২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নৈতিকতার বেহাল দশা

- ছবি : সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এবং এরপর তার অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাটির জট খোলেনি। বিষয়টি গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, সেভাবে তাকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যাচেষ্টা করা হলে বলতে হয়, অপরাধীদের দুঃসাহসের সীমা-পরিসীমা নেই। তারা দিনদুপুরে নিরাপত্তাবেষ্টনির মধ্যেই এমন ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে। পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্রে নিরাপত্তাব্যবস্থায় থাকে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি। তখন বাইরের কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও নিজ নিজ পরিচয় নিয়ে ঢুকতে বাধ্য থাকেন। সাংবাদিকেরাও নিজেদের পরিচয় দিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে হয়।

এখানে রহস্যজনক ব্যাপার হচ্ছে ‘বোরকা পরিহিত’ সেই অপরাধীরা। তাদের কেন শনাক্ত করা যাচ্ছে না? পরীক্ষা চলাকালে বাইরে থেকে অজানা অচেনা কারো সেখানে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। অন্য দিকে, অপরাধীরা যদি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের রাতেও প্রবেশ করে থাকে, তাহলে ওই ঘটনার পর কোন সময় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তারা বের হয়ে যেতে পারল? চারজনের মধ্যে একজনের নাম নুসরাত জানিয়েছেন; শম্পা। ওই ছাত্রীকে গ্রেফতার করা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে স্পষ্ট করে নাম বলার পরও তাকে গ্রেফতার করতে না পারা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। উম্মে সুলতানা পপি নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলছেন, পপিই শম্পা। সত্যিকার অর্থে নুসরাতের জবান অনুযায়ী- সে যদি হয় অভিযুক্ত শম্পা, তাহলে সেই সূত্রে বাকি অপরাধী সবাইকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা কঠিন নয়।

চিকিৎসা ও বিচার পেতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তর থেকে নুসরাত সহযোগিতা পাচ্ছেন। একজন মুমূর্ষু অগ্নিদগ্ধ তরুণীর চিকিৎসায় রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা প্রশংসনীয় ঘটনা। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে একজন সাধারণ মানুষের গুরুতর ব্যাপারে চিকিৎসা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। যারা গরিব, তাদের প্রায় কেউই সুচিকিৎসা পান না। ফলে অনেকে এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সারা জীবনের জন্য অকর্মণ্য হয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আলিম পরীক্ষার্থী, নুসরাতের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং তার যথাযথ চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নুসরাতকে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া।

ডাক্তাররা জানিয়েছেন, নুসরাতের অবস্থা গুরুতর এবং যেকোনো সময় তার অবস্থা যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। আগুনে তার শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। সিঙ্গাপুরে আরো উন্নত চিকিৎসা দেয়া যায় কি না, তা দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর নুসরাতের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার বিস্তারিত বিবরণ সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এমন গুরুতর অবস্থায় তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সিঙ্গাপুরের ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী, দেশেই তার চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে একটি জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আগে থেকে তার চিকিৎসায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ৯ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দুই লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একটি সংগঠন নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে।

বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও ঘটনাটি একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। ঘটনার পরপরই বিভাগীয় পুলিশের প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি দীর্ঘ সময় আলোচনা করে এ অপরাধের মূল কারণ বুঝতে চেয়েছেন। স্থানীয় থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এসে নুসরাতের বক্তব্য রেকর্ড করেছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে এ ব্যাপারে। ঘটনা তদন্তে সোমবার ফেনী জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন দিনের মধ্যে এ কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। ইতোমধ্যে আটক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

দুর্ঘটনাটির সূচনা একজন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ‘যৌন নিপীড়নের’ অভিযোগ থেকে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বাংলাদেশে যেন সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেবারে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন জঘন্য ঘটনা ঘটছে। ওইসব ঘটনার ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা যাবে না। এমনকি, শিশুদের ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনাও ঘটাচ্ছেন শিক্ষক নামের কলঙ্কতুল্য ব্যক্তিরা। গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দিনাজপুরে ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন এক শিক্ষক। ওই শিক্ষক ১২-১৪ জন করে শিক্ষার্থী ব্যাচে পড়ান। ঘটনার দিন পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর সবাইকে ছুটি দিলেও শিশু (মেয়েটিকে) অপেক্ষা করতে বলেন। এ দিকে মেয়ের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে তার মা ওই শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। সাথে সাথে আশপাশের লোকজন এসে ওই লম্পটকে ধরে ফেলে।

এর দুই দিন পর আরেকটি ঘটনা রাঙ্গামাটিতে ঘটেছে। এটিও ঘটিয়েছেন এক ‘শিক্ষক’। শিশু মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। তাকে হত্যা করেছেন তারই শিক্ষক অংবাচিং মারমা। এই মেয়েটিও তার কাছে প্রাইভেট পড়ত। ঘটনার দিন সাথের সবাইকে ছুটি দেয়া হয়, তবে তাকে ছুটি দেয়া হয়নি। বিকেল পর্যন্ত মেয়েটি বাড়ি না ফেরায় অভিভাবকেরা তার খোঁজে শিক্ষকের কাছে যান। শিক্ষক জানান, তিনি সবাইকে ছুটি দিয়েছেন। অভিভাবকেরা সম্ভাব্য সব জায়গায় তার খোঁজ করেও পাননি। তখন সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ে শিক্ষকের ওপর। ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রতিবেশীরা শিক্ষকের ওপর কড়া নজর রাখেন। গভীর রাতে অংবাচিং বস্তা কাঁধে নিয়ে বের হন বাড়ি থেকে। লোকজন তখন তাকে ঘিরে ফেলেন। বস্তা খুলে তারা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর লাশটি পান।

প্রাইভেট টিউটর নামধারীরা নির্জনতার সুযোগ নিয়ে ছাত্রীদের করছেন যৌন নির্যাতন। ২০১১ সালে এ ধরনের একটি ন্যক্কারজনক ঘটনার পর চার দিকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধর দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন একাধিকবার। মেয়েটিকে বারবার যৌন নির্যাতন করতে আগের ধর্ষণের ভিডিওচিত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন এই ব্যক্তি। মেয়েটিকে তিনি হুমকি দেন যে, আগের ধর্ষণের ঘটনা মোবাইলে ধারণ করা হয়েছে। কথা না শুনলে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হবে।’ অর্থাৎ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে একই অপরাধ বারবার করার ঘৃণ্য চেষ্টা চালান পরিমল। মেয়েটির অভিভাবক ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায় প্রথমে। আন্দোলনের মুখে অবশেষে জয়ধরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়, কর্তৃপক্ষকেও এ ব্যাপারে করতে হয় জবাবদিহি। সুবিচার পাওয়ার ব্যাপারে এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ, এ ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে অপরাধীকে ধরতে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

এ ঘটনার পর আরো কিছু ব্যাপার জানা যায়। কিছু শিক্ষক আছেন, যারা ছাত্রীদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালিয়ে থাকেন। এগুলো করে তারা যে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভর্ৎসনা পান, এমন হয় না। নারী নির্যাতনের কারণে তাদের চাকরি যায়, এমনটি হয় না। এটা পরিমলের ব্যাপারেও ঘটতে যাচ্ছিল। ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ উপর্যুপরি করার পরও তাকে ‘সাফসুতরো করার ঠিকা’ নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে ধর্ষণের ঘটনাটি প্রকাশ করে দৈনিক নয়া দিগন্ত। এরপর ছাত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট আন্দোলনের খবর ছাপতে শুরু করে অন্যান্য গণমাধ্যমও।

অবৈধভাবে সংঘটিত হলে সমাজ যৌনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। শিক্ষক নিজের ছাত্রীর ওপর চড়াও হবেন, সেটা অকল্পনীয় চরম অন্যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার কম দায় রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ছাত্রীবান্ধব না থাকার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে দেখা যায়, এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে গাফেল থাকতে। ক্লাসে ঠিকভাবে পড়াশোনা হচ্ছে কি না, তারও মনিটরিং নেই। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচিতিকে অনেক শিক্ষকই কোচিং ব্যবসার বিজ্ঞাপন হিসেবে অপব্যবহার করছেন। যেখানে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে কোচিং সেন্টার যেখানে ছাত্রীদের নিরাপত্তা থাকে না। ফলে প্রাইভেট টিউটরদের হাতে ছাত্রী নিপীড়ন ঘটে থাকে। কোনো ছাত্রীর আত্মহত্যা কিংবা ধর্ষণের মতো চরম ঘটনা ঘটার মাধ্যমেও শিক্ষকের পাশবিক আচরণের খবর মিলছে। কয়টি ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়? বিচারের মুখোমুখিইবা কয়টা ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা হচ্ছে?

শিক্ষকের অন্যায় আচরণের শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা। এতে করে শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে কলুষিত। কেবল উন্নত মৌলিক মানবিক শিক্ষাই পারে প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা রোধ করতে। তেমন শিক্ষার প্রচলন নেই আমাদের দেশে। শিক্ষার প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে বৈষয়িক জীবনের যথেচ্ছ উপভোগ। সবাই আজ ব্যস্ত বেশি বেশি সম্পদ উপার্জনে। কোন শিক্ষা অর্জন করলে অর্থবিত্ত বেশি কামানো যাবে, সেদিকে সবাই ছুটছে। মানুষের ভেতর যে পশু প্রবৃত্তি, সেটা রয়ে যাচ্ছে অটুট। ফলে এমন শিক্ষক আমরা পাচ্ছি, যাদের মধ্যে অনেকে যৌন নিপীড়ক বা দুশ্চরিত্র। আর্থসামাজিক কাঠামোও এর জন্য দায়ী।

শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গটি এখানে আলোচিত হতে পারে। একজন শিক্ষক দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরির কাজ করেন। সে প্রজন্ম কেমন হবে তা অনেকটা শিক্ষকের আচরণের ওপরও নির্ভর করে। তিনি যদি উন্নত মৌলিক মানবিক গুণের অধিকারী না হন, তাহলে তিনি কিভাবে একজন উন্নত মৌলিক ও মানবিক ছাত্র উপহার দেবেন? শিক্ষক নিয়োগে সাধারণ নিয়মকানুনও মানা হয় না। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ এক সময় পরীক্ষার মাধ্যমে হতো। এখনো নিয়োগ পরীক্ষা রয়েছে। তবে এতে সংযোজিত হয়েছে প্রশ্নফাঁস এবং বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা, যা এক সময় চিন্তাও করা যেত না। আবার পরীক্ষা স্বাভাবিক নিয়মে হলেও পরবর্তীকালে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়, ঘুষ গ্রহণ ইত্যাদি প্রাধান্য পাচ্ছে। আধা সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের অবস্থা আরো শোচনীয়। বেসরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগেও কোনো মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না। শিক্ষক হিসেবে একজন সাধারণ মেধাবী ছাত্রকে নিয়োগের প্রসঙ্গটিও যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে না, সেখানে একজন উন্নত নৈতিক মানসম্পন্ন শিক্ষক প্রাপ্তি আরো অনেক দূরের ব্যাপার।

খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে চলছে চরম অনিয়ম। এর সর্বশেষ নজির দেখা গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দলীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে মেধাবী প্রতিযোগীকে অপহরণ করা হয়েছে। এর আগে দেখা গেছে, স্রেফ নিজেদের পছন্দনীয় ব্যক্তিকে শিক্ষক করার মতলবে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বিভাগের প্রয়োজনে শিক্ষক নিয়োগ নয়, কেবল আত্মীয় কিংবা দলীয় লোককে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এমন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।

শিক্ষা প্রশাসনের অবস্থা আরো খারাপ। সোনাগাজীর ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে একটি দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের লোকজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণে কাউকে বহিষ্কার করেছে, এমন ঘটনা বিরল। নৈতিক কোনো পদস্খলনের ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এলে তাকে ধামাচাপা দেয়া হয়। আমরা দেখলাম- ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষার ব্যাপারটি সংবেদনশীল। সাধারণত কারো বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিকতার অভিযোগ উঠলে তাকে সে পদ থেকে কমপক্ষে সরিয়ে দিতে হবে। অথচ বড় ধরনের চারিত্রিক স্খলনের পরও অধ্যক্ষরা নিজেদের পদে বহাল থাকছেন।

আমরা বরং দেখেছি, সোনাগাজীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ নিয়ে সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা। এক দল মাদরাসায় নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে তৎপর। তারা অধ্যক্ষের মারাত্মক স্খলনের দুর্বলতাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পরিচালনা কমিটি এবং মাদরাসা পরিচালনায় নিজের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ সুযোগে। এরা যেকোনোভাবে এই অধ্যক্ষকে ‘কালিমামুক্ত’ দেখাতে চান। সেজন্য মেয়েটির অভিভাবক পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার চাপ দেয়া হচ্ছিল। অধ্যক্ষকে মুক্ত করতে এলাকায় ‘মানববন্ধন’ও করেছে। অন্য পক্ষ এতটাই বেপরোয়া, যেকোনোভাবে তারা এই অধ্যক্ষকে ফাঁসিয়ে দিতে চান। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের দেশে পুলিশের এমন ত্বরিত তৎপরতা অপরাধ দমনে খুব কম দেখা যায়। নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনাটি খোলাসা করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্থানীয় রাজনীতির আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার উচিত দায়িত্বশীল আচরণ করা।
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement