২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভোটের সবচেয়ে বড় আয়োজন

- ছবি : সংগৃহীত

সাত দশক ধরে ভারতে গণতন্ত্র চর্চা চলছে। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের এ দেশটির ৯০ কোটি ভোটার। গনচীনের পরই জনসংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত। যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্যের মোট ভোটারের দ্বিগুণের বেশি ভোটার রয়েছে ভারতে। দেশটিতে উন্নত উদার স্বচ্ছ ভোটাধিকার চর্চা হলে বাকি বিশ্বের গণতন্ত্র চর্চাকারীরা আশাবাদী হবেন। অন্য দিকে গোলযোগপূর্ণ অস্বচ্ছ পক্ষপাতদুষ্ট ভোটের আয়োজন নিশ্চয়ই বিশ্বের গণতন্ত্রীদের হতাশা বাড়াবে। এর মধ্যে গণতন্ত্রের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকতাকারী যুক্তরাষ্ট্রে এমন একজন প্রেসিডেন্টকে বাছাই করা হয়েছে, যিনি একজন আপাদমস্তক সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী। গণতন্ত্রের চেতনার সাথে তার আচার-আচরণের কোনো মিল নেই।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আধিপত্য অর্জনে শক্তির লড়াই চলছে পাশ্চাত্য, ভারত ও চীনের মধ্যে। চীনের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করে গণতন্ত্রীরা দেশটিকে ঘায়েল করতে চায়। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এই লড়াইয়ে যদিও চীন ক্রমেই অধিকতর শক্তি অর্জন করছে। দেশটি এরই মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে তার মতামত জানিয়েছে। তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশে পশ্চিমা গণতন্ত্র কোনো সফলতা দিতে পারেনি। এ মতের সমর্থনে তারা নিশ্চয়ই যুক্তি দেখাতে পারবে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ দীর্ঘ দিন ধরে গণতন্ত্র চর্চা করছে। এসব দেশ না পেরেছে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে, না পেরেছে উন্নয়ন করতে। এই মডেলের দেশগুলো এখন পর্যন্ত ব্যর্থ বলা যায়। গণতন্ত্রের চেয়ে চীন নিজেদের শাসনব্যবস্থাকে উপযুক্ত ও টেকসই হিসেবে উপস্থাপন করছে।

চীন যখন সব কিছু সামাল দিয়ে দৃঢ়পদে অগ্রসর হচ্ছে, ঠিক সেই সময় পশ্চিমারা গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতাও আগের মতো আর করতে পারছে না। তাই এখন এক ধরনের ফাঁকা যুগ চলছে। গণতন্ত্র এই সময় কিছু লোককে সুযোগ করে দিচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে অনেক দেশে এখন আবির্ভূত হতে পারছে স্বৈরশাসকের। গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় তাগিদ দেয়ার চেয়ে বরং পশ্চিমারা এসব আধা গণতান্ত্রিক শাসকদের সাথে মিশে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এ অঞ্চলে গণতন্ত্র চর্চাকারী ভারতের কর্মকাণ্ডও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত করার কাজে ব্যবহার হয়নি। নিজেদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সঠিক আচরণ তারা করতে পারেনি।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে অন্তত তাদের নিজ দেশের মতো ভিত্তি পেতে সহযোগিতা করার পরিবর্তে নিজেদের মতো করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। খোদ নিজেদের দেশের পররাষ্ট্র সচিবকে নির্বাচনী মওসুমে বাংলাদেশে পাঠিয়ে নিজেদের পছন্দমতো ভোট আয়োজনের পক্ষে জোরালোভাবে প্রকাশ্যে কাজ করেছে। এমন মতও তারা দিয়েছে যে, দু-চারটি দল ভোটে অংশগ্রহণ না করলেও গণতন্ত্রে কোনো সমস্যা নেই। এ ক্ষেত্রে ভারতকে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক দেশ হিসেবে পাওয়া যায়নি। নিজেরা যে ‘ভালোটা চর্চা’ করে, সেই ‘ভালোটা’ বন্ধুদের জন্য প্রয়োজনীয় মনে করেনি দেশটি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে জবরদস্তিমূলক নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি সংসদীয় আসন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীনেরা লাভ করেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অবস্থা ছিল আরো খারাপ। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা ইউরোপ-আমেরিকাকে গণতন্ত্রের করুণ দশা নিয়ে খুব একটা উদ্বেগ দেখাতে দেখা যায়নি। নতুন সরকারের সাথে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ নিয়ে আগ্রহের সাথে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের।

এরপরও ভারতের মতো বড় দেশ গণতন্ত্রের উন্নত চর্চার বিকাশ করতে পারলে অনেকের জন্য সেটা প্রেরণা হতে পারে। দেশটি কি সে ধরনের উন্নত কোনো গণতন্ত্র চর্চা করতে পারছে? লোকসভা নির্বাচনের মওসুমে এ মূল্যায়ন দরকার। লেখক কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা শশী থারুর ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে ধরণীর বুকে মানুষদের দ্বারা সম্পন্ন সর্ববৃহৎ কাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন। এবার ১১ এপ্রিল থেকে ২৩ মের মধ্যে সাত দফায় এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

৫৪৫ আসনের জন্য ৫০০টি রাজনৈতিক দলের ১০ হাজার প্রার্থী এতে অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচন কমিশন এ জন্য ১০ লাখ ভোটকেন্দ্র স্থাপন করছে, দুই কোটি ৩৩ লাখ ব্যালট পেপার ছাপছে। এ জন্য এক কোটি ১০ লাখ লোক নিয়োগ করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বাস-ট্রেন থেকে শুরু করে ঘোড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নীতি হচ্ছে কোনো ভোটারকেই যাতে দুই কিলোমিটারের বেশি যেতে না হয় একটি ভোটের জন্য। গত নির্বাচনে কেবল একজন ভোটারের জন্য পশ্চিম ভারতের এক বনে একটি ভোটের বুথ স্থাপন করা হয়েছিল। আরেকটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন হয়েছিল হিমালয়ে, জায়গাটি ছিল সমুদ্র সমতল থেকে ১৫ হাজার ফুট ওপরে। থারুর গণতন্ত্রচর্চার জন্য ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের বিপুল কর্মকাণ্ডের আয়োজন বোঝাতে এই বিবরণ দিয়েছেন তার লেখায়। তিনি নিজেও এ নির্বাচনে একজন প্রার্থী। আশঙ্কার দিকটিও তিনি উল্লেখ করেছেন, এতসব চেষ্টা-প্রচেষ্টার পরও ভোটার অংশগ্রহণের হার বেশি নয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার ইতিবাচক দিক হচ্ছে, দেশটি একটি নির্বাচন কমিশন সৃষ্টি করতে পেরেছে। ভোট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার জন্য তারা বিভিন্ন সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে। থারুর বর্ণনায় ওই প্রচেষ্টা উঠে এসেছে। বজরং রাষ্ট্রীয় সেবক সঙ্ঘের মতো কট্টর গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী বিজেপি ক্ষমতায় এলেও জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার হরণ করা এখনো যায়নি। যদিও এর মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রভাবিত করার জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রীয় অর্জনগুলোকে দলীয় অর্জন হিসেবে ভোটারদের সামনে উপস্থিত করার দৃষ্টিকটু চেষ্টাও তারা করছে। রাষ্ট্রীয় অনেক প্রতিষ্ঠানকে এর মধ্যে দলীয় উদ্দেশ্যে তারা ব্যবহার করছে। বিজেপি গণতন্ত্রচর্চার চেয়ে এ কাজগুলোর প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী। এ জন্য অনেকে বলতে শুরু করেছেন, আবার মোদি নির্বাচিত হলে ভারতে গণতন্ত্র থাকবে না।

সম্প্রতি কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। মহাকাশে ৩০০ কিলোমিটার দূরে নিজেদের একটি উপগ্রহ এর মাধ্যমে তারা ধ্বংস করে। মহাকাশে এ ধরনের কাজ সম্পন্ন করেছে আরো তিনটি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত এ ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই অর্জনকে নরেন্দ্র মোদি একান্ত ব্যক্তিগত ও দলীয় অর্জন হিসেবে ভোটের মওসুমে কাজে লাগালেন। পরীক্ষাটি করা হলো ঠিক লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে। নিজের ব্যক্তিগত টুইটারে নাটকীয়ভাবে জাতীয় অর্জনের এ ঘোষণা তিনি দিলেন। ২৭ মার্চ সকালে মোদির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়, ১২টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করবেন। সাড়ে ১২টায় আসা সেই ঘোষণায় মোদি বলেন, আজ দেশের জন্য এক দুর্দান্ত মুহূর্ত। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা গর্ব করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। শুধু জলে স্থলে নয়, এবার থেকে আমরা ভারতের অন্তরীক্ষকেও সুরক্ষিত করলাম।

পুলওয়ামায় আধা সামরিক বাহিনীর ৪৪ জওয়ান নিহত হওয়ার পর ওই ঘটনাটিকে শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক জোশ তৈরি করার কাজে ব্যবহার করেন মোদি। ওই আত্মঘাতী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অভিযান (সার্জিক্যাল স্ট্রাইক) চালায়। দাবি করা হয়, অসংখ্য জঙ্গি হত্যার পাশাপাশি তাদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ওই অভিযানে। এর পরপরই ভারতীয় সেনাদের জয়গাথা রাজনৈতিক জনসভায় এমনভাবে প্রকাশ করলেন, জওয়ান হত্যার গ্লানি মোদি ও তার দলের বিজয়ে পরিণত হলো। মোদির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা বেড়ে ৬২ শতাংশ হয়। সর্বশেষ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানে পরিচালিত ভারতীয় বিমানবাহিনীর ওই অভিযানে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মোদির জনপ্রিয়তায় এর মধ্যে ধস নেমেছে। রেটিংও কমে ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিজেপি এখন নিজেদের দলের জনপ্রিয়তা নিয়েও শঙ্কায় পড়ে গেছে। নির্বাচনের মাঝপথে এসে বিজেপি তাদের প্রচারণার ইস্যু পরিবর্তন করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু বাদ দিয়ে তারা এখন উন্নয়নকে প্রচারণায় অগ্রাধিকার দিয়েছে। ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপের নির্বাচন-পরবর্তী তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের অবস্থানে এই পরবির্তন এনেছে।

ভারতের সাবেক সেনাকর্মকর্তারা প্রতিরক্ষা বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানিয়ে দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি লিখেছেন। রাষ্ট্রপতি কোবিন্দকে লক্ষ্য করে চিঠিতে তারা বলেছেন, সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান, বীর জওয়ানদের ছবি, তাদের পোশাক, প্রতীক, বীরত্ব ও শৌর্য যেভাবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব টেনে আনা হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক। এই প্রবণতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্দেশ দিতে তারা রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছেন। ১১ এপ্রিল লেখা ওই চিঠিতে ১৫৬ সাবেক সেনাকর্মকর্তার সই থাকলেও কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করছেন, ওই চিঠিতে তারা স্বাক্ষর করেননি। তবে এ ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে গেছে যে, ভারতের ক্ষমতাসীন দল সেনাবাহিনীর বীরত্বগাথাকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে প্রচার করে নির্বাচনী সুযোগ নিতে চাইছেন।

ভারতের নির্বাচনে আরেকটি গুরুতর ব্যাপার হলো মিথ্যাচার ও চরিত্র হনন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান ব্যক্তিরা একে ওপরের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ তুলছেন যা ডাহা মিথ্যা। কলকাতার সাংবাদিক শান্তনু দে বাংলাদেশী একটি পত্রিকায় লিখেছেন মিথ্যাচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিপক্ষ মানেন নরেন্দ্র মোদিকে। ৫১ মিনিটের ভাষণে মমতার অকপট স্বীকারোক্তি, ‘আমি মোদির মতো মিথ্যা বলি না।’ লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে ভারতবর্ষের এ দুই প্রধান নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে কামান দাগিয়ে চলছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে যে কথা বলছেন সেগুলো সত্যি হলে কেউ আর দেশের রক্ষক হিসেবে থাকতে পারেন না। উভয়ে দোষী হয়ে যান। এ জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। আর যদি তারা মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলেও চরম অন্যায় অনৈতিক কাজ তারা করছেন। তবে সাংবাদিক শান্তনু মমতার ভাইপো স্ত্রীর সম্ভাব্য এক দুর্নীতির কথা জানালেন। যে দুর্নীতি করতে মোদির কেন্দ্রীয় সরকারও সহায়ক হয়েছে। তিনি উভয়কে মিথ্যাবাদী দুর্নীতিপরায়ণ বলে তার লেখায় তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন।

একই ধরনের পাল্টাপাল্টি মিথ্যাচার চলছে মোদির সাথে কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধীসহ আঞ্চলিক বড় দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও। মোদিকে লক্ষ্য করে রাহুল বলেছেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। অন্য দিকে দিল্লিতে কংগ্রেসের অফিস থেকে অবৈধ অর্থকড়ির লেনদেন হয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মোদি। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ ‘চৌকিদার চোর’ সংক্রান্ত বক্তব্যের জন্য রাহুলকে নোটিশ পাঠায়। সাথে সাথে সারেন্ডার করেন রাহুল। তিনি এটাকে রাজনৈতিক প্রচারণার উত্তেজনায় করা একটি ভুল বলে স্বীকার করে নেন। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, ‘বিচারকের আদালত’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেক দেশেই একটি ‘দেবতার আসন’ পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিচারকেরা হয়ে উঠছেন সার্বভৌম।

তারা চাইলে ঘায়েল করতে পারেন সবাইকে। ভবিষ্যৎ বিপদের আশঙ্কায় সম্ভবত রাহুলের এমন সারেন্ডার। অথচ ভারতের প্রধান বিচারপতির নৈতিক অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এক নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। ব্যাপারটি এ জন্য প্রাসঙ্গিক যে, ওই নারী দাবি করছেন প্রধান বিচারপতির ডাকে সাড়া না দেয়ায় শেষ পর্যন্ত তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে। এই প্রধান বিচারপতির দ্বারা তিনি দুই বার সরাসরি যৌন হেনস্তার শিকার হন বলে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ওই অভিযোগে যৌন হেনস্তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন তিনি।

ধরার বুকে ভারতের গণতন্ত্র সবচেয়ে বড়। দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। একে অপরের ওপর ন্যূনতম সম্মান রাখছেন না। অন্য দিকে বিচারালয় আরো আগে বিতর্কিত হয়েছে। অনেকে তাদের শপথ রক্ষা করে চলছেন না। প্রধান বিচারপতিসহ উল্লেখযোগ্য কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে এর আগে একজন সংখ্যালঘু বিচারপতি গুরুতর নৈতিক স্খলনের অভিযোগ আনেন। পরে উভয় পক্ষ একে অপরকে গ্রেফতার করার নির্দেশনা জারি করেন। দেশটির গণতন্ত্র এ অবস্থায় কত দিন অটুট থাকবে, সেই শঙ্কা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement