আমাদের জাতিসত্তার স্বরূপ
- এবনে গোলাম সামাদ
- ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:২৮
বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এ দেশের মানুষের জাতিসত্তার একটি উপাদান হলো ভাষা। আর একটি উপাদান হলো ইসলামের স্বাতন্ত্র্য। ২০১২ সালে প্রকাশ হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। এতে তিনি বলেছেন, বাংলাভাষী মুসলমানের জাতিসত্তার উপাদান দু’টি। একটি হলো বাংলা ভাষা আর একটি হলো ইসলামের স্বাতন্ত্র্য চেতনা। আওয়ামী লীগের জয় বাংলা আওয়াজের সাথে শেখ মুজিবের এই ধারণা মনে হচ্ছে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই বাংলা আসলে কোন বাংলা; আর বাঙালি বলতেই বা ঠিক কাদের বুঝতে হবে। কেননা বাংলাভাষী মানুষের প্রায় ৬০ শতাংশ বাস করেন বাংলাদেশে আর ৪০ শতাংশ বাস করেন ভারতে। এর মূলে আছে ইসলামের স্বাতন্ত্র্য। ১৯৪৭ সালে বাংলা প্রদেশ ভাগ হয়েছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদকে নির্ভর করে।
যার উদ্ভব এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে হতে পেরেছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। শেখ মুজিবুর রহমান তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, মুসলিম লীগে দ্বিজাতিতত্ত্ববাদ ছিল সঠিক। অথচ এখন আওয়ামী লীগের কিছু তাত্ত্বিক বলছেন, ধর্মকে রাজনীতির সাথে জড়ানো ছিল প্রতিক্রিয়াশীলতা। এদের কথা মানলে শেখ মুজিবকেও বলতে হয় একজন প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ। এ উপমহাদেশে কাকে বলব জাতীয়তাবাদ আর কাকে বলব সঙ্কীর্ণ ধর্মীয় মনোভাবের অভিব্যক্তি, সেটি নির্ণয় করা খুবই কঠিন। ভারতে শিখেরা এখন চাচ্ছে স্বাধীন হতে। একটা পৃথক রাষ্ট্র গড়তে, যা তারা ইতঃপূর্বে চাননি। এই শিখ জাতীয়তাবাদের মূলে আছে শিখ ধর্মবিশ্বাস। আছে গুরুমুখী অক্ষরে লেখা পাঞ্জাবি ভাষা, যা প্রধানত শিখরাই বিশেষভাবে চর্চা করে থাকেন। ১৯৪৭ সালে ভাগ হয় ব্রিটিশ শাসনামলের বাংলা প্রদেশ; আর ব্রিটিশ শাসনামলে পাঞ্জাব প্রদেশ। পূর্ব পাঞ্জাব পড়ে পাকিস্তানে আর সাবেক পাঞ্জাব প্রদেশের পশ্চিম ভাগ পড়ে ভারতে।
ভারতের পাঞ্জাব বিভক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে দু’টি প্রদেশ। একটির নাম হচ্ছে পাঞ্জাব। যেখানে বাস করেন প্রধানত শিখরা। যার সরকারি ভাষা হলো পাঞ্জাবি। আর তা লেখা হয় গুরুমুখী অক্ষরে। অন্য দিকে সাবেক পাঞ্জাবের হিন্দুপ্রধান অঞ্চল নিয়ে এখন গঠিত হয়েছে ভারতের হরিয়ানা প্রদেশ, যার সরকারি ভাষা হয়েছে সংস্কৃত শব্দবহুল হিন্দি ভাষা। তা লেখা হয় দেবনাগরি অক্ষরে। ভারতে জাতিসত্তার সমস্যা এখনো মেটেনি। শিখ জাতীয়তাবাদকে কেউ বলছেন না ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতা কথাটি যেন কেবল মুসলমানদের জন্যই ব্যবহৃত হতে পারছে। এর মূলে আছে ভারতের একসময়ের বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা ও পরে প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর চিন্তাচেতনা। যার একটা প্রভাব থাকতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের তাত্ত্বিকদের ওপর। এদের প্রভাবেই আওয়ামী লীগ বলছে, বিশেষভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা। গ্রহণ করছে না বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণাকে।
আমাদের বর্তমান জাতীয় নির্বাচনে দু’টি প্রধান ইস্যু হচ্ছে, বহুদলীয় উদার গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা, আর একটি হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চর্চাকে আবার ফিরিয়ে আনা। এর কোনোটাই কাম্য নয় আওয়ামী লীগের। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। যা সে আগে এ অঞ্চলে ছিল না। তার এই শক্তি সঞ্চয়ের মূলে কাজ করছে ইসলামের স্বাতন্ত্র্য চেতনা, যা হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অন্যতম উপাদান।
বাংলাদেশের মানুষের নৃ-জাতিক ইতিহাস এখনো যথাযথভাবে পরীক্ষিত হয়নি। এর বেশির ভাগই হয়ে আছে অজানা। একসময় মনে করা হতো বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে ইসলাম প্রচার প্রধানত ঘটেছিল নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে; উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে নয়। উচ্চবর্ণের হিন্দু বলতে বোঝায় ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্যদের। বাংলাদেশে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে কায়স্থদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। ১৯৪১ সালে জার্মান ইহুদি মহিলা গবেষক ঔ. ড. ঊ. গধপভধৎষধহব পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমানের রক্তের গ্রুপের হার নির্ণয় করেন। এবং দেখেন, তার মিল হচ্ছে নিম্নবর্ণের হিন্দু বলে কথিতদের রক্তের গ্রুপের সাথে। এর ফলে ভাবা আরম্ভ হয়, নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার ধারণা সঠিক। কিন্তু পরবর্তীকালে দিলীপ কুমার সেনের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার মুসলমানদের রক্তের বিভিন্ন গ্রুপের হার হলো তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরেই অনুরূপ (দ্রষ্টব্য, ওহফরধহ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু. ঊফঃ ঞ. ঘ. গধফধহ ধহফ এড়ঢ়ধষধ ঝধৎধহধ; অংরধ ঢ়ঁনষরংযরহম ঐড়ঁংব, খড়হফড়হ ১৯৬২)।
তাই আগের মতো আর বলা যায় না যে, কেবল নিম্নবর্ণের হিন্দুরাই উচ্চবর্ণের ঘৃণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইসলাম বরণ করেছিলেন। এখন জানা গিয়েছে, কুমিল্লা অঞ্চলে খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন প্রথমে দেব ও পরে চন্দ্র বংশের রাজারা। এরা হিন্দু ছিলেন না, ছিলেন বৌদ্ধ। এদের রাজত্ব দক্ষিণবঙ্গেও ছিল বিস্তৃত। বাংলাদেশে তাই হিন্দুরা নন, বৌদ্ধরাই সম্ভবত দলে দলে গ্রহণ করেন ইসলাম। যেমন তারা গ্রহণ করেছেন মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়। বাংলাদেশসহ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার জনসমষ্টিকে একত্র করলে আমরা দেখতে পাই, এ অঞ্চলেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বাস। সম্ভবত আরবি ভাষার পরই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমান কথা বলেন বাংলা ভাষায়। বাংলাদেশ টিকে থাকলে একদিন বাংলা ভাষাকে বিশ্বে মুসলমানের ভাষা হিসেবে গণ্য করা হবে। বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব এখন পড়েছে বাংলাদেশের মানুষের ওপর।
বঙ্গ নামটি নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। ভারতের খ্যাতনামা মহিলা নৃতাত্ত্বিক ওৎধধিঃর কধৎাব (ইরাবতী কার্ভে), তার মতে, বঙ্গ শব্দটি আর্য ভাষা পরিবারের নয়। নামটি এসেছে চীনা পরিবারভুক্ত কোনো ভাষা থেকে। চীনা পরিবারভুক্ত ভাষায় ‘য়ং’ ধ্বনি সাধারণত নদীর নামের সাথে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। যেমন- ইয়াংসিকিয়ং, হোয়াংহো, সাংপো প্রভৃতি। বঙ্গ ছিল একটা নদীর নাম। আর তার তীরবর্তী মানুষদের বলা হতো বাঙালি। এরা চীনাদের মতো একই পদ্ধতিতে ধান চাষ করত। বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখি, মুসলিম নৃপতিদের শাসনামলে বঙ্গ নামটি একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ফারসি ভাষায় লেখা ইতিহাস বইয়ে উল্লিখিত হতে। ফারসিতে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে বলা হতো মুলুক বাঙ্গালাহ। এর মধ্যে পড়ত রাজধানী গৌড়। মুসলিম শাসনামলের আগে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতো না। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৮৫ সালে তার ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের প্রস্তাবনায় লিখেছেন-
‘অলীক কূনাট্য রঙ্গে মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে
নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়।’
অর্থাৎ মাইকেল মধুসূদনের সময়ও সাধারণত বাংলা ভাষায় বঙ্গ বলতে বুঝাত পূর্ববঙ্গকে। আর পশ্চিমবঙ্গ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো রাঢ় নামটি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নামের পরিবর্তে প্রদেশটির নাম করতে চাচ্ছেন কেবলই বঙ্গ। আমার মনে হয়, এ রকম নামকরণ করলে আমাদের ইতিহাস রচনায় হতে পারবে যথেষ্ট বিভ্রান্তি। এমনকি আমাদের জাতিসত্তার রূপ নিয়ে সৃষ্টি হতে পারবে অস্পষ্টতা।
একসময় বলা হতো বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার হতে পেরেছে প্রধানত বল প্রয়োগের মাধ্যমে। মুসলমান নৃপতিরা জোর করে হিন্দুদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু এখন এই মতকে আর আগের মতো ধরে রাখা যাচ্ছে না। ব্রিটিশ শাসনামলে আদমশুমারি শুরু হয় ১৮৭১ সাল থেকে। এ সময় বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে মুসলমানের তুলনায় হিন্দুর সংখ্যা ছিল বেশি। এরপর আদমশুমারি হয় ১৮৮১ সালে। এই আদমশুমারিতে দেখা যায়, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা কমতে এবং মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে। এরপর থেকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ক্রমেই মুসলমানের সংখ্যা বেড়েছে। কেন এমন হতে পেরেছে, তার কারণ জানা যায় না।
তবে একটি মত হলো হিন্দুদের মধ্যে লেখাপড়া শিখে বহু ব্যক্তি গ্রহণ করতে থাকেন কেরানির চাকরি। রুদ্ধঘরে কেরানিগিরি করতে গিয়ে ঘটে এদের স্বাস্থ্যহানি। কমে এদের প্রজননক্ষমতা। কিন্তু মুসলমানেরা লেখাপড়া শিখে কেরানি হতে চাননি। তারা মুক্ত প্রকৃতিতে করেছেন ক্ষেতখামারে কাজ। হয়েছেন নৌকার মাঝিমাল্লা। মুক্ত প্রকৃতিতে তাদের স্বাস্থ্য থেকেছে অটুট। কমেনি তাদের প্রজননক্ষমতা। তাই বাড়তে পেরেছে হিন্দুর তুলনায় মুসলমানের সংখ্যা। এই ধারণার কিছুটা সমর্থন পাওয়া যায় এ ঘটনা থেকে, যেসব মুসলমান যুবক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছেন তাদের গর্ভে অধিক সন্তানের জননী হওয়া থেকে। ইংরেজ আমলে জোর করে হিন্দুকে মুসলমান করার সুযোগ ছিল না। তাই বলা চলে না বাংলাদেশে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ হিন্দুদের বল প্রয়োগ করে মুসলমান করা।
সারা দেশ এখন নির্বাচনে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। মহলবিশেষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, মুসলিম জাতীয়তাবাদে আস্থাশীল কোনো দল বা জোট ক্ষমতায় এলে এ দেশে হিন্দুরা বাস করতে পারবেন না। কিন্তু কোনো ইসলামপন্থী দলই এ দেশ থেকে চাচ্ছে না হিন্দু বিতাড়ন করতে। কারণ, এ দেশে এখন হিন্দু আর বেশি নেই। তা ছাড়া যেসব হিন্দু আছেন, তাদের মধ্যে উচ্চবর্ণের হিন্দুর চেয়ে নি¤œবর্ণের হিন্দুই বেশি। যারা ভারতে চলে যেতে এমনিতেই ইচ্ছুক নন। থাকতে চান এ দেশের মাটিকে আঁকড়ে ধরে। সবচেয়ে বেশি প্রচার চলেছে জামায়াতে ইসলামীর বিপক্ষে। কিন্তু জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজনীতি করার জন্য। তাদের মারদাঙ্গা করে ক্ষমতা দখল করার ইচ্ছা থাকলে তারা কখনোই নির্বাচনে অংশ নিত না। সেই পথেই চলার জন্য সুসংগঠিত হতে থাকত।
গণতন্ত্রের একাধিক রাজনৈতিক দল থাকবেই। ব্রিটেনে আছে একাধিক রাজনৈতিক দল। ব্রিটেনে প্রথম প্রতিষ্ঠা পায় প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র। নির্বাচন আরম্ভ হয় পার্লামেন্টে প্রতিনিধি হওয়ার জন্য। আর এ জন্যই বিলাতে প্রথম সৃষ্টি হতে পারে রাজনৈতিক দল। কিন্তু বিলাতের আইনে রাজনৈতিক দলের কোনো স্বীকৃতি নেই। রাজনৈতিক দল সেখানে হলো আইনের বাইরে বাড়তি প্রতিষ্ঠান। তা আইনিও নয় আবার বেআইনিও নয়। রাজনৈতিক দলকে বলে ঊীঃৎধ খবমধষ এৎড়ঃিয। বিলাতের কোনো লিখিত সংবিধান নেই। বিলাতের শাসনব্যবস্থা চলেছে বিভিন্ন সময়ে পার্লামেন্টকৃত কতগুলো অ্যাক্টের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে লিখিত সংবিধান। তাতেও নেই কোনো রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি। সেখানেও রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে এক্সট্রা লিগ্যাল গ্রোথ হিসেবে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের আইনি নিবন্ধন ব্যবস্থা কেন করা হয়েছে, আমার কাছে তা স্বচ্ছ নয়। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সংবিধানসম্মত দল নয়। তাই সে পারছে না জাতীয় নির্বাচনে দল হিসেবে অংশগ্রহণ করতে।
অথচ এ দেশেও সেটি পেরেছে একসময় দল হিসেবে দাঁড়াতে। কেবল তাই নয়, হতে পেরেছে মন্ত্রিসভার সদস্য। জামায়াত দল হিসেবে দাঁড়াতে না পারলেও, জামায়াতের প্রার্থীরা কম করে ২৩ জন দাঁড়িয়েছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। এ ছাড়া, বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে। জামায়াতে ইসলামীকে আইনের মাধ্যমে বিলুপ্ত করা সম্ভব হয়নি। জামায়াতে ইসলামীকে সমালোচনা করা হচ্ছে একটি ইসলামী জঙ্গিবাদী দল হিসেবে। কিন্তু সে যদি জঙ্গিবাদ চাইত, তবে নির্বাচনে অংশ নিত না। আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থা আমার বোধগম্য নয়। কেননা, যে বামপন্থী দল একদিন চেয়েছিল বাংলাদেশে আফগান স্টাইলে বিপ্লব করতে। অর্থাৎ সম্পূূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করতে, তাদের কিন্তু সংবিধান পরিপন্থী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ একদিন করেছিল বাকশাল প্রতিষ্ঠা। বাকশাল ছিল একটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এখনো আওয়ামী লীগ এই ব্যবস্থার জন্য কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। কিন্তু তাকে পোহাতে হচ্ছে না কোনো আইন-আদালতের ঝঞ্ঝাট। ইলেকশন কমিশনার বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর যেসব সদস্য নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন অথবা নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তারা নির্বাচন করতে পারবেন। তার এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই মনে হবে গণতন্ত্রের অনুকূল। ধর্ম কেবল যে আমাদের দেশের রাজনীতিতেই সংযুক্ত হতে পারছে তা নয়। ইউরোপের বহু দেশেই আছে ক্যাথলিক খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক দল। বিশেষ করে জার্মানিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি বিভক্ত হয় পশ্চিম ও পূর্ব জার্মানিতে। পশ্চিম জার্মানিতে ক্ষমতায় আসে খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক দল। আর তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে গড়ে ওঠে পশ্চিম জার্মানি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। এখন পশ্চিম ও পূর্ব জার্মানি একত্র হয়েছে।
জার্মানির চ্যান্সেলর হয়েছেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। তিনি হলেন একজন খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী। বাংলাদেশে ইসলামপন্থী হওয়ার কারণে কেন তাকে একটি অনিবন্ধিত দল হতে হবে, সেটি বোঝা যথেষ্ট কঠিন। ধর্ম মানুষকে একটা উৎসর্গের মনোভাব প্রদান করে, যা মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে সেবামূলক রাজনীতিতে। আমাদের রাজনীতির একটা বড় দুর্বলতা হচ্ছে, এই রাজনীতি যতটা না সেবামূলক, তার চেয়ে অনেক বেশি হলো দাবিমূলক। যদিও দেশে সেবামূলক রাজনীতির প্রয়োজনই বেশি। রাজনীতিতে থাকতে হয়, যাকে বলে পাবলিক স্পিরিট (চঁনষরপ ঝঢ়রৎরঃ)-এর প্রাধান্য।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা