অরণ্যে রোদন নয় তো?
- সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
- ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২৬, আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:০৮
অংশগ্রহণমূলক হলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ-সংশয় এখনো কেটে যায়নি বরং তা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের বক্তব্য থেকে সে সন্দেহটা আরো ঘনীভূত হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তিনি সম্প্রতি রিটার্নিং অফিসারদের বলেছেন, ‘দেশে শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব হবে না’। এর আগে এক কর্মশালা উদ্বোধনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার বক্তব্য আবারো নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যা নির্বাচন নিয়ে চলমান সঙ্কটকে আরো জটিলতর করে তুলেছে।
গত ৭ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যে অনিয়ম হবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না’। তার কথার মধ্যে স্ববিরোধিতাও লক্ষ্যণীয়। তিনি সম্প্রতি নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে।’ তার শেষোক্ত বক্তব্যের কোনো সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তার এই স্ববিরোধিতাকে অনেকেই তোষামুদে বক্তব্য বলে মনে করছেন। কবিতা খানমের বক্তব্যকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রকৃত বক্তব্য মনে করা হচ্ছে। কমিশনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড তার দাবিকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। মূলত জনগণের কাছে দেয়া নির্বাচন কমিশনের বার্তা মোটামুটি স্পষ্ট।
জনগণ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেও নির্বাচনী ফলাফলে তার পুরোপুরি প্রতিফলন না-ও ঘটতে পারে কিংবা ভোটাধিকার প্রয়োগ পুরোপুরি নির্বিঘœ নাও হতে পারে। খুব কৌশলে জনগণকে সে কথাই জানানো হচ্ছে বলে মনে হয়। কমিশনের বক্তব্যে নির্বাচনে অনিয়ম ও অবৈধ প্রভাব বিস্তারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। এমনকি দলান্ধ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অনিয়ম করার ওপেন লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যের মাধ্যমে। তাই আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে যে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে, সে আগুনেই যেন ঘি ঢেলে দিয়েছেন প্রমীলা নির্বাচন কমিশনার। সিইসি ও তার সহকর্মী কমিশনাররা কবিতা খানমের কথার কোনো প্রতিবাদ করেননি। তাই নীরবতাকে সহকর্মীদের ‘একাত্মতা’ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ফলে দেশে আরো একটি প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে সংশয় দানা বেঁধে উঠেছে।
আমার একজন শিক্ষক বলতেন, যে ছাত্র পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পাওয়ার জন্য শ্রম দেয় ও চেষ্টা করে, সে প্রথম বিভাগ না পেলেও দ্বিতীয় বিভাগটা হাতছাড়া হয় না। দ্বিতীয় বিভাগ প্রত্যাশীর প্রত্যাশা পূরণ না হলেও তৃতীয় বিভাগ পায়। আর তৃতীয় বিভাগ প্রত্যাশী লক্ষ্যে পৌঁছলে পৌঁছতে পারে; কিন্তু অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনাটা থাকে বেশি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার সহকর্মী কমিশনার যে ধরনের কথা-বার্তা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে ইসি দেশে ‘প্রথম শ্রেণীর নির্বাচন’ করার কথা ভাবছে না। সে প্রস্তুতি বা আন্তরিকতাও বোধ হয় নেই কমিশনের। তাই দায়সারা গোছের নির্বাচনের দিকেই অগ্রসর হতে পারে বর্তমান কমিশন।
আরেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য না করা গেলে বহির্বিশে^ মুখ দেখানো যাবে না। তার বক্তব্যে মনে হয় যে, তিনিও নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয়ে সন্দিহান। তাই সিইসি ও আরো দুইজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট, আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে খোদ নির্বাচন কমিশনেরই প্রস্তুতি বা সদিচ্ছা নেই। তাই তেঁতুলগাছ থেকে আম আশা করা আমাদের জন্য বোকামিই হবে বৈকি! আর যারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন-নিবেদন করছেন তারা যে অরণ্যে রোদনই করছেন তা প্রায় নিশ্চিত।
কবিতা খানমের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সাথে কেউই একমত পোষণ করতে পারছেন না। কারণ, নির্বাচন শতভাগ অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এমনকি আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটান এর উদাহরণ। মূলত নির্বাচন কমিশন দেশে পুরোপুরি সুষ্ঠু নির্বাচন করার কথা ভাবছে না। ধারণা হয়, তারা একটি ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নির্বাচন’ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। আন্তরিক হলে কমিশন এতে সফল হলেও হতে পারে। অন্যথায় আমাদের ভাগ্যে একটি থার্ডক্লাস ইলেকশন অপেক্ষা করছে।
নির্বাচন কমিশনের সর্বসাম্প্রতিক কিছু আচরণ ও পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে না যে, তারা দেশে একটি ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নির্বাচন’ করতেও আন্তরিক। অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণী বা তার চেয়ে নি¤œ শ্রেণীর নির্বাচন করার পথেই যেন দেশ এগোচ্ছে। এ বিষয়ে সাবেক কেবিনেট সচিব ড. সাদাত হোসেনের বক্তব্য উল্লেখ করা আবশ্যক। তিনি সরকার ও নির্বাচনের কমিশনের ভূমিকাসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বেই প্রচলিত আছে যে, ভোটারের ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায়Ñ আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। কিন্তু এখন সরকারি দল হলে বলবে, আমরা ভোটারদের আরো ক্ষমতায়ন করেছি। এমন ক্ষমতা দিয়েছি যে, তারা স্লোগান দেবে- আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দেবো। যখন খুশি তখন দেবো, দিনের ভোট রাতে দেবো। ‘পুরা ক্ষমতায়িত হয়েছেন ভোটাররা’।
এসব কথার মধ্যে কিছুটা পরিহাস ও শ্লেষ থাকলেও এর মধ্যে নির্মম বাস্তবতা ও আত্মোপলব্ধি রয়েছে। তিনি আমাদের দেশের সর্বসাম্প্রতিক নির্বাচনী সংস্কৃতি, গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের বাস্তব চিত্রই উপস্থাপন করেছেন। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের একচোখা নীতি ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণই তাকে সে উপলব্ধিতে পৌঁছতে বাধ্য করেছে। এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছিল সর্বশেষ কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এর অনুঘটক ছিল নির্বাচন কমিশনই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সাথে সংলাপে সরকার পক্ষ ‘গায়েবি ও হয়রানিমূলক’ মামলা হবে না এবং বিরোধী দল নির্বিঘেœ সভা-সমাবেশে করতে পারবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। নির্বাচন কমিশনও এখন পর্যন্ত অংশীজনদের জন্য সমতা নিশ্চিত করতে পারেনি। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের’ জন্য ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেয়ার সুযোগ, নির্দলীয় প্রশাসন ও ইভিএমের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, বিরোধী দলের প্রস্তুতির জন্য নির্বাচন কমপক্ষে তিন সপ্তাহ পেছানো, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েন, গায়েবি মামলা বন্ধ করা, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি, বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনী প্রচারণা, সভা-সমাবেশ করার অধিকার নির্বিঘœ করার দাবি এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণের মতো বিষয়েও কমিশন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ উপলক্ষে মিছিল-শোভাযাত্রা করলেও নির্বাচন কমিশন সেটাকে আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করেনি; কিন্তু বিরোধী দল যখন একই কাজ করেছে, তখন তা শুধু আচরণবিধি ‘লঙ্ঘন’ হয়নি, বরং ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ হয়ে গেছে। এমনকি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু একই ধরনের ঘটনায় উপদলীয় সংঘর্ষে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও কমিশনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভিন্ন। এটা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়।
এ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং সরকার কর্তৃক নির্বাচন কমিশনকে দলীয় কার্যালয়ের মতো ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে আসন্ন নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টেও উন্মুক্ত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিতর্কে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, মানবাধিকারকর্মী, সরকারের সমালোচক, আইনজীবী ও বিরোধীদের ওপর ক্র্যাকডাউন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রথম ধাপ হচ্ছে- সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আপাতত, তা নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন নির্বাচন সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের চোখে পড়ার মতো সাফল্য দেখা যাচ্ছে না। অথচ সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘The Election Commission shall be independent in the exercise of its functions and subject only to this Constitution and anyother law’. অর্থাৎ ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’
নির্বাচন কমিশনের হাতে প্রচুর ক্ষমতা থাকলেও শুধু সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী ও সাহসিকতার অভাবেই আইনের প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনে সব পক্ষের জন্য সমতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দী নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদল সুপারিশ এলেও ইসি চলছে সরকার নির্ধারিত ছকেই। ফলে বর্তমান কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা না বেড়ে বরং আরো কমে গেছে।
সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত জনগণ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। যতই দিন যাচ্ছে ততই তাদের গ্রহণযোগ্যতার পারদ নিচে নামছে। সঙ্গত কারণেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল এই মর্মে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, দলীয় সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
তাই ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের পর এবার একটি মার্কিন থিংক ট্যাংক বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে বলা হয়েছে, ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে- এমন বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের কর্মীদের সরকার আটক করছে এবং মিডিয়া ও সুশীলসমাজের বাক রোধ করতে চাইছে। কেয়ারটেকার সরকার শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু সরকার শেখ হাসিনার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে; তা নির্বাচনের পরিবেশকে পুরোপুরি অসমতল করে তুলেছে। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে দলীয় সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই।’
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ‘যৌথ প্রযোজনা’য় পরিস্থিতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাটা ক্ষীণ। এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করে সাবেক কেবিনেট সচিব ড. সা’দাত হোসাইন। তাই বলেছেন, ‘... তবে বদলে যাবে যদি বড় রকম কোনো আন্দোলন করে প্রশাসনকে সীমানা দেয়ালের ওপর বসানো যায়। সে রকম করতে পারবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। যে দিন তারা সীমানা দেয়ালের ওপর উঠবে, সে দিন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে’। মূলত এটিই আমাদের বাস্তবতা।হ
smmjoy@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা