২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কালো মনের সাদা মানুষ

- ফাইল ছবি

১৫ মার্চ শুধু নিউজিল্যান্ডের জন্য নয়, বিশ্ব মুসলিম, বিশ্বের তাবৎ শান্তিকামী মানুষ, আধুনিক সভ্যতা এবং মানবজাতির জন্য একটি কালো দিন। এখন সে দেশের সরকার, পুলিশ ও গোয়েন্দারা যতটা তৎপর সহিংসতা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, ১৫ তারিখ পর্যন্ত তাদের এ তৎপরতা, তথা দায়িত্ববোধ ও কাণ্ডজ্ঞান কেন দেখা যায়নি? এমনকি, ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদ ট্র্যাজেডির সময়ও সেখানকার প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

অর্ধশত মুসলমানের খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট অবাধে তার জঘন্য পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করার সব সুযোগ পেয়েছে। অপর দিকে, ক্রাইস্টচার্চ পুলিশ সেদিন এই গণখুনের ঘটনায় সাড়া দিতে কি বাধা পেয়েছিল? এ জন্য যারা কিংবা যে কারণ দায়ী, তা কি জেসিন্ডা আরডার্নের সরকার উদঘাটন ও প্রকাশ করার সদিচ্ছা ও সাহস রাখে?

ক্রাইস্টচার্চ নিউজিল্যান্ডের দু’টি দ্বীপের একটি- দক্ষিণ দ্বীপের বৃহত্তম শহর এবং তা দ্বীপের সর্ব উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত। উত্তর দ্বীপে অবস্থিত, দেশের রাজধানী ওয়েলিংটন থেকে এই নগরীর দূরত্ব খুব বেশি নয়। ১৫ মার্চ অস্ট্রেলীয় নাগরিক এবং ট্রাম্পভক্ত বর্ণবিদ্বেষী নব্য নাৎসি ঘাতক, ব্রেন্টন ট্যারান্ট দু’টি মসজিদের জুমার জামাতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছিল। মসজিদ দু’টির একটি থেকে আরেকটি প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে। মূল হামলা ও হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে হ্যাগলি পার্কের সংলগ্ন আল নূর মসজিদে। ক্রাইস্টচার্চের এই জায়গা স্থানীয় পুলিশ সদর দফতর থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ।

অথচ সেদিন এমন ভয়াবহ সহিংস ও সন্ত্রাসী তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশ সাড়া দিয়েছে দীর্ঘ ৩৬ মিনিট পরে। স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগ উঠেছে, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী খুনি ট্যারান্টকে মসজিদে সিজদারত মুসল্লিদের নির্বিচারে হতাহত করার জন্য বেশ সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে এই কট্টর খ্রিষ্টান মৌলবাদী ও শ্বেতসন্ত্রাসবাদী তার চরম সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে যথেষ্ট সময় পেয়ে গেছে। একদফা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে নিজের গাড়ির কাছে যাওয়া, সেখানে তার অস্ত্রে গুলি ভরে মসজিদে ফিরে এসে আরেক দফা হত্যাকাণ্ড ঘটানো, তথা বেছে বেছে আহত মুসল্লিদের হত্যা করা, এরপর লিনউড ইসলামিক সেন্টারে গিয়ে আবার মুসল্লিদের খুন করার পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে এই ‘সাদা শয়তান’। একটি উন্নত দেশে পুলিশের দায়িত্ব পালনের নজির এটা হতে পারে না কিছুতেই। তবু ওই শহরের মেয়র পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করলেন! তাই যে কেউ সন্দেহ করতে পারেন যে, কর্তৃপক্ষ এই খুনিকে অবাধে হত্যাযজ্ঞ সংঘটনের সুযোগ করে দিয়েছে।

পাশ্চাত্যের একজন কলামিস্টের ভাষায়, ‘একজন পুলিশ অফিসারের ওপর গুলি চালানো হলে পাল্টা গুলি করতে পুলিশের আধা মিনিট মাত্র সময় লেগেছে। অথচ নিউজিল্যান্ডের মসজিদে শ্বেতাঙ্গ দুর্বৃত্তের সন্ত্রাসী হামলার পর ৫ মিনিটের পথ পুলিশ ৩৬ মিনিটে পার হয়েছে। এটা নিছক অবহেলার দরুন ঘটেছে বলে বিশ্বাস করা যায় না।’

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দূরপ্রাচ্যে অবস্থিত হলেও দেশ দু’টি পাশ্চাত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে গণ্য। এগুলোর যারা শাসক ও কর্তৃত্বকারী জনগোষ্ঠী, বর্তমানে সংখ্যাগুরু সেই সাদা মানুষেরা প্রধানত ব্রিটেন থেকে গিয়ে এবং ভূমিপুত্র আদিবাসীদের হত্যা করে, তাদের সব কিছু জবরদখল করে নিয়েছে। দেশ দুটো দীর্ঘদিন ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। আজো তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন ব্রিটেনের রাজা বা রানী। রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক নীতি, অর্থনীতি, জীবনাচার ও সংস্কৃতি, ধর্ম ও মূল্যবোধ প্রভৃতি সব দিক দিয়েই অস্ট্রেলিয়ার মতো নিউজিল্যান্ডও পাশ্চাত্যের সম্প্রসারিত অংশ, প্রাচ্যের অঙ্গ নয়।

তাই পাশ্চাত্যের মতো নিউজিল্যান্ড সরকারও পরিবেশবাদী ও যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে নিয়মিত অনুসন্ধান করে এবং তাদের ওপর রেকর্ড রাখে। কিন্তু মুসলিমবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের খোঁজ রাখার প্রয়োজন বোধ করে না। মুসলমান অভিবাসীদের ‘আগ্রাসনকারী’ হিসেবে দেখে তাদের টার্গেট করা হচ্ছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ যুদ্ধে। মুসলমানেরা রাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্রবহির্ভূত (বেসরকারি) উভয় সন্ত্রাসের শিকার। মনে রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্যের লাখ লাখ মুসলিম বাস্তুহারা, শরণার্থী ও অভিবাসী হওয়ার কারণ, মার্কিন অথবা ইইউর নেতৃত্বে পরিচালিত, পরিকল্পিত এবং অন্যায় ও আগ্রাসী যুদ্ধ। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া প্রভৃতি দেশ এর দৃষ্টান্ত।

বিখ্যাত গালফ নিউজ পত্রিকার বিশিষ্ট সাংবাদিক মিক ও’রেইলি এক নিবন্ধে বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার সময় বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পারি যে, সবাই আমাকে ভোট দেননি। কিন্তু শপথ গ্রহণ করছি দেশের সবার নেতা হিসেবে। আমার সরকার হবে নিউজিল্যান্ডের সব মানুষের সরকার।’ সাংবাদিক ও’রেইলি বলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চ হামলার পর এখন জেসিন্ডা তা প্রমাণ করে দেখাচ্ছেন।’ এ জন্য অবশ্য তাকে মৃত্যুর হুমকি পেতে হয়েছে।

জেসিন্ডা আরডার্নের দৃষ্টান্ত থেকে বাংলাদেশসহ সব দেশের সরকারের আছে বিরাট শিক্ষা নেয়ার বিষয়। বিশেষ করে যারা নিজেদের গণতন্ত্রী ও নির্বাচিত সরকার বলে বারবার ও জোর দিয়ে প্রচার করে থাকেন, তাদের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত এক ধরনের ‘রোল মডেল’। তিনি প্রমাণ করতে চান, তার সরকার কেবল শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠদের নয়। এটা কালো, তামাটে, মিশ্র, পীত- সব বর্ণের মানুষের। তার নেতৃত্বাধীন সরকার শুধু কর্তৃত্বকারী, অগ্রগামী ও সংখ্যাগুরু সাদা মানুষের নয়। এটা পশ্চাৎপদ ও দরিদ্র আদিবাসী, মুসলিম বা ভিন্ন বর্ণের অভিবাসীসহ সবার প্রতিনিধিত্বশীল। তেমনি সব ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রের সরকারের দায়িত্ব হলো, কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেয়া যে, তারা নিছক Majoritaism বা গরিষ্ঠবাদী নন। বরং স্বদল ও বিরোধী দল, সমতলবাসী ও পাহাড়ি, বৃহৎ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ডান-বাম-মধ্যপন্থী, আদিবাসী ও প্রবাসী, মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই যেন সরকারকে আপন মনে করতে এবং তার ওপর আস্থা রাখতে পারে। সরকারের দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ ও ভূমিকা তেমন হতে হবেই। এ জন্য Populism (লোকরঞ্জনবাদ), Jingoism(অত্যুগ্র স্বাজাত্যবোধ) এবং জাতীয়তাবাদের নামে ধর্মীয়-ভাষাগত-নৃতাত্ত্বিক সাম্প্রদায়িকতা সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, আদর্শিকসহ সব ধরনের সংখ্যালঘুর প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা দিতে হবে অবশ্যই।

নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর কারো কারো চৈতন্যোদয় ঘটছে বলে প্রতীয়মান হয়। তারা বুঝতে পারছেন, শুধু ধর্মীয় মৌলবাদই গোঁড়ামি বা উগ্রতা নয়, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের নাম ভাঙিয়েও সহিংসতা ও উগ্রবাদের প্রপাগান্ডা উসকে দেয়া যায়। বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় কিংবা নৃগোষ্ঠীকে হেয় ও নির্মূল করার টার্গেট নিয়ে, গণতন্ত্রের মুখোশ এবং দেশপ্রেমের খোলশ পরে পরিকল্পিত উপায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা সৃষ্টি এবং মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহার এ ক্ষেত্রে বড় হাতিয়ার।

গত শুক্রবারের পত্রিকার একটি খবর, ‘ফেসবুকে শ্বেত জাতীয়তাবাদ আর না।’ সামাজিক এই গণমাধ্যম সম্প্রতি বেশ কিছুটা বিতর্কে পড়ে ইমেজ হারানোর শঙ্কায় আছে। শ্বেত জাতীয়তাবাদবিরোধী অবস্থান এ ক্ষেত্রে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা অনেকটা পুনরুদ্ধার করতে পারে বৈকি। পত্রপত্রিকা জানায়, ‘ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য- শ্বেত জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদে উসকানি দেয়া সব পোস্ট আটকে দেয়া হবে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের পেজ চিহ্নিত করে তাদের কনটেন্ট আটকানোর সক্ষমতাও বাড়ানো হবে।’ বিবিসি জানিয়েছে, কেউ ফেসবুকে শ্বেতশ্রেষ্ঠত্ববাদের কনটেন্টের খোঁজ করলে তাকে খরভব অভঃবৎ যধঃব নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পেজে নেয়া হবে, যারা চরম দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করছেন। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে ১৫ মার্চ ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় শ্বেতঘাতক ট্যারান্ট তার এই হামলার দৃশ্য ফেসবুকে সরাসরি প্রচার করেছে। এ অবস্থায় ফেসবুকের ঋধপবষরভঃ বা মুখরক্ষা করাও এখন তাদের কাছে জরুরি। তারা শ্বেত জাতীয়তাবাদী অনেক বিষয়কে আগে বর্ণবাদী মনে করেননি। এমনকি, কেউ শ্বেতাঙ্গদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানালে তাও অবাধে প্রচারিত হতো। কারণ, এটাকেও ‘মতপ্রকাশের অধিকার’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক ঘটনার পর বিশ্বনেতাদের অনেকে চরমপন্থী উপাদানের বিষয়ে দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি।

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে কেন প্রকাশ্য দিবালোকে দীর্ঘসময় ধরে মুসলিম হত্যার তাণ্ডব সৃষ্টি করা হলো, এর মূল কারণ অনুধাবন করা জরুরি। সবাই একমত যে, খুনি ট্যারেন্ট একা হামলা করুক বা না করুক, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ও আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়; বরং নিঃসন্দেহে সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পরিণতি। ঘাতক বুঝেশুনে ঠাণ্ডামাথায় তার চরম বিদ্বেষপ্রসূত প্রতিহিংসা ও রক্তপিপাসা চরিতার্থ করেছে। তার মতো অসংখ্য শ্বেতাঙ্গ দীর্ঘ দিন ধরে নব্যনাৎসি মনোভাব পোষণ করছে, যার উৎস মুসলিম, অশ্বেতাঙ্গ ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মজ্জাগত ঘৃণার মানবেতর তত্ত্ব।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশনের গবেষক, অধ্যাপক জেমস পেট্রাস লিখেছেন, ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার পেছনে গভীর রাজনৈতিক, মতাদর্শিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইঙ্গ মার্কিন কর্তৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব ৩০ বছর মুসলিম দেশগুলোতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ মুসলিম বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থী হয়েছে। তবুও বলা হচ্ছে, মুসলিমরা বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলার উৎস। দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্যের সব সরকার ফ্যাসিবাদী চরমপন্থী, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী দুর্বৃত্তদের মেনে নিয়েছে। ফলে তারা অবাধে মুসলমানবিরোধী প্রচারণা ও কর্মকাণ্ডের সুযোগ পাচ্ছে। এ প্রচারণা বেশির ভাগ চালানো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তৃতীয়ত, পুলিশ মুসলমানদের এবং আইন মেনে চলা নাগরিকদের খবর রাখে; তাদের ওপর নজরদারি করে। কিন্তু পুলিশ খুনি ও মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারকদের খোঁজখবর রাখার ক্ষেত্রে ব্যর্থ। খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্টের ব্যাপারে নজরদারি বা কোনো নথি নেই নিউজিল্যান্ডের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। কয়েক মাস আগেই সে এ হামলার ফন্দি আঁটে। তবুও ডধঃপযষরংঃ-এ তার কথা নেই। বন্দুকের লাইসেন্স, উচ্চক্ষমতার এক ডজন অস্ত্র কিংবা বিস্ফোরক পেতে তার তো সমস্যা হয়নি।

গ্লোবাল রিসার্চ অনলাইনে প্রকাশিত এক লেখায় জেমস পেট্রাস আরো বলেন, ‘পাশ্চাত্যে ইসলামবিদ্বেষ ব্যাপক। ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিদ্বেষ মহামারীতুল্য। অভিবাসন প্রশ্নে পশ্চিমা ও ইসরাইলি নেতাদের মনোভাব একই রকম কঠোর। কোনো কোনো দেশে মুসলিম অভিবাসী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিউজিল্যান্ডের এই খুনির ওপর পশ্চিমা ও ইসরাইলি ভাবাদর্শের স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে।’

পেট্রাস তার কলামের উপসংহারে বলেছেন, (নিউজিল্যান্ডে) যারা হামলার শিকার, সম্ভবত মুসলিম বলেই তারা হামলার শিকার হয়েছেন। বেদনা, কান্না, ক্ষোভ, প্রার্থনা ইত্যাদি তাদের এ নিয়তি পাল্টাবে না। যদি পশ্চিমা নেতারা কথিত ‘মুসলিম আগ্রাসনকারী’দের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ না করেন, তাহলেই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ও তাদের অনুসারীরা দমে যাবে। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও শাসকেরা মুসলিম রাষ্ট্রে আগ্রাসন ও দখলবাজি বন্ধ করলে, মুসলমানদের উদ্বাস্তু করা বন্ধ হলে তবেই মসজিদে অথবা মুসলমানের ওপর হামলা বন্ধ হবে।

পাদটীকা : কথায় বলে ‘সাদা মনের মানুষ’। নিউজিল্যান্ডে অর্ধশত মুসল্লি, তথা নির্দোষ মুসলমানের খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বকামী। পত্রিকায় ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে, Rise and Resist against White Supremacist.এই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বকামীদের গায়ের রঙ সাদা হলেও মনটা একেবারে কুচকুচে কালো। ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদের জুমার জামাতে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ট্যারান্ট এর প্রমাণ দিয়েছে। তার নব্যনাৎসিবাদী চরমপন্থী সংগঠনের নাম Black Sun বা কালো সূর্য।


আরো সংবাদ



premium cement