২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঝিলাম নদীর বাঁকে

-

সন্ধ্যারাগে-ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা
আঁধারে মলিন হলো, যেন খাপে ঢাকা
বাঁকা তলোয়ার;
দিনের ভাঁটার শেষে রাত্রির জোয়ার;
অন্ধকার গিরিতটতলে
দেওদার-তরু সারে সারে;
মনে হলো, সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে,
বলিতে না পারে স্পষ্ট করি-
অব্যক্ত ধ্বনি পুঞ্জ অন্ধকারে উঠিছে গুমরি ॥
(বলাকা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শ্রীনগর, ১৩২২ ব.)

কাশ্মিরকে বলা হতো ভূ-স্বর্গ। ভূ-স্বর্গ বলা হতো এর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে। রবীন্দ্রনাথ কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরে বেড়াতে গিয়েছিলেন এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে। আর এখানে বসে লিখেছিলেন তার ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতা। তখন তিনি নিশ্চয় ভাবতে পারেননি যে, কাশ্মির হয়ে উঠবে একদিন ভয়াবহ রণক্ষেত্র। আর সেখানে সমাবেশ ঘটবে বিপুল সৈন্যের।

শিখ রণজিৎ সিংয়ের (১৭৮০-১৮৩৯) নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল বিরাট একটা শিখ সাম্রাজ্য। যার রাজধানী ছিল লাহোর। রণজিৎ সিং কাশ্মির দখল করেন ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল শাসকদের হাত থেকে। তার শাসনামলে কাশ্মিরের মুসলমানদের ওপর চলেছিল যথেষ্ট দমন-পীড়ন। এ সময় শিখরা হয়ে উঠেছিলেন ভয়ঙ্কর ধরনের মুসলিমবিদ্বেষী। যদিও তারা ধর্মের দিক থেকে ছিলেন এক ঈশ্বরবাদী। আর মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী। রণজিৎ সিং ধর্মের দিক থেকে যদিও ছিলেন গোঁড়া শিখ, কিন্তু তার ছিল একজন বিশ্বস্ত ডোগরা হিন্দু সেনাপতি। যার নাম গুলাব সিং। তিনি গুলাব সিংকে দেন জম্মু শাসনের ভার। গুলাব সিং ছিলেন ডোগরা পাঞ্জাবি হিন্দু। পাঞ্জাবি ভাষার তিনটি উপভাষা আছে।

একটাকে বলে লহন্দা বা হিন্দকি। হিন্দকি চলে পাঞ্জাবের পশ্চিম ভাগে। এটা হলো পাঞ্জাবি মুসলমানদের ঘরোয়া ভাষা। পাঞ্জাবিদের আরেকটি ভাষা, যাকে বলা যায় আদর্শ পাঞ্জাবি ভাষা, এ ভাষায় কথা বলে শিখরা। পাঞ্জাবির আর একটি উপভাষা হলো ডোগরি। যে ভাষায় কথা বলে প্রধানত পাঞ্জাবি হিন্দুরা। ডোগরিতে এখন কথা বলে জম্মুর হিন্দুরা। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসন পাঞ্জাব দখল করে ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। এ সময় গুলাব সিং ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে কাশ্মির কিনে নেন ১০ লাখ স্টার্লিং পাউন্ড দিয়ে। এ সময় থেকে তিনি হন জম্মু-কাশ্মিরের করদমিত্র মহারাজা।

যাকে বলা হয় প্রকৃত কাশ্মির উপত্যকা, তা হলো ঝিলাম নদীর উত্তর ভাগের অংশ। এটি ৮৫ মাইল লম্বা এবং ২০ থেকে ২৫ মাইল চওড়া। এই কাশ্মির উপত্যকা একসময় ছিল একটি মুসলিম স্বাধীন সালতানাত, যা প্রতিষ্ঠা করেন শাহ মির্জা অথবা মীর ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। মির্জা ছিলেন একজন ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তি। তিনি সোয়াত থেকে আসেন কাশ্মিরে। হয়ে ওঠেন কাশ্মিরের হিন্দু রাজার একজন খুব বিশ্বস্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী। পরে রাজা মরে গেলে তিনি হন কাশ্মিরের শাসক। বিয়ে করেন কাশ্মিরের বিধবা রানীকে। এরপরে কাশ্মিরে মুসলমান সুলতানরা হলেন সুলতান শাহ মির্জা (১৩৪৬), সুলতান সিকান্দার; প্রতিমা ভঙ্গকারী (১৩৯৩-১৪১৬), সুলতান জয়নুল আবেদীন (১৪২০-১৪৬৭), মির্জা হায়দার (১৫৪১-১৫৫১)। এরপর কাশ্মিরের সুলতানের হাত থেকে বাদশাহ আকবর কাশ্মির দখল করেন ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। কাশ্মির আসে মুঘল সম্রাটদের নিয়ন্ত্রণে। কাশ্মির একসময় বাংলাদেশের মতোই ছিল একটা পৃথক মুসলিম সালতানাত। এ সময় গড়ে উঠেছিল পৃথক জাতীয় বৈশিষ্ট্য। কাশ্মিরের মুসলমানরা ঘরে বলে কাশ্মিরি ভাষা। কিন্তু এখন তাদের সাংস্কৃতিক ভাষা হলো উর্দু। তবে এই উর্দুকে বলা হয় কাশ্মিরি উর্দু। কারণ এর সাথে যাকে বলা হয় চ্যোস্ত উর্দু, তার সাথে কিছু কিছু পার্থক্য হতে দেখা যায় কাশ্মিরি ভাষার প্রভাবে। গুলাব সিং কাশ্মিরের মহারাজা হন। তারপর তার বংশের রাজা হন স্যার হরি সিং। হরি সিং ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেন ভারতীয় ইউনিয়নে। কাশ্মিরের বাধে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।

ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ-ভারত সাম্রাজ্য ছিল দু’টি অংশে বিভক্ত। একভাগকে বলা হতো ব্রিটিশ-ভারত, যা চলত সরাসরি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে। আর অন্য অংশকে বলা হতো দেশীয় রাজাদের শাসিত অংশ। ভারত সাম্রাজ্যের পাঁচ ভাগের দুই ভাগ ছিল দেশীয় রাজাদের শাসনে। কাশ্মির ছিল এমনি একটি রাজ্য। প্রশ্ন ওঠে, ভারত স্বাধীন হলে দেশীয় রাজাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে। সিদ্ধান্ত হয়, দেশীয় রাজারা ভারতে অথবা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন। অথবা থাকতে পারবেন স্বাধীন। জুনাগড়ের শাসক ছিলেন মুসলমান। কিন্তু বেশির ভাগ প্রজা ছিলেন হিন্দু। জুনাগড়ের শাসক (নবাব) পাকিস্তানে যোগ দেন। কিন্তু ভারত জুনাগড় দখল করে। যুক্তি দেখায়, জুনাগড় হিন্দুপ্রধান এবং তা পাকিস্তানের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। কাশ্মিরের বেশির ভাগ প্রজাই ছিলেন মুসলমান এবং তা হলো পাকিস্তানের সাথে লাগোয়া। কিন্তু কাশ্মিরের হিন্দু রাজা যোগ দিলেন ভারতে। ফলে পাকিস্তানের সৈন্য আক্রমণ করে কাশ্মির। কাশ্মির নিয়ে শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওয়াহের লাল নেহরু কাশ্মির সমস্যাকে নিয়ে যান জাতিসঙ্ঘে। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ বলে, যুদ্ধবিরতি করতে এবং কাশ্মিরে গণ-অভিমত (Plebiscite) গ্রহণ করতে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পরে যুদ্ধ থামে। পাকিস্তান সম্মত হয় গণ-অভিমত গ্রহণে। কিন্তু ভারত রাজি হয় না। নিরাপত্তা পরিষদে গণ-অভিমত গ্রহণের দাবি নতুন করে উঠলে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভোটো দেয়। ফলে গণ-অভিমত নেয়ার আর কোনো সুযোগ থাকে না। সাবেক কাশ্মিরের তিন ভাগের এক ভাগ পাকিস্তান দখল করেছিল। এখন যাকে বলা হচ্ছে আজাদ-কাশ্মির। আজাদ-কাশ্মির ঠিক পাকিস্তানের অংশ নয়। আবার তা ভারতের কাশ্মিরও নয়।

পাকিস্তান এখনো রাজি আছে গণ-অভিমত গ্রহণে। তাই সে সাবেক কাশ্মিরের যে অংশ দখল করেছে তাকে বলছে না পাকিস্তানের অংশ। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ সৈন্যের সহযোগিতায় কাশ্মিরের এক মহারাজা দখল করেন লাদাখ। লাদাখের মানুষ দেখতে অবিকল তিব্বতিদের মতো। তারা তিব্বতি ভাষায় কথা বলেন। ধর্মে তারা হিন্দু নন, মুসলমানও নন, হলেন তিব্বতিদের মতো লামা বৌদ্ধ। ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীন লাদাখের ১২ হাজার বর্গমাইল এলাকা দখল করে নেয়। বলে, এই অঞ্চল আসলে হলো তিব্বতের অংশ। অর্থাৎ কাশ্মিরের মহারাজার সময় যাকে বলা হতো জম্মু-কাশ্মির দেশীয় রাজ্য, তা এখন তিন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশ আছে পাকিস্তানের হাতে, আর এক অংশ আছে ভারতের হাতে এবং অন্য অংশ আছে মহাচীনের নিয়ন্ত্রণে। কাশ্মির সমস্যা তাই হয়ে উঠেছে আগের তুলনায় অনেক জটিল। কাশ্মির সমস্যার সাথে আসছে চীনেরও প্রসঙ্গ। এ ছাড়া, চীন পাকিস্তানের গোয়াদরে গড়েছে নৌঘাঁটি।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাধলে চীন তাই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় হয় Indus Waters treaty। যাতে পাকিস্তান পায় ঝিলাম নদীর পানি ব্যবহারের বিশেষ অধিকার। সে এই নদীর পানি ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করেছে Mangla Dam, ঝিলাম নদীর ওপর, আজাদ-কাশ্মিরের মিরপুর জেলায়। ভারত এখন সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি মানতে চাচ্ছে না। দিতে চাচ্ছে না ঝিলাম নদীর পানি। সে যদি এটা করে, তবে যুদ্ধ আবার অনিবার্য হয়ে উঠবে। আর তা গ্রহণ করবে ভয়াবহ রূপ। কারণ ভারত-পাকিস্তান উভয়ই এখন পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ। অনেকে বলছেন, নরেন্দ্র মোদি কাশ্মিরে যা করছেন সেটি হলো আসন্ন ভারতীয় নির্বাচনে ভোট পাওয়ার জন্য। কিন্তু কাশ্মিরে গোলযোগ ঘনিয়ে উঠছে সেচের পানি বণ্টন নিয়ে। যারাই ভারতের নির্বাচনে জিতুক, তাদেরই এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সাথে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। পানি নিয়ে ভারতে নিজের দেশেও জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ ভারতে কাবেরি নদীর পানি নিয়ে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্যে সৃষ্টি হতে পেরেছে বিশেষ বিবাদ-বিসম্বাদ। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় মানতে রাজি হচ্ছে না এই দু’টি প্রদেশ। কাবেরি নদীর পানির সমস্যা মেটাবার জন্য স্থির হয়, গঙ্গা থেকে খাল কেটে পানি কাবেরি নদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। আর গঙ্গা নদীর পানির অভাব পূরণ করা হবে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে খাল কেটে পানি নিয়ে গঙ্গা নদীতে ফেলে। কিন্তু এভাবে পানি নিলে বাংলাদেশ হতো ব্রহ্মপুত্রের পানি থেকে বিশেষভাবেই বঞ্চিত। একবার গঙ্গার ওপর ফারাক্কা ব্যারাজ করে বাংলাদেশে সৃষ্টি করা হয়েছে পানির অভাব। ব্রহ্মপুত্রের পানি ভারত এভাবে গ্রহণ করলে বাংলাদেশে হতে পারত পানির আরো অভাব। কিন্তু বর্তমানে ভারত এই পরিকল্পনাকে আর কার্যকর করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, চীন তিব্বতে সাংপো নদীর পানি ব্যবহার করবার জন্যে তার ওপর নির্মাণ করছে ব্যারেজ। ফলে তিব্বত থেকে ব্রহ্মপুত্রে আর আগের মতো পানি আসবে না।

পানির সমস্যা তাই কেবল ঝিলাম নদীর বাঁকেই হচ্ছে না, হচ্ছে আরো ব্যাপকভাবে। সিন্ধু নদীর (নদের) উদ্ভব হয়েছে তিব্বতের মানস সরোবরের কাছ থেকে। সাংপোর উদ্ভব হয়েছে মানস সরোবরেরই কাছ থেকে। সাংপো আসামে প্রবেশ করবার পর নাম পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র। অবশ্য এতে যুক্ত হয়েছে আরো অনেক উপ-নদী। কিন্তু সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হলো বরফ গলা পানি, কেবলই বৃষ্টির পানি নয়। আমাদের দেশে অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা খুবই ভারতঘেঁষা। অথচ ভারত আমাদের যেভাবে নদীর পানি থেকে বঞ্চিত করছে, তাতে তাদের এতটা ভারতপ্রেমী হওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। কাশ্মিরে গোড়াতে কাশ্মিরকে ভারত সরকার যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিল। যেমন কাশ্মিরে ছিল পৃথক রাষ্ট্রপতি। তিনি নির্বাচিত হতেন কাশ্মিরের নির্বাচকমণ্ডলী দিয়ে। কাশ্মিরের রাষ্ট্রপতিকে বলা হতো সর্দার-ই-রিয়াসৎ। তার ছিল যথেষ্ট ক্ষমতা। কিন্তু এখন কাশ্মির হয়ে পড়েছে ভারতের একটি প্রদেশ।

কাশ্মিরের রাষ্ট্রপতি বলে এখন আর কিছু নেই। কাশ্মিরের রাজ্যপাল হন ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মতো ভারতের প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে নিযুক্ত। তিনি আর কাশ্মিরের নির্বাচকমণ্ডলী দিয়ে নির্বাচিত হন না। কাশ্মির এখন ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যমাত্র। ভারতীয় শাসনতন্ত্রের ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভারত ছাড়া যেকোনো রাষ্ট্রই বিদেশী রাষ্ট্র,- তবে রাষ্ট্রপতি কোনো রাষ্ট্রকে ‘বিদেশী রাষ্ট্র নয়’ বলে ঘোষণা করতে পারেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট তাদের সংবিধানের এই ধারা অনুসারে কাশ্মিরকে এখন করে নিয়েছেন ভারতীয় রাষ্ট্রের অংশ। ভারতের প্রেসিডেন্ট যে, ভবিষ্যতে আর কোনো দেশকে এভাবে ভারতের অংশ করে নিতে চাইবেন না, সেটা বলা যায় না। ১৯৭১-এর যুদ্ধ চলার সময় আমার মনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল ভারতীয় সংবিধানের এই ধারাটির জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরুর পিতামহ গঙ্গাধর নেহরু ছিলেন কাশ্মিরের অধিবাসী। তিনি কাশ্মির থেকে এলাহাবাদে এসে উপনিবিষ্ট হন ও প্রচুর বিত্তের অধিকারী হন। জওয়াহের লাল নেহরু ব্যক্তিগতভাবে কাশ্মিরের জন্য অনুভব করতেন বিশেষ মমতা। তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবেও চান কাশ্মির ভারতের সাথে যুক্ত থাকুক। কাশ্মির সমস্যা নিয়ে অনেকে অনেক কিছু ভেবেছেন। আমার মনে হয় কাশ্মির সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে জম্মু-কাশ্মিরে ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ শাসন মেনে নিয়ে (Condominium)। যেমন যৌথ শাসন আছে ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে অন্দরা (Andorra) নামক রাজ্যে।

অন্দরা শাসিত হয় ফ্রান্স ও স্পেনের মাধ্যমে। অন্দরার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না এই দু’টি রাষ্ট্র। কেবল পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে অন্দরাকে আলোচনা করতে হয় ফ্রান্স ও স্পেনের সাথে। আমি যে কাশ্মিরে ভারত-পাকিস্তান যৌথ শাসনের কথা প্রথম বলছি, তা নয়। আমার আগেও, যত দূর মনে পড়ছে, দু-একজন বলেছেন। কিন্তু কথাটা এখন চাপা পড়ে গেছে। বলা হয়, কাশ্মির স্বাধীন হলে ভারতের অন্যান্য অঙ্গরাষ্ট্র স্বাধীন হতে চাইবে। ফলে কাশ্মিরকে আর স্বাধীনতা দেয়া যায় না। কিন্তু যদি জম্মু-কাশ্মিরকে পাকিস্তান এবং ভারতের যৌথ শাসনে আনা যায়, তবে ভারতের অন্যান্য রাজ্য স্বাধীন হতে চাইবে না। এ রকমই আমার মনে হয়। কাশ্মিরের নদীগুলোর পানি বণ্টন বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় যেভাবে হতে পেরেছে, তাকেই বজায় রাখতে হবে। না হলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো যাবে না।

লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement