২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সোনা আছে, সোনা নাই; বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই

সোনা আছে, সোনা নাই; বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই - ছবি : সংগ্রহ

গত শুক্রবার পত্রপত্রিকার খবর- সোনার দাম আরো কমেছে বাংলাদেশে। তবে পত্রিকাগুলোই সাক্ষ্য দিচ্ছে, এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্ক সহজে কমছে না, বরং তা সবে শুরু হলো।
গত মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শীর্ষক একটি খবর ছাপা হয়। এতে সরকারের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অনুসন্ধান রিপোর্টের সূত্রে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছিল তিন কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চাকতি ও রিং বা আংটি; তা হয়ে আছে মিশ্র বা সঙ্কর ধাতু। ছিল বাইশ ক্যারেট স্বর্ণ; হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। দৈব চয়নভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষা করে ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে’ এ অনিয়ম ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনটি রাজস্ব বোর্ড হয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেয়ার কথাও পত্রিকাটি জানায়।

এই খবর পত্রিকায় আসার আগে দীর্ঘ দিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কী করেছে, তা জাতির জানা নেই। তবে মঙ্গলবার খবর ছাপানোর পরপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের শুধু নড়াচড়া নয়, রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে দিনই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকা এর সাক্ষ্য দেয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতিকে আশ্বস্ত করতে চায় যে, ‘পত্রিকার ওই রিপোর্ট ভুল এবং ব্যাংকের ভল্টে সোনা যেভাবে রাখা হয়েছিল, সেভাবেই আছে। এতে কোনো হেরফের হয়নি। শুধু কিছু করণিক ভুলের কারণে স্বর্ণের মানে পার্থক্য দেখা দিয়েছে।’

এই কথিত সামান্য ক্ষতির জন্য করণিক বা কেরানি দায়ী, না কোনো সাহেব/বাবু গোছের কর্তা দায়ী; সেটি অবশ্যই তদন্তের বিষয়। আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রাসঙ্গিক ‘ব্যাখ্যা’টা জেনে নিই। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, একটি আংটি বা রিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার পরিমাপ করে বলেছিলেন, এতে স্বর্ণ আছে ৪০ শতাংশ। পরে প্রতিবেদন তৈরি করার সময় ভুলে ‘৪০-কে লেখা হয়েছে ৮০’। এই কথিত ভুলের কারণ বাংলা ৪০-কে ইংরেজি Eighty বা ৮০ মনে করা হয় বলে জানানো হয়েছে। করণিক কাজ বা clerical job মানে, কোনো কিছু দেখে দেখে একেবারে হুবহু লেখা বা কপি করা। এর বিন্দুমাত্রও অন্যথা হওয়ার কথা নয়। এ কারণেই ‘মাছি মারা কেরানি’ কথাটির উদ্ভব। কথিত আছে, জনৈক কেরানি একটা নথি কপি করার সময় সংশ্লিষ্ট কাগজের এক জায়গায় দেখেন, লেখার ওপর একটি মাছি মরে আটকে আছে এবং এ কারণে সে জায়গার লেখাটা পড়া যাচ্ছে না। ওই কেরানি মাছিটা সরিয়ে আর লেখাটির পাঠোদ্ধারের প্রয়াস পাননি। তিনি এর বদলে লিখে দিলেন ‘মরা মাছি’ এবং এ কথার আগে ও পরে যথারীতি কপি করেছিলেন সে নথিতে উল্লিখিত নির্দিষ্ট কথাগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের ‘কেরানির ভুল’ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দাদের প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছে। তদুপরি, স্বর্ণ জমা দেয়ার সময়ে রাজস্ব বোর্ডের যে কর্তা হাজির ছিলেন, তাকে এনে এটা যাচাই করা হয়। এরপর তিনি সার্টিফাই করেছেন, ‘এটা জমা দেয়া সোনার চাকতি।’ এর ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি- ‘জমা দেয়া সোনায় কোনো হেরফের হয়নি।’
কিছু দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে কোটি কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। সে টাকার একাংশ শ্রীলঙ্কায়, আরেক অংশ আমেরিকায়, এমনকি একটা বড় অংশ ফিলিপাইনের জুয়াড়িদের টেবিলে চলে যাওয়ার পর আমাদের কর্তাবাবুদের হুঁশ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর অর্থ মন্ত্রণালয় দেখাশোনার জন্য এত কর্তার ভিড় থাকলেও সে টাকা উদ্ধারে অর্থবহ কর্ম (পদক্ষেপ) অদ্যাবধি জনগণের চোখে পড়েনি। রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডার লোপাটের এত বড় অঘটনের পরও আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাবসাবে বোঝানো হচ্ছিল ‘কুছ পরোয়া নেহি। সব কুছ বিলকুল ঠিক হ্যায়।’ এত দিনে দেশবাসী বুঝে গেছে, অনেক কিছুই ঠিক নেই, বরং ‘ঝুটা হ্যায়’।

এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক ডেকে বলছে, ‘ভল্টের সোনা ঠিক আছে।’ কিন্তু গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতে চুরি-ডাকাতির যে হিড়িক, তাতে দেশবাসীর মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা অবশিষ্ট আছে, তা কি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং সরকার মেপে দেখেছে? যে অভাবনীয় সোনাকাণ্ডের খবর ফলাও হয়েছে, তাতে কোনো কর্মকর্তা বলে দিলেন, ‘নো চিন্তা ডু ফুর্তি’, তাতেই মানুষ দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আর গালি ভুলে তালি বাজাতে বাজাতে জয়ধ্বনি দেবেÑ এমনটি মনে করার আর উপায় নেই। অবিলম্বে কার্যকর তদন্তের দ্বারা জনমনের সন্দেহ নিরসন করতে হবে। অন্তত সে পর্যন্ত মন্ত্রী-যন্ত্রী-তন্ত্রী বাহিনীর যাবতীয় গলাবাজি তথা বাগাড়ম্বর বন্ধ করাই সময়ের দাবি। কিন্তু যারা প্রতিদিন জাতিকে অমৃত বাক্য শ্রবণ করাতে আর সবাকবীক্ষণে (টিভি) নিজ বদনখানি দর্শন করাতে না পারলে অবাক হন, তারা বাকসংযম অবলম্বন করবেন বলে মনে হয় না।

যে সোনা নিয়ে এত তোলপাড়, তার দাম আবার হ্রাস পেয়েছে। আর চোরাই স্বর্ণের সুবাদে তো এ দেশ অনেক আগেই সয়লাব হয়ে ‘সোনার বাংলা’ হয়ে উঠেছে। কবিগুরু নিশ্চয়ই স্বর্ণপ্লাবিত এহেন বঙ্গদেশকে ভালোবাসা দিতে চাননি। যা হোক, শুক্রবারের পত্রিকায় একটি খবর- এক মাসের ব্যবধানে দেশে আবারো কমেছে সোনার দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি দেশে সোনার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার নতুন দাম হবে ৪৮ হাজার ৩৭২ টাকা। এর আগে তা ছিল ৪৯ হাজার ৫৩২ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ভরিতে সোনার দাম কমেছে ১১৬০ টাকা। এর আগে ২১ জুন সোনার দাম কমানো হয়েছিল শেষবার। তার আগে দাম ছিল প্রতি ভরি ৫০ হাজার ৬৯২ টাকা। দাম কমে যাওয়ায় এখন প্রতি ভরি ২১ ক্যারেটের সোনার দাম হবে ৪৬ হাজার ১১০ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি বিক্রি হবে ৪১ হাজার ৬৪ টাকায়। আর ‘সনাতন’ পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি করা হবে ২৭ হাজার ৪৩৪ টাকায়। সোনার দাম কমেছে, তবে রুপার দাম কমেনি।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাংলাদেশ ব্যাংকে সোনা জমা দিলে ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার দিয়ে এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে সেই সোনার মান যাচাই করে দেখা হয়। এরপর সোনা রাখা হয় যে ভল্টে, এর নিরাপত্তাস্তর দু-একটি নয়, ছয়টি। শুল্ক গোয়েন্দা তাদের জমা দেয়া সোনার মান যাচাই করে থাকে নিজেদের ভাড়া করা যন্ত্র দিয়ে। এ অবস্থায় ‘কিছুটা হেরফের’ হওয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংক অস্বীকার করেনি। বরং ব্যাংকের ভাষ্য হলো, এ কারণে গ্রহণযোগ্য তৃতীয় কোনো সংস্থাকে দিয়ে সোনার মান যাচাই করে নিতে এনবিআর তথা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা এতে রাজি হননি। কেন হননি কিংবা আসল ব্যাপার কী, তা এখন জানা দরকার। এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এনবিআর এ বিষয়ে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ জানতে চাইলে গত ১১ জুলাই তাদের জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রাজস্ব বোর্ড- এ দু’টি জাতীয় ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মাঝে অভিন্ন সোনার ভিন্ন ভিন্ন হিসাবের হেতু কী, সে ব্যাপারে কিছুটা জানা গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্যে। তবে এ বিষয়ে বোর্ডের বক্তব্য পাওয়া গেলে জনগণ এ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও স্পষ্ট ধারণা পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন শুল্ক গোয়েন্দারা সোনার মান পরীক্ষা করেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংক কাজটি করে ম্যানুয়ালি বা সনাতন পদ্ধতিতে। কেন এই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আমলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক অ্যানালগ সিস্টেমে পড়ে আছে, এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছে, সোনার মান ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচাই করার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য জাপানি মেশিন কেনা হয়েছিল চার কোটি টাকায়। কিন্তু এতগুলো টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয়ের পরও মেশিনটি ‘অনেক সময় ভুল প্রতিবেদন দিয়েছে’। তাই মেশিনটি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই কথিত ভ্রান্তির রহস্য উন্মোচিত না হলে জনমনে বিভ্রান্তির অপনোদন হবে না। তারা চায়, রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় নিয়ে কোনো প্রকার অনিয়ম, অপচয়, গাফিলতি ও দুর্নীতি যেন না ঘটে।

কথা আরো আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সোনার মান যাচাই করে থাকে নির্দিষ্ট একজন স্বর্ণকার দিয়ে। তিনি তাদের ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তি। স্বর্ণের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর যাচাই কাজে কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল একজনের ওপর নির্ভরশীল? এর যে জবাব পাওয়া গেছে, তা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার মতো নয়। জবাবটি ছিল- ‘ইতঃপূর্বে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে তাদের একাধিক আপত্তি বা অভিযোগের ইঙ্গিত মিলেছে। (ক) শুল্ক গোয়েন্দারা নিজস্ব মেশিন আনেননি স্বর্ণের যাচাই কাজের জন্য। (খ) ব্যাংক পরমাণু শক্তি কমিশনকে দিয়ে তাদের সব সোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দা এতে ‘সাড়া দেয়নি’। (গ) তৃতীয় কোনো সংস্থার মাধ্যমে সোনার মান পরীক্ষা করতে বলা সত্ত্বেও এনবিআর ‘সাড়া দেয়নি’। এসব হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য। এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এ ব্যাপারে মুখ খোলা উচিত। অন্যথায় দোষারোপ ও ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে না। পরস্পরের সমালোচনা কিংবা নিজের দায় এড়ানো এই সমস্যা উত্তরণের পথ নয়। বরং জনগণ ভাববে, এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজেও যে সমন্বয় বা সিরিয়াসনেস নেই, তার একটি প্রমাণ সোনার পরিমাণ ও মান নিয়ে অবাঞ্ছিত বিতর্কের ঘটনা।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করার পরদিনই অর্থ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানও সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিদেশে থাকায় প্রতিমন্ত্রী সরকারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু ঘটেনি সোনা নিয়ে। তার ভাষায়, ‘ভল্টে সব সোনাই ঠিকমতো আছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে যে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে তা দেখে আসতে পারেন। ব্যাংকের দরজা খোলা আছে।’

তার আশ্বাস মোতাবেক, কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোনা দেখতে গেছেন কি না, জানা যায়নি। আর গেলেও তাকে যে প্রথমেই বাইরের গেটে ‘ধাক্কা খেতে হবে’, সন্দেহ নেই। তা ছাড়া, ব্যাংকের দরজা ‘খোলা’ থাকা উচিত নয় মোটেও। আর যদি ‘খোলা’ থাকেও এবং কেউ গিয়ে সোনা দেখার সুযোগ যদি পেয়েও যান, তিনি কী করে বুঝবেন যে, সেখানে স্বর্ণের মান ও পরিমাণ ঠিক আছে? সর্বোপরি, কেউ গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট দেখতে চাইলে তাকে দেখানো কি সম্ভব বা সঙ্গত? তাই, প্রতিমন্ত্রীর কথাটিকে ‘বাত কি বাত’, অর্থাৎ কথার কথা হিসেবে ধরাই উচিত। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এমনসব কথা অহরহ বলে থাকেন।
প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান অতীতে পেশাগত জীবনে ছিলেন ঊর্ধ্বতন আমলা। রাজনৈতিক জীবনে এখন সুনামগঞ্জে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন এমপি। তিনি আলোচ্য ‘স্বর্ণকাণ্ড’ সম্পর্কে সাফাই দিয়েছেন, ‘এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রাজস্ব বোর্ড একত্রে কাজ করছে। ধারণাগত কিংবা জ্ঞানগত পার্থক্য দেখা দিতে পারে একসঙ্গে কাজ করলে। সব সোনা ঠিক আছে; ঘরেই আছে। আমি এ ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে গেছি।’ সোনার যে পরিমাণ বলা হয়েছে (৯৬৩ কেজি), তা ‘মোটেও সঠিক নয়’ বলে মন্ত্রীর বিশ্বাস।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত স্বর্ণের মান-পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার মতো বেনজির ঘটনায় তদন্ত করা হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘তদন্ত না হলেও পর্যালোচনা করা হবে বিষয়টি।’ আবার বলেছেন, আইন মোতাবেক কমিটি হবে। তবে এর নাম তদন্ত না পর্যালোচনা কমিটি হবে, তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী ফিরলে তাকে পুরো ঘটনা ব্রিফ করব।’
কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যাতে জাতীয় স্বার্থ এবং দেশের মর্যাদা বিজড়িত, সে ব্যাপারে আরো আগেই ব্যাপক ও গভীর তদন্ত হওয়া জরুরি ছিল বলে সচেতন নাগরিকদের অভিমত। বিলম্বে হলেও এখন কার্যকর তদন্ত করে আসল বিষয় উদঘাটন করা অপরিহার্য। কিন্তু অর্থ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রশ্ন জেগেছে, সরকার কি এ নিয়ে তদন্ত এড়িয়ে যেতে চায়? এর বদলে নিছক ‘পর্যালোচনা’ করা তো যথেষ্ট নয়। বরং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার কারণ, এর দায় এবং প্রতিকারের পন্থা নির্দেশ করা উচিত।

পুনশ্চ : সোনা নিয়ে বাংলা ভাষায় গান আছে কয়েকটা। এগুলো আমাদের দেশে অনেক দিন ধরেই প্রচলিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা নিয়ে যারা সন্দিহান, তাদের মনে পড়তে পারে এ গানটি- ‘যে জন প্রেমের ভাব জানে না, / তার সঙ্গে নাই লেনাদেনা,/ খাঁটি সোনা ছাড়িয়া কেনে নকল সোনা...। অপর দিকে, যদি সোনা নিয়ে উদ্ভূত বিতণ্ডার সুরাহা না হয় এবং দু’পক্ষই নিজ নিজ বক্তব্যে অটল থাকে, তাহলে হয়তো এই দেশপ্রেমমূলক গানের কলিতে কিঞ্চিৎ সান্ত্বনা মিলবে- ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা,/ সোনা নয় এত খাঁটি;/ তার চেয়ে বেশি খাঁটিরে আমার জন্মভূমির মাটি; আমার বাংলাদেশের মাটি।’


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক কৃষিমন্ত্রী শহীদকে মৌলভীবাজার কারাগারে স্থানান্তর সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের ৫ আগস্টের বিপ্লবই ইসলামী বিপ্লবের পূর্বাভাস : মামুনুল হক হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতি করতে পারে ইসরাইল অটোরিকশা চলবে : হাইকোর্টের আদেশে স্থিতাবস্থা অযৌক্তিক কারণে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে প্রতিরোধ করা হবে : সারজিস মোরেলগঞ্জে কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার টেকনাফ সৈকতে নিখোঁজ : ১৫ ঘণ্টা পর ২ শিশু লাশ উদ্ধার জাবিতে অটোরিকশার ধাক্কায় শিক্ষার্থী নিহত : চালক আটক মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভাঙচুর : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন পাকিস্তানে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

সকল