২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও মানবাধিকার

গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও মানবাধিকার - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজনীতির লক্ষ্য হোক গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংরক্ষণ। শুধু স্লোগানে বা বক্তব্য-বিবৃতিতে নয়; দলের কর্মসূচি নির্ধারণ ও দৈনন্দিন আচরণে এই চেতনা যেন প্রতিভাত হয়- এ অনুরোধ জাতির সব রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি। আজ এই চেতনার অভাব ঘটেছে বিধায় রাজনীতিতে অরাজকতা ও অসহিষ্ণুতা। সেই সাথে, মানবতার প্রতি সম্মান দেখানোর রেওয়াজ উবে গেছে। বাস্তবে অনুশীলন না থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এ বিষয়গুলো ঘন ঘন উচ্চারণ করেন। জনগণ তাদের কথা শুনে নীরবে পরিহাস করে। আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বিধৃত রয়েছে যে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ সংবলিত সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত আছেÑ ‘এই ভাগের বিধানাবলির সহিত অসামঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ- এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।’ জাতীয় সংবিধানে উন্নয়ন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে এভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের বয়স প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে চলল, কিন্তু আজ অবধি রাষ্ট্রীয় জীবনে এই তিনের সুষ্ঠু সম্মিলন ঘটেনি। এটাই জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য।

অথচ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হতে হলে এ পথ অনুসরণ করা ছাড়া ভিন্ন কোনো পন্থা নেই। রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, সেই রাজনীতিবিদদের এ সম্পর্কিত চেতনা স্পষ্ট নয়।
এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয় হয়েছে। একটি প্রশ্নমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনে যে প্রার্থীই বিজয়ী হতেন, তার বিজয়ের সাথে গণতন্ত্র ও জনগণ বিজয়ী হতো। নির্বাচন কমিশন এমন আশ্বাসই দিয়েছিল যে, সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেমন অনিয়ম হয়েছিল; গাজীপুরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। কিন্তু কমিশন তাদের কথা রাখেনি। আগে দেয়া আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই ভেবেছিলেন, গাজীপুর নির্বাচন দেশের হাল আমলের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হবে, কিন্তু দেশের মানুষের সে আশা গুড়ে বালি হয়েছে। গাজীপুরে খুলনার মতোই গণতন্ত্র হেরে গেছে। গাজীপুরের পর এখন দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলো নিয়ে সচেতন মানুষ চরমভাবে হতাশ। বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে বিশেষত দু’টি কথা বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয় এবং এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার নেই। সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই এ অভিযোগ দৃঢ়তর হচ্ছে। গণতন্ত্র নিয়ে আশাবাদ ভেঙেচুরে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্রের প্রতি যে, গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা এক বাক্যে অপূর্ব। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র।’ গাজীপুরে এবং তার আগে খুলনায়; তারও আগে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ কি নিশ্চিত হয়েছে? কোন দল, কোন ব্যক্তিরা ক্ষমতায় গেছেন; তা নিয়ে জনগণের মাথাব্যথা নেই। তারা কতটা স্বচ্ছভাবে মানুষের সমর্থন পেয়েছেন, সেটাই মুখ্য বিষয়। আর সংবিধান যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র’ তা সার্থকতা লাভ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনাররা যে শপথ বাক্য উচ্চারণ করে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সেখানে বলা আছে- ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব।’ যদি সুষ্ঠুভাবে তাদের নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তবে তো তারা সংবিধান সংরক্ষণের শপথ পালনে সমর্থ হন না। বর্তমান ও অতীতের বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনে যে নানা অনিয়ম হয়েছে, সে জন্য জাতির কাছে জবাব দেবে কে?

গাজীপুরের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এখন আগামী তিনটি সিটি করপোরেশন এবং এ বছরের শেষে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে দারুণ দুর্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ যেভাবে একের পর এক নির্বাচন ঘিরে অনিয়ম হচ্ছে, তাতে মানুষ ভোটের ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে। জাতীয় জীবনের এই যে হতাশা, তার সুযোগ নেবে সমাজবিরোধী শক্তি। সমাজের শৃঙ্খলা তাতে ভেঙে পড়তে পারে। তাহলে গণমানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। স্মরণ রাখা উচিত, কিছু কাল আগে জাতির অটুট ঐক্যের ফলে উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন যদি জাতির ঐক্য বিভিন্ন অনিয়ম দেখে বিভেদ-বিচ্ছেদে ক্ষুণœ হয়, সেই সুযোগে পরাজিত সন্ত্রাসী শক্তি আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। হতাশার পরিপ্রেক্ষিতে জাতি অতীতের মতো যদি অটুট ঐক্যবদ্ধ না হয়; দেশ একটি বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়। তখন কারো শেষ রক্ষা হবে না।

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না থাকলে আইনের শাসন ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। যেমন, এখন জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা কায়েম নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি হয়ে থাকে। কিন্তু ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে, সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা ভিন্ন কোনো বিরোধী দল অংশ নেয়নি। ফলে বর্তমান সংসদে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই। তাহলে সরকারের জবাবদিহি করবে কে? যদি আগামী সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, সে ক্ষেত্রে একাদশ সংসদের চরিত্র কী হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। এখন জাতীয় সংসদের যে স্বরূপ, তাতে জনগণের কোনো আস্থা তার ওপর নেই। তবুও এই আস্থাহীনতার সংসদ প্রায় পাঁচ বছর ধরে বহাল রয়েছে। এ অবস্থায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ক্ষমতাসীন সরকার যেখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটে সেখানে তার প্রতিবিধান করবে কোন নৈতিক বলে? যদি আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ঘটে, তবে সেখানে সুশাসন বিরাজ করতে পারে না। ‘সুশাসন’ বলতে বোঝায় যে, জনগণের কল্যাণে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হবে। আর সুশাসনের অভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। আজ দেশে দুর্নীতি-অনিয়মের যে রমরমা অবস্থা, তাতে দেশে তো বটেই আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশ একটি চরম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত। এ দুর্নীতির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ার দশা হয়েছে। দুর্নীতি রোধের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনীতিমুক্ত একটি কার্যকর সংস্থায় পরিণত হতে দেয়া হচ্ছে না, অথচ দেশে সুস্থ ও অপরাধমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে এই কমিশনের কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি।

‘উন্নয়ন’ কথাটি শুনতে সবারই ভালো লাগে। সাধারণভাবে উন্নয়ন বলতে বোঝায়, খেয়ে-পরে ভালো থাকা। তবে ব্যাপক অর্থে, উন্নয়ন বলতে এতটুকুই যথেষ্ট নয়; স্বচ্ছন্দে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও উন্নততর মানবিক বিকাশকে উন্নয়নের সাথে যুক্ত করতে হবে। চিড়িয়াখানায় পশুপাখির খাওয়া-থাকার চিন্তা নেই, কিন্তু তাদের স্বাধীনতা নেই। সারাক্ষণ খাঁচায় আবদ্ধ থাকতে হয়। আর মানুষ তো যন্ত্র নয়, পশুও নয়। বাংলাদেশে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে দিন গুজরান করছে। তাদের খেয়ে-পরে ভালো থাকার জো নেই। যেদিন দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে উঠে আসবে, সেদিন ‘উন্নয়ন’ কথাটি শুনতে আরো ভালো লাগবে। বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ বেকারত্বের গ্লানিতে দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছে। তাদের কাছে উন্নয়নের কথা বললে তা তো পরিহাস হবে। অথচ এই কোটি মানুষের হাতে কাজ তুলে দেয়ার যথেষ্ট চেষ্টা হচ্ছে না। তাদের গ্লানিকর জীবন থেকে মুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকার রাজনীতিকদের মুখে শোনা যায় না। দেশে যে বেকারত্ব, তা দূর করার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার প্রয়াস লক্ষ করা যায় না। কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পে বিনিয়োগ জরুরি, কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেই। স্থিতিশীলতার অভাব হেতু বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। পুঁজি বিনিয়োগের জন্য দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংকগুলোর আর্থিক ক্ষমতা এতটা হ্রাস পেয়েছে যে, তারা চাহিদামতো পুঁজি দিতে পারছে না। অথচ এসব ব্যাংকের খারাপ ঋণের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। এসব ঋণ আদায়-অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঘটেছে। আর এ কারণেই তারা কোনো বাছ-বিচার না করেই ঋণ বণ্টন করে চলেছে। এভাবে ব্যাংকগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে। এর জের হিসেবে জাতীয় অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে উন্নয়নের নানা কথা শোনা যায়, অথচ বিশেষ করে যে গ্রামাঞ্চলে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বসবাস, সেসব জনপদের মানুষের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে আছে, পুল-কালভার্ট ধসে গেছে- এসব পথে যানচলাচল তো দূরের কথা, মানুষের পক্ষে চলাফেরা করাই কষ্টকর। গ্রামীণ জনগণ ও নি¤œ আয়ের মানুষের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা আর্থিক সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাল অবস্থা নাজুক। সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা ঠিকমতো তাদের যৎসামান্য বেতনও পান না। জীর্ণশীর্ণ ঘরবাড়িতে গ্রামের বহু মানুষ বাস করতে বাধ্য হয়। আর শহরে শত শত বস্তিতে লাখ লাখ মানুষ ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা ছাড়াই বসবাস করে থাকে। তারা সামান্যতম চিকিৎসার সুযোগ পান না।

রাজধানীসহ বড় শহর-বন্দরগুলোর হাল খুব খারাপ। রাস্তাঘাটগুলোতে যানবাহন চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এগুলো মেরামত করা হয় না সময়মতো। সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের সড়কগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তখন এসব পথ দিয়ে যান ও মানুষের চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হয়। সরকারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় আগামীতে আর তা হবে না, কিন্তু সেই ‘আগামী’র দেখা পাওয়া যায় না।
‘মানবাধিকার’ হচ্ছে মানুষের কিছু অধিকার ও স্বার্থকে যখন আইন বা নৈতিক নিয়মনীতি দ্বারা সংরক্ষিত বা নিশ্চিত করা হয়। বস্তুত মানব পরিবারের সব সদস্যের জন্য সর্বজনীন, সহজাত ও অলঙ্ঘনীয় অধিকার হলো মানবাধিকার। মানুষের অপরিহার্য চাহিদা, যেগুলো মানুষের সার্বিক উন্নয়ন তথা বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীলতা, মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সমাজে বাসযোগ্য করে তোলে, সেগুলো ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশ দীর্ঘ দিনের বহু ত্যাগ আর অনেক সংগ্রামের পটভূমির মধ্য দিয়ে, অবশেষে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে চার দশক আগে স্বাধীনতা লাভ করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতারা সংবিধানে মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে স্বাধীনতার এত কাল পরও সংবিধানে সংরক্ষিত অধিকারগুলো বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না। এখনো বাংলাদেশে মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অথচ জাতিসঙ্ঘের সদস্য হিসেবে এ সংক্রান্ত বিশ্বসংস্থার সনদ ও ঘোষণাগুলো মানতে বাংলাদেশ বাধ্য। মৌলিক অধিকারগুলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। এ ছাড়াও জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সনদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কনভেনশন এবং প্রচলিত আইনে বিভিন্নভাবে এই মানবাধিকারের কথা সুস্পষ্ট করে বলা হলেও, বাস্তবে তার দেখা নেই।

দেশের বাস্তব অবস্থার প্রতি যদি দৃষ্টি দেয়া হয়, তবে সব কিছু বোধগম্য হবে। দুর্নীতি জন্য আর স্বজনপ্রীতিতে পুরো দেশ আচ্ছন্ন হয়ে থাকায় মানবাধিকার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির জন্য জবাবদিহিতা নেই কারো কাছে, তাই প্রশাসন চলছে লাগামহীন ঘোড়ার মতো। যার যেভাবে খুশি সেভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করছে। প্রশাসনের নির্লিপ্ততার জন্য চার দিকে আজ বীভৎস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেই কোনো সীমা। দেশের মানুষ অসহায়ের মতো দিন যাপন করছে। অবাধে ও পুরোদমে চলছে হত্যা-গুপ্তহত্যা। বন্দুকযুদ্ধে হতাহত হওয়া, গুম, খুন যেন নিত্যনৈমিত্তিক খবরের শিরোনাম; যা শুনলে দিন যায় না এমন অবস্থা। বাংলাদেশ যেন লাশের ওপর ভাসছে; মস্তকবিহীন লাশ, জবাই করা লাশ, গলিত লাশ, দেহ থেঁতলানো লাশÑ এক কথায় চার দিকে ‘লাশের খেলা’ চলছে। বাংলাদেশে জানমালের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী কখনো কখনো এতটা নৃশংস-নির্মম আচরণ করে যে, তা বলে শেষ করা যাবে না। নারী নির্যাতনের ঘটনা সব সীমা অতিক্রম করেছে। যৌতুক, পরকীয়ার বলি, ধর্ষণ, ইভটিজিং, খুন, হত্যা প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে আসে। সংবাদপত্রসহ সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপর দলনপীড়ন, হামলা-মামলার ঘটনা ঘটছে একের পর এক। ভিন্ন মত পোষণকারীদের কোনোভাবে সহ্য করা হয় না। তাদের ওপর হামলা এবং নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রতিটি নাগরিকের সমিতি সংগঠন করার অধিকার রয়েছে; আর ৩৭ অনুচ্ছেদে রয়েছে সভা সমাবেশ করার অধিকার। কিন্তু বর্তমানে দেশে সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষে সংগঠন এবং সভা সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া যায় না। এভাবে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়ে আছে।
ndigantababar@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা ‘দেশ গড়তে প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কাজে করতে হবে’ পটুয়াখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ভূমি কর্মকর্তা নিহত সাত কলেজের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে কেউ নিহত হয়নি, অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ ডিএমপির সিলেটে কর্মবিরতিতে ১১ হাজার চা-শ্রমিক, ক্ষতি ৬০ কোটি টাকা সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় গ্রেফতার সোহরাওয়ার্দীর পর কবি নজরুল কলেজও বন্ধ ঘোষণা কুলাউড়া রাস্তা জবর দখলের চেষ্টা : প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৭ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরো রক্তপাত হতো : আসিফ মাহমুদ

সকল