২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পরিবর্তনের সময় ঘনিয়ে আসছে

পরিবর্তনের সময় ঘনিয়ে আসছে - ছবি : সংগৃহীত

দেশে সম্ভবত অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। নতুন মেরুকরণের একটা সুফল দেশ-জাতি অবশ্যই পাবে। তবুও এখনো ভরসা তৈরি হয়নি, তবে আশাবাদটুকু টিকে আছে। তা ছাড়া, জনগণ তো শেষ ভরসা হয়ে আছেই। তারা শুধু সময়ের অপেক্ষা করছে। সেই সময়ও বোধ করি, অনেক দূরে নয়

বাংলাদেশে এর আগে একবার জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধি এসেছিলেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, বিভিন্ন মতের অনুসারী প্রধান প্রধান দলের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করে চার দফা সমঝোতা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার সেই প্রস্তাব রাজনৈতিক সঙ্কট-উত্তরণে জাতির মনে আশাবাদ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তার কোনো ফর্মুলাই রাজনীতিবিদেরা গ্রহণ করেননি। বিশেষ করে, ক্ষমতাসীনেরা অবজ্ঞাবশত, সেসব ফর্মুলার প্রতি কোনো সম্মান প্রদর্শন করার দায়বোধ করেননি।

বাস্তবে রাজনীতির আসল শক্তি দেশের জনগণ। জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দায়বোধ না করলে রাজনীতিবিদেরা যা খুশি তাই করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ দেশ একতরফা দলবিশেষকে দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে সমর্থন জোগালে জনগণ অসহায় বোধ করে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। কিন্তু তাদের বাস্তবে করার কিছু থাকে না। তবে জনগণের সমর্থন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে, গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হলে তখন কোনো দেশ বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণের ইচ্ছাই প্রাধান্য পায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশেষ করে ক’টি দেশ অনেকটা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে। তার মধ্যে এমন দেশ রয়েছে যারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে প্রভাব ফেলার জন্য কাজ করে আসছে। তাদের প্রতি জনগণের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়; কিন্তু বাস্তবে তারা কিছু করার মতো অবস্থান নিতে পারে না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত মেরুদণ্ড সোজা করে, মাথা সোজা করে দাঁড়ানো। প্রথমে বিদেশী শক্তির নেতিবাচক প্রভাব অস্বীকার করার মতো দৃঢ়তা প্রদর্শন করা এবং স্বদেশের রাজনীতি নিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া করে ন্যূনতম ঐক্যের সূত্র খুঁজে বের করা জরুরি। এর ফলেই দেশের রাজনীতি নিজস্ব বলয়ে দাঁড়াবে, জনগণও ভালোমন্দ যাচাই করে দেশজ দলের প্রতি সমর্থন জোগাবে। কোনো দলকে অপছন্দ করলে সেই দলকে সমর্থন না করে প্রয়োজনে সমালোচনা করে সেই দলটি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার মতো বার্তা কিংবা সময় দেবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাধারণভাবে চিহ্নিত রাজনৈতিক ধারা চারটি। একটি জাতীয়তাবাদী ধারা, অন্যটি জাতীয়তাবাদী ধারার দাবি করলেও বর্তমানে বামঘেঁষা দলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় ধারাটি ‘ইসলামপন্থী’ হিসেবে পরিচিত। চতুর্থ ধারাটি ‘বামপন্থী’ ধারা হিসেবে চিহ্নিত। এ চার ধারার মধ্যে বিচ্যুতি প্রবেশ করার কারণে কোনো একটি ধারাকে রাজনৈতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী সঠিকভাবে ‘ধারা’ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কারণ জাতীয়তাবাদী ধারার সাথে ইসলামপন্থীদের একটা অংশের বোঝাপড়া ভালো। আবার একসময়ের জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের সাথে বামপন্থীদের বোঝাপড়া শুধু ভালোই নয়, বামপন্থীরা প্রয়োজনে তাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়।

অন্য দিকে, তৃতীয় একটি রাজনৈতিক স্রোত বিদ্যমান, যাদের ভেতর ডানঘেঁষা, বামঘেঁষা জাতীয়তাবাদী ভাবনার প্রভাব রয়েছে। তারা ছোট দলের বড় নেতা, তবে রাজনীতিতে মাঝে মধ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাদের বক্তব্য-বিবৃতির প্রতি জনগণের আগ্রহ প্রচুর। তাদের সরকার পরিচালনায় ভাবতে না চাইলেও জনগণ তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলুক- এটা প্রত্যাশা করে। মাঝে মধ্যে তারা ক্যাটালিস্ট বা অনুঘটকের এটাও প্রত্যাশা করে। ভূমিকা রাখুন-এই শক্তিটিকে কোনো ধারার রাজনীতিবিদেরা অবজ্ঞা করেন না। এর বাইরে রয়েছে বুদ্ধিজীবী সমাজ ও সুশীল শ্রেণী হিসেবে পরিচিত একটি শক্তি। তারা ‘দেশপ্রেমিক’ হিসেবে পরিচিত হলেও তাদের অবস্থান মাঝে মধ্যে দলবিশেষের দিকে ঝুঁকে যায়।

এ কারণে তারাও সুবিধাবাদী শ্রেণীর কাতারে পড়ে যান। তা ছাড়া, এরা ঝুঁকি নিতে নারাজ। কোনো ঝুঁকি নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সামনের কাতারে পাওয়া যায় না। তবে ঝুঁকি নেন এবং সাহস করে সত্য কথা বলেন এমন লোকের সংখ্যা হাতেগোনা হলেও তারা আজো রয়েছেন। তারা জনমত গঠনে ভালো ভূমিকা পালন করে থাকেন।

দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের মিডিয়ার ভূমিকা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর সুবিধাবাদী অবস্থানে চলে গেছে। তাই সামাজিক মাধ্যমে জনমতের কিছু প্রতিফলন দেখা সম্ভব হলেও জাতীয় মিডিয়ায় জনমতের তেমন কোনো প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যায় না। এটাই এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ। তা ছাড়া রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলার সুসভ্য সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটেছে। এর ফলেই গণতন্ত্রের স্থলে পেশিতন্ত্র বা শক্তিতন্ত্র প্রাধান্য পাচ্ছে। এই শক্তির ব্যবহার অপব্যবহারই বর্তমান রাজনীতিতে প্রধান সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে।

এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে শুধু জনগণ। তবে নেতৃত্বের শূন্যতা জনগণকে ভীতি, ক্ষতি ও লোভকে জয় করে সামনে এগোবার সাহস জোগাচ্ছে না। যা হোক, দেশে সম্ভবত অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। নতুন মেরুকরণের একটা সুফল দেশ-জাতি অবশ্যই পাবে। তবুও এখনো ভরসা তৈরি হয়নি, তবে আশাবাদটুকু টিকে আছে। তা ছাড়া, জনগণ তো শেষ ভরসা হয়ে আছেই। তারা শুধু সময়ের অপেক্ষা করছে। সেই সময়ও বোধ করি, অনেক দূরে নয়।
masud2151@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement