২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভীতুরাই পালিয়ে যেতে চায় জীবন থেকে

ভীতুরাই পালিয়ে যেতে চায় জীবন থেকে - ছবি: সংগৃহীত

“আমরা যখন শার্টের তলায়/নিজস্ব গোপন ছুরি নিয়ে চলাফেরা করি,/প্রতি মুহূর্তের আয়নায় আত্মহত্যা করি আর/প্রতি মুহূর্তের অবিশ্বাসে/এর ওর সাথে কথা বলি,/সে মুহূর্তে ওরা বিলায় ওদের নিজস্ব সম্পদ/নির্বিশেষে চুপিচুপি।”
কবি আবুল হাসান (১৯৭৫) বৃক্ষ আর মানুষের পার্থক্য, তথা আধুনিক যুগের জীবনযন্ত্রণা, কপটতা ও কৃত্রিমতা তুলে ধরেছেন এই ক’টি চরণে। দেখিয়েছেন, এ যুগের মানুষ যখন কোনো না কোনোভাবে হত্যা কিংবা এর প্রয়াস এবং আত্মহত্যায় লিপ্ত, তখন প্রকৃতির বৃক্ষরাজি অবিরত কল্যাণকর্মে মানবজাতিকে ওদের কাছে ঋণী করে যাচ্ছে।

সত্যিই একবিংশ শতকে, মানবসভ্যতার এই চরম উৎকর্ষের সময়ে প্রযুক্তি যখন যুক্তিহীনভাবে আমাদের অস্থির ও আসক্ত করে তুলছে, তখন হনন ও আত্মহননে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে সভ্যতাদর্পী ও ক্ষমতাদর্পী মানবসন্তান। বর্তমান বিশ্বে সম্পদের অভাব নেই; যত অভাব শান্তির। তাই মানুষ ধনী হচ্ছে যত, তার কাছ থেকে প্রকৃত সুখ ততই দূরে পালিয়ে যাচ্ছে। এমন এক অশান্ত, উদ্বিগ্ন ও জটিলতাময় সময়ে কেউ হত্যা, কেউ আত্মহত্যার শিকার।

বেশ কয়েক বছর আগে এক জরিপে জানা গিয়েছিল, নানা আর্থসামাজিক সঙ্কটের দরুন বাংলাদেশে ঝিনাইদহ জেলাতে আত্মহত্যার হার সর্বাধিক। অপর দিকে, আর্থিক সঙ্কট যে দেশে নেই, সেই অত্যুন্নত জাপানে আত্মহত্যার হার পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। রবীন্দ্রনাথের ৫৫ বছর পরে যে বিখ্যাত লেখক সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ বিজয়ী দ্বিতীয় এশীয় ব্যক্তিত্ব, সেই ইয়েসুনোরি কাওয়াবাতাও রয়েছেন আত্মঘাতক জাপানিদের মধ্যে। তাদের নিজের প্রাণ নিজেই হরণ করার হিড়িক দেখে মনে পড়ে যায়, গানের সেই কলিটিÑ ‘এত সুখ সইবো কেমন করে।’

সভ্যতার বস্তুগত অগ্রগতির সাথে পাল্লা দিয়ে আত্মহত্যা রয়েছে অব্যাহত এবং বাংলাদেশে বিশেষত শহুরে মধ্য ও উচ্চবিত্তের মাঝে এ প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হলো ‘বিশ্বআত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’। এর দু’একদিন আগে ঢাকার পত্রিকায় একটি ছোট খবর হয়তো অনেকের চোখে পড়েনি, যদিও এর তাৎপর্য বড়। ঘটনা হলো, রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি লেকের পাড়ে দু’তরুণ বসে গল্প করছিল। হঠাৎ পাশের লেকের পানিতে ঝপাং করে কিছু একটা পড়ার শব্দে তারা ছুটে যায়। তখন দেখতে পেল, একজন পানিতে ডুবে যাচ্ছে। উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। সে এক প্রবাসীর কিশোরীকন্যা এবং ধানমন্ডির একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী। এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এমন অপমৃত্যু ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৈশোর ও তারুণ্যের সময় অতিক্রম করছে, এ ধরনের ছেলে-মেয়েরাই ইচ্ছা করে অকালমৃত্যু ডেকে আনছে নিজেদের। তাদের বেশির ভাগ হয় প্রেমের শিকার, না হয় বিত্তবান পরিবারের বখে যাওয়া সন্তান। বাংলাদেশে কয়েক দশক আগেও মাঝে মাঝে আত্মহত্যার খবর পাওয়া যেত। তবে তার কারণ ছিল প্রধানত অর্থনৈতিক ও পারিবারিক সমস্যা। এখনকার মতো হিড়িক ছিল না আত্মহত্যার, যেমন ছিল না নানাভাবে হত্যার তাণ্ডব। দেশ এখন উন্নয়নের প্লাবনে সয়লাব, জাতি বহু ক্ষেত্রে এগিয়েছে। অথচ, হত্যা-দুর্ঘটনা-আত্মহত্যা মিলে বাংলাদেশ যেন ‘মৃত্যু উপত্যকা’র রূপ নিচ্ছে।
আত্মহত্যার প্রথম যে ঘটনা আমার মনে পড়ে, তা হলো- স্কুলজীবনে আমাদের পাড়ার একটা খ্রিষ্টান পরিবারের তরুণ সন্তান আত্মহত্যা করেছিল বিষ খেয়ে। কারণ কী ছিল, জানি না। সে পড়াশোনা করেছিল সামান্য। এরপর একটা ছোট দোকান দিয়েছিল। আমার স্কুলজীবনের এক সহপাঠীর আত্মহত্যার ঘটনা আজও আমাদের মনকে বিষণ্ন করে তোলে। সে ছিল আমার বাল্যবন্ধু এবং দু’জনের বাসাও কাছাকাছি। স্কুলে ভর্তির প্রথম দিন থেকেই সে ছিল আমার ঘনিষ্ঠ। দেশের একটি খ্যাতনামা পরিবারের সদস্য সে।

দাদা ও নানা, উভয়েই ব্রিটিশ আমলের ‘খানবাহাদুর’। তার এক মামা হয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ওর মানসিক অসুস্থতার সূচনা। কিছু দিন পরে বাসায় সে আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর আগে রুমের দেয়ালে লিখে যায়, ‘বড়র প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।’ এই উদ্ধৃতি একজন বিখ্যাত সাহিত্যিকের লেখা থেকে। আমার সেই সহপাঠীর অপমৃত্যুর কিছু দিন পরে আমাদের পাড়ার একজন স্কুলছাত্র ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। দাদীর সাথে রাগারাগি করে নাকি সে এই পথ বেছে নেয়। ওর শৈশব থেকে তাকে দেখেছি। প্রেমের কারণে আজকাল হত্যা ও আত্মহত্যা, দুটোই ঘটছে অহরহ। ২০-২৫ বছর আগে আমার পরিচিত এক পরিবারের কিশোরী কন্যা প্রেম করলে তা মা-বাবা জেনে ফেলেন। তখন তাকে একটি রুমে আটকে রাখা হলো। সে অবস্থায় মেয়েটি অভিমানে মৃত্যুবরণ করে এবং এটাকে আত্মহত্যাই বলতে হয়।

সম্ভবত গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এ দেশে দু’টি ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয়ভাবে ‘সওদাগর’ নামে পরিচিত দু’জন ধনবান লোক এটা করেছিলেন। একটি ঘটনায়, ব্যবসায়ী ব্যক্তিটির কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যায়। তখন তিনি হাতের আঙুলের হীরার আংটি চুষে আত্মহত্যা করেন। এখন কত বিশিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক অসততা ধরা পড়ে। কিন্তু এদের না আছে লোকলজ্জা, আর না আছে শাস্তির ভয়। যা হোক, আরেক ঘটনা হচ্ছে, এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী স্তূপ করে রাখা টাকা গুনছিলেন। হঠাৎ কীভাবে যেন আগুন ধরে যায় নোটগুলোতে। তখন তিনি দিশেহারা হয়ে টাকার আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। টাকাই শুধু ছাই হয়ে যায়নি, নিজেও প্রাণ হারালেন। দু’টি ঘটনার একটিতে ইচ্ছা করে এবং অন্যটিতে ইচ্ছা না থাকলেও প্রাণ দিতে হলো সওদাগরকে। এ জন্য বলা হয়, ‘অর্থই সব অনর্থের মূল’।

পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার কিছু দিন পর তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মরহুম হাবিবুল্লাহ বাহার তুরস্ক থেকে মশার ওষুধ আনিয়েছিলেন। এটা এতই কড়া ও কার্যকর ছিল যে, অনেক গৃহবধূ নাকি শাশুড়ি বা স্বামীর সাথে ঝগড়া করে ঘরের বেড়ায় জিহ্বা লাগাতেন। সেখান থেকে মশার ওষুধের বিষে তাদের আত্মহননের কাজটি সহজেই সম্পন্ন হয়ে যেত।

বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন সুপরিচিত ব্যক্তি আত্মহত্যা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। প্রথমেই বলতে হয়, প্রখ্যাত কবি আশরাফ আলী খানের কথা। বৃহত্তর ফরিদপুরের এই প্রতিভাবান সন্তান অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ১৯৩৯ সালে। ‘রূপসী বাংলা’র কবি জীবনানন্দ দাশের সহস্যজনক অকাল মৃত্যুর কারণ মূলত আত্মহত্যা- এই ধারণাটি বেশ জোরালো। ১৯৫৪ সালে কলকাতার রাজপথে ধীরগতির ট্রামের ধাক্কায় মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন একটি গার্লস কলেজের লাজুক শিক্ষক। ১৯৫৯ সালে আমাদের দেশের সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও লেখক আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর আত্মহত্যা একটি উল্লেখযোগ্য অপমৃত্যু। তবে এগুলোকে ছাড়িয়ে যায় প্রখ্যাত ধ্বনিতত্ত্ববিদ ও সুসাহিত্যিক অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের রহস্যময় মৃত্যু। ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি ঢাকার খিলগাঁও লেভেলক্রসিংয়ে তার মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। কথিত আছে, তিনি নিজের গাড়িটি কাছেই রেখে রেললাইনে গিয়ে ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করেছিলেন। বাংলাদেশ আমলে আত্মহত্যা করেছেন প্রখ্যাত গল্পকার কায়েস আহমেদ, ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ ছায়াছবির নায়িকা ও প্রফেসর নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে ডলি আনোয়ার, বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এন্ড্রু অলক দেওয়ারী প্রমুখ। তাদের মধ্যে মোশাররফ ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মমতাজ উদ্দিন তরফদারের জামাতা। আত্মহত্যা করেছেন একসময়ের সাড়া জাগানো সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। তিনি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ছিলেন। সে দেশের সুন্দরী নায়িকা মেরিলিন মনরোর আত্মহত্যা (১৯৬২) বিশ্বের একটি সাড়া জাগানো ঘটনা। ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখকদের মধ্যে চ্যাটারটন থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের কবি সিলভিয়া প্লাথ (যুক্তরাষ্ট্র) পর্যন্ত কয়েকজন আত্মহননের শিকার। ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম বিদ্রোহের একজন নায়িকা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ইংরেজের হাতে ধরা না দিয়ে নিজের জীবন নিয়েছেন।

যাহোক, এবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বর্তমানে বরিশাল বিভাগে বেশি। সেখানে ২০১৭ সালে এক হাজার ৬০৮ জন আত্মহত্যা করেছে ফাঁস দিয়ে। ৮৭১ জন মারা গেছে বিষ পান করে। দ্বিতীয় স্থানে রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগ। ’১৭ সালে এখানে এক হাজার ৪৯৭ জন ফাঁস লাগিয়ে আর ৪৬৫ জন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। রংপুর বিভাগে ফাঁস দিয়ে এবং বিষপানে আত্মহত্যা করেছে যথাক্রমে ৯৪৩ ও ৪৮৫ জন। সিলেট বিভাগে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৭০৫ ও ৪২৬। চট্টগ্রামে ২০১৭ সালে মোট ৬১৩ জন আত্মঘাতী হয়েছে, যাদের ৪৩০ জন গলায় ফাঁস এবং ১৮২ জন বিষপানের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেছে। খুলনা বিভাগে ৩৩৫ জন ও ৮৭ জন যথাক্রমে ফাঁস দিয়ে ও বিষ খেয়ে আত্মহনন করেছে। এ বিভাগগুলোর বাইরে পুলিশের রেকর্ড রয়েছে ‘রেলওয়ে বিভাগ’ নামে। সেখানে ৮৬২ জন ফাঁস পরে এবং ৩৬১ জন বিষপান করে আত্মহত্যা করে। গায়ে আগুন লাগিয়ে সর্বাধিক মারা গেছে ‘রেল বিভাগে’। একই পন্থায় ছয়জন, পাঁচজন, চারজন ও দু’জন যথাক্রমে বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও খুলনা বিভাগে নিজেদের প্রাণসংহার করেছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে আত্মহত্যা করে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে। ২০১৭ সালে দেশে ১১ হাজার ৯৫ জন আত্মহত্যা করার রেকর্ড রয়েছে। এর বাইরেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। আগের বছর ২০১৬ সালে দেশে আত্মহত্যা করেছিল ১৯ হাজার ৩০০ জন।

বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে জানানো হয়, পারিবারিক সমস্যা ৩৭ থেকে ৫৯ শতাংশ আত্মহত্যার কারণ। অন্য দিকে, আত্মহত্যার চেষ্টা যারা করেছে, তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই মানসিক রোগী। ২৫ বছরের কম বয়সীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। পুরুষের চেয়ে মহিলাদের মাঝে এবং তারও বেশি, বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে, এই প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা আত্মহত্যার অনেক কারণ উল্লেখ করে থাকেন। তবে এর বাইরেও কারণ থাকতে পারে। এ দেশে আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলো হলো- যৌতুকসহ পারিবারিক নিপীড়ন, যৌন হয়রানি, উত্ত্যক্ত করা এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা, প্রেমে ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, মানসিক অসুস্থতা, মাদকাসক্তি, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, দাম্পত্য কলহ বিবাদ, জটিল রোগের দুঃসহ যন্ত্রণা, এক ধরনের অফাবহঃঁৎরংস, পরকালীন শাস্তির ভয়হীন ভোগসর্বস্ব জীবন প্রভৃতি। নৈতিক অবক্ষয়, ধর্মীয় চেতনা ও পারলৌকিক শাস্তির ভয়ের ক্রমহ্রাস, বস্তুবাদী মানসিকতা, নগরায়নসহ আধুনিক জীবনজটিলতা, সমাজের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা, প্রভৃতি আত্মহত্যার ক্ষেত্রে উসকানি দিচ্ছে বলা চলে। অনেকের মতে, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতাও এ জন্য দায়ী।

যারা নিঃসঙ্গ, বিষণ্নতায় আক্রান্ত, অসামাজিক, চরমভাবে হতাশ, নেশাখোর, অত্যধিক জেদী ও আবেগপ্রবণ-এমন ব্যক্তিদের মাঝে আত্মহননপ্রবণতা বেশি থাকে। এই ডিজিটাল যুগে যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে মৃত্যুবরণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে এবং আত্মহত্যা সংক্রান্ত ওয়েবপেজ ঘাঁটে বেশি, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।

আত্মহত্যা জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান নয়। বরং এটি সমস্যাকে অনেক ভয়াবহ ও মারাত্মক করে তোলে। জীবন সংগ্রামের জটিল রণক্ষেত্রে যে মানুষটি পালিয়ে না গিয়ে সাহসের সাথে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যথাসাধ্য, সে শুধু টিকেই থাকে না, বিজয়ীও হয়। আর এই আত্মবিশ্বাস ততই প্রবল, যত বেশি সে বিশ্বাসী হয় জগতে মহান স্রষ্টার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এবং পরম করুণার ওপর। আত্মহত্যার মাঝে যারা কথিত মুক্তি খোঁজে, তারা মূলত ভীতু ও আত্মপ্রত্যয়হীন। তারা লড়াই না করেই পরাজয় মেনে নিয়ে ‘নির্বাণ’ লাভের ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। কবির সে মহানবাণী, ‘অসত্যের কাছে নত নাহি করে শির, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর’- ওরা জেনেও জানে না।

ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ হিসেবে গণ্য। অন্যান্য ধর্মেও এটাকে অনুমোদন করা হয়নি। কারণ, জীবন দেয়া নেয়ার একমাত্র অধিকার তারই, যিনি মানবজাতিসহ এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা, প্রতিপালক, বিধানদাতা এবং চূড়ান্ত বিচারক। তিনি জীবন দিয়েছেন। তাই তার নির্ধারিত আয়ু শেষ হলে মানুষসমেত তাবৎ প্রাণীকুলের প্রাণপ্রদীপ নিভে যাবে- এটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। অতীতে মানুষের মাঝে আজকের মতো মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা যেত না এবং ধর্ম ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল অটুট। তখন মুসলিম পরিবারের আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়াকেও সমাজ সমর্থন করত না। এখন দেখা যায়, পাশ্চাত্য তথা ভোগবাদী ও বস্তুসর্বস্ব দেশগুলোর অপপ্রভাবে আমাদের দেশেও বিশেষত টিনএজারদের মাঝে আত্মহননের হিড়িক। এটা তাদের কারো কাছে অ্যাডভেঞ্চার, কারো কাছে ফ্যাশন, আর কারো দৃষ্টিতে রিমেডি।

পাদটীকা : প্রেমপিরিতির সর্বনাশা খেলায় কিশোর ও তরুণ বয়সেই অনেক সম্ভাবনাময় জীবন ঝরে পড়ছে। বাংলাদেশে রাজধানীর ধনীর সন্তান থেকে শুরু করে দূর গণ্ডগ্রামের সাধারণ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত এই প্রণয়লীলার বলি হয়ে প্রাণ দিচ্ছে ও নিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবারের একটি খবর, ঢাকার দোহার উপজেলার এক গ্রামে প্রেমের ঘটনায় প্রেমিক-প্রেমিকা, দু’জনই আত্মহত্যা করে ইহজীবনের সমাপ্তি টেনেছে। উভয়ের বয়স মাত্র ১৬ বছর এবং তারা স্কুলের গণ্ডিও পার হয়নি। তাদের দীর্ঘ দিনের গোপন প্রেমের খবর জানাজানি হলে অভিভাবকরা এতে বাধা দেন। কিন্তু তারা পরিবারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। ২৫ আগস্ট গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এই শোকে ১১ সেপ্টেম্বর ছেলেটি গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

পুনশ্চ : রবীন্দ্রনাথের বৌদি কাদম্বরী দেবী তার বাল্যকালে আত্মহত্যা করেছিলেন। এতে বালক রবি বিষম দুঃখ পেয়েছিলেন। পরে তার এক লেখায় করেছেন সেই বহুল উদ্ধৃত উক্তি : ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই।’ যা হোক, রবিঠাকুর তার এক বিখ্যাত কবিতায় বলেছেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে; মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। এই সূর্যকর, এই পুষ্পিত কাননে, হৃদয়ের মাঝে আমি যদি স্থান পাই।’ আসুন, সবাই মিলে ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তুলি। পরস্পরকে হৃদয়ে ঠাঁই দিই। নির্ধারিত জীবনকাল সুন্দর এই পৃথিবীতে সুন্দরভাবে অতিবাহিত করাই উচিত আমাদের।


আরো সংবাদ



premium cement
শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় বিজিবি মোতায়েন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলাকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপির কোনো মতপার্থক্য নেই : তারেক রহমান পার্থে ইতিহাস গড়ল ভারত, পাত্তাই পায়নি অস্ট্রেলিয়া দেশের শ্রমখাতে নতুন করে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে : শ্রম সচিব সুদমুক্ত ঋণের প্রলোভনে ঢাকায় সমাবেশের চেষ্টা : লক্ষ্মীপুরে আটক ১১ নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ বদলি সাবেক কৃষিমন্ত্রী শহীদকে মৌলভীবাজার কারাগারে স্থানান্তর সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের ৫ আগস্টের বিপ্লবই ইসলামী বিপ্লবের পূর্বাভাস : মামুনুল হক

সকল