২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইয়েস স্যার!

ইয়েস স্যার! - ছবি : নয়া দিগন্ত

আমার অভিজ্ঞতায় ‘স্যার’ শব্দটি যতখানি সম্মানের, তার চেয়ে বেশি আত্মঘাতী। প্রথমে ‘স্যার’ শব্দটির ভালো দিক নিয়েই আলোচনা।
স্কুলজীবনে একমাত্র শিক্ষকদেরই ‘স্যার’ বলতাম। ‘স্যার’ মানে সামান্য বেতনে জ্ঞান বিতরণ। সেই সময়ের কথাই বলছি, যখন বেশির ভাগের পরনে ছিল মলিন শার্ট, ধুতি ও পায়জামা। তিনি যা বলবেন, সবাই ‘ইয়েস স্যার’। আজ মনে পড়ছে একজন স্যারের কথা, ডাক্তার না হলেও তার নাম কাননবালা ডাক্তার। রূপের দেবী কাননবালাকে বিয়ে না করার দুঃখে চিরকুমার। অঙ্কে পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও কেন শিক্ষক হননি, জানি না। তবে বিপদ হলো আমার। এমনিতেই সকালে-বিকেলে প্রাইভেট মাস্টার। তার ওপর অতিরিক্ত আপদ ‘কাননবালা স্যার’। জোর করেই বিনা বেতনে অঙ্ক শেখাবেন। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে গোপনে অনেক গালিগালাজ করতাম। এখন মনে হয়, স্যার বেঁচে থাকলে তার পা দুটো মাথায় রাখতাম। কারণ, যা কিছু শিখেছি তাদের কাছ থেকেই। তার মতো অনেক স্যারের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

পরবর্তীকালে যাদের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকলাম, বাইরের ‘স্যার’দের সঙ্গে ক্লাসরুমের স্যারদের আকাশ-পাতাল তফাত। ৯৯ ভাগই দাম্ভিক, অসৎ, বদমেজাজী, বৈষম্যবাদী, সুবিধাভোগী, ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, নারীবাজ... এদের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। ‘স্যার’ শব্দের বাইরে অন্য কোনো সম্বোধনকে তারা সহ্য করে না। দারোয়ান, বুয়া, চাকর, ড্রাইভার, কেরানি, হেলপার... নাতির বয়সী হলেও বলতে হবে ‘স্যার’। বাপের বয়সী দারোয়ানের মুখেও ‘স্যার’। দাঁড়াতে হবে স্যারকে দেখামাত্রই। বাবা না ছেলের বয়সী- সেসব বিবেচ্য নয়। পরবর্তীকালে ‘স্যার কালচারের’ সঙ্গে পরিচিত হতে থাকলাম। অফিস-আদালতে ‘নো স্যার’ বলে কোনো শব্দ নেই। আমার কাছে যার এক পয়সাও মূল্য নেই, কাজ আদায়ে তাকেও বলতে হতো- ‘ইয়েস স্যার’। বসেরও বস আছে। দেখামাত্র স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে বলতে হয়- জি স্যার, ইয়েস স্যার।

রাজনীতিবিদ ‘স্যার’দের উচ্চতা আরো ভয়ানক। পদ-পদবিতে বিরাট হলে হিমালয়ের উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে যায়। আবার আছে রাজনৈতিক-সাংবাদিক। তাদের কথা কত লিখব! ওমুক ভবনের ইয়েস স্যার প্রেস কনফারেন্স দেখতে থাকুন। হাত কচলাতে কচলাতে পারলে ইয়েস স্যারের সামনে মাটিতেই গড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ইতোমধ্যে গোপাল ভাঁড়ের শূন্যস্থান পূরণ করেছেন।
স্যার মানসিকতার আরো নমুনা। ভাবুন, বসের স্ত্রীকে দারোয়ান বলছে- হ্যালো, মিসেস আমেনা। গুডমর্নিং। কেমন আছেন? নাশতা নিয়ে বসের স্ত্রী এবং বাড়ির বুয়া এক টেবিলে। আপনার ড্রাইভার নবাবের মতো সিটে বসে আছে, আর আপনি নিজেই দরজা খুলে গাড়িতে উঠছেন! এরপর ভাবুন, রেস্টুরেন্টের পার্কিংলটগুলোতে গাড়ি রেখে প্রত্যেকের ড্রাইভারই স্যারের পরিবারের সঙ্গে চাইনিজ বা পিজা রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে খাচ্ছে। ম্যাডামের হাত-পা, কোমর মালিশের বদলে, বন্ধুর মতো গল্প করছে। জানি, এসব কল্পনা। তবে গাড়ির পেছনে বসে যখন ঢেঁকুর তোলেন বস, ‘ইয়েস স্যার’ ড্রাইভাররা ফ্রাইড চিকেনের গন্ধ ঠিকই পায়।


১৯৮০ সালে আমেরিকায় আসার পরই দেখলাম, ‘স্যার’ বলে কোনো শব্দ নেই; বরং ইয়েস স্যার বলাই বিপজ্জনক। প্রমাণ হলে জেল-জরিমানা পর্যন্ত গড়ায়। অর্থাৎ, ইয়েস স্যারের শূন্যস্থান পূরণ করেছে আইনের শাসন। সে জন্য রয়েছে শতভাগ নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ। ঘুষ দেয়া-নেয়ার প্রমাণ পেলে, কত বড় ইয়েস স্যার, আদালতের কাছে তা বিবেচ্য নয়; বরং ইয়েস স্যারের তলে যে অপরাধ, সেটাই বিবেচ্য। গত সপ্তাহে সাবেক নিউ ইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের শাস্তি হলো ১০ বছরের জেল। অপরাধ, তিন লাখ ডলার ঘুষ গ্রহণ। একসময় ‘স্যার’ কালচারটি এখানেও ছিল।

বলছি, বিলুপ্ত স্যার বনাম দাসপ্রথা। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের নিষ্ঠুরতার ওপর অনেক ছবি করেছে হলিউড। আফ্রিকা থেকে শিকল পরিয়ে জাহাজে করে এনে পশ্চিমের খোলাবাজারে গরু-ছাগলের মতো বেচাকেনা। বিনা বেতনে ২০ ঘণ্টাই গরুর মতো খাটানো হতো। পালিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস দেখালে ফাঁসিতে লটকানোর আগে ওই এলাকার সব স্লেইভমাস্টারকে খবর দেয়া হতো। তারাও তাদের ক্রীতদাসদের এনে শাস্তি দেখিয়ে ভয় দেখাত। মেয়েদের যত খুশি ধর্ষণ করত। কাজে যেতে না চাইলে সাঁড়াশি দিয়ে টেনে দাঁত তুলে ফেলত। তখন ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার বলে চিৎকার করলেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতো না। ড. মার্টিন লুথার কিং-সহ অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিবাদের কারণেই স্যার প্রথা চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছে। পরবর্তীকালে ‘সিভিল রাইটস অ্যাক্ট’ আইন পাস হয়েছে।

অবস্থান, পদ-পদবি, সাদা-কালো, মিলিয়নিয়ার, নি¤œবিত্ত... ‘স্যার’ শব্দটি এ দেশে কতটা অপ্রয়োজনীয়, বিএনপি-আওয়ামী লীগ যাই হোক, প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশীরই তা জানা। বড়জোর মিস্টার ওমুক, মিসেস তমুক। অনেকেই বসকে নাম ধরে ডাকে। বস ও কর্মচারী এক রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ খায়। এক লাইনে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করে। প্রেসিডেন্টের নামের সঙ্গে বিশেষণ অনুপস্থিত। জাতির পিতা জর্জ ওয়াশিংটনের নাম সারা বছরে একবারও উচ্চারণ করা হয় কি না সন্দেহ। বেশির ভাগ লোকই বলেন মি. প্রেসিডেন্ট! অনেকেই নাম ধরে উল্লেখ করেন। যেমনÑ মি. বুশ একজন ওয়ার ক্রিমিনাল। কিংবা ট্রাম্প একটা পাগল, ইডিয়ট, সন্ত্রাসী। পূজনীয়, মাননীয়, দেশবরেণ্য, দেশনেতা, ফাদার অব ডেমোক্র্যাসি প্রভৃতি বিশেষণ যুক্ত না করায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির প্রেসিডেন্টের সম্মান কমে কি না, বলবে একমাত্র বাংলাদেশীরাই। কারণ, তারাই এখন পর্যন্ত ব্রিটিশের পয়দা করা কলোনিয়াল মানসিকতাকে জোঁকের মতো আঁকড়ে ধরে আছে। ষাটের দশকে খান সাহেবদের মুখের ওপর ‘না’ বলা জাতি যেভাবে মাত্র ১০ বছরে একটি পরিপূর্ণ ‘ইয়েস স্যারের’ জাতিতে রূপান্তরিত হলো, সেটাই আজকের বিষয়।


কাউকে স্যার বলার মানে, তিনি উঁচু- অন্যজন নিচু। তিনি মুনিব- অন্যজন ভৃত্য। কলোনিয়াল মানসিতার ডিকশনারিতে ব্যাখ্যা এটাই। অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশের আনা দাসপ্রথায়, মুনিব-চাকরের কৃত্রিম পার্থক্য, ভারতীয়দের মনোজগতের ব্লুপ্রিন্ট পাল্টে দিয়েছে। পরবর্তীকালে ‘স্যার’ শব্দটি সমাজ ও রাজনীতিকে আরো বেশি শৃঙ্খলিত করেছে। পরবর্তীকালে ‘কমনওয়েলথ’ নামের সার্কাস সৃষ্টি করে দেশে দেশে অদৃশ্য দাসত্ববাদ টিকিয়ে রেখেছে ব্রিটিশরা। এ কারণে ব্রিটিশশাসিত দেশগুলোতে ‘নো স্যার’ শব্দটি বিরল।
পৃথিবীতে কেউ কারো দাস বা প্রভু নয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শুরু থেকেই প্রত্যেক মানুষ মৃত্যুর মাধ্যমে ক্ষুদ্রতার প্রমাণ দিয়ে গেছে। অসীম ক্ষমতাধরদের অন্যতম ইরানের শাহ, ফিলিপাইনের মার্কোস, হাইতির পাপাডক- প্রত্যেকেই চুরির টাকায় সুইস ব্যাংক ভরে ফেললেও শূন্য হাতেই গেছেন। এখনো যারা চুরির টাকায় অফশোর ব্যাংক ভরে ফেলছেন, তালিকার প্রত্যেকেই শূন্য হাতেই যাবেন। ইরানের শাহ, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, ফিলিপাইনের মার্কোস... স্ট্যাচুগুলো কোথায়?

ব্রিটেনের রানী প্রতি বছর কিছু গুণীজনকে কেন ‘স্যার’ উপাধি দেন, বোধগম্য নয়। যারাই স্যার রিচার্ড ব্রানসনের মতো সাকসেসফুল, বড়জোর দু-চার প্রজন্ম মনে রাখবে। তাদের স্টিভ জবের মতো যারাই যুগের ব্লুপ্রিন্ট পাল্টে দিয়েছেন, অনেক প্রজন্ম মনে রাখবে। কিন্তু জীবনের শক্তি দিয়ে যারাই প্রকৃত মানুষ হওয়ার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, অনন্তকাল তারাই থাকবেন। তাদের ‘স্যার’ বলি না, বলি মহামানব। মহামানবদের বেশির ভাগেরই স্ট্যাচু নেই। যাদের আছে, ভক্তরা স্ট্যাচু দিয়ে রাস্তাঘাট দখল করে না। আইন বানিয়ে গুরুর ছবি ঝোলাতে বাধ্য করে না। ভগবানের ছবি ব্যাগে ভরে বিদেশে নিয়ে প্রচার করে না; বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ধর্মাঙ্গনে গিয়ে যিশুর স্ট্যাচুকে সম্মান দেখায় খ্রিষ্টানরা। এতে ভক্তরাও খুশি। বলছি, স্ট্যাচুর সামনে দিনরাত ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার চিৎকারের কালচারÑ টোটাল রাবিশ। এ ধরনের মানসিকতা নিতান্তই স্থূলবুদ্ধির পরিচায়ক।

২০০ বছরের ‘ইয়েস স্যার’ এপিডেমিক থেকে গত ১০ বছরে সুপার এপিডেমিক। উদাহরণস্বরূপ, বস হুকুম করলেন, লগি-বৈঠা-গানপাউডার নিয়ে রাস্তায় নামতে হবেÑ এ রকম অমানবিক উদাহরণগুলো গত ১০ বছরে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও ইয়েস স্যারদের ভয়ে সবার জিহ্বায় তালা। অন্যায় হতে দেখেও ছাত্র থেকে শিক্ষক, সবাই ইয়েস স্যার, জি স্যার। সর্বশেষ, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রক্তাক্ত করা দেখেও ইয়েস স্যার লীগ এবং তার অভিভাবক চুপ। এ বিষয়ে একজন রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীর ইয়েস স্যার ভিডিওটি ভাইরাল। বিষয়টি এমন পর্যায়ে, বস যদি বলেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক আমি, উত্তরে বলবেÑ ইয়েস স্যার।


দীর্ঘ দিন ধরে ব্রিটিশের ‘ইয়েস স্যার’ মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গন এবং যুবসমাজের মনোজগতের ওপর রাজনীতিবিদদের সর্বোচ্চ হামলার প্রতিবাদ করেই চলেছি। ‘আমিত্বহীন আমিত্ববাদীরা’ কখনোই মানুষ তৈরি করতে পারবে না। কারণ, তাদের ভেতরে আমির বদলে অমানুষের জায়গাই বড়। আমি হতে চাইলে আমিত্ব থাকতে হবে।
অস্ত্র নয়, এই হামলা কলোনিয়াল মানসিকতা দিয়ে মস্তকের ঘিলুকে পোঁচ বানিয়ে ফেলা। ঘিলু থাকলেও মাথা নষ্ট। খালি কলস বাজে বেশি। এ কারণে দেশটি নাৎসি জার্মানির মতো দ্বিখণ্ডিত। এত বড় হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস বোধহয় এই শতাব্দীতে একটাই। কারণ, এই ক্রাইসিসের ভুক্তভোগী ১৭০ মিলিয়ন মানুষ। ইয়েস স্যারের অভিশাপে অভিশপ্ত আমরা, হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে’, নয় ‘রাজাকার’। মাহমুদুর রহমানকে রক্তাক্ত করার কারণ সেটাই। অন্যথায়, আদালতের ভেতরে কেউ কি রক্তাক্ত হয়? তাকে ঘিরে থাকা পুলিশের নীরব দর্শকের ভূমিকাও ইয়েস স্যারের অভিশাপে অভিশপ্ত।

এই মানসিকতার আরো নমুনা :
মাহমুদুর রহমান অনেক পাপ করেছে, এই শাস্তি তার প্রাপ্য ছিল, মন্তব্য একজন ইয়েস স্যার রাজনৈতিক সাংবাদিকের।

- জামায়াত-বিএনপি খুঁটি ধরে টানাটানি করেছে বলেই রানা প্লাজার দুর্ঘটনা, বলেছেন ইয়েস স্যার মন্ত্রী।

- সাগর-রুনির তদন্ত চলছে, চলবে!

- কোটা বাতিল করলে আদালতের রায়ের অবমাননা হয়। কিন্তু ১৬তম সংশোধনীর রায় মানা বেআইনি।

- ভোট হবে, কিন্তু ভোট দেয়া নিষেধ। ভোটচোরেরাই নির্বাচনের দায়িত্বে থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে (মদের দোকানে মাতালের চাকরির মতো)।

- প্রত্যেকেই ষড়যন্ত্রকারী, একমাত্র ইয়েস স্যারই কখনোই ভুল করে না।

- ইয়েস স্যার ছাড়া পৃথিবীতে আর কারোই নাম থাকবে না, মন্তব্য ইয়েস স্যার মন্ত্রীর। 

-বন্ধু গ্যারান্টি দিয়েছে, কয়লাবিদ্যুতের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না। নিউক্লিয়ার ডিজাস্টার হলেও মানুষ নিরাপদ।

- ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট নেই

-রাবিশ স্যারের মন্তব্য।

- ভল্টে সোনা গায়েবের ঘটনা ঘটেনি, এটা বিএনপির সাজানো নাটক, বলেছেন ইয়েস স্যার এক মন্ত্রী। 

-নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন... নির্বাচন আমি চাই না। আমি চাই পরিবারসমেত তারাই আরো কয়েক বছর ক্ষমতায় থাকুক। সংসদে হাইকমান্ডের উদ্দেশ্যে, বিপ্লবী সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত আসনের নব্য নারীবাদের ডিজিটাল প্রবক্তা (ভিডিওটি নেটে)। 

-নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে, ঠিক করবে ওমুক, এতে অন্য দেশের নাক গলানোর অধিকার নেই।

ইয়েস স্যারের তালিকা করার অক্ষমতা জানিয়ে এখানেই ইস্তফা।
লেখার মূল টার্গেট, বার্নিকাটের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ইয়েস স্যার ইসির বক্তব্যের জবাব (যুগান্তর, ৩০ জুন ২০১৮)। বলেছেন, গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা মার্শা বার্নিকাট এই প্রশ্ন তুলতে পারেন না। কারণ, তাদের দেশের নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের প্রেসিডেন্টকে তদন্ত করছেন আদালত। শুনে হাসব না কাঁদব!
আমেরিকার নির্বাচন সম্পর্কে জেনেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে বার্নিকাটের কথা বলার অধিকার আছে কি না, আমার কাছে শুনুন। কারণ, পুলিশ ছাড়াই রেগ্যান আমল থেকে ভোট দিচ্ছি। ট্রাম্প-পুতিন কেলেঙ্কারি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ওরা আইন দেখায়, একজন ইসি দেখান- স্যার। স্যার মানেই আইন। এর বাইরে কোনো আইন থাকা যেন নিষেধ।

কথিত গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের কিছু নমুনা। প্রেসিডেন্টের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ম্যানোফোর্টকে জেলে পাঠিয়েছে তদন্ত কমিশন। প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত উকিলের বাড়িতে আদালতের ওয়ারেন্ট নিয়ে গোপনে হামলা করে প্রেসিডেন্টের অনেক গোপন তথ্য জব্দ করেছে এফবিআই। নির্বাচনে ট্রাম্প-রাশিয়া কানেকশন তদন্তে হস্তক্ষেপের ক্ষমতা থাকলেও প্রেসিডেন্ট সেটা করেননি। ইমপিচমেন্টের সম্ভাবনা ৫০-৫০। কিন্তু পারবেন এমন একটি দৃষ্টান্ত দেখাতে? পারবেন না। কারণ, বিচারপতি সিনহাকে শুধু আদালতই নয়, দেশছাড়া করার দৃষ্টান্তও আপনারাই। বলব, ৫ জানুয়ারিতে ঢাকা-দিল্লির কানেকশন থাকলে, তদন্ত করে তারপর বার্নিকাটের দিকে আঙুল তুলুন। সম্প্রতি গাজীপুরে যা হলো, সেটির সমালোচনা করুন। কারা ওমুকের দুর্নীতি তহবিলে বড় অঙ্কের চাঁদা দিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করছে, তদন্ত করুন।

আমেরিকাকে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ব্যক্তিদের ভাগ্য ভালো, তারা ভুয়া নির্বাচন করেও নিরাপদে। আমেরিকাতে হলে এদের কী পরিণতি হতো, দৃষ্টান্ত মুলার ইনভেস্টিগেশন কমিশন। যা হোক, হিম্মত থাকলে ’৬৯-এর মতো ‘নো স্যার’ বলে, ’৭০-এর মতো নিরপেক্ষ নির্বাচন করে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখানোর সময় এখনো আছে।
ই-মেইল : farahmina@gmail.com
ফেসবুক : minafarahfacebook
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com


আরো সংবাদ



premium cement