবিত রাষ্ট্র। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা রাজনীতির ওলটপালট ঘটাচ্ছে- তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উজ্জ্বল উদাহরণ। সেখানে একসময়ে আইনজীবীদের সম্মিলিত আন্দোলন রাষ্ট্রে ‘ক্ষমতার বিভাজন’কে নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশে তা অসম্ভব নয়, শুধু শর্ত হচ্ছে ঐক্য। যেকোনো পেশাজীবীদের সম্মিলিত ঐক্য সরকারের টনক নড়িয়ে দিতে পারে। সামাজিক আন্দোলন গণপ্রতিরোধে পরিণত হতে পারে। এক প্রবীণ রাজনীতিবিদ অতি সম্প্রতি ভয়কে জয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবীদের সম্মিলিত শক্তি ভয়কে জয় করতে পারে। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের সার্বিক স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে হবে। খালেদা জিয়ার ‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’ যদি হয় আমাদের শপথ, তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়া অবিলম্বে মুক্ত হবেন।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement