২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বাধীন হয়েছি, মুক্ত হইনি

স্বাধীন হয়েছি, মুক্ত হইনি - ছবি : সংগৃহীত

দরজায় রোগীর কণ্ঠ শুনেই নাকি রোগনির্ণয় করার ক্ষমতা ছিল ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে ডা: বদরুদ্দোজারা থাকলেও, ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার দেখেও দাঁতের চিকিৎসা নিয়েই ব্যস্ত। ফলে যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। সব জেনেছি, সব বুঝেছি, সব দেখেছি। ভাবছিলাম, কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে লেখা মানেই আবারো সময় নষ্ট করা। তারপরেও লিখব এবং মুক্তিযুদ্ধের খিচুড়ি বানাতে, ৭১-এর সব অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগাব।

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দেশবিরোধী কার্যক্রমে যারাই অংশগ্রহণ করেছে, তারা সবাই যুদ্ধাপরাধী। তাদের উত্তরসূরিরা যেন কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা না পায়, সেটি নিশ্চিত করা হবে। এটি নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করেছিল, সেসব রাজাকার, আল-শামস, আল-বদরদের তালিকা করা হবে। কোটা সংস্কার বিষয়ে আদালতের রায় থাকায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে বাকিগুলো সংস্কার হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেয়া যাবে না।’ কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় হাইকমান্ডের এই বক্তব্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ লেখাটির গন্তব্যস্থল। শুধু শেরেবাংলা এবং মওলানা ভাসানীর মতো পলিটিক্যাল অ্যাকাউন্টেটের অভাবে, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এই ধরনের গিবত শুনতে বাধ্য হচ্ছি। অন্যথায় বহু আগেই জিহ্বার লাগাম টানতে হতো।
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন, রিফিউজি হওয়া। না। ডালভাতের সন্ধানে ভূমধ্যসাগরে এটা কোনো বেকার বাংলাদেশীর মৃত্যুর সাথে লড়ার অভিজ্ঞতা নয়; বরং পরাধীনতামুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা। ১০ এপ্রিল প্রায় ১০ হাজার সংখ্যালঘুর সাথে ভারতের ডালু পাহাড়ে পৌঁছলে জুটল, রিফিউজি স্ট্যাটাস। তত দিনে অন্তত আরো ২০ হাজার রিফিউজি সেখানে, যাদের ৯৯.৯৯ ভাগই সংখ্যালঘু।

নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগই হয়তো জানে না, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান টার্গেট কিন্তু বড় মাপের নেতারা নন; হলে, দূরের সেফহাউজে নিয়ে, অন্যদের মেরে সাফ করত না। গুলি করার আগে টার্গেটের কাপড় খুলে জাতের সন্ধান ঠিক করত না। যে কারণে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি পালিয়ে না গিয়ে ৯ মাস দেশেই। ফিরে যা দেখেছি, যা শুনেছি, স্বাভাবিক জীবনযাপনেই ছিল। সরকারি-বেসরকারি চাকরি, স্কুল-কলেজ, সিনেমা, নাটক, পার্টি, বিবাহ... সব কিছুই ছিল। ফিরে আসার পরেই পাকিস্তানপন্থীদের এক লোক, দখল করা ‘রূপকথা’ সিনেমা হলটির চাবি আমার তালোইয়ের হাতে বুঝিয়ে দেয়ার কয়েক দিন পরেই হলটি আবারো চালু হলো। ফিরে গেলাম স্বাভাবিক জীবনে। তবে যেসব অবাধ্য সংখ্যালঘুরা দেশেই ছিলেন, বেশির ভাগই শহীদ।

এসব বলার কারণ, হাইকমান্ডের বয়ানের একটি গ্রহণযোগ্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যুগে যুগে রাজনীতিতে এক পক্ষের হিরো, অন্যপক্ষের টেরোরিস্ট। দক্ষিণ আফ্রিকানদেরকে এই কথাটি বোঝাতে পেরেছিলেন ম্যান্ডেলা। ফলে সাদা-কালোদের নিয়ে দেশ গঠনে সমস্যা হয়নি কালজয়ী এই নেতার। ম্যান্ডেলার ১০০তম জন্মদিনে বিশ্বজুড়ে যা ঘটল, বন্দুকের বদলে হৃদয় দিয়ে অনুভবের বিষয়। ওবামার মতো শত শত নেতারা ছুটে গেছেন। কারণ, নিশ্চয়ই তিনি অনেকের চেয়ে জ্ঞানী, তাই তিনি ঐতিহাসিক।

ব্যতিক্রম শুধু আমরাই। ৪৭ বছর পর, সারপ্লাসের হালখাতা খুলে বসেছি। তখন যাদের জন্মও হয়নি, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা অস্ত্রহাতে তুলে নেয়ার বদলে খানসাহেবদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিল, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা খানসাহেবদের সাইরেনওয়ালা গাড়িতে চড়ে ভাতা খেয়ে বেড়িয়েছে, তারাই এখন মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র জমিদার। আছে শৌখিন মুক্তিযোদ্ধাও। মুক্তিযোদ্ধার কার্ড মানেইÑ মাসিক ভাতা, ডিসির অনুষ্ঠানে দাওয়াত, বিশেষ দিবসে রজনীগন্ধা সংবর্ধনা। মিলিয়ন ডলারের সুবিধার নামÑ ৩০ শতাংশ কোটা।

২.
৪৭ বছর পর দেরিতে হলেও ঘুম ভেঙেছে কোটাবিরোধীদের। যাদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি না দিয়ে দিন শুরু হয় না। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বয়ান, রাজাকারদের সন্তানেরা যেন কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা হবে। আমার প্রশ্ন, রাজাকার অথবা ব্রাহ্মণ, নতুন প্রজন্মের সাথে অতীতের সম্পর্ক কী? তখন তো এদের জন্মই হয়নি। এদের রাজাকারের বাচ্চা বলাটা যতখানি অপরাধ, তারচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ন্যূনতম অভিজ্ঞতার অভাবের প্রমাণ।

১/১১-র হাত ধরে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্লাস-মাইনাসের ছুরির তলে মুক্তিযুদ্ধ। সারপ্লাস অর্থাৎ, শত্র“পক্ষ। হিন্দুদের নিন্দিত কাস্ট সিস্টেমের মতো, বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করাই উদ্দেশ্য। সারপ্লাসের খেলাকেই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু করে ২০৪১ পর্যন্ত ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে অনির্বাচিতরা। যে কারণে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা অনেক মুক্তিযোদ্ধাই, অনির্বাচিতদের সারপ্লাসের রোষানলে পড়ে- সর্বহারা। অনেকেরই পদ-পদবি, ভাতা, সাংবিধানিক অধিকার, ইজ্জত... ঝুঁকির মুখে। এমনকি মুজিবের দেয়া বীর উত্তম পদকটিও রক্ষা পায়নি। সুতরাং, ৯ মাসের অভিজ্ঞতা যাদের নেই, তারাই বলবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আমি বলব, স্বাধীন হয়েছি কিন্তু মুক্ত হইনি।
এমনকি মুক্তিযুদ্ধের তালিকাতেও ভেজাল। শহীদেরও কোনো তালিকা হলো না। এসব কথা কে জানতে চায়! আমি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বলেই, আসল-নকল চিনি। শাসকগোষ্ঠীর সুনজরে থাকায় অনেক বিরোধীরাও শহীদ পরিবারের মর্যাদায়। সংসদে এবং বাইরে এদের সবাই চেনে। সত্য কথা বললেই- রাজাকার। নিজেও এর ভুক্তভোগী।

অনির্বাচিত মন্ত্রী বলেছেন, রাজাকারদের সন্তানেরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বিধায় সরকারি চাকরি নিষিদ্ধ। আমি বলব, ৪৭ বছর পরেও যাদেরকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঢোকাচ্ছে মন্ত্রণালয়, এদের হাতে কী প্রমাণ আছে? অথচ প্রাকৃতিক কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমার কথা। সেই হিসেবে বড়জোর ২৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকার কথা। উল্টা সংখ্যা দুই লাখের ঊর্ধ্বে হওয়ায় ৩০ শতাংশ কোটার হিসাবের জন্য এই মুহূর্তে একজন শেরে বাংলা বা ভাসানীর মতো পলিটিক্যাল অ্যাকাউন্টেটের প্রয়োজন যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।

৩.
৪৭ বছর পর, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে কিছু নেই। রাজাকার, আল-শামস, আল-বদরদের তালিকা করার প্রয়োজনও রাজনীতিকে আরো বেশি পুড়িয়ে দেয়া। এর অর্থ দাঁড়ায়- এতকাল ইচ্ছে করেই মনে ছিল না। বাস্তবে ৯০ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সংসদগুলোতে এই সব দ্বিতীয় শ্রেণীদের সাথেই ক্ষমতা। প্রণব-হিলারি প্রভাবিত নির্বাচনের পর, ২০১০ সনে সারপ্লাসদের প্রসঙ্গ প্রথম উঠল সংসদে। ২০১১তে সংবিধান সংশোধন করে সারপ্লাসের প্রশ্নটি উন্মুক্ত করার সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ল ব্রিটিশের ডিভাইড অ্যান্ড রুল। অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ট্রাইব্যুনাল হলো, যা হওয়ার তাই হলো। ক্ষিপ্ত পাবলিক স্যোসাল মিডিয়াতে অসংখ্য ছবি ভাইরাল করে দিলো। সেখানে সুরঞ্জিত বাবু, ইনু, হাইকমান্ড এবং সাঙ্গপাঙ্গরা এক টেবিলে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। বিষয়টি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উলঙ্গবাদ! দীর্ঘ দিন এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজছি। ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক দর্শন এ দেশেও ব্যবহার করলে, বহু আগেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির লাগাম টানা যেত। কারণ, হঠাৎই কেউ স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে যায় না। হঠাৎ করেই কেউ মুক্তিযোদ্ধাও হয় না। হলে ৯০ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সংসদগুলো কল্পনা।

সারপ্লাসের অসুখ জাতিকে যেখানে নিয়ে গেছে, একটি প্রমাণ। নিউ ইয়র্কে এসে ঢাকার এক চাটুকার চলচ্চিত্রকার, খান আতাকে বানিয়ে দিলেন রাজাকার! যদিও আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তুষ্ট হওয়ার মতো ছবি তৈরি হয়নি, তারপরেও চেষ্টা হয়েছিল। সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত গুণী চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান তৈরি করলেন, ‘আবার তোরা মানুষ হ।’ ছবিটি জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু ৪০ বছর পর, এই ছবিতে রাজাকার আবিষ্কার করলেন ওই লোক। শাসককুলের সুনজরে থাকায়, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি তৈরির জন্য প্রচুর অর্থ কামিয়েছেন। তবে টাকা খেয়েও ভালো ছবি করতে পারেননি। ‘আবার তোরা মানুষ হ’ নিয়ে বিষোদ্গারের কারণও তাই।
তবে আমার মতো মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা বলবে, খান আতাকে যারা রাজাকার বলে, তারাই রাজাকারসুলভ। কারণ, ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে খান আতার অভিনয় ছিল একজন প্রতীকী মুক্তিযোদ্ধার। রওশন জামিলের অভিনয় ছিল একজন প্রতীকী স্বৈরাচারের। স্বৈরাচারী স্ত্রীর অত্যাচারে প্রতীকী মুক্তিযোদ্ধা ছাদে বসে গান গাইতেন, ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে।’ আর স্বৈরচারী স্ত্রী তখন ঘরের মধ্যে ভূতের সাথে যুদ্ধ করতেন। সময়টা তখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শীর্ষে। আন্দোলকারীদের মুখে মুখে এই গান। মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে, ছবিটি যেন আন্দোলনের আগুনে পেট্রল ঢেলে দিলো। আমার শহরে প্রতিটি শো হাউজফুল। ৭১-এর ঢাক বেজে উঠলে, ছবিটি সাথে নিয়ে কলকাতায় চলে গেলেন সিনেমা হলের মালিক।

আমেরিকাতে আমার বড় বোনের বান্ধবী জহির রায়হানের বোন নফিসা। ঠিকানা জোগাড় করে ছবির সন্ধানে কলকাতায় আমাদের বাড়িতে হাজির, জহির রায়হানকে ছবিটির সন্ধান দিলাম। এরপরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতেও দেখানো শুরু হলো। মুক্তিযুদ্ধের সেন্টিমেন্ট তৈরিতে জহির রায়হান এবং খান আতাদের যে অবদান, একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ সচেতনরাই জানে। যারা অন্দরমহলের আরাম-আয়েশে, কিছুতেই জানবে না। জহির রায়হানকে কারা খুন করেছিল, সবাই-ই জানে। শহীদের মর্যাদা দূরে থাক, জন্ম এবং মৃত্যুদিবসে তার নামটি উচ্চারণ না করলেও, প্রতীকী মুক্তিযোদ্ধা খান আতাকে রাজাকার বানিয়েই ছাড়ল।

শুরুতেই লিখেছি, সাড়ে ছয় কোটি মানুষ তখন দেশে থেকেই সব ধরনের নাগরিক সুবিধা ভোগ করেছেন। পালিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ সত্ত্বেও যাননি। দেশেই সরকারি-বেসরকারি চাকরি করেছেন বেশির ভাগই। ৭১এ এদের অনেকের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন। বিষয়টি দাঁড়াল, ১৪ ডিসেম্বরে নিহতরা শহীদ। জীবিতরা, গায়ক আব্দুল আলীমের মতো ব্লাকলিস্টেড।

৪.
স্বাধীনতাযুদ্ধে যারাই দেশবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত ছিল, সবাই নাকি যুদ্ধাপরাধী। আমার প্রশ্নগুলো অবশ্যই যৌক্তিক। এদের অনেকেই তখন ঢাকা শহরে থেকে খানসাহেবদের দেয়া পুলিশি নিরাপত্তা, মাসিক ভাতা, সাইরেনওয়ালা গাড়ি... কোনো কিছুই বাদ দেননি। এখন যিনি খানসাহেবদের তুখোড় সমালোচক, তাদের পাঠানো দুধ খেয়েই শিশুটি বড় হয়েছে। সিএমএইচ-এ নিয়ে পৃথিবীতে তার আগমনকে নিরাপদ করেছিল তারাই। ইতিহাস সাক্ষী। তবে শুধু শেরেবাংলা এবং ভাসানীর মতো পলিটিক্যাল অ্যাকাউন্টেটের অভাবে, এদের উদ্ভট প্রশ্নের জবাব কেউই চায় না। আগেও লিখেছি, মুক্তিযুদ্ধের টার্গেট বড় নেতারা নন। সে দিনকার শিশুটি নিজেও এই ক্লাসের।

এবার দেখা যাক আদালতের রায় বনাম কোটাসংস্কার। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার ওপর নাকি হাত দেয়া নিষেধ। কারণ, আদালতের রায়। ওটা বাদ দিয়ে বাকিগুলোতে ছুরি চালানোর ঘোষণা। অর্থাৎ, নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী এবং সংখ্যালঘুরা ভিকটিম হওয়ার পথে।

তাহলে ধরে নেবো, সিনহার রায় মেনে অবৈধ সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যাননি। সিনহা বাবুও সসম্মানে দেশে ফিরে পদত্যাগের অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে বসে ফুরফুরে মেজাজে। কেন নয়? মুক্তিযোদ্ধা কোটার মতোই অনির্বাচিত সংসদের বিরুদ্ধেও রায়টি এখন পর্যন্ত বহাল।

বাস্তবে সত্য-মিথ্যা, সব মুক্তিযোদ্ধার ঘরেই নাতিপুতির সমাহার। এদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটার ওপর রায় থাকলে, অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। কারণ, প্রাকৃতিক কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কমেছে। তা ছাড়াও সাড়ে সাত কোটি এখন ১৬ কোটি। সাড়ে সাত কোটির ৩০ ভাগ আর ১৬ কোটির ৩০ ভাগের সংখ্যায় বিস্তর তফাৎ। এরাই ৩০ ভাগ খেয়ে ফেললে, বাকিরা কী খাবে? যে কারণে কোটাবিরোধী আন্দোলন যোগ্যতা অর্জন করেছে।
সংসদে উত্তেজিত হাইকমান্ড যে দিন কোটা না রাখার ঘোষণা দিলেন, তখনই জানতাম। কারণ, যে বাঘের পিঠে উঠে বসেছেন, নামতে চাইলেই খেয়ে ফেলবে। এই বাঘের নাম- ছাত্রলীগ। মিডিয়া যাদের নানামুখী কর্মকাণ্ড লিখে শেষ করতে পারছে না। রামদা, চাপাতি, বন্দুক হাতে নিত্যনতুন ছবি আসছেই। বিশ্বজিৎখ্যাত অদম্য ছাত্রলীগের হাতে পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলার ভিডিও ভাইরাল। হাতুড়ি দিয়ে হাড় ভেঙে ফেলার ছবিও ভাইরাল। হাসপাতালে ঢুকে আতহদেরকে বের করে দিচ্ছে। এমনকি গোপনে চিকিৎসা নিলে সেখানেও হানা। (দ্র: মানবজমিন ২৫ জুলাই, ৫ হাসপাতাল বদল নূরের)। কোটাবিরোধী আন্দোলন করতে দেখলেই গুলি করার ঘোষণা। বিষয়টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি কুখ্যাত পার্টি এবং তাদের ছয়টি সংগঠনর সাথে পরিপূরক। সুতরাং, মিছরির ছুরির ওপর বসা হাইকমান্ডের একমাত্র সম্বল, আদালতের দোহাই।

কোটাবিরোধী আন্দোলন অযৌক্তিক হলে, স্কুল-কলেজগুলো এখনই বন্ধ করা উচিত। কারণ, প্রত্যেকেই খরচ করে পড়ছে। সবাই বিদেশে যাবে এমন গ্যারান্টি নেই। অনর্থ জীবনও অপ্রয়োজনীয়। অতএব নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘুদের কোটা অর্ধেক বাদ দিয়ে, ৩০ শতাংশের পুরোটাই ছেঁটে ফেলা হোক। কারণ, প্রজন্মের মেধাকে সম্মান করতে হবে। এই দিন আর সেই দিন এক নয়। ভিক্ষা-করুণার দিন শেষ। ভাতাখোর অলস প্রজন্ম তৈরি যতটা অপরাধ, তারচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এরাই বইখাতা ফেলে দিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। এমনকি শিক্ষকদেরও গুলি করছে।

আমার তো মনে হয়, এসব মিথ্যা বানোয়াট কাল্পনিক অভিযোগগুলো উল্টা এখন অভিযুক্তদেরই উচিত হাইকমান্ডের উদ্দেশে চিৎকার করে বলা। অন্যথায় ---, মৌনতাই সম্মতির লাইসেন্স। এই লেখাটিতে হয়তো সেটা আমি যথেষ্ট যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছি। কোটা আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক।
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement