২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এই মাসে রাসূল সা: সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি

-

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস শুরু হয়েছে। আজ ১২ রবিউল আউয়াল। এ তারিখটি হচ্ছে বিশ্বনবী, মহানবী সা:-এর এই পৃথিবীতে আগমন দিবস তথা আমাদের ভাষায় জন্মদিন। পুরো মাসব্যাপীই মহানবী সা:-এর জীবনী নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা ও লেখালেখি চলে। বাংলাদেশে নবীপ্রেমিক মুসলমানগণ সুনির্দিষ্ট দিবসটি তথা এই দিবসের কয়েক দিন আগ থেকেই দিবসটি পালন করা শুরু করেন। কেউ পালন করেন মিলাদুন্নবী নাম দিয়ে, কেউ পালন করেন সিরাতুন্নবী নাম দিয়ে। সরকারের উদ্যোগে বঙ্গভবনে মিলাদ শরিফ পড়ানো হয় এবং এটা রাত্রিবেলা টেলিভিশনে দেখানো হয়। দিনটি সরকারি ছুটি থাকে।

এর থেকে আর বেশি কিছু নেই। বড় বড় মহানগরী এবং শহরে সম্মান ও আনন্দের মিশ্রণের মিছিল বের হয়। অতীতে আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন স্কুলে আলোচনা সভা হতো, মিলাদ শরিফ হতো এবং মিষ্টি বিতরণ হতো। যা হোক, একজন অভ্যাসকারী মুসলমান হিসেবে আমি মনে করি এ দিনটি পালন করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো দিনটির তাৎপর্য বোঝা। এই দিনে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, মহান আল্লাহ তায়ালার বন্ধু, সর্বশেষ রাসূল ও নবী এবং রাসূল ও নবীগণের ইমাম হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনের শিক্ষাগুলো নিয়ে চিন্তা করা। তাই এ দিনটিকে সামনে রেখেই এই কলামে কিছু আলোচনা করা।

আমি প্রথমে ভালোবাসা ও অনুসরণ করা নিয়ে দু’টি কথা বলব। আল্লাহকে ভালোবাসার সাথে সাথেই রাসূল সা:কে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কথাটির অর্থ এ রকমও দাঁড়ায়, আমরা যদি রাসূল সা:কে অনুসরণ না করি, তার মানে দাঁড়াবে আমরা আল্লাহকে ভালোবাসি না। এমন কোনো মুসলমান বা বিশ্বাসী কি পৃথিবীতে আছেন যিনি বলবেন বা ঘোষণা দেবেন যে, তিনি মহান আল্লাহকে ভালোবাসেন না বা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভালোবাসতে চান না? তাহলে যুক্তিসঙ্গতভাবে আমাদের অবশ্যই, রাসূল সা:কে অনুসরণ করতে হবে।

যাঁকে অনুসরণ করতে হবে বা যাঁকে অনুসরণ করব, তাঁকে জানার প্রয়োজনীয়তা কত ব্যাপক ও জরুরি, সেটি সম্মানিত পাঠক নিজেই মেহেরবানি করে কল্পনা করুন। মহান আল্লাহ তায়ালা নবী সা:কে পাঠিয়েছেন সাক্ষীরূপে। তিনি অনেক কিছুর সাক্ষী দেবেন; তার মধ্যে অন্যতম বিষয় হবে তাঁর উম্মতের কর্ম। অতএব, ওই মহামানবকে জানা প্রয়োজন, যিনি আমাদের সম্পর্কে সাক্ষী দেবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, নবীজী সা: সুসংবাদদাতা। তিনি আমাদের সৎকর্মের সুসংবাদ দিচ্ছেন, তিনি মহান আল্লাহর অস্তিত্ব এবং তাঁর সৃষ্টিজগতের সুসংবাদ দিচ্ছেন; তিনি সুকর্মের সুফলের সুসংবাদ দিচ্ছেন। যিনি আমাদেরকে এতগুলো সুসংবাদ দিচ্ছেন, তাঁকে জানা আমাদের জন্য অবশ্যই জরুরি; তাঁকে জানলেই আমরা সুসংবাদের প্রেক্ষাপট বুঝতে পারব।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: হচ্ছেন সতর্ককারী। তিনি আমাদের সতর্ক করেছেন; তথা ওয়ার্নিং দিচ্ছেন তথা সাবধান করছেন অনেকগুলো বিষয়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শয়তানের প্ররোচনা থেকে যেন আমরা দূরে থাকি, আল্লাহর স্মরণ থেকে যেন আমরা কখনোই বিরত না থাকি। তিনি আমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছেন, আমরা যদি আল্লাহর হুকুম করা পথে না চলি, তাহলে আমাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত। অতএব, যিনি আমাদেরকে সাবধান করে এত বড় উপকার করলেন, তাঁকে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন। তাঁকে না জানলে আমরা সাবধানবাণীগুলোর প্রেক্ষাপট বুঝব না। সেই সুবাদেই আজকের এই কলামের মাধ্যমে আমরা আবেদন রাখছি, আমরা সবাই যেন রাসূলুল্লাহ সা:কে জানতে চেষ্টা করি।

আমার আবেদন, যে পাঠকের দ্বারা সম্ভব, যতটুকু সম্ভব চিন্তা করুন। চিন্তার বিষয় কী? বিষয় হলো মহানবী সা:-এর জীবনী, তাঁর কর্মগুলো; তাঁর পারিবারিক জীবন, তাঁর সমাজসেবার জীবন, মক্কায় ইসলাম প্রচারের জীবন, মদিনায় হিজরতের ঘটনা, মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রের উন্মেষ ও রাষ্ট্রনায়কের জীবন, সেনাপতির জীবন, নৈমিত্তিক সাংসারিকতার জীবন, নৈমিত্তিক ইবাদতের জীবন, যতটুকু দর্শনীয় ততটুকুই আধ্যাত্মিকতার জীবন ইত্যাদি। মহানবী সা:-এর জীবনী নিয়ে বহু পুস্তক লেখক বা কলাম লেখক বা প্রবন্ধকারকেই দেখেছি একটি পুস্তকের রেফারেন্স দিতে।

পুস্তকটির নাম ‘দি হান্ড্রেড : এ র‌্যাংকিং অব দি মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পারসনস ইন হিস্ট্রি’। এই বইয়ের লেখক একজন পাশ্চাত্যের অমুসলিম পণ্ডিত, যার নাম মাইকেল এইচ হার্ট। মাইকেল হার্ট পৃথিবীর ইতিহাসে বা মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বা সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী ১০০ জন ব্যক্তিত্বের তালিকা ও জীবনী প্রকাশ করেছেন তার বইয়ে। মাইকেল হার্টের মতে, এবং তার বইয়ে প্রকাশিত তালিকা মোতাবেক, এই ১০০ জনের মধ্যে ১ নম্বর ব্যক্তি হচ্ছেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: তথা মাইকেল হার্টের ভাষায় মুহাম্মদ সা: হচ্ছেন মানব সভ্যতার ওপরে, মানব ইতিহাসের ওপরে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব। অতএব, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মাইকেল হার্ট জানতেন, তার এই বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।

তাই তিনি মুহাম্মদ সা:-এর জীবনী নিয়ে যেই অধ্যায় তার পুস্তকের শুরুতেই আছে, সেই অধ্যায়ের শুরুতে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখাটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু এর মর্ম ব্যাপক। মাইকেল হার্ট লিখেছেন, ‘ইতিহাসে মুহাম্মদই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় অঙ্গনে এবং জাগতিক অঙ্গনে তথা উভয় ক্ষেত্রে চরমভাবে সফল হয়েছিলেন। বাকি ৯৯ জনের মধ্যে বেশির ভাগই কোনো-না-কোনো সভ্যতার কেন্দ্রে বা জনপদে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং উৎসাহব্যঞ্জক বা জ্ঞানবান্ধব পরিবেশে বড় হয়েছেন। কিন্তু ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে যখন মুহাম্মদ আরব উপদ্বীপের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন; তখন চতুর্দিকের জনপদগুলো, তাদের লেখাপড়ার স্তর এবং তাদের ধর্মীয় চিন্তাচেতনার স্তর তৎকালীন পৃথিবীর পরিচিত মানদণ্ডে নি¤œস্তরে ছিল। সেইরূপ নি¤œস্তরে থেকেও তিনি একটি নতুন চিন্তা নতুন চেতনা নতুন সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন।’

মাইকেল হার্ট বলেছেন বলেই আমিও মুহাম্মদ সা:কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলব না, বরং আমার নিজের করা বিশ্লেষণ ও নিজের বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তেই আমিও তাঁকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মানুষই বলব।

ভাঙন সৃষ্টি করা বা ভেঙে দেয়া সহজ, জোড়া লাগানো বা গঠন করা কঠিন। সমালোচনা করা খুব সহজ, সমালোচনার উত্তর দেয়া কঠিন। সমালোচনা করা খুব সহজ কেন? এ জন্যই সহজ কারণ, গুজবের ওপর ভিত্তি করে, কানকথার ওপর ভিত্তি করে, চটকদার সংবাদ পড়ে, ভিত্তিহীন রচনা পড়ে যেই হালকা জ্ঞান অর্জন করা হয় সেই হালকা জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই সমালোচনা করা যায়। কিন্তু সমালোচনার উত্তর দিতে গেলে, গভীর এবং ব্যাপক লেখাপড়া করতে হবে, সুপ্রতিষ্ঠিত পণ্ডিতের সুপরিচিত লেখা পড়তে হবে এবং যেকোনো তথ্যের বা মতামতের গোড়ায় যেতে হবে।

এ কথাটি সাম্প্রতিক এক দশকের ফেসবুকের রচনাবলির ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনি দেড় হাজার বছরের পুরনো দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, শুধু আজকে বলে নয়, গতকাল এবং গত পরশু তথা গত দশক বা গত শতাব্দী বা তার আগেও একটি প্রবণতা যেমন ছিল, সেই একই প্রবণতা আজো আছে। প্রবণতাটা কী? প্রবণতা হলো, সাধারণভাবে মুসলিম তরুণ-তরুণী কর্তৃক লেখাপড়া থেকে দূরে থাকা, গবেষণা থেকে দূরে থাকা, কানকথা ও গুজবের ওপর নির্ভর করা, দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে লেখাপড়াকে পশ্চাৎমুখিতা মনে করা এবং রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনী পড়াকে অনুৎপাদনশীল শ্রম মনে করা। এই প্রবণতার কারণে, মুসলমান সমাজের তরুণ-তরুণীরা সাধারণভাবে, অর্থাৎ ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণগণ, আমরা যেকোনো বিষয়ের মৌলিক জ্ঞান থেকে দূরে থাকি। এখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে না পারলে পেছনেই পড়ে থাকব।


ঈমান আনার পর প্রথম যেই বাক্যের অনুভূতির সাথে পরিচিত, সেখানে দু’টি শব্দ বা নাম পাশাপাশি অবস্থিত, সেখানে একটি শব্দ বা নাম আল্লাহ এবং অপর শব্দ বা নাম মুহাম্মদ। তাই মুহাম্মদ সা:-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ যেই দ্বীন বা যেই জীবনবিধান পৃথিবীতে আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে চিন্তা করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে এবং আমার জন্য উপকারী তো বটেই; অনুরূপ যাঁর মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন এই পৃথিবীতে এসেছে, তাঁর সম্পর্কে জানাও আমার কর্তব্য ও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং জানাটা আমার জন্যও উপকারী। আমি মনে করি, দ্বীন সম্পর্কে এবং রাসূল সম্পর্কে না জানা বড় রকমের অপরাধ ও ক্ষতিকারক।

এ দুনিয়ায় তথা এই পার্থিব সংসারে যেই ব্যক্তি যত বড় পোস্ট অলঙ্কৃত করেছেন, যত বড় দায়িত্ব পালন করেছেন, যত বেশি ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন, যত বেশি সুনাম অর্জন করেছেন; এ সবগুলোকে একজন বিশ্বাসীর দৃষ্টিতে বলতে চাই যে তিনি ওই পরিমাণ বেশি বেশি আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া প্রাপ্ত হয়েছেন। তাহলে যিনি যত বেশি দয়া পেয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশও তত বেশিই হতে হবে, এটাই স্বাভাবিক সূত্র। অতএব, যেসব মুসলমান ভাইবোন লেখাপড়া জানেন তাঁদের পক্ষে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যে, তাঁরা মহানবী সা:-এর জীবনী পড়বেন এবং বুঝতে চেষ্টা করবেন। এই সঙ্ঘাত-সঙ্কুল একবিংশ শতাব্দীতে, পৃথিবীর চারটি প্রধান উপমহাদেশে বিপদগ্রস্ত মুসলমানগণের বিপদসঙ্কুল পরিবেশ সম্পর্কে যদি গভীর ধারণা পেতে হয়, তাহলে যেকোনো আগ্রহী ব্যক্তির জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ যে, তিনি মহানবী সা:-এর জীবনী পড়বেন এবং বুঝতে চেষ্টা করবেন।

ইতিহাসে বর্ণিত আছে, মহানবী সা:-এর ইন্তেকালের পর, একদিন একজন সাহাবি উপস্থিত হলেন মহানবী সা:-এর সম্মানিত স্ত্রী (তথা মুসলমানগণের মা) হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা:-এর সামনে। সম্মানিত সাহাবি বিনীত আবেদন করলেন : ‘আমাদেরকে রাসূল সা:-এর চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন।’ মা আয়েশা সিদ্দিকা রা: উত্তর দিলেন : ‘আপনি কি কুরআন পড়েননি? পবিত্র কুরআনই তো তাঁর অনুপম চরিত্র।’ অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের আলোকেই রাসূলুল্লাহ সা: তথা নবীজীর পবিত্র জীবন গঠিত। পবিত্র কুরআনে, তাঁর প্রিয় বন্ধু রাসূল সা:কে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘আপনি তো মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ মহান আল্লাহ তায়ালা, কুরআনের পাঠক এবং বিশ্বাসীগণের সামনে নবীজী সা:-এর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এভাবে : ‘তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট এক রাসূল এসেছেন। তোমাদেরকে যা উদ্বিগ্ন করে সেগুলো তাঁর জন্য কষ্টদায়ক।

তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র এবং পরম দয়ালু।’ অনুসন্ধিৎসু বা অনুসন্ধানী মনসম্পন্ন যেকোনো সচেতন মুসলমানই জানতে চাওয়ার কথা, স্বাভাবিক যুক্তিতে, কী কারণে বা কী যুক্তিতে বা কী প্রেক্ষাপটে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধু সম্পর্কে এসব বাক্য উপস্থাপন করেছিলেন। সাম্প্রতিক বিশ্বে এখনকার মিডিয়া মুসলমানদের সামনে স্বাভাবিক যুক্তিগুলোকে অস্বভাবিকভাবে উপস্থাপন করছে। সহনীয় বিষয়গুলোকে অসহনীয় হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সুন্দর সুস্মিত বিষয়গুলোকে অসুন্দর ও কঠোর হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কে করছে? পাশ্চাত্য বিশ্ব; বন্ধুবেশী শত্রুগণ এবং অল্প বিদ্যায় আপ্লুত অহঙ্কারী মুসলমানগণ। আমার নিজের প্রার্থনা হলো, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে বা আমাদেরকে সঠিক উপস্থাপনার সম্মুখীন করেন।

আমরা বহু রকমের বই পড়ি। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেহেতু একজন সাবেক সৈনিক, তাই যুদ্ধবিদ্যা-সংক্রান্ত, যুদ্ধের ইতিহাস-সংক্রান্ত, যুদ্ধের কৌশল-সংক্রান্ত, বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা-সংক্রান্ত এবং বিভিন্ন যুদ্ধের সেনাপতিদের জীবনী পড়া আমার জন্য স্বাভাবিক। আমি এখন একজন রাজনৈতিক কর্মী। অতএব, রাজনীতি দর্শন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি, বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাগণের জীবনী, আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাগণের জীবনী, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা ইত্যাদি সংক্রান্ত বই পড়া অতি স্বাভাবিক।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা তথা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করি, বলি, লিখি। অতএব, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বইপুস্তক পড়ব, এটাই স্বাভাবিক। আপনি একজন চিকিৎসক, অতএব আপনি চিকিৎসাবিদ্যার ওপর বই পড়বেন। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের একজন অধ্যাপক, আপনার আগ্রহ বেশি থাকবে ইতিহাসের বইয়ের ওপরে। আপনি গলফ খেলেন, অতএব আপনি গলফ-সংক্রান্ত বই পড়বেন। কিন্তু আমরা সবাই মানুষ, আমরা সবাই বিবেকবান প্রাণী বা রেশনাল এনিমেল। আমরা যেই মানবজাতির সদস্য, সেই মানবজাতির ইতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বা প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্বের জীবনী আমরা পড়ব না, জীবনকে জানব না, এটা কি অস্বাভাবিক নয়? আমরা মুসলমান। আমাদের মধ্যে অনেকেই জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি।

জ্ঞান অর্জনের জন্য আমরা শত প্রকারের বই পড়ি। সুতরাং আমরা কি ‘যাঁকে আমরা অনুসরণ করব’ সেই রাসূল সা:-এর জীবনী পড়ব না? তাঁর জীবনী যদি না পড়ি তাহলে আমরা তাঁকে জানব কিভাবে? তাঁর জীবনী যদি না পড়ি তাহলে সমালোচকদের জবাব দেবো কিভাবে? অতএব, আমাদের সবার জন্য অপরিহার্য যে আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনী পড়ি। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ বলেছেন, পড়লে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে; জানলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। বাংলা ভাষায় রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনী গ্রন্থের কোনো অভাব নেই। আমি বইয়ের নাম উল্লেখ করছি না। শুধু বলছি, মেহেরবানি করে সন্ধান করুন, ভালো বই পাবেন। যারা ইংরেজিতে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাদের জন্য ইংরেজিতে লেখা বইয়ের কোনো অভাব নেই। ইন্টারনেটে সার্চ দিলে অবশ্যই বহু বই পাওয়া যাবে। যেটা ভালো লাগে সেটা পড়ুন বা যেটা সহজলভ্য সেটাই আমাদেরকে পড়তে হবে।

একটি সাবধানবাণীও উপস্থাপন করছি। সাবধানবাণীটি হলো, ইন্টারনেটের লেখকগণ সম্পর্কে, উইকিপিডিয়ায় লেখকগণ সম্পর্কে। উপযুক্ত জহুরি ছাড়া যেমন মণিমুক্তা চেনা মুশকিল, তেমনি হৃদয়ে সঠিক জ্ঞান ও ভালোবাসা না থাকলে, অথেন্টিক লেখকের লেখা আইডেন্টিফাই বা চিহ্নিতকরণ করাও দুষ্কর। বিধর্মীগণ বা মুসলিমবিদ্বেষীগণ, নিজ নামে বা মুসলমান নাম নিয়ে রচনা লেখেন এবং উপস্থাপন করেন। লেখা বা উপস্থাপন করা অপরাধ নয়; অপরাধ হলো ভুল তথ্য, ভুল রেফারেন্স, ভুল অনুবাদ, ভুল ব্যাখ্যা বা তির্যক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা। ইন্টারনেটে মুসলিমবিদ্বেষী, মুসলিম ইতিহাসবিদ্বেষী, মুসলিম সংস্কৃতিবিদ্বেষী, কুরআনবিদ্বেষী, রাসূলবিদ্বেষী, ন্যায় ও সত্যবিদ্বেষী এবং জ্ঞান অর্জনবিদ্বেষী ব্যক্তিরা ভুল তথ্য ও অপব্যাখ্যা মিষ্টি মিষ্টি কথার আবরণে উপস্থাপন করেন। সঙ্কট বা সমস্যাটি হলো এরূপ ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করা সবার জন্য সহজ নয়। তবে আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে জানতে চেষ্টা করলে এই সমস্যা সমাধানে আল্লাহ সাহায্য করবেন।

২০০২ সালে ঢাকা মহানগরে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল; সেটির পূর্ণনাম ‘ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অ্যান্ড প্রোপাগেশন অব দি টিচিংস অব হজরত মুহাম্মদ সা:’। সংক্ষিপ্ত নাম হলো ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ সা:। পূর্ণ নামের বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় : ‘হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনের শিক্ষাগুলোর গবেষণা ও প্রচারের ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠার প্রথম আড়াই বছর, আমি এটির প্রেসিডেন্ট বা সভাপতি ছিলাম। তবে স্বচ্ছতার স্বার্থে এটা বলে রাখা প্রয়োজন যে, এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ার পেছনে যিনি সবচেয়ে উদ্যমী, উৎসাহী ও নির্বাহী ছিলেন তার নাম আহমদ শফি মাকসুদ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি এতে জড়িত ছিলেন এবং আছেন। আমি একজন প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কর্মী হয়ে যাওয়ার সুবাদে ইনস্টিটিউটের নিয়মিত কার্যক্রম থেকে দূরত্বে এসে গেছি, যদিও আন্তরিক আনুগত্য রয়েছে।

উদাহরণটি দিলাম এ জন্য, আমাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবেই তথা পরিকল্পনা করেই মহানবী সা:-এর জীবনের বিভিন্ন আঙ্গিক প্রথমে নিজেরা জানতে হবে, অতঃপর অন্যদের জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা ইনশিরাহর চতুর্থ আয়াতে, মহানবী সা:কে জানাচ্ছেন, ‘আমি আপনার নামকে, (তথা আপনার সুনাম মর্যাদা গুরুত্ব) সুমহান, (তথা সুউচ্চ, সুবিস্তৃত, সর্বপ্রিয়) করে দিয়েছি।’

অর্থাৎ আমরা জানতে চেষ্টা করি বা না করি, আমরা সম্মান করি বা না করি, এতে মহান আল্লাহর বন্ধু নবীজী সা:-এর কোনো ক্ষতি নেই। যদি না জানি, যদি না বুঝি, যদি না অনুসরণ করি, ক্ষতিটা আমাদেরই। যদি প্রচার না করি, ক্ষতিটা আমাদেরই। এই প্রেক্ষাপটেই আমি নিজেকে গুনাহগার, নগণ্য, অযোগ্য মনে করেই এই কলামের মাধ্যমে এ আহ্বানটি রাখলাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূল সা: সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি করে দিন এবং কাজটি আমাদের জন্য সহজ করে দিন- এ প্রার্থনাও করলাম।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব.); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি


আরো সংবাদ



premium cement
নিখোঁজের ৮ দিন পর পুকুর থেকে বৃদ্ধার ভাসমান লাশ উদ্ধার দেশে প্রথমবার পুরানো ল্যাপটপে ৫০ দিনের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি মুন্সীগঞ্জে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা ও লেন্স সংযোজন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সিরিয়ার পাশে থাকবে তুরস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিদান শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের তদন্ত নিয়ে যা জানা যাচ্ছে নড়াইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ রাহাত ফতেহ আলি খানের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন পাকিস্তানের হাইকমিশনারের চাঁদপুরে থেমে থাকা জাহাজ থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি

সকল