রেজিম চেঞ্জ
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৬
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তন একটি সাধারণ বিষয়। পৃথিবীর সর্বত্র প্রায়ই সরকারের পরিবর্তন ঘটছে। ‘রাজা যায় রাজা আসে, সিংহাসন খালি নাহি রয়।’ আগেকার দিনে রাজা-বাদশাহর পরিবর্তন হতো উত্তরাধিকার সূত্রে। রাজার ছেলে রাজা হবে- এটা ছিল নিয়ম। নিয়মের ব্যতিক্রম হলে লড়াই-যুদ্ধ ছিল অনিবার্য। ‘জোর যার মুলুক’ তার হতো। আধুনিক সময়ে গণতন্ত্র বিকাশের সাথে সাথে সরকার পরিবর্তন পদ্ধতি বদলে গেছে। এখন মূলত চারটি উপায়ে সরকার পরিবর্তন হয়ে থাকে। প্রথমত নির্বাচন ব্যবস্থা, দ্বিতীয়ত গণ-আন্দোলন, তৃতীয়ত শক্তি প্রয়োগ। এই শক্তি প্রয়োগকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- সামরিক অভ্যুত্থান এবং আদর্শিক বিপ্লব। চতুর্থত, ষড়যন্ত্র ও কৌশলগত প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন। নির্বাচনব্যবস্থা এখন গোটা পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্য সরকার পরিবর্তনপদ্ধতি। একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই পদ্ধতিতে যারা জনগণের সম্মতি লাভ করেন, তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাসীন হন। ফ্রান্সিস ফুকিয়ামা এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ‘সভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থা’ বলেছেন। তারপরও দেখা যায়, দেশে দেশে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটছে। লক্ষণীয়, যেসব দেশে এ ধরনের গণ-আন্দোলন ঘটছে, সেখানে দীর্ঘকাল ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধেই এসব ঘটছে; যেমন ‘আরব বসন্ত’। আর এক প্রকার সরকার পরিবর্তন পদ্ধতি আছে- এটি হলো সামরিক অভ্যুত্থান এবং আদর্শিক বিপ্লব। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার কারণে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনপদ্ধতি আটপৌরে এবং অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। কালেভদ্রে দু-একটি দেশে সামরিক অভ্যুত্থান বা ক্যু ঘটছে।
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও মিসরের মতো কয়েকটি দেশে প্রকারান্তরে সামরিক বাহিনী শাসন করছে। আর ‘আদর্শিক বিপ্লব’ বলতে যা বুঝাতে চাইছি, তা হচ্ছে সমাজতন্ত্র বা ইসলামী আদর্শকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনগণের পক্ষ থেকে সংঘটিত সশস্ত্র বিপ্লব। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তীকালে সামরিক অভ্যুত্থান এবং আদর্শিক বিপ্লবের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। বর্তমান বিশে^ তা এক রকম অচল ও অদৃশ্য।
সরকার পরিবর্তনের ধারায় সাম্প্রতিককালে একটি পরিভাষা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে- আর তা হলো ‘রেজিম চেঞ্জ’। বাংলা ভাষায় এর প্রতিশব্দ হতে পারে ‘সরকার বদল’। শব্দটি সাম্প্রতিককালে বহুল ব্যবহৃত হলেও ১৯২৫ সাল থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এর প্রয়োগ দেখা যায়। ‘রেজিম চেঞ্জ’ মানে, একটি সরকারের পরিবর্তে আরেকটি সরকার প্রতিস্থাপন। পরিবর্তনটি পুরোপুরি না হয়ে আংশিকও হতে পারে। বিশেষ করে ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পরিবর্তনকে মুখ্য বিষয় বলে গণ্য করা হয়। এ ধারণাটির সাথে শক্তি প্রয়োগের বিষয় সম্পৃক্ত। আরো খোলামেলাভাবে বলা যায়, বাইরের শক্তিধর বা পরাশক্তির ইচ্ছার অনুকূলে কোনো দেশের নেতৃত্ব বদল কিংবা সরকার পরিবর্তন। সমরবিশারদেরা এর একটি যুতসই নাম দিয়েছেন- ‘রোল ব্যাক’। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিধানে ‘রোল ব্যাক’-এর অর্থ an occasion when the influence of particular laws, rules, etc. is reduced। তখন আইনকানুন ও প্রথা পদ্ধতি সীমিত হয়ে আসে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর প্রায়োগিক অর্থ দাঁড়ায়- ‘শক্তি প্রয়োগ বা রণকৌশলের মাধ্যমে বিরূপ বা শত্রু সরকার পরিবর্তনের জন্য জোরপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ।’
এখানে রাষ্ট্রের অবয়ব ঠিক রেখে সরকার তথা নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার পরিবর্তনের কৌশল হলো অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, সামরিক অভ্যুত্থান, অর্থনৈতিক অবরোধ এবং রাষ্ট্রের পুনর্গঠন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক, লিবিয়া ও আফগানিস্তানে মার্কিনবিরোধী সরকার উৎখাতের জন্য ওই শব্দযুগল বারবার ব্যবহার করেছেন। নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মার্কিন নেতৃত্ব তাদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে দায়িত্ব দিয়ে থাকে।
¯œায়ুযুদ্ধের সময়কালে ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সমান প্রতিযোগিতা ও পারঙ্গমতা দেখিয়েছে। আদর্শিক সমীকরণে এর নাম দেয়া যেতে পারে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের লড়াই। একটি দেশে সমাজতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সরকারকে উৎখাতের জন্য দীর্ঘ ষড়যন্ত্র তথা কৌশলের আশ্রয় নিত। সে ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে কিউবা, লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে ভেনিজুয়েলা। সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশে দেশে সমাজতন্ত্র রফতানি করার জন্য তার আদর্শিক মিত্রদের দ্বারা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। পঞ্চাশের দশকে মিসরে ডানপন্থী জেনারেল নাজিবকে হটিয়ে বাম ধারার নাসের ক্ষমতা দখল করেন। লিবিয়ায় বাদশাহ ইদ্রিসকে বিতাড়ন করে কর্নেল গাদ্দাফি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। ইরাকে কিশোর বাদশাহ ফয়সালকে পদচ্যুত করে কর্নেল করিম কাশেম ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৬৫ সালে বাম অভ্যুত্থানের বিপরীতে ক্ষমতার লড়াইয়ে জেনারেল সুহার্তো ক্ষমতাধর হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে আইয়ুবের সামরিক অভ্যুত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জ্ঞাপন করে।
দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ দেশে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুকূলে সামরিক অভ্যুত্থান এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সফলতা লাভ করেছিল। এভাবে ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০- স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে পরাশক্তিদ্বয় সরকার পরিবর্তনে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। বামপন্থী চিন্তাবিদেরা মনে করেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং পূর্ব ইউরোপে সরকার পরিবর্তনে মার্কিন ভূমিকা রয়েছে। এখনো পরিবর্তন প্রবাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বর্তমান রুশ ফেডারেশনের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কথা উল্লেখ করা যায়। ২০১১ সালে সিরিয়ায় যখন ‘আরব বসন্ত’-এর শুরু তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের পক্ষ নেয়। ২০১৬ সালে ওই সরকারের পতন ঘনীভূত হলে রুশ ফেডারেশন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। বেঁচে যায় বাশার আল আসাদের সরকার। এখন এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রুশ ফেডারেশন ও তুরস্কের মধ্যে নানা সমীকরণ চলছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বে তাদের প্রভুত্ব কায়েম করে। কোনো সরকারের টিকে থাকা বা না থাকা তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের ‘মানবিক’ অথবা ‘অমানবিক’ চরিত্রের নির্ধারক হয়ে দাঁড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ‘নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা’-এর ঘোষণা দেন। এই ঘোষণায় মানবিকবতা ও গণতন্ত্রায়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তারা এর বিপরীতটিই করেছেন। ইরাক, আফগানিস্তান ও আজকের সিরিয়া এর উদাহরণ। হাইতি, পানামা ও এখনকার ভেনিজুয়েলা মার্কিনিদের সাম্রাজ্যবাদী কার্যক্রমের জ্বলন্ত উদাহরণ। ভারতীয় বুদ্ধিজীবী বিজয় প্রসাদ সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে ‘রেজিম চেঞ্জ’ তথা মার্কিন অভিপ্রায়ে সরকার পরিবর্তনের ১২টি প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
এগুলো হচ্ছে- ১. ঔপনিবেশিক ফাঁদ, ২. নতুন আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার ব্যর্থতা, ৩. কৃষিব্যবস্থার ধ্বংস সাধন, ৪. লুটপাটের সংস্কৃতি, ৫. সর্বাত্মক ঋণব্যবস্থা, ৬. অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ৭. সামাজিক খাতে ব্যয় হ্রাস, ৮. জনগণের ব্যাপক হারে দেশ ত্যাগ, ৯. করপোরেট নেতৃত্ব, ১০. কর্তৃত্বের বৈধতা, ১১. অর্থনৈতিক অবরোধ এবং ১২. অবশেষে যুদ্ধ। অতীত থেকে কিছু উদাহরণ টেনে তিনি ওই প্রক্রিয়াগুলো প্রমাণ করতে চেয়েছেন। নিকট অতীতে চিলির ঘটনাটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলোন্দেকে উৎখাতের জন্য সব কিছু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিআইএ ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ ‘ফিউ বেল্ট’ নামের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়। প্রথমত, চিলির অর্থনীতি বিকল করার নীতি গ্রহণ করা হলো। এরপর অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামিয়ে দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আলেন্দে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে নিহত হন।
এখন এ ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশল পরিচালিত হচ্ছে ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে। ভেনিজুয়েলার তেলের দাম (ব্যারেল-প্রতি) ২০০৮ সালে ছিল ১৬০.৭২ মার্কিন ডলার। জানুয়ারি ২০১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৫১.৯৯ মার্কিন ডলারে।
এ ধরনের ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। ভেনিজুয়েলা বা আরব বিশ্বের মতো তেল বা অন্য কোনো বিশেষ সম্পদে সমৃদ্ধ নয় বাংলাদেশ। তা ছাড়া, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এমন কোনো দ্বান্দ্বিক পর্যায়ে উপনীত হয়নি যে, ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর মহড়া এখানে হতে পারে। তবুও সাবেক মন্ত্রী, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘বাংলাদেশটাও ভেনিজুয়েলা হয়ে যেতে পারে।’ তিনি হয়তো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের সুপারিশ সম্পর্কে ইঙ্গিত করে থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি হুমকির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে লেখা যৌথ চিঠিতে ওই কমিটি বাংলাদেশে নির্বাচনের আগের সহিংসতা, গণগ্রেফতার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই চিঠিতে তারা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অব্যাহত অঙ্গীকার প্রদর্শন জরুরি এবং বাংলাদেশ থেকেই তার সূচনা হওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরকারকে অভিনন্দন জানাতে বিরত থাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে চিঠি দিয়েছেন, সেখানেও ‘অভিনন্দন’ শব্দটি উহ্য রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার চিঠিতে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিরোধী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলা এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের খবরগুলো অব্যাহত থাকায় জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হচ্ছে।’
ট্রাম্প তার চিঠিতে সাম্প্রতিক নির্বাচনের বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানের কথাও উল্লেখ করেন। একই সুর পরিলক্ষিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অধিনায়ক অ্যাডমিরাল অ্যাডাম ফিলিপ এস ডেভিডসনের কণ্ঠে। তিনি দক্ষিণ এশীয় নিরাপত্তাকাঠামোয় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসেবে উল্লেখ করে গত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনেছেন। ওই নির্বাচনকে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘ক্ষমতা আরো কেন্দ্রীভূতকরণের উদ্বেগজনক প্রবণতা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরো মন্তব্য করেন, এতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটিকে কার্যত একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন। এসব মন্তব্য ক্ষমতাসীন সরকারের অনুকূল না হলেও এমন প্রতিকূল নয় যে, তা তথাকথিত ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ধারে-কাছে আসতে পারে। সেই সাথে এসব বিরূপতা মোকাবেলার জন্য সরকারের দৌড়ঝাঁপ কূটনীতিও চলছে। নির্বাচনের অব্যবহিত পরপরই পররাষ্ট্র সচিব যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের সুযোগে বিরূপতা অপনোদনের চেষ্টা নিশ্চয়ই করেছেন।
গায়ের জোরে ক্ষমতা পরিবর্তনের চেষ্টা একটি অস্বাভাবিক বিষয়। তবে স্বৈরাচারই তার দুঃশাসন ও দুর্নীতির কারণে প্রকারান্তরে ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভেনিজুয়েলায় মার্কিনিরা যা করছে, তা আন্তর্জাতিক আইনকানুন রীতিনীতির প্রকাশ্য লঙ্ঘন। যেকোনো অবস্থায়ই হোক না কেন, দেশের মানুষই সে দেশের ভাগ্যবিধাতা। ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা কলে-কৌশলে সরকারের পতন হওয়া সহজ ওই সব দেশে, যেখানে গণতন্ত্রের ভিত শক্ত নয়। সাধারণত স্বৈরাচারী রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। জনগণ ওই সরকারের উত্থান ও পতন নিয়ে কোনো আগ্রহ প্রদর্শন করে না। ফলে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা নির্বাচনকে ভয় পায়। তাই তারা ছল-বল ও নানা ধরনের কলাকৌশল প্রয়োগ করে নির্বাচনে জিতে যেতে চায়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অথচ স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগের রক্ষাকবচ না থাকায় শাসক বা শাসকগোষ্ঠী জবাবদিহি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। স্বাভাবিকভাবে গণতন্ত্রের পথে অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে রেজিম চেঞ্জ বা সরকার পরিবর্তনই কাক্সিক্ষত। আর অস্বাভাবিক হলো অভ্যুত্থান বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অদল-বদল। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ‘গণবিপ্লব’ আইনানুগ হলেও অস্বাভাবিক পন্থা। স্বৈরশাসকেরা যত দ্রুত এটা বুঝবেন, ততই জনগণের মঙ্গল।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা