নিরাপদ অবতরণের মই চাই
- মাসুদ মজুমদার
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:২৮
রাজনীতিতে নতুন করে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। এর পরিণতি এখনো অজানা। তবে জাতীয় রাজনীতিতে যে একটা গুণগত না হোক, সাধারণ পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, সেটা স্পষ্ট। কারণ, দেশের বুদ্ধিজীবীসমাজ নিজেদের সম্পৃক্ত করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেও এক ধরনের বল ও ভরসা বেড়েছে। সরকারের হাতের শেষ অস্ত্রগুলোও ব্যবহৃত হয়ে গেছে। হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, নানা নামে নানাভাবে গুপ্ত হত্যা ও ক্রসফায়ারসহ সব রকমের নিপীড়নমূলক কাজ ইতোমধ্যে সাঙ্গ করে ফেলা হয়েছে। এখন সরকারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং বিচার বিভাগকেও ব্যবহারের শেষ চেষ্টা করতে হচ্ছে।
এখন দেশে একক কোনো বিরোধী দল নেই। আবার সরকারও এতটা দৃঢ় অবস্থানে নেই যে, সম্মিলিত বা যুগপৎ কোনো আন্দোলন ঠেকানোর মতো সামর্থ্য রাখে। তাই সরকারকে একটা পর্যায় এসে ছাড় দিতে হবে। তারুণ্যকে সরকার বিগড়ে দিয়েছে। তারা এখনো খামোশ মানেনি। ভেতরে ভেতরে ফুঁসে আছে। তাই আশা করার যথেষ্ট কারণ আছে- শেষ পর্যন্ত একটি ফরমুলার মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে, যা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হবে। অবশ্য তার আগে নির্বাচন কমিশন নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে, সুশীল সমাজ এবং জনমত একমত যে, এই ইসির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব নয়। কারণ তারা নিজেরাই নিজেদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। তার চেয়ে বড় কথাÑ এ কমিশনের সবাই না হোক, মোটামুটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদের দলীয় পরিচয় গোপন রাখতে পারেননি। সেই পরিচয় অনুসারে তাদের আনুগত্য যে ঘুরে দাঁড়াবে, তাতে সন্দেহ করার কারণ নেই। এ পর্যন্ত যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে সব ক’টিতে বর্তমান ইসির ব্যর্থতার নজির স্পষ্ট। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে ইসির পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাধারণ চোখে জনমত যাচাই করা সহজ নয়। তা ছাড়া, এখন মিডিয়া পক্ষপাতদুষ্ট। প্রশাসনে দলবাজেরা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন মেরুদণ্ডহীন। তাই সরকার চাইলে একটি জবরদস্তির নির্বাচন করার চেষ্টা করে দেখতে পারে। তবে জনমত আশা করে, সরকার ২০১৪ সালের মতো আর নতুন করে এসিড টেস্ট করতে যাবে না। কারণ, সামাজিক শক্তির সাথে বিশ্বসম্প্রদায়ও এবার সজাগ এবং সতর্ক। তারা কোনোভাবেই চাইবেন না, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হোক।
সরকার বিশ্বসম্প্রদায়কে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে দেখেছে আর এবার সেটা সম্ভব নয়। কারণ ভোটার টানার ক্ষেত্রে সক্ষম না হোক, কিন্তু রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করার মতো এমন কয়েকজন ব্যক্তিত্ব আছেন যারা পরিবর্তনকামী হয়ে উঠেছেন। সেভাবেই তারা মঞ্চে নেপথ্যে কথাও বলছেন। সেসব কর্তা জনমতকে আলোড়িত করছেন। তার ওপর, নেগেটিভ ভোটার এবার অর্ধেক। তারা কাকে ভোট দেবেন- সেটা বোঝা কঠিন; কিন্তু সরকারকে সমর্থন না করার ব্যাপারে তাদের দৃঢ়তা শতভাগ দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে।
তাই তফসিল ঘোষণা, আরপিও সংশোধন এবং সরকারি মুখপাত্রদের কিছুটা সমঝোতামূলক বক্তব্য-বিবৃতি জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারছে না যে, এর মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রেক্ষপট সৃষ্টি হবে। অনেকেই ‘রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তি’র উত্থান কামনা করছেন এবং আশাবাদও সৃষ্টি হয়ে আছে যে, ছোট দলের কয়েকজন বড় নেতার মাধ্যমে এমন নাটকীয় কিছু ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যাতে সরকার কাবু হয়ে পড়বে। সরকার শুধু গণতন্ত্রকে অবারিত করে দেখতে পারে- তাদের উন্নয়নের ডুগডুগি জনগণ কতটা সমর্থন করে; আর কতটা পরিবর্তনকে স্বাগত জানাবার জন্য রাজপথে নেমে পড়ে। সরকারের উচিত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই, একটা পরীক্ষামূলক চ্যালেঞ্জ নেয়া।
একটি কথা স্মরণযোগ্য যে, এখন সরকার ইচ্ছে করলেই নির্বাচন এড়াতে পারবে না। আবার জবরদস্তিমূলক নির্বাচন করে এক তরফা কিছু করার অবস্থাও আর নেই। তাই সরকারের জন্য একটা মই দরকার। যা দিয়ে তারা সরকার থেকে নেমে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে পারে। সবার উচিতÑ সরকারের নিরাপদ অবতরণের ফরমুলা নিয়ে ভাবা, আর সেটাই বোধ করি এখন বড় সমস্যা হয়ে আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা